ঢাকা, শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ৮ আশ্বিন ১৪৩০

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বিশ্ব হিরোশিমা দিবস ভাবনা

তুহিন হোসেন
🕐 ১:০৮ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ০৭, ২০২২

বিশ্ব হিরোশিমা দিবস ভাবনা

যদি প্রশ্ন করা হয়, মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু কে? বিভিন্ন মানুষ হয়তো এর উত্তর বিভিন্নভাবে দিবেন। কিন্তু আমার কাছে মনে হয় পৃথিবীতে মানুষই মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে এর বিভিন্ন নজির আমরা দেখতে পাব। মানুষ সভ্যতা সৃষ্টি করে আবার সে নিজেই তা ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

মানুষ মানুষকে ধ্বংস করার জন্য নানাবিধ মারণাস্ত্র বানাচ্ছে এবং এ ধরনের অস্ত্র বানানোর জন্য বিভিন্ন দেশ যেন তীব্র প্রতিযোগিতায় লিপ্ত রয়েছে। বিভিন্ন দেশ আবার সেগুলো কেনার জন্য ক্রেতা হিসেবে ভিড় করছে। মানুষ কিন্তু জানে এই অস্ত্র ব্যবহারের পরিণাম কী হতে পারে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কাছে এখন এরকম পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে যা সমগ্র বিশ্বকেই ধ্বংস করে দিতে পারে। বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা ব্যয় করে মানুষইতো এই অস্ত্র তৈরি করছে মানুষের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার জন্য। তাহলে মানুষই কি মানুষের বড় শত্রু নয়?

এক্ষেত্রে একটু তথ্য দিয়ে রাখি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়েছিল ১ সেপ্টেম্বর ১৯৩৯ সালে এবং শেষ হয়েছিল ২ সেপ্টেম্বর ১৯৪৫ সালে। এই যুদ্ধের স্থায়িত্ব ছিল ৬ মাস ১দিন। এই যুদ্ধে জাপান আত্মসমর্পণ করে ১৫ আগস্ট ১৯৪৫ সালে। ঐতিহাসিক ৬ আগস্ট ২০২২ খ্রিস্টাব্দ। ৭৭ বছর আগে এরকম একটা দিনে পরমাণু বোমায় কেঁপে উঠেছিল জাপানের হিরোশিমা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা তখন জোরেশোরে বাজছে। ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট জাপানের হিরোশিমায় পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম পারমাণবিক বোমা হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। স্থানীয় সময় তখন সকাল ৮টা ১৫ মিনিট।

আগেই নির্দেশনা দিয়েছিলেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হেরি ট্রুম্যান। মার্কিন বি টুয়েন্টি নাইন বোমারু বিমান থেকে হিরোসিমায় ফেলা হয় আনবিক বোমা ‘লিটল বয়’। বোমাটি প্রায় ৫০০ মিটার উঁচুতে বিস্ফোরিত হয়। এতে তাৎক্ষণিকভাবে প্রায় দেড় লাখ মানুষ নিহত হন। তখনো ঘুমের মধ্যেই ছিলেন বেশিরভাগ মানুষ। মাটির সঙ্গে মিশে যায় বেশিরভাগ স্থাপনা। পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় বছর শেষে আরো ৬০ হাজার মানুষ মারা যান। নিমিষেই সাজানো একটি নগরী ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হয়। হিরোশিমা শহরে বোমা হামলার তিনদিন পর ৯ আগস্ট জাপানের নাগাসাকি শহরে ‘ফ্যাট ম্যান’ নামে আরও একটি শক্তিশালী পরমাণু বোমা হামলা করে যুক্তরাষ্ট্র। এতে নাগাসাকির প্রায় ৭৪ হাজার মানুষ নিহত হন।

এছাড়া তেজস্ক্রিয়তার কারণে সৃষ্ট রোগে হিরোশিমা এবং নাগাসাকিতে চার লাখের মতো মানুষ মারা যান যাদের অধিকাংশই ছিলেন বেসামরিক নাগরিক এবং তারা জানতেন না কী তাদের অপরাধ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৯ সালে হিরোশিমাকে শান্তির শহর ঘোষণা করা হয়। হিরোশিমায় নির্মাণ করা হয় শান্তির স্মৃতি পার্ক। এরপর থেকে প্রতিবছর ৬ আগস্ট শোক ও বেদনার মধ্য দিয়ে দিনটিকে স্মরণ করা হয় বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী। একই সঙ্গে এই দিনে যুদ্ধবিরোধী প্রচার-প্রচারণা চলে এবং পারমাণবিক বোমামুক্ত বিশ্ব গড়ার প্রত্যয় নেওয়া হয়। একটি ধ্বংস বিধ্বস্ত শহর কীভাবে ধ্বংসযজ্ঞ থেকে ঘুরে দাঁড়াতে পারে তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ হিরোশিমা। প্রতিবছর লাখ লাখ পর্যটক হিরোশিমা ভ্রমণে যান।

পরমাণু বোমা হামলার পর যে শহর সম্পূর্ণ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল সেই শহর এখন সবুজ গাছপালা আর ছায়ায় ভরা। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাস্তাঘাট ও গগণচুম্বী অট্টালিকায় যেন পরমাণু বোমা হামলার সেই ভয়াবহতাকে প্রতিনিয়ত ভুলে থাকতে চায়। জাপান যেভাবে বুঝতে পেরেছে যুদ্ধ কোনোভাবেই কোনো দেশের জন্য শান্তি বয়ে আনতে পারে না, এরকম বিশ্বের সকল রাষ্ট্রেরই অঙ্গীকার করা উচিত শান্তিময় বিশ্ব গড়ার। তাহলেই শান্তিপূর্ণ ধরিত্রী তৈরি হবে এবং এটাই হওয়া উচিত আমাদের সকলের অঙ্গীকার।

লেখক : সহকারী পরিচালক, বিআরডিবি, প্রাক্তন শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

 
Electronic Paper