ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বাঁচায় নদী বাঁচাও নদী

নদী খুঁজে নেয় আপন পথ

তুহিন ওয়াদুদ
🕐 ৯:৩৫ অপরাহ্ণ, জুন ২০, ২০১৮

নদী তার আপন পথ খুঁজে নেয়। সেই পথ খুঁজে নেয় বিচিত্রভাবে। যখন নদী কোথাও শাসনের শিকার নয়, শোষণের শিকার নয় সেখানে নদী স্বাধীন। পানির গতি আর ভূমির গঠনই পথ সৃষ্টি করে। যদি নদীর ওপর দিয়ে আড়াআড়িভাবে সড়ক নির্মাণ করা হয় তখন নদী ক্ষিপ্ত হয়। সমতল মাটি ভেঙে তখন পথ সৃষ্টি হয়।

গতিময় পানির শক্তি অফুরন্ত। ২০১৭ সালের ভয়াবহ বন্যায় কয়েকটি স্থানে নদীপ্রবাহ কতটা ক্ষিপ্র হয়েছিল তা দেখার সুযোগ হয়েছিল।
কুড়িগ্রাম জেলা সদর থেকে নাগেশ্বরী উপজেলা যাওয়ার পথে পাটেশ্বরী নামক স্থানে প্রধান সড়কের একটি স্থানে ভাঙছিল। শুধু ভেঙে গিয়েই শেষ নয়, ওই স্থানে অনেক গভীর পুকুরের মতো সৃষ্টি হয়েছিল। স্থানীয় অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি, পাঁচগছির ছড়া নামক একটি নদী ছিল।
নদীটি ধরলার শাখা নদী। এ নদীর ওপর দিয়ে প্রায় ৪০ বছর আগে আড়াআড়িভাবে সরকার একটি সড়ক নির্মাণ করেছে। এতদিন পর ধরলার পানি পুরাতন নদীর স্থান দিয়েই প্রবাহিত হয়েছে। যদি ওখানে একটি সেতু করে সড়ক নির্মাণ করা যেত তাহলে বন্যায় এত ভয়াবহ ক্ষতি হতো না। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হেনাইজের পাড় নামক একটি স্থানে একটি পানির প্রবাহ বন্ধ করে কয়েক বছর আগে এক অসৎ ব্যক্তি বাড়ি করেছিলেন।
গত বছরের বন্যায় পানি সে স্থানে নির্মিত ঘর ভেঙে নিয়ে গেছে। ওই ঘরে রাখা টেলিভিশন-ফ্রিজ কোনো কিছুই বের করে নিতে পারেননি। সব ভেসে গেছে। নাগেশ্বরী উপজেলায় গিরাই নদীর একটি শাখা ঠুটাপইকর নামক স্থানের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে। তার সামান্য কিছুটা দক্ষিণে আগের প্রবাহ বন্ধ করে নদীকে ভিন্ন পথে প্রবাহিত হতে বাধ্য করা হয়েছে। এর কয়েক বছর পর নদী আগের স্থানের সড়ক ভেঙে দিয়ে পুরাতন পথে আবার প্রবাহিত হয়েছিল।
আমাদের দেশে অনেক স্থানে নদীর ওপর দিয়ে সড়ক করা হয়েছে।
এর যেসব স্থানে সেতু করা হয়নি, সে সব স্থানে সড়ক করা জরুরি। আমাদের নদীর ওপর নির্যাতন চালানোর আর একটি কৌশল হচ্ছে নদীতে যে পরিমাণ পানি থাকে সেই পরিমাণ পানিপ্রবাহের জন্য উপযুক্ত মাপের সেতু না করে ছোট সেতু করা হয়। এতে করে দুটি ঘটনা ঘটে। দখলকারীরা ছোট সেতুর প্রস্থকে নদীর প্রকৃত মাপ ধরে নিয়ে ধীরে ধীরে দখল করতে থাকে। আর নদীর পানি বাধাগ্রস্ত হয়ে ব্রিজের স্থান ভেঙে পানি চলে যায়, নয়তো নতুন পথ তৈরি করে নেয়।
নদীকে যদি আমরা একটি নির্দিষ্ট পথে প্রবাহিত করতে চাই তাহলে তার উপযোগী নদী ব্যবস্থাপনায় মনোযোগ দিতে হবে।
সেই লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপও গ্রহণ করতে হবে। আমাদের নদীর যে স্বাভাবিক অবস্থা সেই স্বাভাবিক অবস্থাকে বজায় রাখতে হবে।
যদি কোনো নদী অনেক গভীর হয় তাহলে ওই নদীর গভীরতা বজায় রাখতে হবে। প্রতিবছর যে পরিমাণ পলি জমে নদীতে যদি আমরা সেই পলি সরানোর ব্যবস্থা না করি তাহলে নদীকে আমরা যে স্বাভাবিক অবস্থায় পেতে চাই তা পাব না। কারণ নদীর তলদেশ ভরাট হলেও পানি যে পরিমাণ ওই নদীতে আসার কথা ওই পরিমাণ পানিই আসবে।
আগে যে ধারণ ক্ষমতা নিয়ে নদী ওই পরিমাণ পানি বহন করত তার চেয়ে কম ধারণক্ষমতা নিয়ে সমপরিমাণ পানি নদী বহন করতে পারবে না। পানির স্বভাবগত কারণেই তা উছলে যাবে। যখন উছলে যাবে তখন ভাঙনের আশঙ্কাও থাকে। আর তখনই নদী আমাদের শত্রুতে পরিণত হয়।
নদী আমাদের তখন বন্ধু, যখন আমরা নদীকে বন্ধুজ্ঞান করে তার যত্ন করব। সারা বছর নদীর প্রতি যত্ন বজায় রাখতে হবে। তা না হলে নদী নতুন নতুন পথ সৃষ্টি করবে। নদীকে আর শতভাগ প্রাকৃতিকভাবে ছেড়ে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কারণ অধিক জনসংখ্যাজনিত কারণে আমরা ভূমি ব্যবহার করছি ইচ্ছেমতো। নদীকে তার পথে রাখতে না পারলে নদী তার আপন পথ খুঁজে নেবে। যা আমাদের জন্য কল্যাণের হবে না।

তুহিন ওয়াদুদ : শিক্ষক বাংলা বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও
পরিচালক, রিভারাইন পিপল
[email protected]

 
Electronic Paper