ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

দক্ষিণ এশিয়ায় সাংবাদিকতা চাপে আছে : অগ্নি রায়

ড. কাজল রশীদ শাহীন
🕐 ৯:৩৯ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৩, ২০১৮

অগ্নি রায় তুখোড় সাংবাদিক ও কবি। গদ্য, পদ্য ও সাংবাদিকতা-তিন মাধ্যমেই তিনি উচ্চকিত। আনন্দবাজারের কাজের সূত্রে দেড় দশক ধরে আছেন দিল্লি। বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে সম্প্রতি ঢাকা এলে মুখোমুখি হন খোলা কাগজ-এর। দক্ষিণ এশিয়ার দুই প্রতিবেশী ভারত ও বাংলাদেশের রাজনীতি, সমাজনীতি, অর্থনীতিসহ বিবিধ বিষয়ে নিজস্ব মতামত শুনিয়েছেন ড. কাজল রশীদ শাহীনকে

(প্রথম পর্বের পর)
শরণার্থী প্রসঙ্গ এলে আসামের কথাও আসে। নাগরিকপঞ্জি নিয়ে সেখানকার অবস্থা উত্তাল। বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখেন?
খুব সোজাভাবে বলতে গেলে, এটা একটা রাজনৈতিক বিষয়। এটা আদৌ কোনো প্রায়োগিক বিষয় না। এটা নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই, সে কথা, বারবার ভারতীয় শীর্ষ নেতৃত্ব বাংলাদেশের শীর্ষ নেতৃত্বকে ছাড়াও বিভিন্ন স্তরে বলে দিয়েছে।
তবে আমি মনে করি, বিজিবি সভাপতি অমিত শাহ হুমকির স্বরে যে কথা বলেছেন সেটাতে বাংলাদেশের মানুষের অসম্মানিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। এ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে যে শব্দ উনি ব্যবহার করেছেন, সে শব্দটা সৌজন্য বা রুচির সঙ্গে যায় না। কিন্তু তাই নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ নেই, সেটা শেখ হাসিনা জানেন। উনি ওনার ঘনিষ্ঠদের তা জানিয়েছেনও যে, এটা কোনো চিন্তার বিষয় নয়। ৪০ লাখ লোকের মধ্যে কাল থেকেই ২ লাখ করে আসা শুরু করবে, তাদের ঘাড় ধাক্কা দিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হবে, ওটা হবে না। হবে না কারণ, এটা একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া। ওরা তো ট্রাইব্যুনালে যেতে পারে-নাগরিকপঞ্জির আইনের মধ্যে দেওয়া আছে। তা ছাড়া আমাদের দেশের আইনের যে শ্লথগতি, একটা লোক যদি ট্রাইব্যুনালে যায়, ৫০ বছর লাগিয়ে দিতে পারে। এ নিয়ে আর বিশদ কিছু আমি বলব না। কারণটা হচ্ছে, এটা ঘরোয়া রাজনীতি। এইটুক অবধি আমি বলতে পারি।

ভারতে দীর্ঘদিনের গণতন্ত্রের কথা বললেন, বহুত্ববাদের কথা বললেন। এ সময় এসে সেসব প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বলে আপনার মনে হয়?
নিশ্চয়ই। বহুত্ববাদ প্রশ্নবিদ্ধ তো বটেই, আমরা দেখতে পাচ্ছি, অসহিষ্ণুতা সার্বিকভাবে বাড়ছে। সেটা শুধু রাজনৈতিক জীবনেই না, বাড়ছে সমাজ জীবনে, ব্যক্তি পর্যায়ে। কেউ কাউকে সাহায্য করতে পারছে না। সবার রাগ বাড়ছে, হিংস্রতা বাড়ছে। এটা বোধহয় সময় বা সমাজের অসুখ, যা প্রতিটা যুগেই আসে, বারবার আসে। আবার সেটা থেকে একটা কোর্স কারেকশন নেওয়া হয়। কোনো একজন মানুষ উঠে আসেন। তিনি কিছুটা ট্র্যাকের মধ্যে ফিরিয়ে আনেন। আবার এভাবে চলতে থাকে। এখন সময়টাই এরকম যাচ্ছে। এসব আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখে না। আজকের দিনে সংবাদমাধ্যম তো চারটা কাগজ নয়, সবার কাছে খবর আছড়ে পড়ছে। কোনো সন্দেহ নেই, আমাদের মধ্যে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে, বাড়ছে আমাদের রাজনৈতিক স্তরে, সামাজিক স্তরে, পারিবারিক স্তরে। এ ওকে কেটে ফেলছে, মেরে ফেলছে, চলতেই থাকছে।
 
