ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

পরিবার হোক বৈষম্যমুক্ত

মীর মারুফ তাসিন
🕐 ৯:৩৫ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ০৪, ২০১৯

আমাদের প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গির কারণেই আজও নারীরা স্বীকৃতি থেকে বঞ্চিত। যোগ্যতা থাকলেও তারা নানা বৈষম্যের শিকার। এখানে আজও পুরুষের নেতৃত্বকে ভালো দৃষ্টিতে দেখা হয় কিন্তু নারীদের নেতৃত্ব দেখা হয় অবহেলার দৃষ্টিতে। সমাজের পুরুষেরা সব দিক দিয়ে নেতৃত্ব দিবেন। পুরুষের নেতৃত্বেই স্বাভাবিক দৃষ্টিতে দেখা হয় কিন্তু নারী নেতৃত্বকে অবহেলা করা হয়, তাদের স্বাগত জানানো হয় না। আমাদের সমাজের নারীদের দুর্বলভাবে দেখা হয়।

নারীরা কি সামাজিক কাজে ও কর্মক্ষেত্রে ভালো নেতা হতে পারে না? নারীদের মধ্যে কি নেতৃত্ব দেওয়ার গুণাবলি থাকে না? আমাদের দেশে প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে নারী। স্পিকার নারী, শিক্ষামন্ত্রী, বিভিন্ন জেলা প্রশাসক নারী, বিভিন্ন জেলা পুলিশ সুপার নারী। নারী যখন নিজের কিছু হওয়া চেষ্টা করে, কিছু সফলতা অর্জন করে তখনো তাদের স্বাগত না জানিয়ে অবহেলা করা হয়।

রাষ্ট্রের একক হিসেবে পরিবারকে ধরলে সেখানকার চিত্র ভিন্ন। রাজনীতি ও প্রশাসনে নারীর নেতৃত্ব মানতে দ্বিধা না থাকলেও পরিবারে এখনো উল্টো প্রথা চলছে। পরিবারে সদস্য হিসেবে পুরুষের যেমন কথা বলার অধিকার আছে ঠিক একজন নারীরও কথা বলার অধিকার আছে। পুরুষশাসিত সমাজে নারীর মূল্য থাকলেও অবহেলা জিনিসটি বেশি কাজ করে।

একজন মানুষকে অবহেলা করলে স্বাভাবিকভাবেই তা তার অগ্রসরে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তার মনের শক্তিকে নষ্ট করে দেয়। ক্রমান্বয়ে তিনি নিজেকে অভিশপ্ত মনে করা শুরু করেন। তাই নারীদের প্রতি অবহেলা পরিত্যাগ করতে হবে।

নারীরা সহজে প্রতিবাদ করতে চায় না। দিনের পর দিন নারী অবহেলিত হচ্ছেন। কেন অবহেলা হচ্ছে এ বিষয় জানতে চাইলে গ্রিন ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা বিভাগের প্রভাষক জাকিয়া জাহান মুক্তা বলেন, বহু দিনের পুরুষতান্ত্রিকতার চর্চায় নারী পুরুষ উভয়েই অভ্যন্ত হয়ে গেছে। নারীর অবহেলিত হওয়ার জন্য সব সময় পুরুষরাই যে দায়ী তা নয়; নারীরাও তাদের অবহেলিত হওয়ার জন্য অনেকাংশ দায়ী। আমাদের সামাজিকীকরণ শেখায় নারী-পুরুষের অবস্থান আর দায়িত্ব কী। আর এই শিক্ষাই আমরা সারা জীবন বয়ে বেড়াই। বলা চলে অনেক নারী নিজেকে দুর্বল ভাবতে ভালোও বাসে। গণমাধ্যমও এক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে। নারী হবে ঘরের ‘লক্ষ্মী’ আর পুরুষ হবে ‘সুপার হিরো’ এটা তো আমাদের প্রচলিত মিডিয়া শেখায়।

নারী নেতৃত্বকে কেন অবহেলা করা হয় এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাংবাদিক মারিয়া সালাম বলেন, নারী নেতৃত্বকে অবহেলা করা বা অপছন্দ করা কোনো বিচ্ছিন্ন বিষয় নয়। সমাজে নারীর সমমর্র্যাদা দীর্ঘদিন যাবৎ অস্বীকার করে আসার প্রবণতা থেকে নারীর প্রতি অবজ্ঞা বা অবহেলার বিষয়টি একটি জিনগত বৈশিষ্ট্য হিসেবে দাঁড়িয়েছে। আমাদের সমাজে পুরুষদের একটা উচ্চ আসনে বসানো হয়েছে বহু বছর আগে এবং কালক্রমে এই বিশ্বাস প্রচলিত হয়ে গেছে। সমাজে পুরুষের দক্ষতা ও সক্ষমতা নারীদের চেয়ে অনেক বেশি।

নারীদের স্বাভাবিক অর্থেই পুরুষের চেয়ে অপেক্ষাকৃত কম দক্ষ বলে মনে করা হয়। শারীরিক শক্তির জায়গাটা বাদ দিলে একজন নারী যে একজন পুরুষের চেয়ে কোনো কাজেই কম দক্ষ নয়, সেটা আমরা কেউ মেনে নিতে পারি না। সচেতনভাবে বা অবচেতনে আমরা ধরেই রাখি পুরুষের সক্ষমতা নারীর চেয়ে অনেক বেশি, যার ফলে সমাজে নারী নেতৃত্বকে অবহেলার চোখে দেখা হয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

একজন মানুষের প্রাপ্য সম্মান করলে কোনো ক্ষতি হয় না। যে কোনো পুরুষের যেমন স্বাধীনভাবে চলার অধিকার আছে তেমনিভাবে একজন নারীর চলার অধিকার থাকতে হবে। তাই আমি মনে করি পুরুষদের নেতৃত্বকে যেভাবে স্বাগত জানানো হয় ঠিক সেইভাবে নারী নেতৃত্বকে স্বাগত জানানো উচিত।

মীর মারুফ তাসিন : সাংবাদিক
[email protected]

 
Electronic Paper