কবিতার মেঠোপথে আত্মঘাতী অঘটন
অমর্ত্য আতিক
🕐 ৩:০৯ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ০৩, ২০২১
সেই ছেলেবেলা তালতমালহিজলের অন্ধকারে, রোদের উল্টোপিঠেÑ উজানে ভাসিয়ে নাও বেশ তো কেটে যাচ্ছিল দিনÑ প্রথম যৌবনের মতন প্রথম কৈশোর।
বুঝে নিয়েছিলাম- জীবন এক মরুদীর্ণ ঘোড়া; অনির্দিষ্ট এর গতিপথ। কিছুটা যেন মেনেই নিয়েছিলাম জীবনের প্রতিটি পরত, কবি কিশোর সুকান্তের মতো- ‘সবুজ মাঠেরা পথ দেয় পায়ে পায়ে/ পথ নেই তবু এখানে যে পথ হাঁটা।’ তো এইভাবে বেড়ে ওঠা। ক্রমশ বুঝতে পারি সেই আমি যে আমি ব্যক্তি আমিময়; প্রকৃতির এক খেয়ালি অলঙ্কার, তেমনি প্রকৃতিও আমার কাছে ইন্দ্রিয়জ ও গভীর সংবেদ- চিরায়ত এক অমোঘ যাপন যেন প্রবহমান আশ্চর্য অনন্তজুড়ে।
কিন্তু প্রাকৃতিক এই সমীকরণ কোনো এক সময় মনে হলো বাহ্য দৃষ্টির বাহিরে রয়ে গেছে এর অতীন্দ্রিয় পরাপাঠ যা পাঠ করতে না জানলে না শিখলে, একটা সমগ্র জীবন থেকে যাবে অমীমাংসিত এবং অনাস্বাদিত। পেয়ে বসল আবিষ্কারের এক অনুসন্ধানী অভিযান।
এক সময় টের পেলাম প্রকৃতির মধ্যে এই যে আমি এক অনিবার্য আর নিয়তি নির্ধারিত রসায়ন- একে ভেঙেচুরে ব্যবচ্ছেদ করে দেখে নিতে হবে এর গূঢ় ও গোপন অভিসারিক অভিযোজন। এবং এর একমাত্র পদ্ধতি আর ধারালো এক অব্যর্থ ছুরি হিসেবে কবিতাকেই বেছে নিলাম। সেই থেকে শুরু হলো কবিতার মেঠোপথ-রাজপথে আত্মঘাতী অঘটন, সংঘটন আর হৃদয়চর্চিত হনন যন্ত্রণা উদযাপন। সেই রক্তলেখা আর রক্তরেখা আজও চলেছে নিরলস এক নিষিদ্ধ কলেবরে, নিষিদ্ধ প্রতিষ্ঠানের কাছে, নিষিদ্ধ এমনকি আধুনিক রাষ্ট্রযন্ত্রের কাছেও।
কবিতা আমাকে ক্রমাগত খুন করে বাঁচিয়ে রাখার উদ্দেশে। আমিও যাপন করি কবিতায় উৎসবখচিত জীবনের মাংসল গন্ধকে বৃদ্ধাঙুল দেখিয়ে। আর তাই কবিতা আমার নেশা, যে নেশার কাছে হেরে গেছে মানবজন্মের ঘরে আবিষ্কৃত যেকোনো যোনির রক্তাক্ত অন্ধকার!