এ বছরের জানুয়ারি মাসে আপনি একটি রিপোর্ট করেছিলেন, মনে আছে?
হ্যাঁ, হ্যাঁ। মনে থাকবে না কেন?

ওই খবরের কোনো ফলোআপ আছে?
ফলোআপ বলতে এটুকু বলা যায়, ভারতের ঘোষিত অবস্থান এই, যে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আমরা কথা বলতে পারি। যে দল ক্ষমতায় আসবে তাদের সঙ্গেই আমাদের কাজ করতে হবে। সেটা রিপাবলিকান হোক আর ডেমোক্রেটিক হোক। সেটা হোক বিএনপি কিংবা আওয়ামী লীগ। আমাদের তো দুটো দেশের মধ্যে কাজ হবে, কোনো পলিটিক্যাল পার্টির সঙ্গে তো নয়। প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারতের একটা গুরুত্ব আছে। সে হিসেবে ভারতের কাছে বিএনপি নেতারাও আসছেন। আজকে থেকে না, অনেক দিন থেকেই আসছেন। আমার সঙ্গেও একটা সময় একজন বিএনপি নেতার খুব ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। উনি এলেই আমাকে ফোন করতেন, আমিও যেতাম। কারণ আমি সব সময় বিরুদ্ধ দলের মত শুনতে চাই। খাওয়া-দাওয়া করতাম। বিজেপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের কথা হচ্ছে। লাস্ট কুড়ি দিনের মধ্যে কিছু হয়েছে কিনা জানি না। তবে তারা আসছেন, আসাটা বাড়াচ্ছেন। বলে রাখা ভালো, এ সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নেতারা সম্পূর্ণভাবে অবগত।

২০১৪ নির্বাচনে কি আপনি এসেছিলেন?
হ্যাঁ। নির্বাচন কাভার করতে আসি বা না আসি, ২০১৪-তে আমার সঙ্গে বিএনপির কথা হয়েছিল। বিএনপির পার্টি অফিসে গিয়েছিলাম। আমাকে তো খুব গালাগাল দেয় ওরা। তাদের দিক থেকে হয়তো তার কারণও আছে। উনারা বলছিলেন, আপনি আমাদের সম্পর্কে মিথ্যা কথা লেখেন। আমি অবশ্য নাম মনে রাখতে পারি না, অনেক বড় বড় নেতা ছিলেন সেখানে। তিন-চারজন মিলে প্রেস কনফারেন্স করেছিলেন। বলেছিলেন, আপনি মিথ্যা লিখেন, আমাদের বিরুদ্ধে লিখেন। আমি হেসেছি, কী আর বলব সেখানে। তারপর জামায়াতেরও একজনের সঙ্গে বৈঠক করেছিলাম। ভদ্রলোক ল’য়ার ছিলেন।

