ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

নতুন প্রজন্মের প্রত্যাশা

মিল্টন বিশ্বাস
🕐 ৯:৩০ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১১, ২০১৮

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৬ নভেম্বর (২০১৮) মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় ‘নির্বাচনী ইশতেহারে’ তরুণদের আকৃষ্ট করা যায়, এরকম কিছু কর্মসূচি রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তরুণ ভোটাররাই বড় ভূমিকা রাখবে। তরুণদের ভোট কাজে লাগাতে হবে। এ জন্য তাদের আকৃষ্ট করতে হবে। এর আগে ২৩ নভেম্বর ‘লেটস টক’ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তরুণদের দেশ গড়ার স্বপ্নের কথা শুনেছেন। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে একাগ্র তরুণদের স্বপ্ন, উদ্যোগ, পরামর্শ ও চাওয়া-পাওয়ার কথা সেদিন ব্যক্ত হতে দেখেছি আমরা।

সেদিন নতুন প্রজন্মের সঙ্গে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ে তোলার স্বপ্ন ও পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেন তিনি। দেশ গঠনে তরুণদের পরিকল্পনা ও পরামর্শের কথা জানা গেছে সেখান থেকে। নতুন প্রজন্মের তরুণরা এটাই প্রত্যাশা করে যাতে দেশের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনার সুযোগ ঘটে এবং তাদের ভাবনা ও সমস্যাগুলোর কথা নীতিনির্ধারকদের কাছে পৌঁছায়। প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী তরুণদের সঙ্গে এ ধরনের আয়োজনে যোগদান করে বাংলাদেশে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। আসলে ‘লেটস টক’ থেকে আমরা সেদিন জানতে পেরেছি, এই নতুন প্রজন্ম একজন রাষ্ট্রনায়কের বেড়ে ওঠা সম্পর্কে জানতে উৎসুক। তার শৈশব, কৈশোর, যৌবনের গ্রাম-বাংলা তথা বাংলাদেশের অবস্থা জানতে কৌত‚হলী; একজন নারী হয়েও কোন মানসিক শক্তিবলে এবং কীভাবে তিনি সক্ষম হলেন সব প্রতিক‚ল অবস্থা জয় করে, চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করে মানুষের কল্যাণে নিবেদিত হতে! প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে তার ছলছল চোখের দীপিত বিচ্ছুরণের কিরণ সম্পাতে স্নিগ্ধ মায়া জেগে ওঠার মুহূর্তগুলোও সেদিন নিংড়ে নিয়েছে নতুন প্রজন্ম। আত্মশক্তিতে বলীয়ান এই নেতার কাছ থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছে আজকের যুবসমাজ। তারা জেনেছে ডিপ্রেশনে ভুগে কোনো উন্নতি করা যায় না। এ জন্য নিজেকে কখনো ছোট কিংবা অক্ষম মনে করা উচিত নয়। তারা সেদিন আরও জেনেছে, জঙ্গিবাদ দূর করেছেন শেখ হাসিনা; মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়েছেন। এরপর দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেবেন তিনি।

