ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ডেঙ্গুর ভয়াবহতায় আতঙ্কিত দেশবাসী

মাহবুবউদ্দিন চৌধুরী
🕐 ৮:৩৮ অপরাহ্ণ, আগস্ট ০৪, ২০১৯

স্কাউট, গার্লসগাইড, রেডক্রসের স্বেচ্ছাসেবকসহ সেনাবাহিনীর টিম মাঠে নামানো হোক। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় দিন দিন আশঙ্কাজনক হারে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে যা প্রতিরোধ করার মতো গুণগত মানসম্মত মশার ওষুধ দেশে নেই। যাও আছে তা ডেঙ্গু মশা নিধনে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারছে না। ইতোমধ্যে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে দেশের হবিগঞ্জ জেলার সিভিল সার্জন ডা. মো. শাহদাত হোসেনসহ চিকিৎসক, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, পুলিশ, নারী পুলিশসহ অনেকেই মৃত্যুবরণ করেন এবং করছেন। এই সেদিন স্বয়ং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিবের স্ত্রীও ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করলেন।

ইতিমধ্যে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় নানা ধরনের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। হাসপাতালে জায়গা না থাকার কারণে ভর্তি হতে পারছে না অনেক রোগী। এতে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে বহু মানুষের মধ্যে। তারপর রক্তের চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। চাহিদা মোতাবেক রক্ত ও ডোনার সংকট দেখা দিয়েছে। এখন অতিরিক্ত চাহিদার ৯০ শতাংশ রক্ত ডেঙ্গু রোগীদের প্রয়োজন মেটাচ্ছে। দিন দিন জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যা বৃদ্ধিকে সরকারের বড় বড় মন্ত্রী ও ঢাকা দক্ষিণের মেয়র গুজব ছড়ানো হচ্ছে বলে যে মন্তব্য করেছেন, যা খুবই দুঃখজনক।

ডেঙ্গু এখন মহামারীতে রূপ নিয়েছে বা নিচ্ছে বলে মনে হয়। সরকারের ও মেয়রদের এখন টনক নড়েছে। কার্যকর ও মশা নিধনে উপযোগী ওষুধ এ মুহূর্তে ছিটাতে না পারলে এই শক্তিশালী ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা দুস্কর। প্রথম থেকে দেখেছি ডেঙ্গু মোকাবেলায় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন অবহেলা ও উদাসীনতা দেখিয়েছে। মূলত ওষুধ কার্যকর না হওয়ায় মশা মরছে না। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সরকারের এখনো তেমন কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ে না।

ইতিমধ্যে রাজধানীতে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেশে বন্যা ও ছেলেধরার নামে গুজবের কারণে সরকার চাপের মধ্যে থাকলেও ডেঙ্গু দেশব্যাপী মহামারী আকার নিয়েছে এ নিয়ে এখন আর কারও বিতর্ক নেই। ইতিমধ্যে ডেঙ্গু সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ডেঙ্গু রোগী নতুন করে যাতে কম হয়, এডিস মশার আক্রমণ কমাতে হবে নইলে এ মহামারী কোনোভাবেই রোধ করা সরকারের পক্ষে সম্ভব না। সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সিটি করপোরেশন নিয়ে এখন এই মশা নিধন কর্মসূচি নয়, গোটা মন্ত্রণালয় অর্থাৎ পুরোপুরি সরকারকে এই ডেঙ্গু মোকাবেলায় অংশ নিতে হবে। পাশাপাশি দেশের বিত্তবান ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো এনজিও, স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান, স্কাউট, গার্লগাইড, প্রশিক্ষণরত নার্সদের দ্রুত এই ডেঙ্গু রোগীদের পরিচর্চার পাশাপাশি এই রোগ থেকে মুক্তির জন্য ব্যাপক সচেতনামূলক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে হবে।

