বঙ্গবন্ধুর সমবায় ভাবনা
হরিদাস ঠাকুর
🕐 ৯:৩৯ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ০৬, ২০১৯
বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ সমার্থক-এটি যেমন সত্য; তেমনি সত্য বঙ্গবন্ধুর জনসম্পৃক্ত উন্নয়ন ভাবনা। বঙ্গবন্ধুর এই জনগণমুখী উন্নয়ন ভাবনায় আমরা সমবায়ের উজ্জ্বল উপস্থিতি দেখতে পাই। আগামী বছর জাতীয় পর্যায়ে সাড়ম্বরে উদযাপিত হতে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী মুজিববর্ষ : ২০২০-২০২১। আলোকিত মুজিববর্ষের প্রাক্কালে ২০১৯ সালের ৪৮তম জাতীয় সমবায় দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল ‘বঙ্গবন্ধুর দর্শন সমবায়ে উন্নয়ন’। আমরা বঙ্গবন্ধুর দৃষ্টিতে সমবায় ও এর প্রাসঙ্গিকতা, বঙ্গবন্ধুর সমবায়ের দ্যোতনা, বর্তমান প্রেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধুর সমবায় দর্শনের কার্যকর প্রয়োগ ইত্যাদি বিষয়ে প্রায়োগিক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে ‘সমবায় আন্দোলন’কে জাতির পিতার ‘স্বপ্নের সোনার বাংলা’ দর্শনকে ‘জাতির পিতার সমবায় বাংলা’য় কার্যকর করতে পারি। আর তা হলেই বাংলাদেশের উন্নয়ন মহাযজ্ঞে ‘সমবায়কে আন্দোলন’কে সম্পৃক্ত করে জাতির পিতার প্রতি প্রকৃত সম্মান জানানো হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ইতিহাসের বরপুত্র-ইতিহাসের মহানায়ক। তিনি বাংলা ও বিশ্বের সব শোষিত-নিষ্পেষিত-নির্যাতিত-অত্যাচারিত সর্বহারা মুক্তিকামী মানুষের মুক্তিদূত। তিনি মনের গভীর থেকে আন্তরিক বিশ্বাসে উচ্চারণ করেছেন ‘বিশ্ব আজ দুইভাগে বিভক্ত। শোষক ও শোষিত। আমি শোষিতের পক্ষে। আমার কণ্ঠ শোষিতের মুক্তির জন্য চিরকাল সোচ্চার থাকবে।’ দেশ-কাল ও সময়ের গণ্ডি পেরিয়ে তিনি সমুজ্জ্বল আপন আলোর ঝরনাধারায়। কোনো ক্ষুদ্র গণ্ডিতে তাকে আবদ্ধ করা চলে না-আবদ্ধ করা যায় না। তিনি শুধু বাংলাদেশের নয়-নয় কোনো দল বা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের; তিনি আমাদের মহান জাতীয় সম্পদ-বৈশ্বিক রত্ন। তিনি বিশ্ব পরিম-লের এক উজ্জ্বলতম জ্যোতিষ্ক। এ কথার সারবত্তা পাওয়া যায় দুটি ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার আবহে।
(ক) প্রথম ঘটনার সূত্রপাত আমেরিকার নিউইয়র্কের রাস্তায়। খুব সম্ভবত ১৯৮১ সাল। আমাদের দেশের একজন কূটনীতিক সকাল বেলায় অফিসে যাওয়ার জন্য একটি ট্যাক্সিক্যাবে উঠেছেন। চালক নিগ্রো যুবক কিছুক্ষণ চলার পর কূটনৈতিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করল ‘তুমি কোথা থেকে এসেছো-তোমার দেশ কোথায়?’ কূটনীতিকের উত্তর ‘বাংলাদেশ’। চলন্ত ট্যাক্সিক্যাবটি হঠাৎ তীব্রবেগে ব্রেক কষে থামিয়ে দিল যুবক চালক। রাগতভাবে ক্যাবের দরজা খুলে কূটনীতিককে বলল ‘Get Out from my Cab. You Bastard-You Killed Mujib-your Father of the nation’. মুজিবের প্রতি নিগ্রো যুবকের ভালোবাসা প্রকাশ পেল মুজিবের দেশ বাংলাদেশের একজন নাগরিকের প্রতি তীব্র ঘৃণা প্রকাশের মাধ্যমে।