রাজ্জাক সাহেব?
ব্যারিস্টার ছিলেন। লম্বা, ফর্সা, দাড়ি আছে। খুব ভালো ইংরেজি বলেন। তারপর থেকে প্রায় এক-দেড় বছর ধরে আমার কাছে জামায়াতের পক্ষ থেকে রেগুলার প্রেস রিলিজ পাঠানো হতো। কিন্তু কেন জানি না, এখন সেটা বন্ধ হয়ে গেছে। আমি কিন্তু নিয়মিত ওদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতাম। ওরাও আমার সঙ্গে যোগাযোগ রাখত।
কিন্তু এবারে সেসব হলো না। আসলে আমার সময় নেই বলে, নয়তো একজন সাংবাদিক হিসেবে আমার উচিত ছিল, বিএনপির পার্টি অফিসে গিয়ে, তাদের সঙ্গে বসে কথা বলা। এটা আমার হয়ে ওঠেনি। আমি এ ব্যাপারে আপনার সাহায্য চাই, আপনার কাছে কারও নম্বর থাকে আমাকে দেবেন, অন্তত ফোনে কথা বলব। সাংবাদিক হিসেবে আমি কখনই একপেশে চিত্র তুলতে চাই না। পরিস্থিতি সম্পর্কে অনেকটা জানা হবে না, যদি আমি বিরুদ্ধ মতটা না জানতে পারি। আমি তো জাজমেন্টাল হতে পারি না। বাংলাদেশে আমি কি দেখেছি তা জানাতে চাই, আমি কী ভাবছি, তা জানাতে চাই না। কারণ সেটা আমার কাজ নয়। তা হলে হয়তো জানা যাবে, বিএনপি কী চাইছে, কীভাবে চাইছে। কিন্তু ওরা ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে, সেটুকো আমি জানি।

সার্বক্ষণিক?
একদম সর্বক্ষণ না। একটা রিচ আউট করার চেষ্টা করছেন তারা। পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন, এটুকু জানি।
 
আগামী নির্বাচন নিয়ে আপনার কী ধারণা? আমাদের এখানে দুই রকমের পারসেপশন আছে, নির্বাচন ২০১৪ সালের মতোই হবে আবার কেউ মনে করছেন, তেমনটা আর হবে না।
কথাবার্তা শুনে, পড়াশুনা করে মনে হচ্ছে এবার অংশগ্রহণমূলক হবে। কারণ, ২০১৪-তে যে ভুলটা করেছিল, সেটা তারা আবার করতে চাইবে না। কারণ আর যাই হোক, বিএনপি তো একটা রাজনৈতিক দল। বিএনপি তো কোনো নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন নয়। ফলে তাদের হাতে একটা মাত্র উপায় আছে, সেটা হলো তাদের ভোটের লড়াইয়ে আসতে হবে। তারা তো আর ক্যু করে আসতে পারে না। সে ক্ষেত্রে তাদের ভোটে আসতে হবে, লড়াইয়ে নামতে হবে।
এবারে ওরা খুব উদগ্রীব হয়ে আছে লড়াই করার জন্য। কিন্তু ওদের কিছু পূর্বশর্ত আছে, সেটা হলো বর্তমান নেতৃত্বকে ক্ষমতা ছাড়তে হবে। সেটা আমাদের দেশও জানে। তবে ক্ষমতা ছাড়বে কি ছাড়বে না সেটা আমি জানি না। কিন্তু ভোট হবে। আমার খুব স্ট্রংলি মনে হচ্ছে, ভোট হবে এবং একপেশে জিনিসটা আর হবে না।
 
