ঢাকা, বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪ | ৩ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বাঁচায় নদী, বাঁচাও নদী-৫৪

গাইবান্ধা জেলার যত নদ-নদী

ড. তুহিন ওয়াদুদ
🕐 ১০:০৪ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৯

গাইবান্ধা জেলায় নদ-নদীর প্রকৃত সংখ্যা সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। দেশের অপরাপর জেলার মতোই গাইবান্ধা জেলার অবস্থা। এ জেলায় নদ-নদীর সংখ্যা প্রায় ২১। সেগুলো- আলাই, ইছামতী, করতোয়া, কাটাখালী, কালপানি, গাংনাই, ঘাঘট, তিস্তা, নলেয়া, বাঙ্গালী, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, মৎস্য, মরা, মরুয়াদহ, মাইলা, মানাস, মাশানকুড়া, লেঙগা, শাখা তিস্তা, তিস্তা, হলহলি, তুলসী।

গাইবান্ধার নদীগুলোকে আলাদাভাবে পরিচিত করার কোনো উদ্যোগ কখনোই গ্রহণ করা হয়নি। গাইবান্ধার ওপর দিয়ে বাংলাদেশের অনেক নদীর পানি প্রবাহিত হয়। দেশের সবচেয়ে বেশি পানি বহন করে ব্রহ্মপুত্র। কুড়িগ্রাম দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করার পর গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে তিস্তা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়। তিস্তা এবং ব্রহ্মপুত্র এ দুটি নদীর পানি একসঙ্গে মিলিত হয়ে যমুনা নাম নিয়ে ভাটিতে প্রবাহিত হয়ছে। গাইবান্ধা জেলা যেহেতু সীমান্তবর্তী জেলা নয় তাই এখানে আন্তঃসীমান্তীয় নদ-নদীর সংখ্যা খুবই কম। তিস্তা এবং ব্রহ্মপুত্র এ দুটি শুধু আন্তঃসীমান্ত নদী। তিস্তার তিনটি শাখা নদী এ জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ঘাঘট নদ নীলফামারী জেলার জলঢাকা উপজেলায় তিস্তা থেকে উৎপন্ন হয়েছে। পরে গাইবান্ধায় যমুনায় মিলিত হয়েছে। মানাস নদী গঙাচড়া উপজেলায় তিস্তা থেকে উৎপন্ন হয়ে ব্রহ্মপুত্র-যমুনায় মিলিত হয়েছে। তিস্তার আরেকটি শাখা নদী সুন্দরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

ঘাঘট নদ গাইবান্ধা জেলা শহরের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। শহরের অংশে পুরনো প্রবাহ বন্ধ করে দিয়ে কৃত্রিমভাবে আরেকটি প্রবাহ তৈরি করা হয়েছে। যেটি শহরের পূর্বপ্রান্তে আবারও পুরনো ঘাঘটের সঙ্গেই মিলিত হয়েছে। পুরনো ঘাঘট তীরে এখন দখলের মহোৎসব চলছে। স্থানীয় প্রশাসনের চোখের সামনেই চলছে এই দখল। শহরের অদূরেই এ ঘাঘট থেকে একটি শাখা প্রবাহিত হয়েছে। এই শাখা নদীটির নাম আলাই।

করতোয়া নামের একটি নদী গাইবান্ধা জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। নদীটি পীরগঞ্জ উপজেলা হয়ে এ জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সন্নিকট দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ঢাকা-রংপুর মহসড়ক এ নদীর ওপর দিয়ে চলে গেছে। গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার নিকটেই খুলসী নামক একটি স্থান আছে। এই খুলসীর কাছে নদীটি তিনিটি নামে পরিচিত। কাটাখালী, বাঙ্গালী এবং করতোয়া। একটি খাল কেটে এ নদীর কোনো এক অংশে সংযোগ স্থাপন করা হয়েছিল বলে এ নদীটিকে কাটাখালী নামে ডাকা হয়।