০২.
নতুন প্রজন্মের প্রত্যাশার কথা মনে রেখেই সর্বত্রই বলা হচ্ছে, তরুণ ভোটাররাই পার করাবে নির্বাচনী বৈতরণী। সংবাদপত্র ও নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনের পর থেকে ২০১৮ পর্যন্ত প্রতিবছর গড়ে ২৫ লাখের মতো ভোটার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে তালিকায়। এ সময়ে ভোটার বেড়েছে ২ কোটি ৩০ লাখ ৫৫ হাজার ৩৭৮ জন। এর মধ্যে ১ কোটি ২১ লাখ ৭৭ হাজার ২১৪ ভোটার আগে কখনোই জাতীয় নির্বাচনে ভোট দেয়নি। তারা একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রথম ভোট দেবে। গত ১০ বছরে নতুন ভোটারদের মধ্যে ১৮ বছর বয়সের ভোটার রয়েছে ৪৬ লাখ, ১৯ ও ২০ বছরের ২৭ লাখ, ২১ ও ২২ বছরের ৩৭ লাখ, ২৩ ও ২৪ বছরের ৭০ লাখ, ২৬ বছর বয়সের ভোটার রয়েছে ৪৭ লাখ। এর মধ্যে আরও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ২০ লাখ তরুণ ভোটার। এই হিসাবে নবম থেকে ২০১৮ পর্যন্ত ভোটার তালিকায় যুক্ত হওয়া দুই কোটি ৩০ লাখের বেশি তরুণ ভোটাররাই ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও দেশে মোট ভোটার সংখ্যা এখন ১০ কোটি ৪১ লাখ ৪২ হাজার ৩৮১ জন। উল্লেখ্য, নতুন ভোটার সচেতন হওয়ার পর অন্য কোনো সরকার দেখেনি। তারা আওয়ামী লীগ সরকার দেখেছে গত ১০ বছর একটানা। ফলে তাদের প্রত্যাশা অন্যদের থেকে আলাদা হওয়াটাই স্বাভাবিক।  
আগেই উল্লেখ করেছি, নতুন প্রজন্মের তরুণ ভোটাররা জীবনে প্রথমবারের মতো একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে। এ জন্য তারা আশা করছে অবাধ, সুষ্ঠু ও সুন্দর একটি নির্বাচন হবে; নিজে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারবে। এবারের নির্বাচনে অনেকগুলো রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করছে; যা সুষ্ঠু গণতন্ত্র চর্চার একটি নমুনা। তরুণরা বরাবরই সংঘাতমুক্ত নির্বাচন চায়। আবার কিছু তরুণের চোখ উন্নয়নের দিকে। বর্তমান সরকারের নেতৃত্বে দেশের অনেক উন্নয়ন হয়েছে; ভবিষ্যতেও হবে। নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। সবকিছু বুঝেশুনে এবং ইতিহাস পর্যালোচনা করে যাকে যোগ্য মনে হবে তাকে ভোট দেবে তারা। এখনকার তরুণরা তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সমাজের বাসিন্দা। দেশের প্রকৃত ইতিহাস জানার ফলে তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রগতিশীল নেতৃত্বের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে। সচেতন এ তরুণ সমাজ আগামীর সুন্দর সোনার বাংলা গড়তে যোগ্য ব্যক্তিকেই নিজেদের মূল্যবান ভোট দেবে বলে আমরা মনে করছি।