আমাদের এখানে আরেকটা পারসেপশন আছে তিস্তার পানি নিয়ে। দিল্লি ইতিবাচক হলেও মমতার কারণে চুক্তি হয়নি। আপনার কাছে কি মনে হয়?
আমি বলব, তিস্তা জটটা একটু কমেছে। একটা সময় ছিল, আমি এখান থেকে বেরিয়ে বসুন্ধরা মলে কাপড় কিনতে গেলেও, দোকানদার যেই শুনত আমি দিল্লি থেকে এসেছি, বলত যে, আপনাদের দিদি কি করছে, তিস্তাটা আমাদের দিচ্ছে না কেন? তার মানে তিস্তাটা যতটা না জল, তার চেয়ে রাজনীতি হয়ে গেছে। সেটার হয়তো প্রাসঙ্গিকতাও ছিল।
তারপর একসময় পরিষ্কার হলো, তিস্তা নিয়ে এখনই কিছু হচ্ছে না। কারণ প্রধানমন্ত্রী ২০১৬ তে যখন গেলেন তখন আমার সঙ্গে উনার ওয়ান-টু-ওয়ান কথা হয়েছিল। দেখা হতেই বললেন, মমতা এসেছে? আমি বললাম, হ্যাঁ। বললেন, আমি তো উনার সঙ্গে দেখা করতে চাই। যদি আপনার বলার সুযোগ থাকে আপনি তাকে আমার ইচ্ছার কথা বলে দেবেন। এক সময় তিনি কথা বললেন মমতার সঙ্গে। সেখানে মমতা তিস্তা বিষয়ে হাসিনার আশা ভঙ্গ করলেন। তখন থেকেই এটা আর পলিটিক্যাল ডিসকোর্সের মধ্যে নেই। হাসিনা তখনই বুঝে গেছেন, এটা আর হচ্ছে না।
তারপর এটা নিয়ে আলোচনাটা আস্তে আস্তে মিইয়ে গেল। কারণ যেটা জেনে গেছেন যে, আমি পাব  না, সেটাকে নিয়ে যদি গলা চড়ানো হয় তাহলে ভোটের আগে নিজের মুখটাই তো পুড়ছে। তাই তিস্তা এখন আর ভোটের ইস্যু নয়, তিস্তা এখন হচ্ছে না। এ মুহূর্তে তিস্তা দিয়ে দিলে যে বিরাট জল দিয়ে দেওয়া হবে তা কিন্তু নয় কিন্তু তিস্তা একটা আবেগের ব্যাপার হয়ে যাচ্ছে। ফলে মমতাও এ নিয়ে তার ভোটারদের দিকে তাকিয়ে থাকছেন। উনি উনার জায়গা থেকে সরবেন না। ভারতের পক্ষেও তো সম্ভব নয় উনাকে ডিঙিয়ে কিছু করা।

এবার আপনার সাহিত্য প্রসঙ্গে আসি।
এত ক্ষণে আসল কথাটা বলছেন। (হাসি)।

লেখালেখি কেমন হচ্ছে?
ভালোই হচ্ছে। কিছু ব্যক্তিগত কারণে মাঝে দেড়-দুই বছর লেখালেখি একদম বন্ধ ছিল।

ব্যাগের ভেতর এখনো কি নির্জনতা আছে...?
নির্জনতা তো মৌলিক বোধ, ওটা থাকেই। একটা মানুষ, মানে, প্রত্যেকেই তো আলাদা রকম। কেউ নির্জন, কেউ সবর, কেউ উচ্চকিত। তবে দুই বছর বন্ধ থাকার পর লাস্ট কয়েক মাস ধরে আমি খুব লেখালেখির মধ্যে আছি। আমার ফেসবুক পোস্টেও লিখেছিলাম, আমি দুই বছরে একটা লেখাও লিখিনি। এর আগে যেহেতু অনেক বছর ধরে লিখেছি ফলে অনেকেই লেখা চাইতে থাকেন। কিন্তু তারপরে, সেটা যখন আমি দিচ্ছি না তখন আস্তে আস্তে চাওয়াটাও কমে যেতে থাকে। আমি তো আর শক্তি চট্টোপাধ্যায় না যে আমাকে দিয়ে লিখিয়ে নিতেই হবে।

আপনার কবিতা পড়ছিলাম, মহালয়া, ষষ্ঠী, সপ্তমী...
হ্যাঁ, হ্যাঁ। ঠিক ঠিক।

আবার তো মহালয়া এলো, এবার নতুন কী কবিতা উপহার দেবেন?
এবার লিখলাম তো তবে ঠিক মহালয়া নিয়ে নয়। বাংলা লাইভ ডটকম যদি দেখেন তাহলে পাবেন। এটি পুজোর জন্য লেখা। বাংলা লাইভ ডটকমের ওরা পুজো হিসেবে বিজ্ঞাপন দিয়ে ওটা করেছে। নামটা আমি বলতে চাই না, কারণ নিজের প্রচার করতে চাই না। ওটার কথা বললাম কারণ, জয় গোস্বামী ওটা পড়ে আমাকে বললেন, তার খুব ভালো লেগেছে। বলছিলেন, খুবই সুন্দর লেখা লিখেছ।

