ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

রিজার্ভ হ্যাকিং : পোস্টমর্টেম

শেখ আনোয়ার
🕐 ৯:১৬ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৯

প্রযুক্তির উন্নতি ঠেকানো যাবে না। প্রযুক্তির যত উন্নতি হবে হ্যাক বা হ্যাকিং সংক্রান্ত বিষয়গুলো আরও বেশি স্পষ্ট হয়ে ধরা দেবে। এখন বিশ্বায়নের যুগ। বিজ্ঞান-প্রযুক্তির সময়। ডিজিটাল সময়। এ সময়ের ডিজিটাল নতুন সমস্যার নাম সাইবার হ্যাকিং। বিজ্ঞানের ভাষায়- ‘অনলাইন অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা চুরি, তথ্য সংগ্রহ, ভাইরাস বা ক্ষতিকর প্রোগ্রামের মাধ্যমে আক্রমণ, এসবই সাইবার হ্যাকিং।’

শব্দটা আজকাল বাংলাদেশে সবার পরিচিত। তিন বছরে এ নিয়ে দেশে যত কথা হয়েছে, স্বাধীনতার পর সব মিলিয়ে হয়তো অত কথা হয়নি। কারণ? বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ হ্যাকিং।

২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮১ মিলিয়ন ডলার অর্থ হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে সরিয়ে নেয় সাইবার অপরাধীরা। এই অর্থ ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের জুপিটার শাখার কয়েকটি হিসাব থেকে চলে যায় দেশটির ক্যাসিনোতে (জুয়া ব্যবসা)। পরে ১৫ মিলিয়ন ডলার ফেরত পেতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। বাকি ৬৬ মিলিয়ন ডলার আরসিবিসির ট্রেজারিতে এবং অর্থ উদ্ধারে আইনগত প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।

রিজার্ভ হ্যাকিংয়ের ঘটনা নিয়ে সম্প্রতি একটি পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের অদক্ষতা ও অবহেলায় অর্থ চুরি’ শিরোনামে, সরকারি তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশের আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের আরেক সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন তদন্ত কমিটির ‘অপ্রকাশিত’ তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যা বিভ্রান্তিকর। কারণ, মার্কিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এফবিআইসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক তদন্ত সংস্থা রিজার্ভ হ্যাকিংয়ে বাংলাদেশের কারও যুক্ত না থাকার কথা বার বার বলা হলেও প্রতিবেদনে তা গোপন করা হয়েছে।

এমনকি বাংলাদেশে রিজার্ভ হ্যাকিংয়ে যুক্ত থাকা উত্তর কোরিয়াভিত্তিক তিনটি হ্যাকিং গ্রুপের ওপর সর্বশেষ যে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়েছে, সে তথ্যটিও প্রতিবেদনে নেই। ওয়াকিবহাল সূত্র মতে, রিজার্ভ হ্যাকিং নিয়ে মানুষের মনে সাধারণ কিছু জিজ্ঞাসা রয়েছে- যেমন, সাবেক গভর্নর বিষয়টি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কেবল প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন এবং সরকারিভাবে হলমার্কের মতো প্রকাশ্যে সংবাদ সম্মেলন করে ঘটনাটি ফাঁস কেন করেননি? তিনি কি সময়ক্ষেপণ করে হ্যাকারদের পালাতে সাহায্য করেছেন? থানায় কেন মামলা করেননি? ইত্যাদি ইত্যাদি।

জবাবের আগে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনে রাখা দরকার। বাংলাদেশ ব্যাংক একটি উঁচুমানের করপোরেট প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানে আন্তর্জাতিক করপোরেট গভার্নেন্সের নিয়ম-নীতি যথাযথ দক্ষতায় অনুসরণ ও প্রয়োগ করা হয়। ২০০৩ সালের আইনে বাংলাদেশ ব্যাংককে স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। যাতে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। বিধি মোতাবেক এই প্রতিষ্ঠান সরকারের অংশ নয়। তাই হ্যাকিংয়ের ঘটনা জানা মাত্রই প্রতিষ্ঠানপ্রধান প্রাতিষ্ঠানিক নিয়মে নিজস্ব উদ্যোগ ও উপায়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টায় সময় ব্যয় করতেই পারেন।

এদিক থেকে বলা যায়, সরকারকে তাৎক্ষণিক জানানোর বাধ্যবাধকতার অবকাশ নেই। সাবেক গভর্নর কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তাদের অপ্রয়োজনীয় হয়রানির হাত থেকে বাঁচাতে স্বভাবসুলভ বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন। কারণ রিজার্ভ হ্যাকিংয়ে সংশ্লিষ্ট মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ। ফৌজদারি চুরি-ডাকাতি, সন্ত্রাসীর মতো মামুলি ঘটনা না হওয়ায় স্থানীয় থানা পুলিশের পক্ষে আদৌ তাৎক্ষণিক কিছু করা কি সম্ভব ছিল? সময়ের বিবর্তনে বিষয়টি সত্য ও নির্ভুল বলে প্রমাণিত হয়েছে।

