ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

পেরেক ঠুকে গাছে সাইনবোর্ড টাঙানো

তরিকুল ইসলাম
🕐 ৩:৩৯ অপরাহ্ণ, মে ১৬, ২০২২

পেরেক ঠুকে গাছে সাইনবোর্ড টাঙানো

প্রাণিকুল বেঁচে থাকার জন্য প্রধান উপাদান হচ্ছে অক্সিজেন। আর এই অক্সিজেন উৎপন্নের প্রধান উৎস হচ্ছে গাছ। গাছ পরিবেশ থেকে ক্ষতিকারক কার্বনডাই-অক্সাইড শোষণ করে এবং অক্সিজেন সরবরাহ করে। গাছের প্রাণ আছে, অনুভূতি শক্তি আছে। গাছ মানুষকে অক্সিজেন, ফুল, ফল, ছায়া ও কাঠ দিয়ে যেমন সহযোগিতা করে আবার ঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকেও রক্ষা করে।

গাছ নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে কিন্তু দুঃখের বিষয় এই গাছেই আমরা নানাভাবে অত্যাচার, নির্যাতন করি। ফুল, ফল ও পাতা ছিঁড়ে দিই আবার ব্যানার, ফেস্টুন ও সাইনবোর্ড টাঙানোর পেরেক ঠুকে দিই। একটুও দয়া-মায়া করি না। ঠিক একইভাবে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার কাকরাইদ, ইদিলপুর, নতুন বাজার, জয়বাংলা বাজার, মোটেরবাজার, আউশনারা উচ্চ বিদ্যালয় ও আউশনারা কলেজ এলাকায় সড়কের পাশের গাছে গাছে ঝুলছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রচারণার অসংখ্য ফেস্টুন ও ব্যানার। যা পেরেক ঠুকে আটকানো হয়েছে। ফেস্টুনগুলোর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন কোচিং সেন্টার, ক্লিনিক, চিকিৎসক, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও রাজনৈতিক নেতাদের প্রচারণা। কিন্তু প্রচারণার এই পেরেক গাছে কেন?

গাছের বাকশক্তি ও প্রতিবাদ করবার ক্ষমতা নেই তাই যে যার ইচ্ছেমতো পেরেক মেরে এসব ফেস্টুন টাঙিয়েছে। প্রায় সারা বছরই টাঙানো হয় এসব ফেস্টুন, ব্যানার। তবে সাম্প্রতিক ফেস্টুন লাগানোর পরিমাণ কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। ১৫ জুন মধুপুর উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন পরিষদের স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রচুর প্রার্থী প্রচার-প্রচারণার জন্য ফেস্টুন বানিয়েছে। যেগুলো পেরেক মেরে টাঙানো হচ্ছে রাস্তার পাশের গাছ ও স্কুল-কলেজের সামনের গাছগুলোতে। যা দেখতে যেমন দৃষ্টিকটু লাগছে আবার গাছগুলোরও ক্ষতি হচ্ছে।

প্রতিটি গাছে ১৫-২০টি করে পেরেক বিদ্ধ করা হয়েছে। নির্বিচারে পেরেক লাগানোর কারণে গাছের গায়ে অসংখ্য ছিদ্র হচ্ছে। সেই ছিদ্র দিয়ে পানি ও বাতাস ঢোকে গাছে পচন ধরা শুরু করেছে। মরে গেছে অনেক গাছ। বহু গাছ মৃত্যুঝুঁকির মধ্যে আছে। এমনিতেই একটি দেশের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ভূখণ্ডের মোট আয়তনের ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা অপরিহার্য। কিন্তু আমাদের দেশে বনভূমির পরিমাণ সাড়ে পনের শতাংশের মতো যা জনসংখ্যা ও আয়তনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। আস্তে আস্তে বনভূমির পরিমাণ আরও কমে যাচ্ছে।

শুধু মধুপুর নয়, সারা দেশেই গাছে পেরেক মেরে ফেস্টুন টাঙানো হয়। যার ফলে প্রতিবছর অসংখ্য গাছ মারা যায়। অথচ গাছে পেরেকবিদ্ধ করে সাইনবোর্ড না লাগাতে ২০০২ সালের ৭ জুলাই জাতীয় সংসদে আইন পাস হয় কিন্তু বাস্তবে সেই আইন কার্যকর হয়নি। প্রশাসনও গাছে পেরেক মেরে বিজ্ঞাপন টাঙানো বন্ধ করতে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। এইভাবে চলতে থাকলে ধীরে ধীরে এই দেশ বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে। বৃক্ষহীন হয়ে পড়বে পরিবেশ। যত্রতত্র লাগানো হবে আরও ব্যানার, ফেস্টুন। সুতরাং এখনই আমাদের বিবেককে জাগ্রত করতে হবে।

মনে করতে হবে গাছেরও জীবন আছে। গাছ সবকিছু বিলিয়ে মানুষের উপকার করছে, পেরেক বিদ্ধ করে এর প্রতিদান দেওয়া যাবে না। যারা পেরেক লাগায় এবং যারা লাগাতে বলে তাদের সবাইকেই সচেতন হতে হবে। আবার যারা পেরেক লাগাতে দেখে চুপ করে থাকে তাদেরও প্রতিবাদ করতে হবে। সর্বোপরি গাছে পেরেক মারা বন্ধে প্রশাসনের সুদৃষ্টি জরুরি।

তরিকুল ইসলাম : শিক্ষার্থী, এমএসসি (রসায়ন), জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আউশনারা, মধুপুর, টাঙ্গাইল

 
Electronic Paper