নতুন প্রজন্মকে আকৃষ্ট করার জন্য এ জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর ‘নির্বাচনী ইশতেহারে’ থাকছে কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি ও বেকার ভাতার ব্যবস্থা। আওয়ামী লীগ সবসময় একটি স্বচ্ছ ও বাস্তবায়নযোগ্য ‘ভিশন’-কে সামনে রেখে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতির পর এখন তাদের লক্ষ্য ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ গড়ে তোলা। জানা গেছে, এবার ইশতেহারে থাকবে ৮১ বছরের অর্থাৎ ২০১৯ সাল থেকে ২১০০ সাল পর্যন্ত পরিকল্পনা। এ ছাড়া ইশতেহারে সন্ত্রাস ও ধর্মীয় জঙ্গিবাদ এবং মাদক ও দুর্নীতি নির্মূলের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে উপস্থাপিত হবে। দ্বিতীয় পদ্মা ও যমুনা সেতু, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণসহ দেশের সার্বিক উন্নয়নের বিভিন্ন বিষয় গুরুত্ব পাবে এবারের ইশতেহারে। দেশের প্রবৃদ্ধি যেন দুই অঙ্কে পৌঁছায় সে জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের ঘোষণা আসছে ইশতেহারে। দেশের প্রতিটি মানুষের সাংবিধানিক ও মৌলিক অধিকার যেন রক্ষা হয় সে বিষয়টিও ইশতেহারে জোরালোভাবে থাকছে বলে মনে করা হচ্ছে।
অন্যদিকে যুবসমাজের কথা মনে রেখেই আওয়ামী লীগ সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে সারা দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল সৃষ্টি করার কথা জানিয়েছে। সারা দেশে ১০০টি স্থানে তা প্রতিষ্ঠা করা হবে। এতে ১ কোটি যুবকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। মাদ্রাসা শিক্ষার জন্য আলাদা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কওমি মাদ্রাসার ডিগ্রিকে সরকারি স্বীকৃতি প্রদান গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘটনা। ফলে এই শিক্ষার সঙ্গে সংযুক্ত যুবসমাজের কর্মসংস্থানের পথ এখন উন্মুক্ত। অন্যদিকে নারীর দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ পর্যন্ত প্রায় ১৯ লাখ নারীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। নারীর ক্ষমতায়নে আত্মকর্মসংস্থান কার্যক্রমের আওতায় বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণের জন্য ট্রেড ব্যাংক পরিচালিত হচ্ছে। নতুন প্রজন্মের কর্মসংস্থানের দাবি আওয়ামী লীগের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াবে না বলে মনে করছেন নীতিনির্ধারকরা। গত ১০ বছর শেখ হাসিনা সরকার যুবসমাজের জন্য যেভাবে কাজ করেছে তাতে তরুণ ভোটাররা আবারও আওয়ামী লীগকে বেছে নেবে রাষ্ট্রক্ষমতায় এটাই স্বাভাবিক।  

