প্রথম ছাত্রী হল নিয়ে অনেক পরিকল্পনা : আনোয়ারা বেগম
এম এইচ তানভীর
🕐 ১০:১১ অপরাহ্ণ, মার্চ ১১, ২০১৯
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রী হল শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলের প্রভোস্ট হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা ড. এস এম আনোয়ারা বেগম। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি একজন লেখক। ছিলেন পিএসসির সদস্য। প্রায় ৪০ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা ও হলের পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন খোলা কাগজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এম এইচ তানভীর
শিক্ষকতার জার্নির শুরুটা জানতে চাই...
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে ১৯৮১ সালে ঝালকাঠি সরকারি কলেজে প্রভাষক হিসেবে শিক্ষকতা শুরু করি। এরপর মুন্সীগঞ্জের একটি কলেজেও কিছুদিন শিক্ষকতা করেছিলাম। ১৯৮৭ সাল থেকে একটানা জগন্নাথ কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষকতা করেছি। এরপর এটা যখন বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে গেল তখন আবার নতুন করে জয়েন করি।
চলতি বছরের জুনে হল উদ্বোধন করার কথা বলা হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে কি নির্মাণকাজ শেষ করা সম্ভব হবে?
আসলে এটা দেখাশোনা তো আমার দায়িত্ব না, হল হস্তান্তরের পর আমার কাজ শুরু হবে। আমার দায়িত্ব হলো, দাপ্তরিক কাজ দেখা ও হল পরিচালনা করা। তারপরও প্রভোস্টের দায়িত্ব পাওয়ার পর আমি তিনবার নির্মাণকাজ পরিদর্শনে গিয়েছি। কাজ একটু ধীরগতির মনে হয়েছে। তাই সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের একটার পর একটা কাজ শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষা না করে প্রতিটি সেক্টরে আলাদা আলাদা শ্রমিক দিয়ে একযোগে কাজ করানোর পরামর্শ দিয়েছি। তাহলে দ্রুত কাজ শেষ করা সম্ভব হবে। শ্রমিকরা জানিয়েছেন, মাঝেমধ্যে বাইরের ছেলেপুলেরা এসে তাদের কাজে ব্যাঘাত ঘটায়। আমি এ বিষয়েও ভিসির সঙ্গে কথা বলেছি। হলে একটি রুমের ব্যবস্থা করে দিলে আমি সকাল-বিকাল বসবো, তাহলে আর কেউ প্রবেশ করার সাহস পাবে না। সর্বোপরি, সংশ্লিষ্ট কাজের দায়িত্বশীলরা সচেষ্ট থাকলে নির্দিষ্ট সময়ে নির্মাণকাজ শেষ করা সম্ভব বলে মনে করি।
হল নিয়ে আপনার পরিকল্পনা ও নীতিমালা প্রণয়নের ব্যাপারে জানতে চাই...
হল নিয়ে তো পরিকল্পনার শেষ নেই। নির্মাণকাজ শেষ হলেই সব পরিকল্পনার বাস্তব রূপ দেব। আসলে আমি কাজের মানুষ, কাজ করতেই আমার ভালো লাগে। ইতোমধ্যে আমি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় হলের নীতিমালা সংগ্রহ করেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল ঘুরে এসেছি। মেয়েরা কীভাবে থাকে, তাদের কী কী প্রয়োজন সেসব দেখেছি। আর নীতিমালা প্রণয়নের ব্যাপারে আমাদের মিটিং হবে সেখানে সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আমি চূড়ান্ত অর্গানোগ্রাম, কম্পিউটার ও একজন এমএলএসএস চেয়ে চিঠি দিয়েছি। অর্গানোগ্রাম চূড়ান্ত হলে অন্যান্য দপ্তরে কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হবে। তখন আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করতে পারব।
যেহেতু মেয়েদের হল, সে ক্ষেত্রে সিকিউরিটি নিয়ে কী ভাবছেন?
ভিসির কাছে উইথ আর্মস এবং বাই রোটেশন ভিত্তিতে সিকিউরিটি দেওয়ার কথা বলেছি। দেখা যায়, একই সিকিউরিটি অনেকদিন থাকলে আশপাশে পরিচিতি পেয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে সিকিউরিটিরা অনেক সময় অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে যায়। আবার অনেক সময় সিকিউরিটিও হুমকির সম্মুখীন হয়। তাই শিক্ষার্থী ও সিকিউরিটির দায়িত্বে থাকা সদস্যদের যেন সমস্যার সম্মুখীন না হতে হয় সেই ব্যবস্থা করব। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সিকিউরিটির জন্য আনসার নেওয়ার পরিকল্পনা আছে।
ছাত্রী তো অনেক, সে ক্ষেত্রে আসন বণ্টনে কারা অগ্রাধিকার পাবে?
সবাই তো হলে থাকবে না, সবার হলে থাকার প্রয়োজনও হয় না। যারা প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসে তাদের বাইরে থাকার সমস্যা থাকে। আবার অনেকে দরিদ্র পরিবার থেকে আসে তাদের পক্ষেও বাইরে থাকা কষ্টসাধ্য। সব বিষয় বিবেচনা করেই সিট দেওয়া হবে। এ ছাড়াও বিভিন্ন হলে দেখা যায় নতুন শিক্ষার্থীরা একটু বেশি অগ্রাধিকার পেয়ে থাকে। তারপরও নিয়মাবলি প্রণয়ন করে বিস্তারিত জানানো হবে।
শিক্ষকতার পাশাপাশি আপনি একজন লেখক, আপনার লেখা বই নিয়ে যদি কিছু বলতেন...
আন্তর্জাতিক রাজনীতি, লোকপ্রশাসন নিয়ে কয়েকটি একাডেমিক বই লিখেছি, আমার ছাত্রছাত্রীরাও সেসব বই পড়ে। এ ছাড়াও সার্ক, উইমেন অ্যান্ড পলিটিক্স ও বাংলাদেশ পরিপ্রেক্ষিত কয়েকটি বই লিখেছি। গত বছর বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে আমার দুটি বই প্রকাশিত হয়েছে। এবারও ‘শোকাবহ ১৫ আগস্ট’ নামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে একটি বই প্রকাশিত হয়েছে। বইটি ১৫ আগস্টকে কেন্দ্র করে লেখা হয়েছে। আমি শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধা করি, ভালোবাসি তাই তাকে নিয়ে এই বই লেখা। আরেকটি একাডেমিক বই শেষের পথে, কিছুদিনের মধ্যে সেটি হয়তো প্রকাশিত হবে। বই লিখতে আমার ভালো লাগে, তাই মনের তাগিদে বই লেখা।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
খোলা কাগজ পরিবারের জন্য শুভকামনা।