সাবেক গভর্নর একা চাপ নিয়ে তার নিরপরাধ কর্মীদের বাঁচিয়েছেন। যাতে তার অসাধারণ নেতৃত্ব ও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় বহন করে। তিনি শুরু থেকেই আতঙ্ক না ছড়িয়ে, ফেডারেল রিজার্ভের সঙ্গে বিরোধে না গিয়ে, যৌথভাবে কাজ করে অর্থ উদ্ধারের কৌশল অবলম্বন করেন। ফিলিপাইন সরকারের অনুরোধ, অর্থ ফেরতের প্রতিশ্রুতি এবং জুয়াড়িদের নির্বিঘ্ন গ্রেফতার নিরাপদ করার জন্য গোপনীয়তা অত্যাবশ্যক ছিল। না হলে অপরাধীরা সতর্ক হয়ে পালাতে পারত। এই কৌশলগত গোপনীয়তা রক্ষার কারণে অল্প সময়ের মধ্যে ধরা পড়ে হ্যাকাররা। অতঃপর হ্যাকড অর্থের একটি অংশ ফেরত পাওয়া সম্ভব হয়। সাবেক গভর্নর নিজে বহুবার এ-সংক্রান্ত ব্যাখ্যা গণমাধ্যমে দেওয়ার পরও তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার সত্যিই হতাশাজনক।

এ কথা স্বীকার করতেই হবে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যায়ন বিভাগের চৌকস অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক উন্নয়ন অভিযাত্রার অন্যতম অগ্রপথিক। তার সাফল্যও বিশ্বজোড়া। গভর্নর থাকাকালে ‘আর্থিক অন্তর্ভুক্তি’র মাধ্যমে উন্নয়নের বাস্তবভিত্তিক দুরন্ত এবং দুর্দান্ত সব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং সেবায় এনে তার উদ্ভাবনী শক্তির অনন্য স্বাক্ষর রাখেন। তার কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ অর্থনীতি, সবুজ বিপ্লব বা গ্রিন ব্যাংকিং, স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য তার প্রোডাক্ট স্কুল ব্যাংকিং, (বর্তমানে জমা ১ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকা।) এছাড়া ১০ টাকার অ্যাকাউন্ট, নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ, নতুন উদ্যোক্তাদের এসএমই ঋণ, সিএসআর ইত্যাদি নামে ব্যাংকিং সেক্টরের চলমান শত শত সফল ও সৃজনশীল প্রোডাক্ট আর্থিক সেক্টরকে সমৃদ্ধ করেছে।

সাবেক গভর্নরের ইতিবাচক কর্মের ফলে ব্যাংকিং সেক্টরে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কয়েক লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয়। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বেড়ে যায়। সার্বিক অর্থনীতি, ব্যাংকিং সেক্টর, আমানত সংগ্রহ, বিনিয়োগ, আমদানি-রপ্তানি, রেমিট্যান্স দ্বিগুণ হয়ে যায়। এক কথায় নীরব অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটে যায়।

তিনি দায়িত্ব নেওয়ার সময় দেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৮ বিলিয়ন ডলার। তার আমলে ৩২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়। এসবই তার দূরদর্শী নেতৃত্বের পরিচয় বহন করে। শুধু কি তাই? মানবিক ব্যাংকিংয়ের জীবন্ত কিংবদন্তি ড. আতিউর রহমান ‘সিএসআর’ নামে ব্যাংকিং খাতের অর্জিত মুনাফার একটি অংশ জনকল্যাণে ব্যয় করার কড়াকড়ি নিয়ম চালু করেন। ফলে আজ ব্যাংকগুলোর স্কলারশিপ নিয়ে গ্রামগঞ্জের হাজার হাজার সুবিধাবঞ্চিত, দরিদ্র শিক্ষার্থী স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার সুযোগ পাচ্ছে। যা বাংলাদেশে তো নয়ই, বিশ্বের অন্য কোনো দেশে এর আগে ঘটেনি। তার একনিষ্ঠ প্রায়োগিক প্রচেষ্টায় ব্যাংকিং সেক্টর দ্রুত আধুনিক ডিজিটাল প্রযুক্তির (বিকাশ, ক্রেডিট কার্ড, এটিএম বুথ, অনলাইন ব্যাংকিং ইত্যাদি) সফল রূপান্তর ঘটে।