এখানকার লেখালেখি সম্পর্কে কেমন ধারণা?
আমার মনে হয়, বাংলাদেশের লেখাপড়ার প্রধান প্রতিবন্ধকতা হয়ে হচ্ছে হুমায়ূন আহমেদ। হুমায়ূন আহমেদ আমার কাছে একটা বড় দেয়ালের মতো। তাকে পড়লে আর কিছু মনে হয় দরকার হয় না। ইনফেক্ট ঢাকা আসার আগে থেকেই তার লেখা পড়ে আমি ঢাকাকে চিনি। একটা উপন্যাস থেকে আমি একটা শহরকে চিনছি। উল্টোটা নয় কিন্তু, শহর থেকে উপন্যাসটাকে রিলেট করছি না। সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় একটা কথা বলেছিলেন, পুরো বাংলা যদি বিরাট কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে ধ্বংস হয়ে যায় তাহলে তারাশংকরের উপন্যাস পড়ে ওটা আবার গড়ে নেওয়া যাবে। আমারও সেরকম মনে হয়, ঈশ^র না করুন, ঢাকা শহর যদি কোনো কারণে ধ্বংস হয়ে যায় তাহলে হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস থেকে সেটা আবার গড়ে নেওয়া যাবে। এই যে ফার্মগেট, মিরপুর, নুহাশপল্লী, আবার রাত্রি বেলা হলুদ পাঞ্জাবি পরে একটা ছেলে হাঁটছে...। আমার কাছে হুমায়ূন আহমেদ লেখালেখির ঈশ^র। গত বছরই ঢাকা ক্লাবে ওর স্ত্রী শাওনের একটা ইন্টারভিউ করেছিলাম। সেটা আনন্দবাজারে বড় আকারে বেরিয়েছিল। শাওন আমার বন্ধু, ভালো কথা বলে।

দেশ পত্রিকায়  হুমায়ূন আহমেদের লেখা বেরুতো, সেই সূত্রে পরিচয়?
দেশ পত্রিকায় তো উনি বেশি লিখেননি। তিনটে বা দুটো উপন্যাস উনি লিখেছেন। লিলুয়া বাতস, ওই শুভ্র আয়, আর কী যেন একটা বোধহয় লিখেছেন। তারপর নাকি কী গণ্ডগোল হয়েছিল, কী হয়েছিল সেটা অবশ্য আমি জানি না।
 
হুমায়ূন আহমেদের লেখার সঙ্গে পরিচয় কীভাবে?
প্রথম পরিচয় শারদীয়তে। কারণ আমাদের ওখানে বাংলাদেশের বই খুব বেশি পাওয়া যেত না। আমার বাড়িতে এখন  হুমায়ূন আহমেদের জন্য আলাদা একটা তাক আছে, পুরোটা জুড়ে  হুমায়ূন আহমেদ। আমি ছবি তুলে পাঠিয়ে দিতে পারি। আমার কাছে সমগ্র আছে আবার আলাদা আলাদা সুন্দর কভারের বইগুলোও আছে।

প্রবন্ধের প্রতি আপনার আগ্রহ কেমন?                 
এখন বেড়েছে। গোড়ার দিকে ছিল না। কলেজ জীবনে একদমই ইচ্ছে করত না। কিন্তু গত দশ-পনের বছর ধরে অনেক পড়ছি। এখন বরং নন ফিকশন পড়তে বেশি ভালো লাগে।

