ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

মার্কসের দ্বিশতবর্ষে ব্যক্তিগত ইশতেহার

শহীদ ইকবাল
🕐 ৮:২৩ অপরাহ্ণ, মে ১৯, ২০১৮

১৯৫২ সালের ২৬ এপ্রিলকে কখনো গুলিয়ে ফেলা যায় না। ওটা একটা প্রত্যুষ। আমরা একটা ভোর দেখেছিলাম- ওই তারিখটিকে নিয়ে, আটের দশকে। মার্কসবাদ-লেনিনবাদ না বুঝলেও ‘ইথোস’রূপে অন্তরে স্থান করে নেয় তা। বুঝে নিই, জলে-স্থলে সমান করার নামই বুঝি মার্কসবাদ? কেন মার্কসবাদ।

তবে তখন- ওই সময়ে মার্কসের ছবি, এঙ্গেলসের ছবি আমাদের কাঁচা মনকে পাল্টে দেয়, কাঁপুনি দিয়ে জ্বর নামিয়ে দেয়। কাজী লুমুম্বা নামের একজন তখন মণি সিংয়ের গল্প বলেন। গল্প প্রসঙ্গে কমরেড ফরহাদ জন্ম নেন, আমাদের ভেতর। সময়টা ছিল স্বৈরশাসনের, বোধ করি আটের দশকের গোড়ার দিকে।
এরপর আমাদের পোস্টারের মুখ তৈরি হয়, স্লোগান লেখা হয় স্কুলের বাউন্ডারিতে; গাছের ওপর দিয়ে, তারের ওপর দিয়ে, টিনের চাল পেরিয়ে খুব সুন্দর একটা আলোকিত জায়গায় রঙের তুলি দিয়ে সাম্যের স্লোগান লিপিবদ্ধ করি। সেসব কড়া স্লোগান। নিরাপোস স্লোগান। জীবন উৎসর্গ করার স্লোগান। বিপ্লবী হওয়ার স্বপ্ন।
এভাবেই কৈশোর গড়ে উঠলে একদিন কলেজ বারান্দায় দাঁড়িয়ে ‘যুব ইউনিয়ন’ ও সেই সঙ্গে ম্যাক্সিম গোর্কির নাম উঠে আসে। ‘মা’ উপন্যাস। এ ‘মা’ অন্য মা। তিনি ডাক দেন, প্রেরণা দেন, ন্যায় বলেন, সত্য শেখান, সামনে এগিয়ে যেতে বলেন, পেছনে নয়, পেছনের দরোজা নয়- বীরের মতো, নির্ভয়ে- সহাস্যে- সাহসের সঙ্গে বাঁচতে বলেন। বাঁচাতে বলেন। এ মা কার? পাভেলের? নাকি সবার! আমার মা’র মুখ তৈরি হয় ওতে। যুবা ছেলে, তারুণ্য গণ্য সন্তান তুমি ওই মাকে চেনো? পুলিশ-থানা-রাষ্ট্র সব বাজি রেখে কারখানা থেকে রাস্তায় নামো, এক করো, পাভেলের মতো অনেককে সঙ্গে নিয়ে একটি নতুন রাশিয়ার কথা বলো। গোর্কির এ উপন্যাস ঠিক তখন উপন্যাস নয়। বারুদ। অপ্রতিরোধ্য। অনেকাংশে ‘মানুষ জন্ম’ যেন।
এভাবে হাতে হাতে আরও আসেন তুর্গেনিভ, নিকোলাই অস্ত্রোভস্কি, টলস্টয়, পুশকিন। কলেজের বারান্দায় কে একজন বুয়েট থেকে প্রকাশিত একটি স্যুভেনির আমাদের হতে দেন। সেখানে গল্প-কবিতা-প্রবন্ধ মুদ্রিত থাকে। বেশ কড় কড়া। শুধু কাগজে নয়, চেতনারও। ওঁরা মেধাবী ছাত্র, তাই ছাত্র ইউনিয়ন করে। একটু পরেই যুব ইউনিয়নে সংশ্লিষ্ট হবে। ওসব দেখে বুয়েট পড়ার বীজ আয়ত্ত হয়। ভালো ছাত্র হওয়ার জন্য বড় লোভ হয়। এ লোভ সুনীলের অনেককাল বেঁচে থাকার মতো লোভ।