ডিজিটাল প্রযুক্তির দ্রুত বিস্তার ঘটার পরই, প্রযুক্তির নতুন বিপত্তি-সাইবার হ্যাকিংয়ের ট্র্যাজেডির শিকার হন গুণী ও মেধাবী এই মানুষ। এ ব্যাপারে অর্থনীতির বিশ্লেষক, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর, খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ কর্তৃক একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত তার ভাষ্য এরকম- ‘আমার পর্যবেক্ষণ হলো, বাংলাদেশে তথ্য প্রযুক্তির খুব দ্রুত ও ব্যাপক সম্প্রসারণ হয়েছে। ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বলা হয়, যে বিষয় যত দ্রুত সম্প্রসারণ হয়, তাতে তত বেশি গলদ থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থেকে যায়। আমাদের দেশেও তাই হয়েছে। এক্ষত্রে এ প্রযুক্তির উন্নতির পাশাপাশি এর ব্যবস্থাপনা ও নজরদারিতে পেশাগতভাবে উচ্চতর দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তিকে নিয়োজিত করা না যায়, তাতে ভুলভ্রান্তি হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।’

এদিকে বিব্রত ব্যাংকিং সেক্টরের পেশাদার ব্যক্তিবর্গ, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা প্রতিবেদনকে ভিত্তিহীন বলে আখ্যায়িত করে জানান, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের কেউ জড়িত নয় যেটা এফবিআই-এর তদন্ত রিপোর্টে এসেছে। ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের রিপোর্টেই রয়েছে, ফেড নিয়ম না মেনেই ট্রানজেকশন ক্লিয়ার করেছে, যেটা অনুচিত ছিল। তার মানে কী? দুর্বলতা ছিল ফেডের। ফিলিপিনের রিজাল ব্যাংকে এতগুলো টাকা গেল, যেটা ধরা পড়ল না? এর মানে কী? ওই ব্যাংকের দুর্বলতা ছিল। সেজন্য তাদের শাস্তিও হয়েছে। সুতরাং বাংলাদেশ ব্যাংক এ ক্ষেত্রে ভিক্টিম। দায়ী নয়।’

কর্মকর্তারা বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের ছোট করতে পারেন না।’ ব্যাংকারদের অভিমত, ‘সাইবার হ্যাকিংয়ের পর সাবেক গভর্নরের পদত্যাগ করা নিতান্তই ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। তিনি যদি সে সময় পদত্যাগ করে বাংলাদেশ ব্যাংক না ছাড়তেন তাহলে রিজার্ভ হ্যাকিংয়ের সমস্ত অর্থ তিনি ঠিকই পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হতেন। বিলম্বে হলেও সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক তার দেখানো পথে হেঁটে সফলভাবে ১৫ মিলিয়ন অর্থ পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়।’

সমালোচকদের মতে, ড. আতিউর রহমানের বড় অপরাধ প্রগাঢ় দেশপ্রেম। দেশের স্বার্থ রক্ষায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে তার অনমনীয় ভূমিকা বাংলাদেশের মানুষ এর আগেও দেখেছে। বিশ্বব্যাংক যখন দুর্নীতির অসত্য ধোয়া তুলে বাংলাদেশের পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়নে অসম্মতি জানায় এবং সরকারের শীর্ষস্থানীয় মহল থেকে বলা হয়, ‘বিশ্বব্যাংকের অর্থ ছাড়া পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়ন অসম্ভব’; তখন সাবেক এই গভর্নরই প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাকে সমর্থন জানিয়ে দৃঢ়কণ্ঠে উচ্চারণ করেন, ‘আমাদের নিজস্ব অর্থায়নেই এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন সম্ভব।’

তার কার্যাকালে তার নাম ব্যবহার করে কেউ বাংলাদেশ ব্যাংক তো দূরের কথা, বাংলাদেশের কোনো ব্যাংক, বীমা বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে প্রভাব বিস্তার, দালালি, ঘুষ-দুর্নীতি ইত্যাদি করেছে এমন বদনাম আজ পর্যন্ত তার ঘোরতর শত্রুরাও দিতে পারে নি। বিশ্লেষকদের মতে, ব্যাংকিং সেক্টরে তার উদ্ভাবনীমূলক নানামুখী ভূমিকা প্রতিদ্বন্দ্বীদের হৃদয়-মন ও মস্তিষ্কে প্রতিহিংসার আগুন জ্বেলে দেয়। তাছাড়া পদ্মা সেতু বিষয়ে তার নীতি তৎকালীন সময়ে বিশ্বব্যাংকের প্রভাব বিস্তারকারী, অনুগত সংশ্লিষ্ট মহলকে অসন্তুষ্ট করেছিল। আর তখন থেকেই তার বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ জোট গড়ে উঠে। পরবর্তীতে এ জোটই তার সমালোচনায় মুখর এবং তার পদত্যাগে উল্লসিত হয়ে বড় বড় চক্রান্তের জাল তৈরি করে এবং দৈব দুর্ঘটনার জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করে।

