ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

এক অমূল্য উত্তরাধিকারী

জাহাঙ্গীর আলম সরকার
🕐 ৮:৫৬ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৯

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এক অমূল্য উত্তরাধিকারীর নাম শেখ হাসিনা। যিনি নিরলসভাবে চেষ্টা করে বাংলাদেশকে তুলে ধরেছেন এক অনন্য উচ্চতায়। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে পারলেও দেশটির অর্থনৈতিক স্বাধীনতা এনে দেওয়ার সময় পাননি। ঘাতকরা তাকে হত্যা করলে স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার কাজটি অসম্পূর্ণ রয়ে যায়। এক বুক কষ্ট ও যন্ত্রণায় দগ্ধ হয়ে সেই অসমাপ্ত কাজটি করার জন্য চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। দীর্ঘ সংগ্রাম আর ধারাবাহিক পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি নিজেকে বাংলাদেশের এক আলোকবর্তিকায় পরিণত করেছেন। যদিও দেশটির গণতান্ত্রিক রাজনীতি সবসময় সরল পথে চলেনি। কাজেই প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে নিজের অবস্থানকে সুদৃঢ় করেছেন তিনি। আর এভাবেই যুদ্ধ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বাংলাদেশে একজন আদর্শিক জননেত্রীতে পরিণত হয়েছেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। তাকে হত্যার পর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী জেনারেল জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দল এবং যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করেছিলেন। শুধু তাই নয়; বঙ্গবন্ধুর উত্তরসূরি শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহেনাকে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেননি জেনারেল জিয়া। ফলে তারা দীর্ঘদিন নির্বাসিত জীবন কাটাতে বাধ্য হন। শত প্রতিকূলতার মাঝেও তিনি হাল ছেড়ে দেননি। ১৯৭৫-১৯৮১ সময়কালের মধ্যে খন্দকার মোশতাক ও জেনারেল জিয়াউর রহমানরা বাংলাদেশকে পাকিস্তানের ভাবধারায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় রত ছিলেন। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ছিল এমনই অন্ধকারাচ্ছন্ন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তখন কাণ্ডারিহীন নৌকা। জনগণের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখে তিনি সাধারণ মানুষের অধিকার অর্জনের জন্য সংগ্রাম চালিয়েছেন। দেশের বাহিরে অবস্থান করেও তিনি জনগণের আস্থা অর্জন করতে পেরেছিলেন।

১৯৮১ সালের ১৩-১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক কাউন্সিলের মাধ্যমে বিদেশে অবস্থানকালে শেখ হাসিনাকে দলের সভানেত্রী করা হয়। সভানেত্রী হওয়ার পর একই বছরের ১৭ মে তিনি সামরিক শাসনের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে দেশে ফিরে আসেন। শেখ হাসিনা মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলন থেকে শুরু করে জাতির বুকে চেপে বসা জগদ্বল পাথরের মতো সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে জনমত গঠন এবং মানুষের ভোটের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। রাজপথে আন্দোলন, সংগ্রামের মাধ্যমে শেখ হাসিনা জনগণের হৃদয়ের কাছে চলে যেতে পেরেছিলেন। তিনি একমাত্র নেত্রী, যিনি দীর্ঘ সময় রাজপথে বিরোধী দলের নেত্রী হিসেবে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেন।

১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথমবারের মতো দেশ শাসন করে শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন শাসক হিসেবে তিনি সফল। তার শাসনামলে তিনি দেশকে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তুলেছিলেন। ২০০৯ সালে দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে শেখ হাসিনা জাতিকে স্বপ্নদর্শী করে তোলেন। শুধু তাই নয়; বরং ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার সব কর্মসূচি তৃণমূল থেকে শুরু করেন। পাশাপাশি তার শাসনামলেই নারীর ক্ষমতায়নও বিশ্বে এক বিশেষ উদাহরণ স্থাপন করেছে। ২০০৯ সালের পর থেকে তিনি অদ্যাবধি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। বর্তমানে তিনি তরুণদের কাছে প্রযুক্তি ব্যবহারের অবাধ সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করেছেন। শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাসোপযোগী করার একটি সুদূরপ্রসারী উদ্যোগ নিয়েছেন।

শেখ হাসিনা বার বার বুলেট থেকে বেঁচে ফেরা এক বহ্নিশিখা। তিনি তার জীবন বাংলার মেহনতী মানুষের কল্যাণে উৎসর্গ করেছেন। রাজনীতির মাধ্যমে মানুষের কল্যাণই তার জীবন দর্শন। তিনি পিতা মুজিবের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। শুধু তাই নয়; মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একটি উদার গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশেরও প্রতিচ্ছবি তিনি। তার রাজনীতির মূলমন্ত্র হলো জনগণের জীবনমান উন্নয়ন। আর তাই বার বার স্বাধীনতাবিরোধী রাজনৈতিক অপশক্তি তার ওপর হামলা চালিয়ে তাকে শেষ করে দিতে চেয়েছে; কিন্তু প্রতিবারই তিনি নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে ফিরেছেন।

শেখ হাসিনার মতো অসংখ্যবার মৃত্যু ভয়কে উপেক্ষা করে মানুষের জন্য কাজ করে যাওয়া নেতৃত্ব বর্তমান বিশ্বে বিরল। বাংলাদেশের পরম সৌভাগ্য যে, এদেশের মানুষ শেখ হাসিনার মতো পরিশ্রমী, সৎ নেতা পেয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে উল্টোপথে চলা বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠ কখনো মসৃণ ছিল না। আর শেখ হাসিনাকে পথ চলতে হয়েছে আরও কঠিন পথে। বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনো নির্বাচিত বা অনির্বাচিত শাসক শেখ হাসিনার মতো দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকতে পারেননি। এই দিক বিবেচনা করলে শেখ হাসিনা এমন এক রেকর্ড গড়েছেন, যা এক কথায় অনন্য এবং অসাধারণ। শুধু অসাধারণই না, এই ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা অদ্বিতীয়ও বটে।

জাহাঙ্গীর আলম সরকার
আইনজীবী ও প্রাবন্ধিক
[email protected]

 
Electronic Paper