এই লোভ এত বিস্তৃত যে, পাশের বাড়ির পলি-সুপ্তারাও তাতে ঢেলে দেয় প্রাণমন। ‘নদী’ পত্রিকার ভেতরে। সবুজ কচুপাতা কালারের ‘নদী’। ওটাও তখন বুঝি ঢাকা থেকে রংপুরে পরে আমাদের এলাকায় এসেছিল। কচুপাতা কালারের সুন্দর পরিচ্ছন্ন সংখ্যা। আমাদের স্কুল শিক্ষক সাখাওয়াৎ স্যার লিটলম্যাগ পড়ার অনুপ্রেরণা দিয়েছিলেন। ওসবে বড় বড় মেয়েমানুষের ছবি থাকত। ছবির ভেতরে কালার আর ভাইটাল স্ট্যাট মার্কা শরীর দেখে দেখে মাস্টারবেশনের অভ্যাস জন্মে যাচ্ছিল। পড়ার চেয়ে তখন ছবিই প্রধান।
কিন্তু নদী বা সোভিয়েট নারী, সোভিয়েট ইউনিয়ন একটু অন্যরকম। ওতে বড় বড় মানুষের ছবি থাকে। বনেদি, অহঙ্কারী মনে হয় তাদের। কেন জানি না একদিন ‘যুদ্ধ ও শান্তি’ নামে প্রগতি-রাদুগার একটি ঢাউস কপিও হাতে এল। অসম্ভব তারুণ্যময় ভেতরের পাতা। মচমচাও। কেমন জানি গোল গোল বাংলা অক্ষরগুলো। তবে সবচেয়ে ভালো লাগল তুলনামূলক একটু কম পরিসরের ‘রেজারেকশন’। অনেকটা স্থির হওয়ার মতো। তবে খুব বেশি পড়া হয় তখন ‘ক্রাইম অ্যান্ড পানিশমেন্ট’। এক রাসকলনিকভ গড়ে ওঠে চেতনায়। কে এই রাসকলনিকভ? খুব দেখা ও চেনা মনে হয়! এত পরিচিত কেন? কেন তার ভেতরে এত মায়া! পাগল, ক্লান্ত, খুনি অপরাধী আমাদের মনটা কেড়ে নিয়েছিল।
আমাদের শিক্ষক শেখ আতাউর রহমান রুশ সাহিত্য খুব মজা করে পড়াতেন। তিনি গল্প করেন, ‘আরে! কী পড়ো! নেখলুদভকে নিয়ে আমার কী যে সমস্যা হচ্ছিল, ঘুমাতে পারিনি অনেকদিন!’ কথাটা সত্য কী! জানি না, কিন্তু তা সত্যের মতো হয়ে বাস্তব হয়ে আমাদের সামনে সপ্রতিভ হয়। এই সপ্রতিভতা থেকে জীবনে আর পিছুপা আসেনি কখনো।
আমরা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ হওয়ার স্বপ্ন দেখেছি। লাইব্রেরিতে বসে পুশকিনের কবিতার বাংলা অনুবাদ পড়ে মুগ্ধ হয়েছি। সোভিয়েট বলয়ের দেশ পোল্যান্ড, রোমানিয়া, পূর্ব জার্মানি আমাদের হাতছানি দিয়ে  ডেকেছে। অলিম্পিকের অনেক ইভেন্টে আমরা ওইসব দেশের সমর্থক হই। নাদিয়া কোমেনিচির নাম শুনে শুনে রোমানিয়া আমাদের মুখস্থ হয়। প্রতিদিন নাদিয়াকে দেখি। আর স্বপ্নে ভাবি রোমানিয়া সুন্দর দেশ। ওই সুন্দর দেশ তো পোল্যান্ডও।
তবে ঢাকার মতিঝিলে মারলিন রেস্তোরাঁ দেখে হেমিংওয়ে খুব প্রিয় হয়েছিলেন। ‘দ্য ওল্ড ম্যান অ্যন্ডি দ্য সি’। মজার কাহিনী। কিন্তু অনেক পরে। সেটির কেন্দ্রে ছিলেন কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক। খুব সহজ করে নাকি হেমিংওয়ে গল্প করেন। সাম্রাজ্যবাদী দেশে এমন গল্পকার হয় কী করে- হাসান স্যার বলতেন। তবে এও বলতেন, উপন্যাস তো মহাকাব্যের মতো। ওটা শুধু দস্তয়েভস্কিকেই মানায়। রুশ ঔপন্যাসিকদের তুলনা হয় না।
ওঁদের সাহিত্য, ওঁদের সমাজ, মানুষের গড়ন ঠিক আমাদের মতোন। তাই খুব ঘটা করে বলেন ‘ব্রাদারস্ কার্মাজভ’টা পড়তে হবে রে! ঢাউস উপন্যাস। কষ্ট করে হলেও পড়ো। তখন এসব নাম মনে রাখাও কঠিন। তবে মনে রাখতে হয়। মনে আসেও। বাজারে গিয়ে খুঁজতে থাকি ‘ব্রাদারস্ কার্মাজভ’। রাজশাহীতে পাওয়া যায় না। পরে ঢাকার বইমেলায় গিয়ে একটি ইংরেজি বই কেনা হয়। সেটি ‘ব্রাদারস্ কার্মাজভ’। খুব নিষ্ঠুর রচনা। কিছু বুঝি কিছু বুঝি না। তবে তা এখনো ওই অবস্থায় শেলফে আছে।