এদিকে সম্প্রতি ওই পত্রিকাটির প্রতিবেদন নিয়ে জনমনে তৈরি হয়েছে নানামুখী প্রশ্ন। সরকারিভাবে প্রকাশের আগে আগ বাড়িয়ে কেবলমাত্র ওই পত্রিকায় প্রকাশের উদ্দেশ্যই বা কী? নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বিষয়টিকে দুরভিসন্ধিমূলক ও দেশদ্রোহী কর্মতৎপরতার অংশ হিসেবে দেখছেন। জাতিসংঘের সাবেক কর্মকর্তা এম শহিদুল ইসলাম যথার্থই বলেছেন : ‘তদন্ত কমিটির সঙ্গে ড. আতিউর রহমানের কিছু ব্যক্তিগত সংঘাতের কারণে উদ্ভূত রিপোর্টে নিরপেক্ষতার অভাব রয়েছে। এ কারণে বর্তমানে ফিলিপাইনে যে মামলা রয়েছে তা দূর্বল হয়ে যাবে।’ আইন বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য : ‘এ ধরনের খবর বিচারাধীন মামলায় প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম, এতে চুরি যাওয়া বাকি অর্থ ফেরত পেতেও সমস্যা হতে পারে।’

প্রখ্যাত সাংবাদিক ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল আবদুল কাদিরের পুত্র নাদিম কাদির বলেন, ‘এর আগেও শ্রেণিবদ্ধ সরকারি দলিল ফাঁসে যারা জড়িত, তারা এখনো দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে এভাবেই কাজ করছে। ফিলিপাইনের রিজাল ব্যাংকের যেখানে এই চুরির অর্থ স্থানান্তর করা হয়েছে, সেখানে এই রিপোর্ট ফাঁসের সঙ্গে জড়িতদের সম্পর্ক রয়েছে কি-না তদন্ত করে দেখা দরকার।’ সাবেক সাংসদ বিএম মুজাম্মেল হক বলেন, ‘এই বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার সরকারের বিরুদ্ধে একটি গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। তদন্ত রিপোর্ট ফাঁসের সঙ্গে জড়িতরা দেশের সাম্প্রতিক উন্নয়ন-অগ্রগতি এবং স্থিতিশীলতার পরিপন্থী কাজ করেছেন। এ ধরনের রাষ্ট্রদ্রোহিতার বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিশ্চয়ই যথাযথ পদক্ষেপ নেবে।’

সবশেষে, বিশিষ্ট কলাম লেখক, একুশে ফেব্রুয়ারির স্মরণীয় গান রচয়িতা আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর একটি মন্তব্য উল্লেখ করা প্রয়োজন। সাইবার হ্যাকিং প্রসঙ্গে তিনি একটি জাতীয় দৈনিকে লিখেছেন- ‘এটা একটা বড় অপরাধ সন্দেহ নেই। কিন্তু এই অপরাধীদের ধরা, লোপাট করা অর্থ উদ্ধারের প্রচেষ্টার চেয়েও দেখা গেল ব্যাংকের যে গভর্নর বহু সাফল্য অর্জনের অধিকারী, তার একটি ব্যর্থতাকে বড় করে তুলে ধরে তাকে বিব্রত করা ও পদ থেকে অপসারণের ব্যাপারেই সরকারের ভেতরের একটি শক্তিশালী মহল বেশি আগ্রহী।

এটাও সরকারের জন্য একটি বিব্রতকর ও ক্ষতিকর ঘটনা। এটার দায় শেষ পর্যন্ত সরকারের ঘাড়েই বর্তাবে। অতি উৎসাহীরা এখন তা বুঝতে পারছেন কি-না জানি না। ঈশান কোণের ক্ষুদ্র খণ্ড মেঘ দ্রুত আকাশ ছেয়ে ফেলতে পারে। বিরাট ঝড় সৃষ্টি করতে পারে। সরকারকে এটাই শুধু স্মরণ করিয়ে দিতে চাই।

বর্তমানের ঘটনাগুলো এখন যতই ছোট মনে হোক, এর সুদূরপ্রসারী প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সরকার সময় থাকতে সতর্ক হোক। নইলে বাইরের শত্রু নয়, ঘরের শত্রুই সরকার ও সরকারি দলের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে।’

শেখ আনোয়ার : গবেষক, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
Email: [email protected]

 
Electronic Paper