ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ভালোবাসা সমাচার

রায়হান উল্লাহ
🕐 ৮:৩৩ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৯

বিশ্ব ভালোবাসা দিবস শুধুই ভালোবাসার দিন। তো কী দাঁড়াল? এ দিনকার সময় ব্যতীত বাকি ক্ষণগুলো কী? ভালোবাসাহীন? এভাবে হয় কী? আসলে সব সময়ই ভালোবাসার। সৃষ্টিই স্রোষ্টার এক ভালোবাসা। তারই পরিপ্রেক্ষিতেই যতসব রীতি। জগৎ-সংসার, বিশ্ব-চরাচর, মধ্যাকর্ষণ-মহাকর্ষ, বিচরণ-লয়। যুগের ভুল বর্ণনায় অনেকের ধারণা ভালোবাসা শুধুই নারী-পুরুষের। ভালোবাসা সব প্রাণের। এমনকি বস্তুরও। তাই তো মহাকর্ষ। বস্তুতে-বস্তুতে টান। এটাও ভালোবাসা। যুগের অসুখ হওয়া ভালোবাসা নয়। না হয় আমরা শূন্যে ভাসতাম।

ভালোবাসা চিরন্তন। সৃষ্টির শুরু থেকে আজ অবধি, এমনকি চূড়ান্ত লয়ের পূর্ব পর্যন্ত ভালোবাসা থাকবে। ভুল বলা হলো, অনাদিকালই ভালোবাসা থাকবে। দ্বিমত থাকলেও মৃত্যুর পরবর্তীতে ভালোবাসা আছে। তাই তো পুনরুত্থান। ভালোবাসার হিসাব-নিকাশ, পুরস্কার-তিরস্কার।

ভালোবাসা চলে। আসলে সময়ই এক ভালোবাসা। তাই তো সময়ের গতি কষ্ট দেয়। এক গভীর দুঃখবোধের সৃষ্টি করে। মানুষ খুঁজে ফিরে কোথায় সে। খোঁজে ফিরে জন্ম-কৈশোর-যৌবন-বার্ধক্য-মৃত্যু। ভালোবাসা কী নিজের প্রতিও নয়। বাকি সব বাদ দিলে কী এসে যায়। প্রকৃত ভালোবাসা নিজের প্রতিই থাকার কথা। তাই বলে অন্য সব বাদ দিয়ে নয়। নিজের ভালোবাসা অন্যের ভালোবাসা হরণ করলে কেমন দেখায়?

দেখাদেখি চলছে ভালোবাসার। মিথ্যে ভালোবাসারও। মিথ্যে ভালোবাসা টিকে না। তাই তো বিলীন যত সব প্রাচুর্য, অহমিকা, দম্ভ ও ক্ষমতা। ভালোবাসাও একটি ক্ষমতা, যা সবার থাকে না। ভালোবাসার প্রাচুর্য, অহমিকা বা দম্ভ সর্বোৎকৃষ্ট। কে কী গ্রহণ করবে তা তার একান্তই নিজস্ব।

এক জীবনে প্রাণ অসংখ্য ভালোবাসায় পড়ে। ভালোবাসায় পড়তে হয়, আবার উঠতেও হয়। পড়া-ওঠায় বিম্বিত হয় ভালোবাসা কেমন ছিল। ভান না প্রকৃত। ভালোবাসার হাহাকার চলে। এ হাহাকারে যেমন থাকে সুখ, তেমনি থাকে অসুখ।

মানুষ প্রাণের একটি অংশ। সে ভালোবাসতে জানে। তার রকমফের আছে। কেউ চায় খ্যাতি, কেউ যশ, কেউ প্রতিপত্তি, কেউ অর্থ, কেউ নারী, কেউ নর। আবার অনেকে কিছুই চায় না। কী চায় তা-ই বোঝে না। সেও যৌক্তিক। কারণ চাওয়া-চাওয়িতে কিছুই যায় আসে না। যা পাওয়ার পাবেই। এতে থাকতে পারে ভালোবাসা, থাকতে পারে ঘৃণা। ঘৃণাকে দেখে নাক সিটকানো কেন? ঘৃণা না থাকলে এই ভালোবাসাবাসি রঙ ছড়াতো না।

সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ মানুষ। আশরাফুল মাখলুকাত। এমনি এমনি কী? মানুষের আছে পাপ-পুণ্যের বীজ। অঙ্কুরোদ্গম অবস্থায়। পানি ঢালবেন কী ঢালবেন না, তা নিজের বিষয়। এতেই যে শ্রেষ্ঠত্ব। সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ হওয়ার পরীক্ষা।

এ বিশ্ব চরাচরে অনেক মানুষের বাস। অনেকেই গেছে অজানার দেশে। অনেকেই আসছে অজানার এ বিশ্ব চরাচরকে জানতে। কী আছে জানার? কালো খোঁজে সাদায় কী আছে? সাদা ভালোবাসে বা ঘৃণা করে কালোকে। রকমফের হবেই। কেউ শিশু, কেউ যুবা, আবার কেউ বৃদ্ধ। কেউ জার্মান, কেউ আমেরিকান, আবার কেউ বাঙালি। কেউ মুসলিম, কেউ বোদ্ধ, কেউ খ্রিস্টান। সৃষ্টির ভারসাম্য। কেউ আকাশে বাঁধে ঘর, কেউ সমুদ্রে। কারও ভালোবাসা উড়ন্ত, কারও ভালোবাসা জমাট। ভালোবাসা চলছেই। এভাবেই অনেক দূর বা খুব কাছ থেকে কেউ তার ভালোবাসার হিসাব কড়ায়-গণ্ডায় বুঝে নেয়।