(খ) দ্বিতীয় ঘটনার সূত্রপাত ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে। একজন বিদেশি পর্যটক একবার বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করার পর পরিদর্শন বইয়ে লিখেছিলেন ‘I hate the killers. They are Bastard-because-they are Bastard-because-they are Bastard- because-they are Bastard- because-they are Bastard- because-they are Bastard- because-they are Bastard- because-they killed Mujib-the Poet of politics’. বিদেশি পর্যটক সাতবার খুনিদের জারজ সন্তান বলেছিলেন মুজিবের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণকে সম্মান জানিয়ে এবং মুজিবের অসাধারণ মানবপ্রেমিক ঐতিহাসিক ভূমিকাকে স্মরণ করে। শুধু দুজন বিদেশির এই দুটি ঘটনার দ্বারাই আমরা অনুধাবন করতে পারি বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক অবস্থানের কথা।
বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমার জীবনের একমাত্র কামনা বাংলার মানুষ যেন পেট ভরে খেতে পায়, পরনে কাপড় পায়, উন্নত জীবনের অধিকারী হয়।’ আর এ পরিপ্রেক্ষিতেই দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর লক্ষ্য নিয়ে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের পবিত্র সংবিধানের ১৪ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হইবে মেহনতি মানুষকে-কৃষক ও শ্রমিককে- এবং জনগণের অনগ্রসর অংশসমূহকে সকল প্রকার শোষণ হইতে মুক্তি দান করা।’ আবার সংবিধানের ১৯(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘মানুষে মানুষে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অসাম্য বিলোপ করিবার জন্য, নাগরিকদের মধ্যে সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করিবার জন্য এবং প্রজাতন্ত্রের সর্বত্র অর্থনৈতিক উন্নয়নের সমান স্তর অর্জনের উদ্দেশ্যে সুষম সুযোগ-সুবিধাদান নিশ্চিত করিবার জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবে।’ এরই ধারাবাহিকতায় সমবায়ের আর্থ-সামাজিক গুরুত্ব বিবেচনা করে বাংলাদেশের পবিত্র সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগের ১৩(খ) অনুচ্ছেদে দেশের উৎপাদনযন্ত্র, উৎপাদনব্যবস্থা ও বণ্টন প্রণালিসমূহের মালিকানার ক্ষেত্রে সমবায়ী মালিকানাকে রাষ্ট্রের দ্বিতীয় মালিকানা খাত হিসেবে ঐতিহাসিক স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে। পবিত্র সংবিধানের ১৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, [১৩। উৎপাদনযন্ত্র, উৎপাদনব্যবস্থা ও বণ্টন প্রণালিসমূহের মালিক বা নিয়ন্ত্রক হইবেন জনগণ এবং এই উদ্দেশ্যে মালিকানা-ব্যবস্থা নিম্নরূপ হইবে : (ক) রাষ্ট্রীয় মালিকানা, অর্থাৎ অর্থনৈতিক জীবনের প্রধান প্রধান ক্ষেত্র লইয়া সুষ্ঠু ও গতিশীল রাষ্ট্রায়ত্ত সরকারী খাত সৃষ্টির মাধ্যমে জনগণের পক্ষে রাষ্ট্রের মালিকানা; (খ) সমবায়ী মালিকানা, অর্থাৎ আইনের দ্বারা নির্ধারিত সীমার মধ্যে সমবায়সমূহের সদস্যদের পক্ষে সমবায়সমূহের মালিকানা; এবং
(গ) ব্যক্তিগত মালিকানা, অর্থাৎ আইনের দ্বারা নির্ধারিত সীমার মধ্যে ব্যক্তির মালিকানা।]
বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখতেন দেশের প্রতিটি গ্রামে সমবায় সমিতি গঠন করা হবে। তিনি গণমুখী সমবায় আন্দোলন গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। সমবায় নিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন যে কত গভীরে প্রোথিত ছিল এবং কত সুদূরপ্রসারী চিন্তাসমৃদ্ধ তা লক্ষ্য করা যায় ১৯৭২ সালের ৩০ জুন বাংলাদেশ জাতীয় সমবায় ইউনিয়ন আয়োজিত সমবায় সম্মেলনে প্রদত্ত তার বক্তব্যের মধ্যে। উক্ত ভাষণে তিনি বলেছিলেন, আমার দেশের প্রতিটি মানুষ খাদ্য পাবে, আশ্রয় পাবে, শিক্ষা পাবে উন্নত জীবনের অধিকারী হবে- এই হচ্ছে আমার স্বপ্ন। এই পরিপেক্ষিতে গণমুখী সমবায় আন্দোলনকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। কেননা সমবায়ের পথ-সমাজতন্ত্রের পথ, গণতন্ত্রের পথ। সমবায়ের মাধ্যমে গরিব কৃষকরা যৌথভাবে উৎপাদন-যন্ত্রের মালিকানা লাভ করবে।...