ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

স্বপ্ন তবুও জাগে সমুদ্রশরীরে

নাসিমা হক মুক্তা
🕐 ২:০৩ অপরাহ্ণ, মার্চ ০৪, ২০২২

স্বপ্ন তবুও জাগে সমুদ্রশরীরে

কী সুখে আমি কবিতা পড়ি জানি না। শুধু কবিতা নাকি সাহিত্যের সব ধারা আমাকে টানে! প্রশ্নটি নিজেকে নিজেই করি। কেন করি? সবসময় সৌন্দর্যের গহিনে যে রস সেটি কীভাবে বের করে আনা যায় সে রকম একটি মন নিয়ে ছুটছি। আর ছুটছি তো জীবনানন্দের ভাষায় বনলতা যে রূপের বর্ণনা যুগের পর যুগ নারী থেকে সেই প্রেমিকা হওয়ার ইচ্ছের টানে।

প্রেমিক-প্রেমিকা একসঙ্গে কাছে থাকা, ঘর-সংসার ফোটানো বা প্রেমিকের সাহচর্য হয়ে পথচলার লোভের চেয়ে না পাওয়ার বিরহে বিবাগী হয়ে মানব সাধনই জীবনের আসল রহস্য। যা কিছু অদৃশ্য বা ছোঁয়া যায় না তার প্রতি আলাদা মায়া কাজ করে। সেই মায়া থেকে মানুষের মনের আবেগঘন হলে তা কবিতার মতো ভাব দেয়। আসলে যেটি ভাব সেটি অন্তর্নিহিত প্রকাশ। যাকে কবিতা বলি। সেই কবিতার পেছনে ছুটতে গিয়ে কত কবিতা যে আমাকে পড়তে হয়েছে! অগণন সত্তার অংশীদার হচ্ছে- বাংলা সাহিত্যের পূর্বসূরিরা। রবীন্দ্রনাথ-জীবনানন্দ থেকে আল মাহমুদসহ আরও অনেকেই। তাদের পড়লেই মনে হয়, আমি নিছক পিছিয়ে পাঠক। বিষম ভয় কাজ করে- সাহিত্যের যে অংশ তাতে হাত দিলে পুড়ে যায় কিনা! জানাশোনা ও মেধাবী মানুষরাই এ জগতে সফল। তেমন একজন লেখকের কথাই বলছি। তিনি কবি মাহবুবা চৌধুরী। কবি আমাকে মার্জনা করবেন। আপনার কবিতা পড়তে গিয়ে নিজের অক্ষমতাকে তুলে ধরলাম। তারও একটি কারণ আছে। একদিন কবি আজিজ রাহমান ভাই বললেন, ‘যদি সুযোগ হয় তাহলে তাকে পড়ে নিও।’ সত্যিই তিনি আমাকে পথ দেখালেন, জানালেন কার হাতে সোনা ফলে।

কাব্যরসে ভরপুর ‘হাতের দু’ভাঁজে ঘুম’ কাব্যগ্রন্থ। মাহবুবা চৌধুরীর বইয়ের নাম পড়ে জাগানো শরীরকে এলিয়ে দিলাম শীতল করা শব্দের বৈঠায়। যতই পড়ছিলাম ততই পালের আগায় শিহরিত আবেগ যেন হাওয়ার সঙ্গে মিশে যাচ্ছিল। (বইটি কিছুটা শেষ করেছি শিল্পকলার সামনে, একটি বাড়ির নিচে বসে, মেয়ের কোচিংয়ে অপেক্ষারত একজন মা হিসেবে। সময়টা দারুণ উপভোগ্য ছিল। ঘটনাটি আজ পড়ন্ত বিকেলের)। ওখানে বসে বইটি যখন পড়ছি। কবির প্রথম কবিতা ‘জেগে উঠুক তোমার বাংলাদেশ’ পড়ে চমকে উঠেছি। শেষাংশ পড়ে তার প্রতি আগ্রহবোধ বেড়ে যায়। তিনি যখন লেখেন- ফিরে এসো পিতা, আর একবার উষ্ণ সূর্য স্নানে উঠুক তোমার এই বাংলাদেশ জেগে।

এমন কবিতা যিনি লিখতে পারেন তার জ্ঞানের গভীরতা যে অনেক, টের পেলাম। মানবজীবনের বহু রকম আনন্দধারা আছে। তাতে ভিন্নজন ভিন্ন-ভিন্ন আনন্দ উপভোগ করে। আমার কাছে মনে হয়, আমার আনন্দটুকু সুন্দরে, শিল্পে ও সাহিত্যে। এতেই আমার শক্তি। হপকিন্স বলেন, শক্তি হচ্ছে অনন্ত আনন্দ। তাই যে কোনো বই পড়তে ও কিনতে আনন্দবোধ করি। কবির কাব্যগ্রন্থে মোট ৫০টি কবিতা, প্রতিটিতে বাস্তবতা, প্রেম-মোহ, মায়া, সভ্যতা, মানবতাবোধ ও মানবিকবোধ সবকিছুর অসাধারণ মিশ্রণ। যা আত্মাকে প্রশান্তি দেয়, ভালোবাসার মতো মনকে বিস্তৃত করে। আবার ফুল-ফল, পাখি-নদী-সমুদ্রও প্রকৃতির সব ধারায় তার বহমান। এখানেই কবির সার্থকতা। কবি যখন লেখেন-
সমুদ্রশরীরে ঢেউয়ের দ্রুতি
নীল আকাশ নীল আবেগ জড়িয়ে
আকণ্ঠ ডুবেছে, জলের টানে নেমে এসেছে
রুপালি চাঁদ নক্ষত্রের বিছানায়।

আসলে তার সব কবিতা পাঠককে মোহাবিষ্ট করবেই। কবির সৃষ্টি অনন্য। যা অনেকদিন বেঁচে থাকবে। যদি বোদ্ধা পাঠকের হাতে পড়ে। তাকে পড়েছি, জেনেছি এবং আচ্ছন্ন হয়েছি কলম সৌন্দর্যেÑ পরমানন্দে। এই আনন্দকে সঙ্গী করে আমিও কিছু আবেগ ঢেলেছি। সত্যি বলতে কী, যার কবিতার ভেতর এত ঘোর, এত বিস্ময়, এত আহ্বান তাকে তো সাজাতে হয়Ñ শব্দের ফুল ঢালাতে। আমার মতো নগণ্য পাঠক- কবি মাহবুবা চৌধুরী, আপনার সৃজনকে মলাটবদ্ধ করে নিশ্চয়ই বিব্রত করেছি। ক্ষমা-সুন্দরে দেখবেন...।

 
Electronic Paper