০৩.
নতুন প্রজন্মের তরুণরা জানে আওয়ামী লীগের দেশপ্রেম স্বতঃস্ফূর্ত এবং নিঃস্বার্থ। এ জন্য তারা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ অথবা অঙ্গসংগঠনের মধ্যে ওপেন কিংবা সিক্রেট দুর্নীতি দেখতে চায় না। উপরন্তু দলাদলি, রাজনীতি কিংবা অন্য কোনো কারণে দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি দেখতে ইচ্ছুক নয় এ প্রজন্ম। কথায় কথায় মুক্তিযুদ্ধের দোহাই দিয়ে কাউকে রাজাকার, জামায়াত বলাও অপছন্দ করে তারা। এ প্রজন্ম বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আদর্শ ও স্বপ্নকে বাস্তব রূপে দেখার জন্য সহায়তা করতে চায় এবং তারা যে কোনো বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ গ্রহণকে অভিনন্দন জানাতে উন্মুখ থাকে। দেশের মন্ত্রীদের ব্যর্থতার দায়ভার নিয়ে পদত্যাগের রীতি প্রচলিত হোক তাও তারা প্রত্যাশা করে। রাষ্ট্র ও সমাজে মানুষের জীবনে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রত্যাশা তাদের স্বাভাবিক প্রবণতা। দূষণমুক্ত নগর ও শিক্ষা ক্ষেত্রে দুর্নীতিমুক্ত পরিবেশ তাদের কাম্য। প্রশ্নফাঁস তাদের জন্য হতাশার জগৎ তৈরি করে। পরীক্ষার হল দুর্নীতিবাজদের প্রভাবমুক্ত দেখতে চায় তারা। সরকারি অফিসগুলোতে জবাবদিহির ব্যবস্থা থাকবে বলে তারা মনে করে। সে ক্ষেত্রে ‘সিটিজেন চার্টার’ কঠোরভাবে অনুসরণ করা দরকার। ২০০৮ সাল থেকে আওয়ামী লীগ সরকার যে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রত্যয় ব্যক্ত করে কাজ শুরু করেছিল তার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন চায় তারা। এ ছাড়া কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা, নিজের পায়ে দাঁড়াতে বিশেষ ব্যাংক লোন প্রদান, বেকার ভাতাসহ নানা প্ল্যাটফর্মে তরুণদের কাজে লাগানোর পরিকল্পনা নির্বাচনী

