ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

নিরপরাধ মানুষ হত্যার পরিণতি ভয়াবহ

যুবায়ের আহমাদ
🕐 ৯:৫৩ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১২, ২০১৯

অন্য প্রাণীর চেয়ে আলাদা বৈশিষ্ট্যে আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। তাদের দিয়েছেন বোধশক্তি। পবিত্র কোরআনের আয়াত নাজিল করে মানুষের সে মর্যাদার ঘোষণা করেছেন সর্বশক্তিমান আল্লাহ। জীবনভর মানুষের সে মর্যাদা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করে বিদায় হজের ভাষণে তা ঘোষণা করেন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)।

তিনি ঘোষণা করেন, ‘আজকের এই পবিত্র দিন, এই পবিত্র মাস (জিলহজ), পবিত্র এই শহর (মক্কা) যেমন পবিত্র ও সম্মানিত তেমনি এগুলোও (অন্যের জানমাল, সম্মান) সম্মানিত ও পবিত্র।’ সহিহ বুখারি। এমনকি একজন ইমানদার মানুষের মর্যাদা পবিত্র কাবার চেয়েও বেশি।

আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘আমি দেখেছি, রাসুলুল্লাহ (সা.) কা’বা শরিফ তাওয়াফ করছেন আর কা’বাকে সম্বোধন করে বলছেন, (হে কা’বা) তোমার পবিত্রতা, সুগন্ধি, মর্যাদা ও সম্মান কতই না বেশি! সেই সত্তার শপথ, যার হাতে মুহাম্মদের প্রাণ, একজন মুমিনের সম্মান আল্লাহর কাছে তোমার চেয়েও বেশি।’ তিরমিজি।

আজ সেই সম্মানিত মানুষকে ঠুনকো বা ভিত্তিহীন অভিযোগে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করছে আরেক দল মানুষ। ইসলামে একজন মুমিনকে হত্যা করা তো দূরের কথা, তাকে গালাগাল করাও নিষিদ্ধ। কোনো মুমিনকে হত্যা করা সরাসরি কুফুরি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কোনো মুসলিমকে গালি দেওয়া ফাসেকি আর তাকে হত্যা করা হলো কুফুরি।’ সহিহ বুখারি ও মুসলিম। অন্য এক হাদিসে এসেছে, গোষ্ঠীপ্রীতির কারণে, দলপ্রীতির কারণে যে কোনো মানুষকে হত্যা করে সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।

অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যা সবচেয়ে বড় কবিরা গুণাহগুলোর একটি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সবচেয়ে বড় কবিরা গুণাহ হলো আল্লাহর সঙ্গে কাওকে শরিক করা এবং অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা।’ সহিহ বুখারি। এমনকি গোটা দুনিয়া ধ্বংস করে দেওয়ার চেয়েও একজন মুসলমানকে হত্যা করা বড় অন্যায়।

আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহর কাছে দুনিয়া ধ্বংস করে দেওয়ার চেয়েও মারাত্মক ঘৃণিত কাজ হলো একজন মুসলমান মানুষকে হত্যা করা।’ তিরমিজি। আর মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে কোনো মানুষকে হত্যাই ইসলামের দৃষ্টিতে সমগ্র মানবজাতিকে হত্যা করার শামিল। এরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কোনো ব্যক্তিকে হত্যা করল সে যেন পৃথিবীর সমগ্র মানবগোষ্ঠীকেই হত্যা করল।’ (সুরা মায়েদা : ৩২)

কাউকে হত্যা করা এতই জঘন্য অন্যায় যে, কিয়ামতের দিন আল্লাহতায়ালা প্রথম হত্যাকাণ্ডের বিচার করবেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কিয়ামতের দিন মানুষের মধ্যে সর্বপ্রথম যে মোকদ্দমার বিচার হবে তা হলো রক্তপাত বা হত্যা সম্পর্কিত।’ সহিহ বুখারি। নিহত ব্যক্তি ঘাতককে মাথা ধরে নিয়ে আল্লাহর আরশের সামনে হাজির করবে।

‘হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো মানুষকে যে ব্যক্তি হত্যা করেছে, কিয়ামতের দিন নিহত ব্যক্তি ঘাতককে মাথা ধরে টেনে টেনে আল্লাহর কাছে নিয়ে যাবে। তাকে হত্যা করার সময় যেভাবে রক্ত ঝরছিল, সেভাবে রক্ত ঝরতে থাকবে। ঘাতককে ঘরে নিয়ে আল্লাহর আরশের সামনে নিয়ে বলবে, হে আল্লাহ! একে জিজ্ঞেস করুন, কেন আমাকে হত্যা করেছিল।’ মুসনাদে আহমাদ। কিন্তু কী হবে সে বিচার? কোরআনুল কারিম ওই ঘাতকদের জন্য চিরস্থায়ী জাহান্নামের ঘোষণা করেছে। এরশাদ হচ্ছে, ‘যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো মুমিনকে হত্যা করল, তার শাস্তি চিরস্থায়ী জাহান্নাম। তার প্রতি আল্লাহর গজব ও অভিশাপ। তিনি তার জন্য ভয়ঙ্কর শাস্তি প্রস্তুত করে রাখবেন।’ (সুরা নিসা : ৯৩)।

যদি ঘাতক একাধিক ব্যক্তি হয়, একদল লোক হয় কিংবা গোটা পৃথিবীর মানুষ মিলেও যদি অন্যায়ভাবে একজন মানুষকে হত্যা করে, আল্লাহ ওই ঘাতক বা ঘাতকদের সবাইকে জাহান্নামে দেবেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যদি আসমানবাসী ও জমিনবাসী উভয়ে মিলে একজন মু’মিনকে হত্যা করে আল্লাহ একজন মুমিনকে হত্যা করার দায়ে তাদের সবাইকে জাহান্নামে উপুড় করে ফেলে দেবেন।’ তিরমিজি। তাই সবারই উচিত, অন্যায় হত্যা এবং এর সমর্থন থেকে বিরত থাকা।

যুবায়ের আহমাদ : জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত কারি ও খতিব
বায়তুশ শফিক মসজিদ

 
Electronic Paper