এসব সবকিছুই আসলে এলোমেলো এক যুবক হয়ে ওঠার গল্প। ছাত্র ইউনিয়ন থেকে যুব ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার গল্প। এ গল্প হয়তো অনেকেরই। তাই অপরের কাছে এর মূল্যহীনতাও হয়তো অনস্বীকার্য। কিন্তু নিজের কাছে যথেষ্ট মূল্যবান।
রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতনে গেলে মন পবিত্র হয়। পুণ্যবান মনে হয়। পূর্ণ হয়ে উঠি। ঠিক তেমনি নিজের এসব কাহিনীঢতে একটু স্নাত হওয়ার ব্যাপার তৈরি হয়। তবে সোভিয়েট ইউনিয়ন ভেঙে গেলে খুব বেশি গালি দিয়েছি গর্বাচেভকে। গ্লাসনস্ত বা পেরেস্ত্রইকা ঠিক না বুঝলেও বেশুমার কষ্টে ছিলাম, নব্বইয়ের তারকাযুদ্ধ মার্কা সেই দিনগুলোতে। ওসব না বুঝেই হয়তো-বা।
কিন্তু আমরা জানি যে স্বপ্ন বুনে গেছে মনে তা অনিঃশেষ। পুণ্যবান। পরিপূর্ণ। এই নিয়েই তো আজ কত কিছু জানতে ও বুঝতে পারি। মানুষ ও পবিত্রতা বুঝি। সাহিত্য করি। কিছুটা হলেও ভেতরে শ্লাঘা তৈরি হয়। সবকিছু দিয়েছে ওই মার্কসবাদ। মার্কসবাদী নন্দনতত্ত্ব নিয়ে এখনো ক্লাসে প্রতিদিন কথা বললেও প্রায় এমন একই কথা মনে হয়।
তবে এটি তো সত্য যে, পৃথিবীতে পরিবর্তন আসবে, জীবনের বাঁকে বাঁকে নতুন স্রোত গড়ে উঠবে কিন্তু সাম্য ও ন্যায়ের জন্য যে আদর্শ তা কখনো বিলীন হবে না। মানুষ জন্মের সঙ্গেই তা সঙ্গতিপূর্ণ। তাই মার্কসবাদ যেমন মরে না, মার্কসীয় অভিবাদিত রাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়নও মরে না। তা চির-আবর্তমান ও সমুজ্জ্বল। এই সমুজ্জ্বলতা একটি চেতনা। সে চেতনা অবিনাশী। কলুষমুক্ত। মুক্তমান। চিরবাঞ্ছিত। আর মার্কসীয় সাহিত্য যে নান্দনিক-কাঠামো গড়ে দিয়েছে তা এখনো দোর্দণ্ড দেদীপ্যমান। কারণ, এ আগুন অবিচলিত এবং প্রবহশীল। বিষয়টায় একটু ব্যাখ্যার অবকাশ আছে।
‘সুপার স্ট্রাকচার’ ও ‘ডিপ স্ট্রাকচার’ থিয়োরিতে পরের কার্যত অংশটি অর্থনীতির মূল। পুঁজির। মার্কস ‘পুঁজি’ নামক গ্রন্থে ‘উদ্বৃত্ত তত্ত্বে’র কথা বলেছেন। এই তত্ত্বই শোষণের মূল। জীবনের বাঁকে আজ যে কর্পোরেট পুঁজির যুগ এসেছে সেখানে এই উদ্বৃত্ত-কাঠামো আরও বহুদূর সম্প্রসারিত হয়েছে। বিস্তার পেয়েছে। তাই এর সাথে লেগে আছে পণ্যায়ন, পণ্যবৃত্তি, ভোগ আর বিকৃত জৌলুশ। এই বিকার ও বিকৃতি এখন প্রতিটি পর্যায়ে। এমনকি শিল্প-সাহিত্যের মতো ক্ষেত্রেও তা ছেয়ে গেছে বেশুমার, বিনষ্টি রুদ্ররোষে অচ্ছুৎ করে ফেলেছে অনেক কিছু। এই বিনষ্টির পরিখা এখন লেখককেও ছেয়ে ফেলছে। বিষয়টি প্রতিনিয়ত প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে।
