বিশ্বকাপেও ব্রেক্সিট
সাহানা বাজপেয়ী
🕐 ৯:৩১ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৪, ২০১৮
সন্ধ্যা সাতটাতেই যেন নিঝুম গোটা শহর। রাস্তাঘাট খাঁ খাঁ করছে। ফাঁকা শপিংমল। ইংল্যান্ড বনাম ক্রোয়েশিয়া সেমিফাইনাল ম্যাচ শুরু হয়ে গিয়েছে। অফিস-কাছারি সেরে সবাই তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে গিয়েছিল। বেশিরভাগই ভিড় করেছিল পাবে।
এখানে সবাই মিলে একসঙ্গে পাবে খেলা দেখার চল। আগের ম্যাচগুলো দেখিনি। শ্বশুরবাড়ির দেশ সেমিফাইনালে উঠেছে বলে কথা। ৫২ বছর পরে দেশে কাপ আসার স্বপ্ন দেখছে সবাই।
এ ম্যাচটা তাই দেখব ঠিক করেছিলাম। আমার বর রিচার্ডও বন্ধুদের সঙ্গে পাবে খেলা দেখতে গিয়েছিল। এক বিদেশিনী বান্ধবীর বাড়িতে খেলা দেখার নিমন্ত্রণ ছিল আমার। মেয়ে রোহিনীকে ঘুম পাড়িয়ে সাতটা নাগাদ বাড়ি থেকে বেরোই। খেলা তখন সবে শুরু হয়েছে। হাঁটা পথের দূরত্ব। কিছুটা যাওয়ার পরেই আশপাশের বাড়ি থেকে চিৎকার কানে এল। বুঝলাম, গোল হয়েছে নিশ্চয়ই। পৌঁছে শুনলাম কিয়েরান ট্রিপিয়ার খেলা শুরুর পাঁচ মিনিটের মাথায় ফ্রি-কিক থেকে অসাধারণ গোল দিয়েছেন।
ইংল্যান্ডকে সমর্থন করা মানেই তো আর গোলাম হয়ে যাওয়া নয়। তা ছাড়া, আমরা যারা এ দেশে থাকি, পড়াশোনা করি, ঘর বেঁধেছি, চাকরি করি, ব্রেক্সিটের প্রতিবাদ মিছিলে যোগ দিই, ভোট দিই, কর দিই, বিনে পয়সায় সরকারি স্বাস্থ্য পরিসেবা নিই, একটা টান তো জন্মেই যায়। আমিও তাই সাত মেমসাহেব বান্ধবীর সঙ্গে সেমিফাইনাল দেখার ডেট ঠিক করে ফেলেছিলাম। কিন্তু শেষটা যে এ রকম হবে, কেউ ভাবিনি। বিশেষ করে ট্রিপিয়ারের গোলের পরে সবাই ধরেই নিয়েছিলাম, ফাইনালে উঠছি। কাপ এবার ঘরে আসছে।
খেলা শুরুর আগে যতটাই উৎসবের মেজাজ ছিল, শেষে ততটাই ভেঙে পড়া মন। আমার পাঁচ বছরের মেয়েও আজ ঘুম থেকে উঠে জিজ্ঞাসা করল, ‘মা, কে জিতল?’ ওকে স্কুলে দিতে গিয়ে রাস্তাঘাটে লক্ষ্য করলাম, মুষড়ে পড়েছে সবাই। তবে সাহেবরা ভীষণ ‘ডিপ্লোম্যাটিকালি কারেক্ট’।
অনেককেই বলতে শোনা গেল, ‘ইংল্যান্ড দারুণ লড়াই করেছে। তবে ক্রোয়েশিয়া খুবই ভালো খেলেছে।’ বিশ্বকাপের শেষ চারে ওঠা সব দেশই ইউরোপের। ইংল্যান্ড বেরিয়ে গেল। সে নিয়ে রসিকতাও করছেন অনেকে, ‘সত্যিকারে ব্রেক্সিট হলো এবার!’
সাহানা বাজপেয়ী : ইংল্যান্ড প্রবাসী
বাঙালি সংগীতশিল্পী।