মনে রাখতে হবে সামনে ঈদ। এ সময় ডেঙ্গু ছড়ানোর ঝুঁকি খুবই বেশী। রাজধানীতে ডেঙ্গু রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষা মোটামুটি ভালো থাকলেও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলা উপজেলায় এ রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্রপাতি যথেষ্ট সংকট রয়েছে। শুধু যন্ত্রপাতি নয়, পর্যাপ্ত চিকিৎসক সংকট দেশব্যাপী। ইতিমধ্যে দেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চাপ সামাল দিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হিমশিম খাচ্ছে। এমনকি হাসপাতালে শয্যা খালি নেই। ফ্লোরেও চিকিৎসক সেবা দেওয়ার মতো জায়গারও ব্যাপক সংকট। ঈদ মৌসুমে ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ মারাত্মক আকার ধারণ করার সম্ভবনা রয়েছে। এ রোগের চিকিৎসার ব্যয়ভার গরিব ও দরিদ্র মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে অসহনীয়। বিষয়টি সরকারকে বিবেচনা করতে হবে।

ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী এবং এ রোগের মৃত্যুর হার সরকারি আর বেসরকারি সংখ্যায় অনেক ফারাক। এডিস মশার বিস্তার ঘটার কারণে এমনটি হচ্ছে। দেশব্যাপী যদি এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করা না যায় তাহলে আগামী শীতকাল পর্যন্ত ডেঙ্গুজরের রোগীর সংখ্যাও বাড়তে থাকবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। চিকিৎসকরা বলেছেন ডেঙ্গু হলেই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই তবে সঙ্গে সঙ্গেই চিকিৎসকের পরামর্শমতো পরবর্তী চিকিৎসাসেবা চালিয়ে যেতে হবে।

ডেঙ্গু জ্বরের সময় শরীরে ভীষণ ব্যথা হয় বলে অনেকে বিভিন্ন রকমের ব্যথানাশক ওষুধ খেয়ে থাকেন। এমন পরিস্থিতিতে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো ব্যথার ওষুধ খাওয়া ঠিক না। ঘরে বাইরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, ছাদে, বারান্দায়, এসির নিচে, ফ্রিজের নিচে, কোথাও জমা পানি রাখা যাবে না। ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিট সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত নগরীর কমিউনিট সেন্টারগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে ডেঙ্গু চিকিৎসা সেন্টার খোলার অনুরোধ করছি।

এছাড়া দেশের সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলোকে সময় সময় ড্রেন, নালা, নর্দমা, জলাশয়, পুকুর হতে কচুরিপানাসহ অন্য ময়লা পরিষ্কার করার উদ্যোগ নিতে হবে। স্ব স্ব বাসাবাড়ি ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ফুলের টব, ফুলদানী, রেফ্রিজারেটর, এয়ার কন্ডিশনার, বাথরুমের কমোড, ডাবের খোল, গাড়ির পরিত্যক্ত টায়ার টিউবে জমে থাকা পানি নিয়মিত পরিষ্কার রাখা ছাড়াও ঘন ঘন মশার ঔষধ ছিটানো কোনোভাবেই অবহেলা বা ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে দেওয়া যাবে না। তবে সচেতনতার মাধ্যমে এই রোগের বিস্তার রোধ করা যেতে পারে পাশাপাশি কোনোভাবেই এই রোগকে অবহেলা করা যাবে না। দেরিতে হলেও দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র প্লেনে করে বিদেশ হতে মশার ওষুধ আনার কথা বলেছেন। জানি না, কবে আসবে? তবে এ ওষুধ কবে আসবে বা কখন ছিটানো হবে তার আগে ডেঙ্গুর যে ভয়াবহতা দেখা যাচ্ছে তাতে আগামীতে সরকারকে জটিল এ সমস্যা উত্তরণে ডেঙ্গু মোকাবেলায় সেনাবাহিনীসহ স্কাউট, গার্লগাইড, রেডক্রসের স্বেচ্ছাসেবকদের অবিলম্বে মাঠে নামানো ছাড়া কোনো গতি নেই।

মাহবুবউদ্দিন চৌধুরী : গণমাধ্যম কর্মী
[email protected]

 
Electronic Paper