ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

হতাশা ভেঙে সফল তানিয়া

খোলা কাগজ ডেস্ক
🕐 ১:০৬ অপরাহ্ণ, মার্চ ০৯, ২০২২

হতাশা ভেঙে সফল তানিয়া

নানা প্রতিকূলতা ও বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে অগ্রযাত্রার পথে এগিয়ে
চলছেন নারীরা। এই যুগে নারী শুধু বধূ, মাতা কিংবা কন্যা নয়; পরিবার,
সমাজ ও দেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার সমান অংশীদার তারা। পুরুষের পাশাপাশি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কারিগর। সব ক্ষেত্রেই নারীর অগ্রযাত্রা আজ দৃশ্যমান। নারীদের অগ্রযাত্রা নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেছেন
নূরে রোকসানা সুমি ও আতিকুর রহমান কাযিন

তানিয়া আক্তারের উদ্যোক্তা হওয়ার শুরুটা ছিল বড় ধরণের চ্যালেঞ্জ। নিজের দ্বারা উদ্যোক্তা হতে পারবে কিনা এমন শত প্রশ্নের মধ্যে দিয়ে উদ্যোক্তা জীবন শুরু করেন। তানিয়া মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার বাসিন্দা হলেও বর্তমানে বসবাস করছেন রাজধানী ঢাকার মধ্য আজমপুরে। তার পিতা মৃত. মোশারফ মোড়ল। তিনি পরিবারের বড় মেয়ে। এই সংগ্রামী নারী উদ্যোক্তা শিবচর উপজেলা থেকেই এসএসসি ও এইচএসসি শেষ করেছেন। পরবর্তীতে ঢাকা বোর্ড থেকে গ্রাজুয়েশন শেষ করেন।

জানা গেছে, তানিয়ারা দুই বোন। এর মধ্যে তানিয়া পরিবারের বড় কন্যা। তিনি ছোট থাকতেই তার বাবা মারা যায়। এরপর মায়ের অনুপ্রেরণায় প্রতিনিয়তই যুদ্ধ করেছে সে ও তার পরিবার। উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে যে গল্পটা আছে সেটা সবাইকে জানাতে চান তানিয়া আক্তার। গত চার বছর আগে উদ্যোক্তা সারিতে যোগ হয়েছেন। তবে অনলাইনে হোমমেড ফুড নিয়ে কাজ শুরু করেন ২০২১ সনের জুন মাসে। অনলাইনে টেস্টবিডি নামের একটি গ্রুপের মাধ্যমে নিজের পরিচয়টা তুলে ধরার প্রথম মাধ্যম তার। যেখানে সবার সাপোর্ট সামনে এগিয়ে যেতে শক্তি যুগিয়েছে তাকে। তবে, ছোট বোন মিমির সাপোর্টের কারণের এতদূর এগিয়ে আসতে সম্ভব হয়েছে। তানিয়া আক্তার বর্তমানে বিভিন্ন রকমের পিঠা, পায়েস, লাড্ডু, নাড়ু, নাড়িকেল সন্দেশ, প্রাকৃতিক চাকের মধু এবং সিজনাল সব প্রকার আচার, ফ্রোজেন রুটি, কাবাব, মোমো নিয়ে কাজ করছেন। তার মাসিক আয় ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা।

নিজের জীবনের গল্প শোনাতে গিয়ে তরুণ উদ্যোক্তা তানিয়া আক্তার জানান, আমি হেরে যাওয়াদের দলে কখনো যেতে চাইনি। আমার মা শিখিয়েছেন কঠিন সময়ে টিকে থাকতে হয় কিভাবে। গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করার আগেই বসতে হয় বিয়ের পিঁড়িতে। কিন্তু শ্বশুর বাড়িতে থাকা হয়নি। স্বামী চলে যায় বিদেশে আর আমি মায়ের কাছে। এরই মাঝেই জন্ম নেয় আমার প্রথম সন্তান তাহান। আমি মাস্টার্স ভর্তি হই, কিন্তু চলমান রাখতে পারিনি। ছোট্ট ছেলেকে রেখে চাকরি করি একটি স্কুলে। শেখানেও নানা ধরণের বাধা আসে। বিভিন্ন কারণে ছাড়তে হয় চাকরি। কিন্তু আমার বাচ্চার কিছু লাগলে চাইতে হয় স্বামীর কাছে, নয়তো মায়ের কাছে। আবার নিজের ইচ্ছাগুলোও পূরণ করতে পড়তে হয় দ্বিধাতে। সেখানেও হাত পাততে হয়। এই ভাবনাটা আমার জন্য কখোনই সুখের ছিলো না। কারণ, আমি চেয়েছি আমার শিক্ষা কাজে লাগুক। আমার সন্তানের জন্য পরিবারের জন্য কেনো আমিই যথেষ্ট নয়। জীবন সংগ্রামে বাড়ে হতাশা। নিজের পরিচয়টা কি তবে তুলে ধরতে পারবো না হেরে যাবো। তবে, যে কোনো কাজের সবচেয়ে বড় সাপোর্টার আমার বোন মিমি। তার অনুপ্রেরণায় আমি অনলাইনে হোমমেড ফুড নিয়ে কাজ করে সফল হয়েছি।

এই উদ্যোক্তা জানান, জীবনের কঠিন সময়ের সঙ্গে যুদ্ধ করেছি। আমি হেরে যাওয়াদের দলে কখনো যেতে চাইনি। আমার মা শিখিয়েছেন কিভাবে কঠিন সময়ে টিকে থাকতে হয়। কেনো সবসময় অন্যের উপর বোঝা হতে চাইনি। উদ্যোক্তার জন্ম হয় কঠোর পরিশ্রমে। যার পেছনে থাকে সুদৃঢ় সিদ্ধান্ত, পরিকল্পনা ও পরিশ্রম। আমাদের দেশে জনসংখ্যার চাপ অনেক বেশি। বেকারত্বের হার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেক উন্নত দেশের মোট জনসংখ্যা আমাদের দেশের এই চাকরি প্রার্থীর সংখ্যার থেকেও কম। একটি চাকরি পাওয়ার জন্য কী অসুস্থ প্রতিযোগিতা! সেখান থেকেই উদ্যোক্তা হয়ে নিজের স্বপ্ন পূরণ করতেই এ পথে নেমেছি। বর্তমানে আমার মাসিক আয় হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা।

 
Electronic Paper