ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ম্যাজিষ্ট্রেটের নির্দেশ অমান্য করে নির্মিত হচ্ছে ইটভাটা!

শাহাদত হোসেন মিশুক, গাইবান্ধা
🕐 ৪:০৩ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৪, ২০২২

ম্যাজিষ্ট্রেটের নির্দেশ অমান্য করে নির্মিত হচ্ছে ইটভাটা!

লাইসেন্স ও পরিবেশগত ছাড়পত্র না থাকার পরও গাইবান্ধা সদর উপজেলার বোয়ালি ইউনিয়নের খামার বোয়ালি গ্রামে অবৈধভাবে নির্মিত হচ্ছে একটি ইটভাটা। এলাকাবাসির অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ১০ জানুয়ারি ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করার পর ১৬ জানুয়ারির মধ্যে নির্মাণাধীন ভাটা অপসারণের নির্দেশ দেন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট।

 

কিন্তু সেই নির্দেশের তেরদিন পেরিয়ে গেলেও ভাটা অপসারণ করা তো হয়ইনি উপরন্তু ইটভাটা নির্মাণ কাজ চলমান রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন- ২০১৩ অনুযায়ী, জেলা প্রশাসনের নিকট হইতে লাইসেন্স গ্রহন ব্যতিরেকে, কোন ব্যক্তি ইটভাটা স্থাপন ও ইট প্রস্তুত করিতে পারিবে না। কৃষিজমিতে ইটভাটা নির্মাণ করা যাইবে না। পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিবেশগত ছাড়পত্র গ্রহন ব্যতীত ইটভাটা চালু করা যাইবে না। বাস্তবে এসব নিয়মের কোনটিই মানা হয়নি ইটভাটাটি স্থাপনের ক্ষেত্রে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রশাসন থেকে ইটভাটাটি অপসারণের নির্দেশ দেওয়া হলেও সেটি অপসারণ করা হয়নি। আবাসিক এলাকায় তিন ফসলি জমিতে ইটভাটা নির্মাণ কাজ চলছে। বর্তমানে চুলা নির্মাণ করা হচ্ছে। ভাটার জায়গায় কিছু ইট ও মাটি ফেলে রাখা হয়েছে ও ইট তৈরির জায়গা প্রস্তুত করা হচ্ছে।

এলাকাবাসি জানায়, এই গ্রামের তিন ফসলি প্রায় ছয় একর জমি ইজারা নিয়ে অবৈধভাবে ইটভাটা নির্মাণ করছেন গাইবান্ধা শহরের ডিবি রোডের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আয়ান মিয়া। তিনি প্রশাসনকে ম্যানেজ করে অবৈধভাবে ভাটা নির্মাণ করছেন। এনিয়ে চলতি মাসের প্রথম দিকে গাইবান্ধা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে গত ১০ জানুয়ারি ভাটা মালিকের ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

এসময় নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মো. শহিদুল ইসলাম ১৬ জানুয়ারির মধ্যে ভাটাটি অপসারণের নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশ বাস্তবায়ন না হওয়ারও সাতদিন পেরিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ভাটা অপসারণ করা হয়নি। উপরন্তু ইটভাটা নির্মাণ কাজ চালু রাখা হয়েছে।

অভিযোগে সূত্র বলছে, এই ভাটার লাইসেন্স ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। নেই অন্যান্য অনুমতিও। এই ভাটা নির্মিত হলে পরিবেশ নষ্ট হবে। ভাটা মালিক প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ বাঁধা দিতে সাহস পাচ্ছেন না। এদিকে, নির্মাণাধীন ভাটা থেকে প্রায় ৬০০ মিটার দূরে কয়ারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, ইটভাটাটি নির্মিত হলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদানের পরিবেশ মারাত্মকভাবে বিঘিœত হবে। পাশাপাশি পরিবেশ দূষণের কারণে ওই এলাকার তিন ফসলি জমি, বসতবাড়ি ও গাছপালা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে করে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হবে।

অভিযোগকারি খামার বোয়ালি (কয়া ছয়ঘরিয়া) গ্রামের শাহজাহান মিয়া বলেন, জনবসতিপূর্ণ এলাকায় ভাটা নির্মিত হলে আবাদি জমি, ফসল ও গাছপালা নষ্ট হবে। ভাটা নির্মাণ বন্ধে ইউএনওকে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। একই গ্রামের আবদুস সালাম বলেন, ভাটায় দীর্ঘদিন ধরে ইট পোড়ানো হলে এলাকার অনেক গাছপালার পাতা মরে যাবে। প্রতিবছর ফসলের ক্ষতি হবে। তারপরও অবৈধভাবে ইটভাটা নির্মিত হচ্ছে।

আরেক অভিযোগকারি ফিরোজ কবির বলেন, নিয়মানুযায়ী ভাটা স্থাপনে জেলা প্রশাসনের লাইসেন্স ও পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিবেশগত ছাড়পত্র বাধ্যতামূলক থাকতে হয়। কিন্তু ওই ভাটা মালিকের কোনটিই নেই। শুধু তাই নয়, কৃষি জমিতে ভাটা স্থাপনও নিষেধ। কিন্তু প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করে আবারও কয়েকদিন ধরে ভাটার নির্মাণ কাজ চলছে।

এসব বিষয়ে গাইবান্ধা সদর ইউএনও মো. আবদুর রাফিউল আলম বলেন, জরিমানা আদায়ের পর নির্মাণাধীন ভাটার চুলা অপসারণের নির্দেশ দেওয়া হয়। তারপরও কাজ চললে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ইটভাটা মালিক আয়ান মিয়া বলেন, প্রশাসন ইটভাটা অপসারণের নির্দেশ দেয়নি। মৌখিকভাবে বলছিলেন, সাতদিনের মধ্যে সমঝোতা করে ফেলুন। যাদের জমি ইজারা নেওয়া হয়, তাদের পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে ভাটার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। তাদের সঙ্গে একটা সমঝোতা হয়েছে। তিনি বলেন, ভাটা স্থাপনের অনুমতির জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জেলা প্রশাসনের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান আয়ান মিয়া।

 

 
Electronic Paper