বাংলাদেশ আমার স্বপ্ন, ধ্যান, ধারণা ও আরাধনার ধন। আর সে সোনার বাংলা ঘুমিয়ে আছে চির অবহেলিত গ্রামের আনাচে-কানাচে, চির উপেক্ষিত পল্লীর কন্দরে কন্দরে, বিস্তীর্ণ জলাভূমির আশপাশে আর সুবিশাল অরণ্যের গভীরে। ভাইয়েরা আমার-আসুন সমবায়ের জাদুস্পর্শে সুপ্ত গ্রাম বাংলাকে জাগিয়ে তুলি। নবসৃষ্টির উন্মাদনায় আর জীবনের জয়গানে তাকে মুখরিত করি।
বঙ্গবন্ধু সমবায়ের মাধ্যমে ভূমি ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনতে চেয়েছিলেন। বঙ্গভবনে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রথম বৈঠকে দলীয় চেয়ারম্যান জাতির জনক রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ থেকে আমরা এ বিষয়ে আলোকপাত পাই। তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা নতুন ল্যান্ড সিস্টেমে আসতে চাচ্ছি, আমরা কো-অপারেটিভে আসতে চাচ্ছি। দিস ইউনিয়ন কাউন্সিল ওল্ড ব্রিটিশ ইউনিয়ন কাউন্সিল। যেখানে যা দেওয়া হয়, অর্ধেক থাকে না, সঙ্গে সঙ্গে সাফ। সে জন্য একমাত্র উপায় আছে যে, আমরা যে মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ চালু করতে চাচ্ছি এটা যদি গ্রো করতে পারি আস্তে আস্তে এবং তাকে যদি আমরা ডিসট্রিক্ট এবং থানা কাউন্সিলের মাধ্যমে নিয়ে আসতে পারি, তাহলে দেশের মঙ্গল হতে পারে বলে আমি বিশ্বাস করি।’
বঙ্গবন্ধু বাংলার উন্নয়নে গ্রামে গ্রামে গ্রাম সমবায় গড়তে চেয়েছিলেন। গ্রাম সমবায় ছিল বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দুতে। তিনি দ্বিতীয় বিপ্লবের সোপান রচনা করতে চেয়েছিলেন গ্রাম সমবায়ের সফল বাস্তবায়নের দ্বারা। বঙ্গভবনের ওই বৈঠকে তিনি এ বিষয়ে বলেছিলেন-...বিপ্লবের ডাক। ভেঙে ফেলে সব নতুন করে গড়তে হবে। নিউ সিস্টেম করতে হবে। সেই জন্য আমি কো-অপারেটিভে গিয়েছি। আমি জাম্প করতে চাই না। আমি জাম্প করার মানুষ নই। আমি স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখি ১৯৪৭-৪৮ সাল থেকে। কিন্তু আমি ২৭ বছর পর্যন্ত স্টেপ বাই স্টেপ মুভ করেছি। আমি জানি, এদের সঙ্গে মানুষ থাকতে পারে না। আমি ইম্পেশেন্ট হই না। আমি অ্যাডভেঞ্চারিস্ট নই। আমি খোদাকে হাজের-নাজের মেনে কাজ করি। চুপি চুপি, আস্তে আস্তে মুভ করি। সব কিছু নিয়ে সেই জন্য আমি বলে দিয়েছি, ৬০টা থেকে ৭৫ কি ১০০টা কো-অপারেটিভ করব। এই কো-অপারেটিভে যদি দরকার হয় সেন্ট্রাল কমিটির এক একজন মেম্বর এক একটার চার্জে থাকবেন। লেট আস স্টার্ট আওয়ার সেল্ভস। ...লেট আস স্টার্ট। ওয়ান্স ইউ আর সাকসেসফুল এবাউট দিস মালটিপারপাস সোসাইটি-দেশের মানুষকে একতাবদ্ধ করা যাবে।
বঙ্গবন্ধু ছিলেন দূরদর্শী মহাচিন্তক। তিনি সময়ের অগ্রগামী পুরুষ ছিলেন। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে দাঁড়িয়ে আমরা অবাক বিস্ময়ে বঙ্গবন্ধুর উন্নয়নভাবনা উপলব্ধি করতে পারি। বর্তমানের জনসংখ্যা বৃদ্ধিজনিত খাদ্য চাহিদা, কৃষি শ্রমিকের অপ্রতুলতা ও কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, অব্যবহৃত পতিত কৃষি জমি উৎপাদনের বাইরে পড়ে থাকা-এসব সমস্যার কথা আগেই বুঝতে পেরে বঙ্গবন্ধু ‘গ্রাম সমবায় সমিতি’র পরিকল্পনা করেছিলেন। এটি সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে বর্তমানের অনেক সমস্যার উদ্ভব হতো না বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