ইহজাগতিক ভালোবাসায় পড়ে কেউ সব ভুলে যাচ্ছে। আবার কেউ আগামীর সঞ্চয় করছে। যার যেভাবে ইচ্ছা সুখ খুঁজছে, ভালোবাসা খুঁজছে। তবুও খুঁজছে, এটাই সুখের। এটাই ভালোবাসা। এক জীবনের বিনিময়ে অনেকে অনেক কিছুই চায়। চাওয়ার অনেকটা পূরণও হয়। চাইলে সবই মেলে। তারপরও কথা থাকে। রহস্য বলে কথা আছে। এখানে আপনার হাত নেই। না হয়তো দুর্ঘটনা বলে একটি বিষয় থাকত না। যা আপনার চোখে দুর্ঘটনা, তার মহৎ উদ্দেশ্য আছে।

একটা মানুষের জীবনে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত অনেক কিছুই ঘটে। যা রহস্যময় মনে হয়। এ রহস্য বলে আপনি কোথায়, কী, কেমন করবেন তা অনেকটা আপনার হাতে নেই। তাই তো স্কুল পালান রবীন্দ্রনাথ, আসানসোলে রুটি বেচেন দুখুমিয়া, আইনস্টাইন নিজ বাড়ির ঠিকানা ভুলে যান। সৃষ্টিশীল প্রতিটি মানুষ ভালোবাসার হাহাকারে ভোগেন। এই হাহাকার সৃষ্টিতে সহায়ক। তাই হাহাকার অন্য কোথা থেকে আসে।

জন্ম, কৈশোর পরবর্তীতে যৌবন পার করছি এই আমি। অনেক কিছুই হওয়ার কথা ছিল, হইনি। আবার অনেক কিছুই চাইনি, হয়ে গেছি। অখুশি নই। অদ্ভুত একটি পরিবারে জন্ম নিয়ে বিশ্ব চরাচরে হাঁটছি। মাড়িয়েছি অনেক পথ। পথ দিয়েছে পথের খোঁজ। এর মাঝে গেছে অনেক প্রভাব, প্রতিপত্তি, খ্যাতি, অর্থ ও এমনতর অনেক কিছু। সর্বশেষ যা পেয়েছি তা ঈর্ষণীয়। অক্ষরের চাষ শিখেছি, কিঞ্চিত। তাতেই খুশি। এক জীবনে এটাই পায় কে!

দেখেছি অনেক কিছু, বলিনি কিছুই। চারপাশে প্রাণের ভালোবাসা পেয়েছি, পাচ্ছি। এটাই তো সব। তো আর চাই কী? চাই না কিছুই! এখানেও কথা থেকে যায়। শুধু ভালো মানুষ হতে চাই। সব ছাপিয়ে এটাই সর্বোৎকৃষ্ট ভালোবাসা। তাই তো দুটোই ভালো দিয়ে শুরু। শেষটায়ও ভালো চাই। তাই নিজেকে চিনতে চাই। ভালো মানুষ হতে হলে নিজেকে চেনা জরুরি। নিজেকে চিনলে অনেক কিছুতেই ভালো করা যায়। ভালো মানুষ হওয়া সহজ নয়। তো সে চেষ্টাই চলবে। অন্তত না পুরোপুরি না মানলেও দশের চাপানো এ বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে। আশ্চর্য, না মানলে এ দিবসকে ঘিরে লিখছি কেন! আসলে ভালো দিকের বিবেচনায় এ দিবসটি চমৎকার। অন্তত বছরের বাকি দিনগুলোর ভালোবাসার খোরাক এই একটি দিন করে দিতে পারে। ভালোবাসার চর্চাও চলল একদিন। খোরাক পাওয়া গেলে অভ্যাস হয়ে যেতেই পারে। মানুষ অভ্যাসের দাস। হয়তো প্রাণও। এমন দিনে পাঠককে একটি ভিন্ন স্বাধের ভালোবাসার কবিতা পড়তে সাহায্য করি। কিছু কথা থাকে যা নিজের বলে মনে হয় বা নিজে লিখলে ধন্য হতাম- এমন মনে হয়। এক জনমের সাক্ষী হয়ে বহু জনমের গান গাওয়া সহোদর কবি মোহন্ত কাবেরী’র ‘বড় দুঃখের ছোট কবিতা’ কাব্যগ্রন্থের ‘ভালোবাসার পথ’ কবিতাটি এমনই-

‘ভালোবাসার পথ’- ভালোবাসা নদীর মতো বয়ে চলে/ সে চায় সবকিছু থাকুক তার দখলে/ ভালোবাসা সবার সাথে হেঁটে যায়/ বাড়ির পাশে তাকে রেখে খুঁজি মথুরায়।

ভালো থাকুক ভালোবাসা। ভালোই থাকে ভালোবাসা। সবাইকে ভালোবাসার এমন ক্ষণে শুভেচ্ছা।

রায়হান উল্লাহ : কবি ও সাংবাদিক।
[email protected]

 
Electronic Paper