ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

কোরআনের মহিমায় উদ্ভাসিত মাস

আলী হাসান তৈয়ব
🕐 ৯:৫০ অপরাহ্ণ, মে ১৮, ২০১৯

গ্রন্থ বা বই বলতে আমরা বুঝি কারও লেখা রচনা বা বক্তব্যের লিখিত রূপ। কিন্তু কোরআন মজিদ কারও লেখা বই নয়, সম্পূর্ণ আল্লাহর বাণী, যা আসমান থেকে নাজিল করা হয়েছে। আমাদের প্রিয়নবী (সা.) এর বয়স যখন চল্লিশ বছর, তখন মক্কার উপকণ্ঠে হেরা পর্বতের গুহায় ধ্যানরত অবস্থায় তার ওপর কোরআন অবতরণ শুরু হয়। এরপর দীর্ঘ ২৩ বছর বিভিন্ন ঘটনা বা পরিস্থিতির আলোকে আয়াত বা সুরা আকারে তা অবতীর্ণ হয়। নবীজির নির্দেশ অনুসারে ওহি লেখক বিশিষ্ট সাহাবিরা তা লিপিবদ্ধ করেন।

নানা ঘটনা ও পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে নাজিল হলেও কোরআনের বাণীসমূহ সমকালীন নয়, বরং জগৎ সৃষ্টির আগে থেকে এই বাণী বিদ্যমান ছিল। আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে হাদিসে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহতায়ালা আসমান ও জমিন সৃষ্টির এক হাজার বছর পূর্বে সুরা ‘ত্বাহা’ ও ‘ইয়াসিন’ পাঠ করলেন। যখন ফেরেশতারা কোরআন শুনলেন, তখন বললেন, ধন্য সেই জাতি, যাদের ওপর তা নাজিল হবে, ধন্য সেই বক্ষ, যা তাকে ধারণ করবে এবং ধন্য সেই মুখ যা দিয়ে এই কোরআন উচ্চারণ করা হবে। (দারামির বরাতে মিশকাত : ২০৪৫)।

ইসলামি উম্মাহর সব মনীষী একমত যে, কোরআন ১৪০০ বছর আগের সৃষ্ট বা রচিত কোনো গ্রন্থ নয়, বরং যখন থেকে আল্লাহতায়ালা আছেন, তখন থেকে তাঁর পবিত্র কালাম বা বাণী এই কোরআনের অস্তিত্ব ও বিদ্যমান। সে কোরআনই ফেরেশতা জিব্রাইল (আ.) ঊর্ধ্বলোকের সংরক্ষিত ফলক ‘লৌহে মাহফুজ’ হতে নবী করিম (সা.) এর কাছে নিয়ে আসেন মানব জাতির হেদায়তের জন্য। এ তথ্যটি সামনে রেখে আমরা চিন্তা করতে পারি, আল্লাহতায়ালা তাঁর মহান বাণী বরণ, ধারণ ও বহন করার কত মহান নেয়ামত ও আমানত মুসলমানদের ওপর ন্যস্ত করেছেন। বিশেষ করে, রমজানে একবার সম্পূর্ণ কোরআন খতম পড়া ও শোনার সুন্দর মনোরম বেহেশতি আয়োজন হয় প্রত্যেক মসজিদে। যার নজির অন্য কোনো ধর্মগ্রন্থ বা সভ্যতার বেলায় অকল্পনীয়, অসম্ভব।

এই বাস্তবতাটি নিয়ে চিন্তা করলে যে কোনো বিধর্মী মানুষও ইসলামের সত্যতা হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করতে সক্ষম হবে। তারাবিহ ছাড়াও রমজানে সম্পূর্ণ কোরআন ব্যক্তিগতভাবে অন্তত একবার খতম করার প্রচেষ্টা থাকে প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর। যার ফলে ঘরে বাইরে কোরআনের চর্চা ও তেলাওয়াতের বেহেশতি উৎসবে মুখর হয় মুসলিম সমাজ।রমজানে যাদের জীবন এভাবে কোরআনময় হয়ে যায়, তাদের জন্য সুসংবাদ হয়েছে হাদিসে। নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, যখন কিয়ামতের দিন হবে, আল্লাহপাক বিচারকের আসনে বসবেন। গোনাহগার বান্দা দাঁড়াবে আসামির কাঠগড়ায়। তখন রোজাদারদের পক্ষে দুজন সুপারিশকারী এগিয়ে আসবে।

আল্লামা মাইবেদী এই যুক্তির পক্ষে তাফসিরে কাশফুল আসরারে বলিষ্ঠ বক্তব্য রেখেছেন। শুধু কোরআন নয়, অন্যান্য ধর্মগ্রন্থও নাজিল হয়েছে পবিত্র মাহে রমজানে। মুসনদে আহমদ গ্রন্থে হযরত ওয়াসেলা ইবনে আসকা থেকে বর্ণিত, রাসুলে করিম (সা.) বলেছেন, হযরত ইবরাহিম (আ.)-এর সহিফা রমজান মাসের ১ তারিখ নাজিল হয়েছিল। আর রমজানের ৬ তারিখে তওরাত, ১৩ তারিখে ইঞ্জিল, ২৪ তারিখে কোরআন নাজিল হয়েছে। হযরত জাবের (রা.)-এর রেওয়ায়েতে উল্লেখ রয়েছে যে, ‘যবুর’ রমজানের ১২ তারিখে এবং ইঞ্জিল ১৮ তারিখে নাজিল হয়েছে। (মা’রেফুল কোরআন)।

আমাদের উচিত রমজান মাসের মাহাত্ম্য অনুধাবন করা ও যথার্থ মর্যাদা দেওয়া। রমজানের প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগিয়ে কোরআন মজিদকে নিজের জীবনে, সমাজে ও রাষ্ট্রে বরণ ও বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা। কারণ, এই মহাগ্রন্থই মানবজাতিকে সব দুর্দশা থেকে মুক্তি দিতে পারে। কোরআন মজিদ নিজের আত্মপরিচয় দিয়ে বলছে, ‘রমজান সেই মাস, যে মাসে কোরআন নাজিল করা হয়েছে মানুষের জন্য হুদা অর্থাৎ সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যমিথ্যার পার্থক্যকারী রূপে।’ (সুরা বাকারা : ১৮৫)।

আলী হাসান তৈয়ব : খতিব, আন নূর জামে
মসজিদ, টঙ্গী, গাজীপুর।

 
Electronic Paper