একটা সাক্ষাৎকারে আপনি সাংবাদিকতা আর লেখালেখি-দুই সত্তাকে একে অপরের পরিপূরক বলেছিলেন। মার্কেসসহ আরও অনেকের উদাহরণ টেনে দেখিয়েছেন। বিষয়টা কি আসলেই তাই?
এমন উদাহরণ প্রচুর। আমি তো কিছুই না। ইউরোপে আছে, আমাদের দেশেও আছে। আপনি যদি একটা উপন্যাস লেখেন বা ধরে নিচ্ছি আপনি গল্প লিখছেন বা কবিতা লিখছেন সেখানে অভিজ্ঞতার তো একটা দাম আছে। শুধু সাংবাদিকতা কেন, যে কোনো অভিজ্ঞতারই একটা দাম আছে। লিখতে জানলে সেই অভিজ্ঞতাটা শেয়ার করা যায়।
একজন নিউরো সার্জন জীবনটাকে যেভাবে দেখছেন, একজন বাংলার মাস্টার সেভাবে দেখতেই পারবেন না। ধরুন, লোকাল ট্রেনের একজন টিকিট চেকার যদি কোনো উপন্যাস লিখেন, তাহলে স্ট্রং উপন্যাস হবে কিন্তু। এই ট্রেন্ডটা কিন্তু শুরু হয়ে গেছে। মনে করুন, যার একটি ট্রাভেল এজেন্সি আছে তাকে দিয়ে যদি লেখানো যায় সে লেখা এমন কিছু দিতে পারবে, যেটা আমাদের অভিজ্ঞতার বাইরে।
আমি বহুদিন আগে নোবেল পুরস্কার প্রাপকদের অনুবাদ করেছিলাম। ট্রটস্কি বলেছিলেন, সাহিত্যটা সমাজকে পড়ানো হবে কেন? সমাজ থেকেই সাহিত্যটা তৈরি হবে। সমাজ এমনভাবে তৈরি হবে যে, সমাজ যে ভাষায় কথা বলবে, সে ভাষাতেই সাহিত্য হবে। সাহিত্যের এমন একটা ক্ষমতা আছে, এটা অনেকটা ক্যান্সারের মতো-সবখানে ছড়িয়ে পড়ে। সাংবাদিকতা করতে হলে আপনার মধ্যে একটা লেখক সত্তা থাকতে হবে, একটুখানি দেখার চোখ থাকতে হবে, লেখার চোখ থাকতে হবে। চর্চা থাকতে হবে। আমি তো অনেক কিছু দেখতে পেয়েছি। আমি যদি সাংবাদিকতা না করে প্রাইভেট সেক্টর বা আইটি সেক্টরে বা স্কুলে বাংলা ইংরেজি পড়াতাম তাহলে অনেক কিছুই জানতে পারতাম না। সাংবাদিকতা করতে গিয়ে আমি যা যা দেখছি তা কোথাও না কোথাও, অবচেতন মনে হলে কবিতায়, চেতনে হলে প্রবন্ধের ক্ষেত্রে, উপন্যাসের ক্ষেত্রে ছাপ ফেলে যাচ্ছে।
 
দক্ষিণ এশিয়ায় সাংবাদিকতা বা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কি এক ধরনের হুমকির মুখে?
চাপে আছে। সাংবাদিকতা, সংবাদপত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, এ পুরো বিষয়টা আগের মতো আর সুখে নেই। আপনারা অনেক বেশি এটা ফেস করছেন। আমার বন্ধু-বান্ধব যারা আছেন, তাদের কথা জানি, তারা টকশো করে যখন রাতে বাসায় ফেরেন তখন এদিক-ওদিক তাকিয়ে খুব সাবধানে ফেরেন। আপনাদের দেশে তো ব্লগারকে মেরে ফেলা হয়েছে। আমাদের ওখানে এতটা নয়। আমাদের হাতে মারছে না তবে ভাতে মারছে। চাকরি চলে যাচ্ছে। নানা রকম সমস্যা হচ্ছে।
চাপ থাকছে ওপর থেকে। আমি যে গোষ্ঠীতে কাজ করি সেখানে নেই তবে বহু জায়গায় শুনেছি, কী লিখতে হবে, কীভাবে লিখতে হবে তার ওপর চাপ থাকে। তবে এটা চিরস্থায়ী ব্যাপার নয়। আবার হয়তো দুই বছর পরে যখন আমরা আলাপ করব তখন দেখবেন, আমরা তাকে পেরিয়ে এসেছি। এমন সবুজ সুন্দর উপত্যকার মধ্যে আছি যেখানে সবাই যে যার মতো নিয়ে বেঁচে আছে।

আপনাকে ধন্যবাদ। 
খোলা কাগজের জন্য শুভকামনা।

 
Electronic Paper