ইশতেহারে তারা দেখতে চায়। নতুন প্রজন্মের এসব প্রত্যাশা ও বর্তমান বাংলাদেশ সম্পর্কে কথা বলতে হলে অবশ্যই এ দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের গুণগত পরিবর্তনের কথা বলতে হবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ২০১৮ সালে নির্বাচনে রাজনৈতিক মেরুকরণ বা জোট, উন্নয়ন, সুশাসন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পাশাপাশি নতুন ভোটারদের গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবের কারণে নেতৃত্বের প্রসঙ্গটি সামনে এসেছে। এক জরিপে দেখা গেছে, দেশের ৬৮.৩ শতাংশ শিক্ষিত তরুণ ভোটার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সন্তুষ্ট। তাদের মধ্যে ৫৩.৫ শতাংশ ভোটার মনে করে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। তরুণদের ৫১.৩ শতাংশ চায় বর্তমান সরকার আবার ক্ষমতায় আসুক।
এই নতুন প্রজন্ম কেন শেখ হাসিনাকে সমর্থন করে? কারণ পারিবারিক ও রাজনৈতিক আদর্শের বাইরে তাদের একটি স্বাধীন ও স্বকীয় চিন্তা বিকশিত হয়েছে। তা ছাড়া এক যুগ আগে বিএনপির শাসন ব্যবস্থা (২০০১-০৬) ও তাদের দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডের কথা তরুণ প্রজন্মের কাছে ‘রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডা’ বলে মনে হয় না। এ প্রজন্মের সন্তানরা জানতে পেরেছে দেশের স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধুর অবদানের প্রকৃত ইতিহাস। তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দেখেছে, তাকে কেন্দ্র করে গণজাগরণ মঞ্চের ‘জয়বাংলা’-স্লোগানে আলোড়িত হয়েছে। সেই চেতনায় স্নাত হয়ে সাম্প্রদায়িক হামলায় বিপর্যস্ত হিন্দু ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য তারা ছুটে গেছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। তারা বুঝেছে, বর্তমান বাংলাদেশ তারেক জিয়ার ‘হাওয়া ভবনে’র বাংলাদেশ নয়, বরং সব প্রতিক্রিয়াশীলতার বিরুদ্ধে কাজ করে যাওয়া ধর্মীয় সহিষ্ণুতার এ দেশ শেখ হাসিনার জনকল্যাণকর রাষ্ট্র। এ জন্য নতুন প্রজন্ম আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির, শেখ হাসিনার সঙ্গে খালেদা জিয়ার, ছাত্রলীগের সঙ্গে ছাত্রদলের, সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে তারেক রহমানের তুলনা করতে সক্ষম।  
বর্তমান বাংলাদেশ পাল্টে গেছে কারণ, বিএনপির শাসনামলে সারা দেশ স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবিরের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছিল। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মাধ্যমে সংখ্যালঘু নির্যাতন, আওয়ামী লীগ নেতাদের হত্যা, ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা, দেশব্যাপী জঙ্গিবাদের বিস্তার জনজীবনকে আতঙ্কগ্রস্ত ও দুর্বিষহ করে তুলেছিল। ছাত্রদলের সন্ত্রাসে কেবল ছাত্রলীগ বা নিজ দলের প্রতিপক্ষকে নয় বাবার কোলে থাকা নিষ্পাপ শিশু, বুয়েট শিক্ষার্থী সাবেকুন নাহার সনির মতো অনেক সাধারণ মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে। দুর্নীতিতে ধারাবাহিকভাবে চারবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আন্তর্জাতিক লজ্জা অর্জিত হয়েছিল বিএনপির সময়। খাম্বার ব্যবসা করে শত শত কোটি টাকা মুনাফা হাতিয়ে নিলেও বিদ্যুতের অভাবে মানুষকে হাহাকার করতে হয়েছে। বিএনপির আমলে সারের জন্য কৃষকের প্রাণ ঝরেছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি মানুষের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছিল। একের পর এক শিল্পকলকারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বিএনপির দুঃশাসনের তালিকা আরও অনেক দীর্ঘ। চারদলীয় জোট সরকারের সময় জামায়াত-শিবিরের লাখ লাখ নেতাকর্মী ও সমর্থক সারা দেশে তাণ্ডব চালিয়েছে। ২০১৩ ও ২০১৪ সালে দেশব্যাপী তারা পেট্রোলবোমা মেরে অগ্নিসন্ত্রাস করেছে। অন্যদিকে স্বাধীনতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীর সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর খুনি ও তাদের দোসররা এখন বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। তা ছাড়া বাংলাদেশে পাকিস্তান আমল থেকেই আওয়ামীবিদ্বেষী একটি পক্ষ রয়েছে। এদের সবাইকে সম্মিলিতভাবে পরাস্ত করতে পারে তরুণ সমাজ। কারণ, ’৫২, ’৬৯, ’৭১, কিংবা ’৯০-এর বিজয়ে তরুণরাই অগ্রপথিক ছিল। গত ১০ বছরে কিছু আন্দোলনে তরুণ প্রজন্ম সচেতনতা ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছে। তাদের দাবি আদায়ের আন্দোলনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া তথ্য ভালোভাবে যাচাই করে দেখা যায়, শেখ হাসিনার নেতৃত্বকেই তরুণ সমাজ গুরুত্ব দিয়েছে।

