ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

১১ বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ

চারদিন পর থানায় মামলা

আশিকুর রহমান পিয়াল, নরসিংদী
🕐 ৮:৪২ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৪, ২০২২

১১ বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ

নরসিংদীর বেলাবতে বাড়িতে ঢুকে ১১ বছর বয়সী এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠেছে স্থানীয় এক যুবকের বিরুদ্ধে। ধর্ষণের ওই ঘটনার পর এরই মধ্যে পেরিয়ে গেছে চারদিন। ঘটনার দিন রাতেই থানা-পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে শিশুটির পরিবার।

ঘটনার চারদিন পেরিয়ে গেলেও বেলাব থানার পুলিশ ওই শিশুর পরিবারের দেওয়া লিখিত অভিযোগ মামলা হিসেবে নেয়নি বলে অভিযোগ করেছে পরিবার। এর আগে গত বুধবার রাতে শিশুটিকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। শিশুটিকে ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত ওই যুবকের নাম মেরাজ মাহমুদ (২২)। মেরাজ মাহমুদ বেলাব উপজেলার চর উজিলাব ইউনিয়নের দেওয়ানের চর গ্রামের চাঁন মিয়ার ছেলে।

ঘটনার পরই অভিযুক্তসহ তাঁর পরিবারের সদস্যরা বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। অন্যদিকে ধর্ষণের শিকার ওই শিশুটি স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী। ঘটনার সময় ওই শিশুটি ঘরে একা ঘুমিয়েছিল। 

ভুক্তভোগীর পরিবার জানায়, ঘটনার চারদিন পেরিয়ে গেলেও মামলা নিচ্ছে না বেলাব থানার পুলিশ। কেন পুলিশ মামলা নিচ্ছে না, এটাই আমরা বুঝতে পারছি না। মামলা দায়ের করতে ব্যর্থ হয়ে ৯৯৯ ফোন করায় উল্টো পুলিশের গালমন্দ খেতে হয়েছে আমাদের। অভিযুক্ত ধর্ষকের পরিবারের কাছ থেকে হয়তো কোন অর্থনৈতিক সুবিধা নিয়েছে বেলাব থানার পুলিশ। তাই হয়তো এই মামলা নিতে তারা চাইছে না। আমরা চাই, এই ঘটনায় পুলিশ মামলা নিক ও আসামী গ্রেপ্তার করুক। এই অমানবিক ঘটনার বিচার চাই আমরা।

স্থানীয়রা জানান, গত বুধবার রাত ৯টার দিকে ওই শিশুটিকে ঘরে একা রেখে তার মা-বাবা বাড়ির পাশের একটি মাজারে যান। যাওয়ার সময় অভিযুক্ত মেরাজ মাহমুদ পথে তাদের জিজ্ঞাসা করেন, ‌'আপনারা কোথায় যাচ্ছেন'। পরে বাড়িটিতে অন্য কেউ না থাকার সুযোগে অভিযুক্ত মেরাজ ওই শিশুর ঘরের জানালা দিয়ে ঢুকে পড়েন। পরে তাঁর ওরনা দিয়ে মুখ বেঁধে তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন। এ সময় শিশুটির চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে অভিযুক্ত মেরাজ পালিয়ে যান। বাড়িতে ফিরে শিশুটির মুখে সব শুনেন মা-বাবা। পরে ওই রাতেই শিশুটির পরিবারের লোকজন ধর্ষণের ঘটনায় থানায় গিয়ে মেরাজের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন। বেলাব থানার পুলিশ লিখিত অভিযোগটি রেখে তাদের চলে যেতে বলেন। গতকাল সকালে ধর্ষণের শিকার শিশুটিকে প্রথমে বেলাব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। পরে বিকেলে উন্নত চিকিৎসার জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আজ সোমবার দুপুরে তাঁর ডাক্তারি পরীক্ষা করেন হাসপাতালটির গাইনি বিভাগের চিকিৎসক।

নরসিংদী সদর হাসপাতালে শিশুটির ডাক্তারি পরীক্ষা করেছেন হাসপাতালটির গাইনি বিভাগের চিকিৎসক তাজরিনা আক্তার। তিনি জানান, আমি শিশুটির ডাক্তারি পরীক্ষা করেছি। ব্যবস্থাপত লিখে দিয়েছি এটা পুলিশ কেইস। তাকে আমরা চিকিৎসা দিচ্ছি।

শিশুটির মা ও দাদী জানান, ঘটনার পরদিন সরেজমিনে ঘটনাস্থলে এসে ঘটনার সত্যতা পাওয়ার পরও মামলা নেয়নি পুলিশ। ঘটনার দ্বিতীয় দিন মামলা না নেওয়ায় ৯৯৯ ফোন করলে ফের পুলিশ আসে। এ সময় বেলাব থানার উপপরিদর্শক পলাশ বাড়ৈ আমাদের ৯৯৯ ফোন দেওয়ার কারনে গালমন্দ করেন। পরে আরও তিনবার থানায় যাই, তারপরও তারা মামলা নেয়নি।

ভুক্তভোগী শিশুর মা অভিযোগ করে বলেন, আমার মেয়েটি হাসপাতালের বেডে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। ঘটনার পর থেকে কয়েকদফা থানায় গেলেও বেলাব থানার পুলিশ গরিমসি করছে। এমন কি আমার মেয়েকে হাসপাতালে নিয়ে আসা এবং মেডিকেল টেস্ট করানোর বিষয়েও পুলিশ কোনো সাহায্য করেনি। পুলিশ কেন মামলা নিচ্ছে না তাও বলতে পারছি না। থানায় গেলে পুলিশ বলে ‌, ‌'আপনারা আসামির খোঁজ দেন। তাকে ধরে এনে তারপর মামলা লিপিবদ্ধ করবো।'

এ বিষয়ে বেলাব থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাফায়াত হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেন এই প্রতিবেদক। তবে অন্য একটি মুঠোফোন নাম্বার থেকে কল দেওয়া হলে তিনি কল ধরেন। পরে ধর্ষণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সঙ্গে সঙ্গে কল কেটে দেন।

তবে নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সাহেব আলী পাঠান জানান, বেলাব থানার ওসি সাফায়েত হোসেন আমাকে জানিয়েছেন, এই ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ তারা পেয়েছেন। তবে মামলা না নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, তদন্তের পর এ ঘটনায় সোমবার বিকালে বেলাব থানায় ধর্ষণ চেষ্টার মামলা দায়ের করা হয়েছে। এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে আসামী গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসব আমরা।

অন্যদিকে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের বেলাব আঞ্চলিক শাখার সভাপতি রাবেয়া খাতুন শান্তি জানান, ধর্ষণের ওই ঘটনার পরপরই শিশুটির পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে আমরা বিস্তারিত জেনেছি। শিশু ধর্ষণের মত ঘটনায় পুলিশ মামলা নিচ্ছে না শুনে বেলাব থানার ওসির সঙ্গে আমি কথাও বলেছি। কিন্তু তাঁর কাছ থেকে আমরা কোন আন্তরিকতা পাইনি। কেন তিনি মামলা নিতে চাচ্ছেন না, এর পেছনে ঘটনা কি, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা দরকার।

এঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত মেরাজ ও তার পরিবারের সদস্যরা বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে।

 
Electronic Paper