ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ছাত্রলীগের ৭১তম জন্মবার্ষিকী আজ

জন্ম, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ

রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন
🕐 ৯:৫০ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ০৩, ২০১৯

বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার জন্য যে আন্দোলন, সংগ্রাম, ত্যাগ, রক্তপাত ও লড়াই সংঘটিত হয়েছিল তার প্রতিটি পরতে পরতে মিশে আছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নাম। বাঙালি জাতির সব ক্রান্তিকালেই কখনো কাণ্ডারি হয়ে, কখনো সহযোদ্ধা হয়ে, কখনো বা ত্রাতা হয়ে আবির্ভূত হয়েছে বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

তাই তো বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সম্পর্কে গর্ব করে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি ও বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘ছাত্রলীগের ইতিহাস বাঙালির ইতিহাস, ছাত্রলীগের ইতিহাস স্বাধীনতার ইতিহাস।’ বঙ্গবন্ধুর বক্তব্যের যথার্থতার প্রমাণ মেলে সংগঠনটির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের দিকে তাকালে। ‘শিক্ষা, শান্তি, প্রগতি’ স্লোগানকে সামনে রেখে ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ) প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিটি ন্যায্য আন্দোলন-সংগ্রামের প্রথম সারিতে ছিল ছাত্রলীগ।

বাঙালি জাতীয়তাবাদ বিকাশ ও পাকিস্তানি নির্যাতন-শোষণের হাত থেকে ‘বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা’-কে উদ্ধারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল ছাত্রলীগ। যে স্বপ্ন নিয়ে লাহোর প্রস্তাব ও দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান রাষ্ট্র নির্মাণে বঙ্গবন্ধু অসামান্য ভূমিকা রেখেছিলেন তা পশ্চিম পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর বৈষম্যমূলক আচরণের ফলে ধীরে ধীরে মিলিয়ে যায়। তাই বাঙালি জাতির অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, ও সাংস্কৃতিক মুক্তি অর্জনে বঙ্গবন্ধু যে কঠিন পথে শত নির্যাতন, জেল-জুলুম, বঞ্চনা সহ্য করেও এগিয়ে গিয়েছিলেন তার সার্বক্ষণিক সঙ্গী ছিল ছাত্রলীগ।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে জয়লাভ, ১৯৫৮ সালের আইয়ুব-সরকারবিরোধী আন্দোলন, ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা বাস্তবায়ন ও ১১ দফা প্রণয়ন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ঐতিহাসিক বিজয়, এবং ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণসহ সব প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে এ সংগঠনের নেতাকর্মীরা অবিস্মরণীয় ভূমিকা রেখেছেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কিছু বিপথগামী সেনা সদস্য কর্তৃক বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার শিকার হলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাজপথে নেমে প্রথম প্রতিবাদী মিছিল করেছিল বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। পঁচাত্তর-পরবর্তী অবৈধ সেনা শাসনামলে মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত হওয়া এই বাংলাদেশে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ভ্যানগার্ড হয়ে রক্ষা করেছিল ১৯৮১ সালে স্বদেশ প্রত্যাবর্তিত গণতন্ত্রের মানসকন্যা শেখ হাসিনাকে। পরবর্তীতে নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন এবং ১৯৯৬ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন আলোর মুখ দেখেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নির্মোহ নেতৃত্ব ও সাবলীল আত্মত্যাগের কল্যাণে।

১৯৪৮ সাল থেকে শুরু করে বাংলাদেশের সব আন্দোলন-সংগ্রামে শহীদ হয়েছেন ছাত্রলীগের অসংখ্য সৈনিক। আবার সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে আজ অনেকেই সম্পৃক্ত হয়েছেন রাজনীতির আরও বৃহত্তর পরিসরে। দেশ ও জাতির উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে পালন করে চলেছেন অগ্রণী ভূমিকা। সেসব ঐতিহাসিক ও গৌরবোজ্জ্বল পরম্পরাকে আরও সমৃদ্ধ করতে এবং বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে মর্যাদাশীল জাতিরাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, সমতাভিত্তিক ও অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলা নির্মাণে তারই সুযোগ্য কন্যা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেসব উন্নয়নমূলক, কল্যাণকর ও মানবতাবাদী উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন তা বাস্তবায়নে সবার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।

দেশরত্নের স্বপ্নের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে তারই সুযোগ্য ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের পরিকল্পনা ও বুদ্ধিবৃত্তিক সহযোগিতায় বাংলাদেশ সরকার ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের নেতৃত্ব দিচ্ছে তাতে তরুণদের প্রতিনিধিত্ব করাসহ সব প্রকল্প বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করছে ছাত্রলীগ। ‘মানবতার মা’-শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশের বর্ধমান অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, উন্নয়নমূলক ১০টি মেগা প্রোজেক্টের অভাবনীয় অগ্রগতি, মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার গৌরব অর্জন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, কঠোর হস্তে জঙ্গিবাদ দমন, ৪-জি ও স্যাটেলাইট যুগে বাংলাদেশের প্রবেশ, ‘একটি বাড়ি, একটি খামার’-সহ বিভিন্ন কমিউনিটি উন্নয়ন প্রকল্প, এমডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, নির্যাতিত-নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের নিরাপদ আশ্রয় প্রদানসহ সব পদক্ষেপে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ছিল সরকারের সুখ-দুঃখের সার্বক্ষণিক সঙ্গী।

এ ছাড়াও সম্প্রতি দিনগুলোতে সংগঠনটি দেশব্যাপী নিয়মিত রক্তদান কর্মসূচি, ত্রাণ ও শীতবস্ত্র বিতরণ, সবুজায়ন কর্মসূচি, মাদকের বিরুদ্ধে আন্দোলনসহ অনেক জনকল্যাণমূলক কাজ করে যাচ্ছে।

১৯৭৩ সালের নির্বাচন থেকে শুরু করে সম্প্রতি একাদশতম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে জয়ী করতে নিরলসভাবে কাজ করে গেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনাকে টানা তৃতীয়বারের মতো বিপুল জনসমর্থন নিয়ে জয়ী হওয়ার ক্ষেত্রে সমগ্র বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ প্রচারণা, জনগণকে সরকারের গত ১০ বছরের জনহিতকর কাজের বিবরণ প্রদান, উন্নত বাংলাদেশ নির্মাণের জন্য শাসনের ধারাবাহিকতার যুক্তির পেছনে জনসমর্থন আদায়, এবং বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, ও সমতাভিত্তিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তিকে ভোটদানে উদ্বুদ্ধ করার পেছনে ছাত্রলীগ কেন্দ্র থেকে শুরু করে প্রতিটি গ্রামে ছুটে বেরিয়েছে বিজয়ের তৃষ্ণায়। তাই শেখ হাসিনার এ অভাবনীয় বিজয় শুধু আওয়ামী লীগ কিংবা ছাত্রলীগের নয়, এ বিজয় বাংলাদেশের জনগণের, এ বিজয় গণতন্ত্রের, এ বিজয় মানবতার, এ বিজয় উন্নয়নকে টেকসই করার।

রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন : সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ

 
Electronic Paper