ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

‘যেভাবে শবে বরাতে হালুয়া-রুটির প্রচলন শুরু হয়’

খোলা কাগজ ডেস্ক
🕐 ১১:৫৮ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৭, ২০২২

‘যেভাবে শবে বরাতে হালুয়া-রুটির প্রচলন শুরু হয়’

‘লাইলাতুল বরাত’ বা ‘শবে বরাত’ হচ্ছে ‘সৌভাগ্যের রাত’। মুসলমানরা রাতটিকে বিশেষ ফজিলতপূর্ণ মনে করে ইবাদত করে থাকেন। তবে বাংলাদেশে শবে বরাত পালনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছে হালুয়া-রুটির সংস্কৃতি। এ সম্পর্কে ইসলাম ধর্মে কোনো নির্দেশনা নেই। তারপরও বাংলাদেশে প্রচলিত ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে গেছে, বাড়িতে হালুয়া-রুটি বানানো এবং তা প্রতিবেশীর মাঝে বিতরণ করা।

সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে শবে বরাত পালনের ব্যাপক প্রচলন শুরু হয় ১৯শ শতকের শেষের দিকে। তখন ঢাকার নবাবরা বেশ আয়োজন করে শবে বরাত পালন করতেন। সে সময়ে ঢাকার নবাবরা শবে বরাতের সময় আলোকসজ্জা করতেন। পাশপাশি মিষ্টি বিতরণ করতেন।

ইতিহাসবিদদের মতে, সে সময়ে মূলত মিষ্টির দোকান খুব একটা ছিল না। ফলে মিষ্টি জাতীয় খাবার বানানোর উপাদান দিয়ে বাড়িতে বসেই হালুয়া তৈরির প্রচলন শুরু হয়। আস্তে আস্তে এর বিস্তার ঘটতে থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে শবে বরাত পালন ধর্ম এবং সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে।

অনেকের মতে, শবে বরাতে পরবর্তী এক বছরের ভাগ্য নির্ধারিত হয়। তাছাড়া শবে বরাত নিয়ে অনেক ধারণা প্রচলিত আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো খাওয়া-দাওয়া। তাই শবে বরাতে হালুয়া-রুটি তৈরি বাধ্যতামূলক মনে করা হয়। এ ছাড়া খাবারে মাছ কিংবা মাংস থাকাকে অনেকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন।

ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসির মামুন বলেন, ‘সে সময়ে হিন্দুদের আধিপত্য থাকার কারণে সেটিকে মোকাবেলা করার জন্য ঢাকার নবাবরা শবে বরাতে অনেক বড় আয়োজন করতেন। এতে ঢাকার নবাবদের মুসলমান পরিচয় এবং আধিপত্য- এ দুটো বিষয় একসাথে তুলে ধরার প্রয়াস দেখা যেত।’

তিনি বলেন, ‘নবাবরা যেহেতু মুসলিম ছিলেন এবং ঢাকাকে তারা নিয়ন্ত্রণ করতেন। সেজন্য উৎসবগুলোকে তারা গুরুত্ব দিতেন। এর মাধ্যমে নবাবদের আধিপত্য, মুসলমানদের আধিপত্য এবং ধর্ম পালন- এ তিনটি বিষয় একসাথে প্রকাশ হতো। ১৯শ শতকের শেষের দিকে ঢাকায় শবে বরাত পালন মুসলিম পরিচয় প্রকাশের বিষয় হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘সেই ধারাবাহিকতায় শবে বরাত একটি বড় ধরনের উৎসবে পরিণত হয়েছে। পাকিস্তান আমলে এর সাথে সরকারি ছুটি যুক্ত হওয়ায় সেটি পালনের ব্যাপকতা আরও বেড়ে যায়। একটা সময় ছিলো যখন ঢাকায় শবে বরাত পালনের বিষয়টি ছিল সুন্নি মুসলমানদের মধ্যে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ বলেন, ‘ভারতীয় উপমহাদেশে হালুয়া-রুটির সংস্কৃতি চলে আসছে। কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে এটি খাওয়া শবে বরাতের জন্য বাধ্যতামূলক নয়।’

তবে অনেকেই মনে করেন, শবে বরাতে হালুয়া-রুটি বানানো এবং বিতরণ করার সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার একটি সম্পর্ক আছে। তারপরও বর্তমানে এ সংস্কৃতি থেকে অনেকেই সরে এসেছেন। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা শবে বরাতে ইবাদতকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন। হয়তো ধীরে ধীরে এ সংস্কৃতি বিলুপ্তও হয়ে যেতে পারে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

 
Electronic Paper