কাটাখালীর কাছেই নদীটি দুই ভাগ হয়ে প্রবাহিত হয়েছে। একটি সরু নালার মতো ক্ষীণ ধারায় প্রবাহিত হয়েছে করতোয়া। অন্যটি বাঙ্গালী নামে প্রবাহিত হয়েছে। খুলসীতে বাংলাদেশে পানি উন্নয়ন বোর্ড ১০-১৫ ফুট একটি স্লুইস গেট স্থাপন করেছে। বগুড়া শহরের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া এক সময়ের প্রমত্তা করতোয়া আজ মরতে বসেছে এ কারণে। করতোয়া রক্ষা করার জন্য বর্তমান সরকার বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। কিন্তু করেতায়া পানির উৎসে স্লুইস গেট দিয়ে মুখ বন্ধ করে করতোয়া রক্ষা করা সম্ভব হবে না। সেজন্য অবশ্যই করতোয়ার উৎসমুখ বড় করে পানি প্রবাহ স্বাভাবিক করতেই হবে।
নলেয়া নামের একটি নদী রংপুরের পীরগঞ্জ থেকে প্রবাহিত হয়ে গাইবান্ধা জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কাটাখালী নদীতে মিলিত হয়েছে। একইভাবে কালপানি নামক একটি নদী সাঘাটা উপজেলার বোনারপাড়া ইউনিয়ন থেকে উৎপন্ন হয়ে বাঙ্গালী নদীতে মিলিত হয়েছে।

মৎস্য নামের একটি নদী পলাশবাড়ী উপজেলা থেকে প্রবাহিত হয়ে কাটাখালী নদীতে মিলিত হয়েছে। পলাশবাড়ী উপজেলা থেকে গাইবান্ধা যাওয়া পথে তিন-চার কিলোমিটার পরেই এ নদীটির সন্ধান মিলবে। মরা নামে একাধিক নদী আছে। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা থেকে উৎপন্ন হয়ে মরা নামে একটি বাঙ্গালী নদীতে মিলিত হয়েছে।

লেঙগা, হলহলি এবং মরুয়াদহ নদী সুন্দরগঞ্জ উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। মরুয়াদহ নদীটি শোভাগঞ্জ ইউনিয়নের ওপর দিয়ে গেছে।

গাউনবান্ধা জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়া ২১টি নদীর মধ্যে আমি ১৯টি নদীর পাড়ে গিয়েছি। এর মধ্যে কোনো নদীর অবস্থাই ভালো নয়। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, তিস্তা, ঘাঘট, আলাই, বাঙ্গালী, করতোয়া নদীর অবস্থা কিছুটা ভালো। তবে রাষ্ট্রের বিজ্ঞানসম্মত কোনো পরিচর্যা না থাকায় এগুলোর অবস্থাও ভালো নেই। অনান্য নদীগুলোর অবস্থা খুবই করুণ। এর মধ্যে মরুয়াদহ, কালপানি, নলেয়া, মৎস্য, মরা, মানাস, মাইলা নদীতে এখন ধানচাষ হচ্ছে। ক্ষীণভাবে প্রবাহিত হওয়া নদীগুলোর প্রতি রাষ্ট্রীয় পরিচর্যা না থাকলে এ নদীগুলো নিকট ভবিষ্যতে বিলুপ্ত নদীর তালিকায় পড়বে। এ নদীগুলো মারা গেলে এর তীরবর্তী অসংখ্য গ্রাম-জনপদ সমান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার শিকার হবে। একই সঙ্গে জীববৈচিত্র্যের ওপর খুবই নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

আমি যে ২১ নদ-নদীর খবর জানি এর বাইরেও নদী থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে যে ২১টির নাম আমি জেনেছি সেগুলোকে সরকারি তালকায় নেওয়া জরুরি। গাইবান্ধা জেলা নদী রক্ষা কমিটির সভাপতি গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক। প্রতি মাসে তারা একটি করে সভা আহ্বান করেন। সরকারিভাবে এ কমিটি করা হয়েছে। কমিটি চাইলে গাইবান্ধা জেলার নদীগুলোর তালিকা প্রস্তুত করতে পারে। প্রয়োজনে যারা নদীকর্মী আছেন তাদের সহায়তা নিয়েও গাইবান্ধা জেলার নদীগুলোর তালিকা প্রণয়ন করতে পারে।

উপজেলা নদী রক্ষা কমিটিগুলোকে কাজে লাগিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জনবলের সহায়তায় এ নদীগুলোর বর্তমান দৈর্ঘ্যপ্রস্থ এবং অতীতের অবস্থা বের করা সম্ভব। শুধু জেলা প্রশাসকের সদিচ্ছা থাকলেই গাইবান্ধা জেলার নদীগুলো চিহ্নিত করা সম্ভব। শুধু এ কাজ করলেই হবে না। স্কুল এবং কলেজ পর্যায়ে যদি শিক্ষার্থীদের মধ্যে নদীবোধ জাগ্রত করার জন্য বিভিন্ন সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান করা যায় তাহলে গাইবান্ধা জেলার জনগণও নদী সম্পর্কে জানতে পারবে।

ড. তুহিন ওয়াদুদ : সহযোগী অধ্যাপক
বাংলা বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়
রংপুর ও পরিচালক রিভারাইন পিপল
[email protected]

 
Electronic Paper