গ্রাম সমবায় গঠনের বিষয়ে বঙ্গবন্ধু ছিলেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এ বিষয়ে তার ছিল স্পষ্ট দর্শন ও মনোভাব। গ্রাম সমবায়ের রূপরেখা তিনি স্পষ্টভাবে এঁকেছিলেন। এ বিষয়ে এক গভীর অন্তদৃষ্টি আমরা তার বক্তব্য থেকেই পাই- ...কো-অপারেটিভও আমি প্রতিটি গ্রামে করতে চাই। এটা সোজাসুজি বাঙালি কো-অপারেটিভ। যাকে বলা হয় মালটিপারপাস কো-অপারেটিভ। কো-অপারেটিভ ডিপার্টমেন্ট আছে, থাক। ওটা চলুক। আমি এটার নাম দিয়েছি স্পেশাল কো-অপারেটিভ। ...আমি নিজে ঠিক করছি আমার পদ্ধতি। যেটা করে এক একটা ডিস্ট্রিক্টে একটা করে কো-অপারেটিভ করতে হবে। সেটা হবে মালটিপারপাস কো-অপারেটিভ... একটা করে স্যাম্পল করে আমরা অগ্রসর হব। ইনশাআল্লাহ তারপর আর কোনো অসুবিধা হবে না। একবার যদি একটা ডিস্ট্রিক্টে একটা কো-অপারেটিভে মানুষ দেখে যে, এই দেশের মানুষের এই উপকার হয়েছে, তাহলে আপনাদের আর কষ্ট করতে হবে না। তারা নিজেরাই এসে বলবে, আমাদের এটা করে দাও- আমাদের করে দাও।...কাজের জন্য আসতে হবে ময়দানে। আপনাদের কাজ করে শিখতে হবে। সেই জন্য আমার কো-অপারেটিভ। যদি কাজ করে শিখতে চান, যদি ভবিষ্যৎ অন্ধকার করতে না চান, তাহলে আমার কো-অপারেটিভ সাকসেসফুল করুন।
আমাদের জাতির পিতার ভালোবাসায় মৌল অবস্থানে ছিল বাংলার জনগণ ও তাদের উন্নয়ন। সমবায় ছিল এই উন্নয়ন দর্শনের চালিকাশক্তি। বঙ্গবন্ধুর অন্তরের অন্তঃস্থলের বিশ্বাস থেকে উৎসারিত প্রতিটি কথাই যেন তার দর্শনকে প্রকাশ করে।
বঙ্গবন্ধুর সমবায় দর্শনকে আমরা নিম্নোক্ত বক্তব্য থেকে সম্যকভাবে উপলব্ধি করতে পারি-আমাদের সংঘবদ্ধ জনশক্তির সমবেত প্রচেষ্টায় গড়ে তুলতে হবে সোনার বাংলা। এ দায়িত্ব সমগ্র জাতির, প্রত্যেকটি সাধারণ মানুষের এবং তাদের প্রতিনিধিদের। তবেই আমার স্বপ্ন সার্থক হবে, সার্থক হবে শহীদের আত্মত্যাগ, সার্থক হবে মাতার অশ্রু। রাজনৈতিক স্বাধীনতা তার সত্যিকারের অর্থ খুঁজে পাবে অর্থনৈতিক মুক্তির স্বাদে, আপামর জনসাধারণের ভাগ্যোন্নয়নে। তবেই গণতান্ত্রিক পদ্ধতির মাধ্যমে রূপায়িত হবে সমাজতান্ত্রিক নীতি এবং সেই অভীষ্ট লক্ষ্যে আমরা পৌঁছাবো সমবায়ের মাধ্যমে।
জাতির পিতার উপরোক্ত সমবায় দর্শনের আপ্তবাক্য আমাদের পথের দিশা দেখায়। আমরা বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমবায় অঙ্গীকারকেও আমাদের পাথেয় হিসেবে পাই। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমি আশা করি সমবায়ের সঙ্গে যারা সংশ্লিষ্ট, তারা সবাই আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করবেন। যেহেতু এটি জাতির পিতারই একটি আকাক্সক্ষা ছিল। তিনি বহুমুখী গ্রাম সমবায় করতে চেয়েছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাকে হত্যা করার পর সেটি আর করা হয়নি। আমরা তাই ভিন্ন ভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করে বহুমুখী কর্মসূচির মাধ্যমে তার সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ করে যাচ্ছি।
জাতির পিতার সমবায় দর্শন এবং প্রধানমন্ত্রীর আবেগসিক্ত অঙ্গীকারের ভেতরেই রয়েছে সমবায় আন্দোলনকে জনগণমুখী ও উন্নয়নমুখী করে জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর দিশা। ৪৮তম সমবায় দিবসে আসুন আমরা সেই অঙ্গীকারেই আবদ্ধ হই।
হরিদাস ঠাকুর
সমবায়-গবেষক ও চিন্তক। যুগ্ম নিবন্ধক ও উপাধ্যক্ষ, বাংলাদেশ সমবায় একাডেমি, কুমিল্লা।