লেখকরা এখন আশা করে, জৌলুশ চায়, ক্ষমতা চায়, প্রচার চায়, প্রতিষ্ঠা চায়, অন্য আর দশজনের থেকে সে ভিন্ন নয়, একই রথে গা ভাসাতে চায়। বিকৃতভাবে সে বলছে কোনো ত্যাগ নয়, বাসি কিছু নয়, কেন সেক্রিফাইজের জীবন হবে শুধু লেখকের, কেন তার প্রতিপত্তি বা প্রতিষ্ঠা রইবে না। এরকম ডিমান্ড তাকে ঘিরে বসেছে।
এক অর্থে সে আসলে, মার্কসবাদকে ত্যাগ করেছে, মার্কসের নন্দন হয় না বলে গণ্য করেছে, রবীন্দ্রনাথকে বুর্জোয়া ভেবে নিয়েছে, ঝুঁকে পড়েছে মিডিয়ার ব্যবসায়- যেখানে পাশ্চাত্যের অভিবাসনকেই তার মুখ্য বলে মনে হচ্ছে। এই গোলমেলে কারবারে লেখক কার্যত আর লেখক নেই। সে ব্যবসায়ী।
তার চেতনা বিনষ্ট। কণ্ঠ অবরুদ্ধ। চেতনা কুণ্ঠিত। ভাবনা শূন্যগ্রস্ত। চিন্তা দৈন্যতায় আচ্ছন্ন। এমন অভাবিত প্লাবন আর নৈঃসঙ্গতায় জরাজীর্ণ আমাদের জীবনযাপন। সময়হীন সময় আর বিষয়ের কুণ্ঠিত অপচয় এ যেন। এ থেকে মুক্তি কী? নিশ্চয়ই মার্কসবাদ। বিশ্বাস করি, সাহিত্যও বাঁচতে পারে মার্কসবাদের নিয়মে বা চর্চায়। মার্কসবাদকে বা মার্কসীয় নন্দনকে আমলে নিলে সাহিত্য রুচি ও বিচারিক ক্রিয়াকানুনেও সফলতা পেতে পারে। বাঁচতে পারে নন্দন। জীবনের প্রকৃত সত্যটি উদ্ধার পেতে পারে।
যেটি বলার এবং যা উপেক্ষিত না তা হলো, মার্কসবাদ ছাড়া (সেটি গোপন বিশ্বাস হোক বা প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ প্রয়োগ হোক) সাহিত্যের প্রকৃত রসপোভোগ কিছুতেই হয় না। এটা জোর দিয়েই বলা যায়। দায়িত্ব নিয়েও বলা যায়। সাহিত্যের ভিত্তি যেহেতু সমাজ-কাঠামো নির্ভর (সাধারণত) তাতে সমাজের স্তরান্যাস কিংবা উৎপাদন-সম্পর্কের অভিপ্রায় না জেনে তার চর্চা তো অমূলক। যদিও অনেকেই রুচি থেকে বলেন, শিল্পে সামাজজ্ঞান অপ্রাসঙ্গিক, সাহিত্য শুধুই ভোক্তার বিন্যাস রুচির প্রাচুর্য তাতেও ওই মার্কসবাদী অভিক্ষেপটি আছে- তা বিচ্যুত নয়। বর্জন তো নয়ই।
বলা যায়, শিল্পী যখন কিছু নির্মাণ করেন, সেখানে সমাজপাঠটি অনিবার্য। সমাজ আসুক বা না আসুক, সমাজের অধঃক্ষেপ সাহিত্যে পড়ুক বা না পড়ুক জীবনের মৌলিক অনুযোগ বিরচন তখনই সম্ভব হবে যখন মানুষের যথার্থ অবস্থানটি নির্ণীত সম্ভব হবে। বস্তুত এইটিই অনিবার্য সত্য। এবং তাই-ই নান্দনিক সত্য। এখন দস্তয়েভস্কি পড়লে সমাজের একটি রূপরেখা ধরা পড়ে, সমাজের রথচক্র হয়তো আসঙ্গ হয়ে ওঠে কিন্তু সর্বোপরি তাতে লুকায়িত থাকে জীবনের অচরিতার্থ অভ্যাস বা চিরকল্যণের প্রত্যয়বিন্দু। বিষয়টি অলৌকিকত্ব ও অপরূপত্ব নিয়েই উদ্ভাসিত। সেটি পাঠান্তে সত্য হয়ে ওঠে। চিরায়ত রূপে অমলিন রয়ে যায় পাঠকের নির্লিপ্ত অন্তরে।

শহীদ ইকবাল : অধ্যাপক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
[email protected]

 
Electronic Paper