ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

স্বাধীনতা যেদিন পায় পূর্ণতা

সাবিলা নাসরিন
🕐 ৩:১১ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১০, ২০২৩

স্বাধীনতা যেদিন পায় পূর্ণতা

আজ ১০ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। ১৯৭২ সালের এই দিনে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করে তাঁর প্রানের দেশ স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশে ফিরে আসেন। আজকের এই দিনে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পূর্নতা পায়।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার পর বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়।পাকিস্তানের কারাগার থেকে দীর্ঘ সারে নয় মাস পর মুক্তি পায় বাঙ্গালীর এই অবিসংবাদিত নেতা। বাঙ্গালীর অন্তর জুড়ে গ্রহনযোগ্যতার তুঙ্গে ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেদিন বিমানবন্দর থেকে রেসকোর্স ময়দান পর্যন্ত লাখো জনতার জয় বাংলা ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে।

বাংলাদেশের লাখো কোটি বাঙালির দাবি ও বিশ্ব জনমতের চাপের প্রেক্ষিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করে তাঁর প্রাণপ্রিয় দেশে এই দিনে ফিরে আসেন। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে আবার নতুন করে গড়ে তুলতে বঙ্গবন্ধু একমাত্র অবলম্বন। পাকিস্তানের সামরিক জান্তা প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান পাকিস্তানের কারাগারে বঙ্গবন্ধুর গোপনে বিচারের কাজ করে তাঁকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। বঙ্গবন্ধুর প্রহসনের বিচার বন্ধ করে মুক্তির জন্য পাকিস্তানের সামরিক জান্তাকে চাপ দেয়ার বিষয়ে অনুরোধ জানিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ৬৭টি দেশের সরকার প্রধান ও রাষ্ট্রপ্রধানকে চিঠি দেন। অতঃপর বিশ্ব দরবারের চাপে ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পকিস্তানি কারাগার থেকে মুক্তি পান। একটি পাকিস্তান সামরিক বিমানে খুব গোপনে বঙ্গবন্ধুকে লন্ডনে পাঠিয়ে দেয়া হয় সেখান থেকে দিল্লী আসেন ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ভি ভি গিরি ও প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী বঙ্গবন্ধুকে অভ্যর্থনা জানান। দিল্লিতে বিশাল নাগরিক সংবর্ধনায় বঙ্গবন্ধু ভাষণ দেন। দিল্লিতে শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে বঙ্গবন্ধু এক বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন। সে বৈঠকে তিন মাসের মধ্যে বাংলাদেশে অবস্থানরত ভারতীয় সৈন্যদের ফিরিয়ে আনার বিষয়টি আলোচনা হয়।

দিল্লী থেকে বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখতেই অশ্রুসিক্ত জাতির পিতাকে স্বাগত জানায় স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ সহ জাতীয় চার নেতা। ঢাকা সহ দেশের আনাচে কানাচে থেকে লাখো জনতা ছুটে আসেন বঙ্গবন্ধুকে এক পলক দেখার জন্য। শেখ মুজিব সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দাঁড়িয়ে তাঁর ঐতিহাসিক বক্তৃতায় বলেন, ‘যে মাটিকে আমি এত ভালবাসি, যে মানুষকে আমি এত ভালবাসি, যে জাতিকে আমি এত ভালবাসি, আমি জানতাম না সে বাংলায় আমি যেতে পারবো কীনা। আজ আমি বাংলায় ফিরে এসেছি বাংলার ভাইদের কাছে, মায়েদের কাছে, বোনদের কাছে। বাংলা আমার স্বাধীন, বাংলাদেশ আজ স্বাধীন"।বিশ্ববাসী ও বাঙালিরা প্রত্যক্ষ করেছিল আপন মহিমায় উজ্জল এক রাষ্ট্র নেতাকে।বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ যে রেসকোর্স ময়দানে বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতা ও মুক্তি সংগ্রামের ডাক দিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে বলেছিলেন আর সেই রেসকোর্স ময়দানে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি তিনি বলেন “আজ থেকে আমার অনুরোধ, আজ থেকে আমার আদেশ. আজ থেকে আমার হুকুম ভাই হিসেবে। নেতা হিসেবে নয়, প্রেসিডেন্ট হিসেবে নয়, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয়, আমি তোমাদের ভাই, তোমরা আমার ভাই, এই স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যাবে যদি আমার বাংলার মানুষ পেট ভরে ভাত না পায়। এই স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি আমার বাংলার মা-বোনেরা কাপড় না পায়, এই স্বাধীনতা পূর্ণ হবে না। যদি এ দেশের মা- বোনেরা ইজ্জত ও কাপড় না পায়। এই স্বাধীনতা আমার পূর্ণতা হবে না যদি এ দেশের মানুষ, যারা আমার যুবক শ্রেণী আছে তারা চাকরি না পায় বা কাজ না পায়। যথেষ্ট কাজ পড়ে রয়েছে। আপনারা জানেন, আমি সমস্ত জনগণকে চাই, যেখানে রাস্তা ভেঙ্গে গেছে, নিজেরা রাস্তা করতে শুরু করে দেও। আমি চাই, জমিতে যাও, ধান-বোনাও, কর্মচারীদের বলে দেবার চাই, একজন ঘুষ খাবেনা না, মনে রাখবেন, তখন সুযোগ ছিলোনা, আমি ক্ষমা করব না। ”

ভাষণের এক পর্যায়ে পাকিস্তানের বিচারকার্য নিয়ে বলেন,"আমার সেলের পাশ আমার জন্য কবর খোড়া হয়েছিল। আমি প্রস্তুত হয়েছিলাম। বলেছিলাম, আমি বাঙালি, আমি মানুষ, আমি মুসলমান, একবার মরে দুইবার মরে না। আমি বলেছিলাম, আমার মৃত্যু এসে থাকে যদি আমি হাসতে হাসতে যাব। আমার বাঙালি জাতকে অপমান করে যাব না। তোমাদের কাছে ক্ষমা চাইব না এবং যাবার সময় বলে যাব, জয় বাংলা, স্বাধীন বাংলা, বাঙালি আমার জাতি, বাংলা আমার ভাষা, বাংলার মাটি আমার স্থান।” বঙ্গবন্ধু তার ভাষণে দিক নির্দেশনার এক পর্যায়ে বলেন "এই বাংলাদেশে হবে সমাজতন্ত্র ব্যবস্থা, এই বাংলাদেশে হবে গণতন্ত্র, এই বাংলাদেশ হবে ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র।” স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষ সেদিন পেয়েছিল দেশ গড়তে নতুন এক দিকনির্দেশনা। বঙ্গবন্ধু ছিলেন অকুতোভয় সাহসী এক নেতা আজও এই দেশের যেকোন সংকটে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ একমাত্র ভরসা। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হলেও বাঙ্গালী প্রকৃত স্বাধীনতার স্বাদ পায় ১০ জানুয়ারি ১৯৭২। যুগে যুগে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নাম।

লেখক: সদস্য, কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি বিষয়ক উপকমিটি
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

 
Electronic Paper