ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

নারী শিক্ষার গুরুত্ব

ওসমান গনি
🕐 ৯:০৪ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১০, ২০১৮

বর্তমান সরকার নারীদের শিক্ষার ব্যাপারে যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে। মেয়েদের শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে সরকারি ও বেসরকারিভাবে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

মেয়েরা শিক্ষিত হওয়ার কারণে এখন তারা চাকরির পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবেও অনেক ওপরে চলে গেছে। এখন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আসন হতে শুরু করে সব জায়গায় নারীদের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। যা দেখে দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অবহেলিত মেয়েদের শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। দিনবদলের পালায় আজ অনেক নারীর মধ্যেই চেতনা জাগ্রত হয়েছে যে পড়াশোনা শিখতে হবে। কিন্তু জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে পারিবারিক ও সামাজিক নানা বাধার সম্মুখীন হতে হতে সে চেতনা ক্রমেই ধূলিসাৎ হয়ে যায়। আর এভাবেই শিক্ষার আলো থেকে ছিটকে পড়ে অনেক কন্যাশিশু, যারা কি না হতে পারত আলোকিত নারী।

এখনো অনেক নারী আছেন যারা শিক্ষার গুরুত্ব জানলেও পর্যাপ্ত সুবিধা পাচ্ছেন না, যে কারণে তাদের সম্মুখীন হতে হয় সামাজিক নানা জটিলতার। যে কোনো সমস্যায় নিজের অধিকার আদায়েও তারা পিছপা। কেননা তারা জানেন না আইন কী? কী করে আইনের সাহায্য নিতে হয়? আজকাল অনেক নারীই জানেন না কোথায় গিয়ে মামলা করতে হবে। মামলা করতে কত টাকা লাগে। এ জন্য সবার আগে প্রয়োজন নারীর শিক্ষিত হওয়া। শিক্ষিত হলেই নারী তার অধিকার সম্পর্কে সচেতন হবেন। সচেতন না হলে তাদের ওপর নির্যাতনের মাত্রা বাড়তেই থাকবে।

বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নারী শিক্ষার উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। পৌরসভার বাইরে বিনা বেতনে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রীদের শিক্ষার সুযোগ আর মহানগরের বাইরে মাধ্যমিক পর্যায়ে ছাত্রীদের জন্য উপবৃত্তির সুযোগ রয়েছে। মাধ্যমিক পর্যায়ে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ করা হচ্ছে।

তারপরও দেখা যায়, প্রাথমিক শিক্ষাস্তরে ছেলেশিশু ও মেয়েশিশুর সংখ্যা ভর্তির সময় সমান হলেও মেয়েশিশুদের মধ্যে ড্রপআউট বা ঝরে পড়ার সংখ্যা বেশি। ৩৩ শতাংশ মেয়েশিশু প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করার আগেই ঝরে পড়ে। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রীদের ঝরে পড়ার হার ১৭.৭২ এবং মাধ্যমিক পর্যায়ে ৪৫.৮০ ভাগ। মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে মেয়েদের ভর্তির হার এখনো পুরুষের তুলনায় কম। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষায় নারীদের ভর্তির হার অনেক কম। কৃষি ও প্রকৌশল শিক্ষায় মেয়েদের সংখ্যা মাত্র ৯ শতাংশ। তবে নারীদের শিক্ষার হার বৃদ্ধির জন্য ছাত্রীদের জন্য উপবৃত্তির ব্যবস্থা রয়েছে যা অবশ্যই ইতিবাচক।

শিক্ষিত ও স্বল্প শিক্ষিত নারীদের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের উদ্দেশে জাতীয় নারী প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন একাডেমি পুনর্গঠন এবং প্রশিক্ষণ একাডেমি স্থাপন করা হয়েছে। বেগম রোকেয়া প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, মহিলা কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, বেগম শহীদ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব মহিলা প্রশিক্ষণ একাডেমি এবং মহিলা কৃষি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের জন্য কারিগরি সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া ছাত্রছাত্রীদের জন্য উপানুষ্ঠানিক শিক্ষাব্যবস্থা রয়েছে। বয়স্ক নারী শিক্ষা কার্যক্রমও চালু করা হয়েছে। সরকারি পর্যায়ে আরও অনেক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। নারী শিক্ষা পরিস্থিতির উন্নয়নে বেসরকারি পর্যায়েও রয়েছে বিভিন্ন উদ্যোগ। রয়েছে মেয়েদের জন্য বিভিন্ন সংস্থার বিশেষ বৃত্তি, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ, আয়মূলক প্রশিক্ষণের সঙ্গে শিক্ষা, নারীদের জন্য বিশেষ উপানুষ্ঠানিক শিক্ষাসহ বিভিন্ন উদ্যোগ। আর সব উদ্যোগই সফল হবে যদি নারীরা সুশিক্ষিত হয় এবং নিজেদের আত্মমর্যাদা সম্পর্কে সজাগ হয়।

আমাদের দেশে এখনো অনেক মেয়ের বিবাহিত জীবনে বিভিন্ন রকমের দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। অনেক মেয়ে স্বামীর বাড়ি হতে পরিত্যক্ত হয়ে বাপের বাড়িতে চলে আসে। তখন তাদের জীবনে নেমে আসে চরম দুঃখ-দুর্দশা। আবার অনেক মেয়ে যৌতুকের কারণেও স্বামীর বাড়ি হতে পরিত্যক্ত হয়ে থাকে। তাই এসব মেয়ে যদি শিক্ষিত হয়ে থাকে তাহলে স্বামীর বাড়ি হতে পরিত্যক্ত হলে যে কোনো কর্ম করে বাঁচতে পারে।

নারীদের শিক্ষার পাশাপাশি আয়মূলক শিক্ষাও (কারিগরি শিক্ষা) গ্রহণ করতে হবে। তাহলে তাদের আর কারও ওপর নির্ভরশীল হতে হবে না। তাই একজন মেয়েকে তার ভবিষ্যৎ জীবনের কথা চিন্তা করে হলেও শিক্ষিত হতে হবে।

ওসমান গনি : সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
[email protected]

 
Electronic Paper