ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বেসরকারি বাসে ঝুলে গেল হাফ পাস

রবিউল ইসলাম
🕐 ১২:৪৬ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৮, ২০২১

বেসরকারি বাসে ঝুলে গেল হাফ পাস

বেসরকারি বাসে শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়ার সিদ্ধান্ত আবারও ঝুলে গেল। দ্বিতীয় দফায় বিআরটিএর সঙ্গে অংশীজনদের বৈঠক হলেও কোনো সিদ্ধান্ত হলো না।

 

গতকাল শনিবার বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে বিআরটিএর প্রধান কার্যালয়ে এ বৈঠক শুরু হয়। প্রায় দেড় ঘণ্টার বেশি সময় চলা বৈঠকে পরিবহন নেতাদের পক্ষ থেকে বিআরটিএকে টাস্কফোর্স গঠনসহ বেশ কয়েকটি প্রস্তাব দেওয়া হয়। প্রস্তাবগুলো বিবেচনায় নিয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে বৈঠকে জানানো হয়। সভা শেষে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার ও ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি খন্দকার এনায়েত উল্যাহ সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।

বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, শিক্ষার্থীদের জন্য ভাড়া কমানোর বিষয়ে বিআরটিএ আন্তরিক। বৈঠকে বেশ কিছু বিষয় উঠে এসেছে। পরিবহন নেতাদের পক্ষ থেকে টাস্কফোর্স গঠনসহ বেশ কয়েকটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবগুলো বিবেচনায় নিয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তিনি বলেন, হাফ ভাড়া বাস্তবায়নে পরিবহন নেতারা আন্তরিক। কিন্তু তাদের যে ক্ষতি হবে তা কীভাবে পূরণ করা হবে? তাদের ক্ষতির জন্য কত ভর্তুকি দেওয়া হবে-এসব সিদ্ধান্তের জন্য সরকার ও পরিবহন সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাব এসেছে। এ বিষয়ে সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আবার বৈঠক হবে। আমরা আবারও বৈঠক করব। যত দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় তার জন্য চেষ্টা করা হবে। তিনি জানান, বৈঠকে ঢাকায় কত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কতজন ছাত্র, এদের মধ্যে কতজন বাসে ওঠে- এসব বিষয়ে তালিকা চেয়েছেন পরিবহন নেতারা। আমরা এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করব। তারা তথ্য দেবেন।

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়ে উল্লাহ বলেন, ঢাকার শতকরা ৮০ শতাংশের মতো বাস মালিক গরিব। তারা যদি হাফ ভাড়া নেয় সরকার কীভাবে তাদের এ ক্ষতি পোষাবে-আগে সেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমরা শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিতে চাই। এ ব্যাপারে আমরা অত্যন্ত আন্তরিকও। কিন্তু আগে বেশ কয়েকটি বিষয়ে সমাধান করতে হবে। আমাদের পক্ষ থেকে কিছু প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সেগুলোর সমাধানের মাধ্যমে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। নতুন যে যেসব প্রস্তা এসেছে এগুলো নিয়ে টাস্কফোর্স গঠনের বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কারা শিক্ষার্থী আর কারা শিক্ষার্থী নয়-এ বিষয়েও জটিলতা রয়েছে জানিয়ে এনায়েত উল্লাহ বলেন, বাসে উঠে সবাই বলবে আমরা ছাত্র। অনেকে এ সুবিধা নেওয়ার জন্য নতুন করে আইডি কার্ড বানিয়ে নেবে। সরকার এটার সমাধান কীভাবে করবে সেটাও দেখতে হবে। সবগুলো বিষয় বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এ সময় মহাসচিব প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে শ্রেণিকক্ষে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ জানান। একই সঙ্গে তিনি পরিবহন ভাঙচুর, শ্রমিকদের মারধরসহ বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানান।

বৈঠকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সহকারী কমিশনার মো. আশফাকসহ বিআরটিএর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। গত শুক্রবার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সারা দেশে বিআরটিসি বাসের ভাড়া ৫০ শতাংশ কমানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। শিগগিরই এ বিষয়ে বিআরটিসি প্রজ্ঞাপন জারি করবে বলেও জানান ওবায়দুল কাদের। এর আগে বৃহস্পতিবার বিআরটিএর প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ পাস চালুর বিষয়ে বাস মালিকদের রাজি করাতে পারেনি সরকার।

শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়ার জন্য আইন করার দাবি সংসদে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া নিশ্চিত করতে আইন করার দাবি উঠেছে জাতীয় সংসদে। সব ধরনের গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়া প্রচলন করতে সংসদে আইন পাস করার দাবি করেছেন বিএনপির সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা। এ সময় তিনি হাফ ভাড়ার দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ হামলা করেছে বলে অভিযোগ করেন। গতকাল শনিবার মহাসড়ক বিল, ২০২১ এর সংশোধনীর ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ দাবি করেন।

অবশ্য তার বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে হাফ ভাড়ার বিষয়ে সরকারের ইতিবাচক অবস্থান তুলে ধরলেও আইন করার বিষয়ে কিছু বলেননি সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

মন্ত্রী বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বিআরটিসি বাসে হাফ ভাড়া চালু করা হয়েছে। আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে। এটা সারাদেশেই বিআরটিসি বাসের জন্য চালু হবে।

তিনি বলেন, বেসরকারি যে গণপরিবহন রয়েছে, তাদের ওপর আমরা জোর করে চাপিয়ে দিতে পারি না। তারা তো সরকারের অধীনে না। সরকারের সঙ্গে হয়তো কাজ করে। বেসরকারি গণপরিবহনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত তাদের নেওয়া দরকার। সামাজিক দায়বদ্ধতা ও জনস্বার্থ বিবেচনায় তাদের অনুরোধ করা হয়েছে, এমনকি প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকেও তাদের অনুরোধ করা হয়েছে। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, আজ বিআরটিএতে বাস মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে একটা বৈঠক রয়েছে। বৈঠকে আমরা আশা করি ইতিবাচকভাবে তারা শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেবেন।

এর আগে রুমিন ফারহানা তার বক্তব্যে বলেন, সড়ক নিরাপত্তা দেওয়ার দাবির সঙ্গে সঙ্গে হাফ পাসের একটা দাবি বহুদিন ধরে শিক্ষার্থীরা করছে। অর্থাৎ অর্ধেক ভাড়ায় যেন শিক্ষার্থীরা চলতে পারে। সম্প্রতি দেশের শহর এলাকার কিছু বাসে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাফ ভাড়া নেওয়া হয়।

কিন্তু এটা নিয়ে কোনো আইন বা নীতিমালা না থাকায় ভাড়া বাড়ানোর পরে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, সম্প্রতি বাসভাড়া বাড়ানোর পরে মালিকপক্ষ হাফ ভাড়া বন্ধ করে দিয়েছে। এরই জেরে শিক্ষার্থীরা পথে নেমে এসেছে। কিন্তু তাদের ওপর ছাত্রলীগ, যুবলীগের কর্মীরা হামলা করেছেন। তিন বছর আগে যখন আন্দোলন হয়েছিল, তখন হেলমেট পরে তারা চেহারা লুকানোর চেষ্টা করেছিল। এবার যখন ঝাঁপিয়ে পড়লো হেলমেট পরা দেখিনি।

রুমিন ফারহানা বলেন, সরকার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ও বেসরকারি পরিবহনে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়ার আইন করতে পারে। সেক্ষেত্রে সবাইকে সেটা মানতে হবে। শুধু শহর এলাকার বাসে নয়, সব গণপরিবহনে অবলিম্বে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া দিয়ে যাতায়াতের আইনি বিধান করা হোক।

 
Electronic Paper