ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

প্রতিবন্ধীর গণস্থাপনায় প্রবেশগম্যতা

আ. ন. ম. মাছুম বিল্লাহ ভূঞা
🕐 ১১:৫৬ পূর্বাহ্ণ, মে ১৮, ২০২২

প্রতিবন্ধীর গণস্থাপনায় প্রবেশগম্যতা

একটি জনপ্রিয় গান প্রচার করা হতো, ১৫ কোটি মানুষের ৩০ কোটি হাত। কিন্তু ১৫ কোটি মানুষের ১৫ কোটি ব্রেন, তা স্বীকার করা হচ্ছে কি? যদি স্বীকার করা হয়, তাহলে রাষ্ট্রকে প্রতিটি মানুষকে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে, রাষ্ট্রের টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে, যদি উন্নত জাতিতে পরিণত হতে চায়। কাজ করার সুযোগ দিতে হলে প্রথমে প্রতিটি নাগরিকের জন্য প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত করতে হবে। যদি আনতে চান ‘সম্মৃদ্ধির সোনালী প্রভাত’।

প্রতিবন্ধী ব্যক্তি অধিকার ও সুরক্ষা আইন, ২০১৩ তে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত আছে, সর্বসাধারণ গমন করে এইরূপ বিদ্যমান সকল গণস্থাপনা, ভৌত অবকাঠামো, যানবাহন, যোগাযোগ, তথ্য এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিসহ সরকারি ও বেসরকারি ইমারত বা ভবন, পার্ক, স্টেশন, বন্দর, টার্মিনাল ও সড়ককে জনসাধারণের জন্য প্রাপ্য সকল সুবিধা ও সেবাসমূহে অন্যদের মতো প্রত্যেক প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সমসুযোগ ও সমআচরণ প্রাপ্তির অধিকার রয়েছে।

কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও সবার জন্য সকল গণস্থাপনা প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত করা যায়নি। যদিও ১৯৫২ সালের বিল্ডিং কোড অর্থাৎ ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ছিল, ২০০৮ সালে উক্ত বিধিমালা আরো যুগোপযুগী করা হয়েছে। এখনো অনেক ভবন বা গণস্থাপনায় সবার জন্য প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত করা হয়নি। বিশেষ করে গণপরিবহন (বিশেষ করে বাস) এ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিসহ সকল মানুষের প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত হয়নি। হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী মানুষেরা কোনোভাবেই গণপরিবহন ব্যবহার করতে পারেন না।

মূলকারণগুলো হচ্ছে নির্দিষ্ট স্থানে যাত্রী উঠা-নামা না করা, যাত্রী উঠা-নামা করতে পর্যাপ্ত সময় না দেওয়া, গণপরিবহনের দরজাগুলো অনেক ছোট, তাই হচ্ছে করলেও হুইলচেয়ার উঠানো যাবে না এবং গণপরিবহনে উঠা-নামার জন্য কোনো প্রকার র‌্যাম্পও নেই, আবার দরজার পাটাতনগুলো প্রায় দেড়ফুট উঁচু। উক্ত সব সমস্যার যেন অন্ত বা শেষ নেই।

কিছু গণপরিবহণ/বাসে ৯ বা ১৩টি আসন (সিট) মহিলা, শিশু ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য সংরক্ষিত হলেও সবগুলো আসনেই যদি মহিলা বসে থাকেন তখন একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি বা বিশেষ করে প্রতিবন্ধী নারী কীভাবে তার জন্য বরাদ্ধকৃত আসনটির ব্যবহার নিশ্চিত করবেন? কোন আসনগুলো শুধু প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য তা নির্দিষ্ট করা নেই। এর দায় কার? এছাড়াও দৃষ্টি-প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য গণপরিবহন/বাসে কোনো প্রকার সাউন্ড সিস্টেম নিশ্চিত না করার ফলেও তাদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। তাছাড়াও চলাচলে প্রধান বাধা (প্রতিবন্ধকতা) রাস্তা পারাপারে পর্যাপ্ত জেব্রাক্রসিং ব্যবস্থা না থাকা এবং কোনো প্রকার সাউন্ড সিস্টেম নিশ্চিত না করার ফলে উক্ত মানুষগুলোর রাস্তা চলাচলে বিড়ম্বনার শেষ নেই। প্রতিটি মানুষেরতো আর বাসা থেকে দুই বা তিনজন মানুষ নিয়ে রাস্তায় চলাচল বাস্তবিকভাবে সম্ভব নয়। সম্ভব কি? উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ঢাকা কলেজ থেকে নীলক্ষেত মোড় পর্যন্ত এই বিশাল জায়গায় কোনো জেব্রাক্রসিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়নি। ফলে নিরপরাধ পথচারীরা স্বাচ্ছন্দে ও নিরাপদে রাস্তা পার হতে পারছেন না।

বেশ কিছুদিন ধরে গণমাধ্যম সূত্রে দেখা যাচ্ছে, পর্যাপ্ত নিরাপদ জেব্রাক্রসিং নিশ্চিত না করে কিছু সরকারি সংস্থার লোক নিরপরাধ পথচারিদের ২৫-৩০ ফুট উচ্চতার ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করতে বাধ্য করছেন। এটি যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যা কিনা বাংলাদেশ সংবিধানসহ রাষ্ট্রের প্রচলিত আইনের পরিপন্থি। সবিনয় জানাতে চাই কাদেরকে (কাউন্সেলিং) জ্ঞান বিতরণ করা দরকার। নিম্মোক্ত আইনের যথার্থ বাস্তবায়নে।

বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৯(১)(২) সুযোগের সমতা, অনুচ্ছেদ ২৭ আইনের দৃষ্টিতে সমতা এবং অনুচ্ছেদ ৩৬ চলাফেরার স্বাধীনতা এর পরিপন্থি। এছাড়া ‘জাতীয় সমন্বিত বহুমাধ্যমভিত্তিক পরিবহন নীতিমালা, ২০১৩’-এর ৪.৪-এ মহিলা, বয়োজ্যেষ্ঠ ও শারীরিক বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের জন্য পরিবহন; ৪.৪.১-এ পথচারীদের জন্য পায়ে চলার পরিবেশ মানোন্নয়ন, বিশেষত শিশু, মহিলা, বয়স্ক এবং শারীরিক বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের (ফিজিক্যাল চ্যালেঞ্জ) ব্যববহার উপযোগী পরিবেশ নিশ্চিতকরণ; ৪.৪.৪-এ রেলস্টেশন ও বাস স্টপে র‌্যাম্প ব্যবহার এবং নৌ-পথে বিশেষ ব্যবস্থার মাধ্যমে যাতায়াত সহজীকরণ; ৫.১.৫-এ শারীরিক বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পথচারীদের ফুটপাতে ওঠা-নামা সহজতর করার লক্ষ্যে ঢালু পথের (র‌্যাম্প) সংস্থানের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু তার বাস্তবায়ন নেই। এ যেন ‘কাজির গরু কেতাবে আছে গোয়ালে নেই’ অবস্থার একটি ভিন্নরূপ।

পৃথিবীর সকল সভ্য দেশে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরও গণস্থাপনায় প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত করা হয়। তাই টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষ উপরিউক্ত সমস্যা সমাধানের জন্য এখনই সুদৃষ্টি প্রয়োজন।

আ. ন. ম. মাছুম বিল্লাহ ভূঞা : আইনজীবী

 
Electronic Paper