০৪.
তরুণরা যেমন আবেগি তেমনি বুদ্ধিমান। কোন সরকার দেশের জন্য কী করেছে-সেটা তারা যেমন বিচার করতে পারে; আবার কোন সরকার পুনরায় ক্ষমতায় এলে কী করবে- তাও তারা নির্ধারণ করতে পারে। রাজনীতিসহ অন্য কর্মকাণ্ডেও তরুণদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। দেশের চাকরির বাজারে প্রতিবছর ২৫ থেকে ২৬ লাখ তরুণ যুক্ত হচ্ছে। কিন্তু দেশের কর্মখাত সবাইকে সমান সুযোগ দিতে পারছে না। কর্মসংস্থান নিয়ে অনিশ্চয়তার মাত্রা এখনো কমেনি। অবশ্য নতুন প্রজন্ম আইটি খাতে উদ্যোক্তা হিসেবে এগিয়ে এসেছে যা ইতিবাচক। তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে নানা ধরনের ব্যবসায় আগ্রহীদের সংখ্যা অনেক। এসব তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য সুবিধা দিলে দেশের অর্থনীতিতে তারা আরও বেশি অবদান রাখতে সক্ষম হবে।

০৫.
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এ দেশের সবচেয়ে বড় সম্ভাবনার খাত এ দেশের মানুষ। অতিরিক্ত জনশক্তির দেশ এটি। ১৬ কোটি মানুষের মেধা আর ৩২ কোটি দক্ষ কর্মীর হাতের পরশে যে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন সম্ভব। বিশ্বের কোথাও এ দেশের মতো এমন উজ্জ্বল সম্ভাবনার জনশক্তি আছে বলে মনে হয় না। তার মতে, আমাদের শক্তি আমাদের তারুণ্য। এ দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩০ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ৫ কোটি তরুণ। দেশের অগ্রগতিতে তাদের অবদান দিন দিন স্পষ্ট হচ্ছে। এরা মিথ্যা শক্তিকে যেমন গুঁড়িয়ে দিতে পারে তেমনি ভূমিকা রাখতে পারে বিপ্লবের মাধ্যমে দেশ গড়তে। জাতির কাণ্ডারির ভূমিকায় শক্ত হাতে হাল ধরার ক্ষমতাও এদের আছে। কোনো অন্যায় কিংবা মিথ্যা শক্তির কাছে এরা কখনো মাথা নত করেনি আর করবেও না কোনোদিন। বাংলাদেশে এখন প্রতি তিনজনে দুজনই উপার্জনক্ষম। নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যা কমে যাওয়ায় জাতীয় সঞ্চয় বেড়েছে। অর্থনীতি সবল হয়েছে।’-যথার্থই বলেছেন, শেখ হাসিনা। বাংলাদেশে এখন ১০ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণের সংখ্যা পৌনে পাঁচ কোটি। এর সঙ্গে ২৫ থেকে ৪০ বছর বয়সী যুব জনসংখ্যাকে ধরলে বলা যায়, জনসংখ্যার তিন ভাগের দুই ভাগই টগবগে তরুণ। বিপুলসংখ্যক তরুণ জনগোষ্ঠীর ‘উন্নতি করার’ তীব্র আকাক্সক্ষাকে কাজে লাগাতে হবে। এটা একটা সামাজিক-পুঁজি। তরুণ প্রজন্মকে শিক্ষিত ও দক্ষ করে তোলার দায়িত্ব পালন করেছে আওয়ামী লীগ সরকার।  
নতুন প্রজন্ম গত ১০ বছরে স্বাধীনভাবে কথা বলতে পেরেছে। তারা দেখেছে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে এ দেশে। টিভি টকশোতেও তারা কেউ কেউ অংশগ্রহণ করে নিজের মতামতও ব্যক্ত করেছে। সংসদ সদস্যদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে পেরেছে নিজেদের দাবি নিয়ে। তারা আজ এবং আগামীতে দুর্নীতিমুক্ত, সন্ত্রাসহীন, মাদকমুক্ত বাংলাদেশ দেখতে চায়। ইতিবাচক বাংলাদেশের পক্ষে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে তাদের অবস্থান। কার্যকর দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হোক সেটাই তাদের কাম্য। এই তরুণরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিকশিত আধুনিক বিশ্বের নাগরিক হতে চায়। তরুণরা ডিজিটাল বিশ্বে বিচরণ করে। তারা বুঝেছে দেশ এখন সমৃদ্ধির পথে এগোচ্ছে। দেশবিরোধীদের তারা আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। আশা সঞ্চারের মাঝে কিছু নিরাশা থাকলেও তারা অদম্য উৎসাহে এগিয়ে যেতে সক্ষম।
তবে নতুন প্রজন্মের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। ধর্মীয় উগ্রবাদিতা, মাদকাসক্তি এর মধ্যে প্রধান। উল্লেখ্য, শিক্ষিত যুবসমাজের মধ্যে ধর্মের নামে জঙ্গিবাদের সঙ্গে যুক্ত হওয়া এখনো বড় সমস্যা। ২০১৬ সালের ১ জুলাইয়ে হলি আর্টিজানের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা আমরা কেউ ভুলে যাইনি। সেই বিপথগামীদের সুপথে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অতীতে তরুণদের আবেগি মনের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে, ইসলামের নামে দেশবিরোধী কার্যক্রম চালানো হয়েছে। তবে ধর্মীয় উগ্রবাদিতা ও সন্ত্রাসের পথ থেকে মগজধোলাই হওয়া তরুণ-তরুণীকে সৎপথে নিয়ে আসার জন্য বর্তমানে সুপথে থাকা যুবসমাজকেই দায়িত্ব নিতে হবে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তরুণদেরও সচেতনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে হবে। বাংলাদেশটা যেন সবার হয়, ধর্মান্ধ ও পাকিস্তানপন্থী প্রতিক্রিয়াশীলদের হাতে যেন ক্ষমতা না যায়-এটাই হোক নতুন প্রজন্মের অন্যতম প্রত্যাশা।  

ড. মিল্টন বিশ্বাস : পরিচালক, জনসংযোগ তথ্য ও প্রকাশনা দপ্তর, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
email- [email protected]

 
Electronic Paper