ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা, সুন্দরগঞ্জে দোকান লুট

সুদীপ্ত শামীম, সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা)
🕐 ৪:৪৭ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৩০, ২০২১

নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা, সুন্দরগঞ্জে দোকান লুট

তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় দোকানের তালা ভেঙে নগদ অর্থসহ মালামাল লুট করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোয়ার আলম সরকারের সমর্থকদের বিরুদ্ধে।

নির্বাচনী ফলাফল স্থগিত হওয়া উপজেলার কঞ্চিবাড়ি ইউনিয়নের শান্তির মোড়ে সোমবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে। এঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

স্থানীয়রা জানায়, কঞ্চিবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী আশরাফুল আলম চাকলাদার লিটনের পক্ষে কাজ করায় জাতীয় পার্টির ইউনিয়ন সদস্য সচিব শাহ মো. মুকুট মিয়ার ছেলে সুমন মিয়ার দোকানের তালা ভেঙে প্রায় ৩লাখ টাকার মালামাল ও নগদ টাকা লুট করে নিয়ে যায় ওই ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোয়ার আলম সরকারের সমর্থকরা। এদিন রাত ৯টার দিকে মনোয়ার আলমের প্রায় ৩/৪'শ সমর্থক তার ছেলের নেতৃত্বে শান্তির মোড়ে এসে একত্রিত হয়ে সুমন মিয়াকে হুমকি ধামকি দেয়। পরে স্থানীয়রা সুমন মিয়াকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। এসময় তারা এক ভোটারকে জগ দিয়ে মারধর করেন। খবর পেয়ে কঞ্চিবাড়ি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র থেকে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মনোয়ার আলম সরকারের সমর্থকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। মঙ্গলবার সকালে স্থানীয়রা দোকানের তালা ভাঙ্গা অবস্থায় দেখতে পায়।

ঘর মালিক মারুফুল ইসলাম অনিক বলেন, 'আমার ঘরে দীর্ঘদিন থেকে সুমন মিয়া ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। তার দোকানে অনেক মালামাল ছিল। লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করায় রাতের আঁধারে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোয়ার আলম সরকারের লোকজন দোকান লুট করে নিয়ে যায়।'

দোকানদার সুমন মিয়া বলেন, 'আমরা লাঙ্গল মাকার পক্ষে কাজ করায় মনোয়ার আলম সরকারের সমর্থকরা বিভিন্ন সময় হুমকি দিয়ে আসছিল। গতরাতে তারা আমাকে হত্যার উদেশ্যে আক্রমণ করে। পরে স্থানীয়রা আমাকে উদ্ধার করে বাসায় পাঠিয়ে দেয়। এরপর গভীর রাতে মনোয়ার আলম সরকারের সমর্থকরা দোকান লুট করে ৩লাখ টাকার মালামাল ও নগদ ৫০হাজার টাকা নিয়ে যায়।'

দোকানদার সুমন মিয়ার স্ত্রী শিমা আক্তার বলেন, 'রাত নয়টার দিকে একটা নম্বর থেকে আমার ফোনে কল আসে। সেই অজ্ঞাত ব্যক্তি আমাকে জানায় সুমনকে দোকান বন্ধ করে বাসায় যেতে বলেন। আনারস প্রতীকের সমর্থকরা লাঠিশোটা নিয়ে দোকানের দিকে যাচ্ছে। পরে আমি আমার স্বামীকে দোকান বন্ধ করে বাসায় আসতে বলি। আজ সকালে দোকানে গিয়ে দেখি দোকানের তালা ভাঙ্গা। দোকানে কসমেটিক মালামালসহ প্রায় তিন লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। দোকানেই ছিল আমাদের একমাত্র চলার সম্বল। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।'

প্রত্যক্ষদর্শী শিপন মাস্টার নামের স্থানীয় এক শিক্ষক বলেন, 'রাত ৯টার দিকে মনোয়ার আলম সরকারের সমর্থকরা একত্রিত হয়ে সুমন মিয়াকে হুমকি ধামকি প্রদান করে। পরে আমরা সুমনকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেই। আজ সকালে শুনতে পাই সুমনের দোকান লুট হয়েছে।'

কঞ্চিবাড়ি ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব শাহ মো. মুকুট মিয়া বলেন, 'আমাদেরকে বিভিন্ন সময়ে মনোয়ার আলম সরকারের সমর্থকরা তাদের পক্ষে কাজ করার প্রস্তাব দেয়। আমরা তাদের প্রস্তাবে রাজি না হয়ে লাঙ্গল প্রতীকের পক্ষে কাজ করি। এতে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে আমার ছেলের দোকানের তালা ভেঙে নগদ অর্থসহ মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।'

আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোয়ার আলম সরকার বলেন, ‘আমার সমর্থকরা কখনো এমন ধরনের ঘটনা ঘটাতে পারেনা। তবে ঘটনার দিন রাতে মেম্বার প্রার্থী শিপন ও মুকুটের ভাই বউয়ের সমর্থকরা একত্রিত হয়ে ভোট না দেয়ার অভিযোগে এক ভোটারকে জগ দিয়ে মাথায় মারধর করে।’

ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী কঞ্চিবাড়ি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই আক্তারুজ্জামান বলেন, 'খবর পেয়ে মঙ্গলবার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দোকানের তালা ভাঙ্গা অবস্থায় দেখতে পাই। পরে দোকান খুলে দেখি ক্যাশ বাক্স মেঝেতে পড়ে আছে। দোকানে অল্প কিছু মালামাল পেয়েছি।'

উল্লেখ্য, কঞ্চিবাড়ি ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের বজরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের ১০টি বুথ থেকে ব্যালট বাক্স ও পেপার ছিনতাইয়ের অভিযোগে নির্বাচনী ফলাফল স্থগিত করা হয়। ওই কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা ৩ হাজার ৩৭৮ জন। ওই ইউনিয়নে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোয়ার আলম সরকার আনারস প্রতীকে ৪ হাজার ৪ ভোট পেয়ে এগিয়ে আছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী দূর্লভ চন্দ্র মন্ডল অটোরিক্সা প্রতীকে ৩ হাজার ২৫৪ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করছেন।

 

 
Electronic Paper