অতলান্তিকে অবগাহন
অমল সাহা
🕐 ৪:২৫ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৬, ২০২১
নাজমুল হুদা কবিতা লেখেন অনেক দিন ধরে। ছাত্রজীবন থেকেই নিবিড়ভাবে কবিতাচর্চা করেন। কিন্তু কেন জানি তার ভেতরে একধরনের অভিমান লক্ষ করি। বেশ ভালো কবিতা লেখা সত্ত্বেও বড় কোনো কাগজে কবিতা প্রকাশ করার জন্য পাঠান না। অবশ্য এই সিন্ডিকেটের যুগে অনেক ভালো লেখাও আর আলোর মুখ দেখে না। সেটাও হতে পারে অভিমানের কারণ।
‘অতলান্তিকে’ নাজমুল হুদার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ। এখানে মোট ৫৬টি কবিতা গ্রন্থিত হয়েছে। মানব সম্পর্ক, চাওয়া পাওয়া সর্ব অর্থে মানবজীবনের বহুবিধ বর্ণিল ছবি আঁকাই কবির মূল উদ্দেশ্য। আমার ধারণা সেখানে কবি সফল হয়েছেন। সবচেয়ে বড় কথা গদ্যছন্দ, মাত্রাবৃত্ত, অক্ষরবৃত্ত প্রভৃতি ছন্দে কবিতাগুলো লেখা হলেও সব কবিতাতেই প্রকৃত কাব্যভাষা ফুটে উঠেছে। যা ছন্দভাবনার চেয়ে বিষয়ভাবনার দিকেই পাঠককে ধাবিত করবে। কবিতা শেষতক কবিতাই হয়ে উঠেছে।
বইটির প্রথম কবিতায় মানুষের জন্ম এবং মানুষের অপার সম্ভাবনার কথা বলতে গিয়ে লেখেন- ...সর্ষে দানা থেকে শুরু হওয়া অধ্যায়... হিজল জলের পুকুর যেমন ধরে রাখে, সুধীর অবয়ব/ তেমনি জঠর অতলে মন্থরে, সাজায় অঙ্গ সৌষ্ঠব। ...রয়ে যায় শুধু আত্মাটা তার সুপ্তি আবহে/ অচেনা জলে, যেন আনম্য উৎপল।
মাতৃজঠরের সৌন্দর্য বর্ণনায় নাজমুল হুদা এক অনাবিল মনোমুগ্ধকর বর্ণনা দিয়েছেন। ‘আনম্য উৎপল’ শব্দটার একটা অসাধারণ ব্যঞ্জনা অনুভূত হয়েছে এবং হিন্দি ভাষায় ঠিক এ ধরনের আরেকটি দ্যুতিময় শব্দ আছে সেটি হলো, ‘আনমোল’। ধ্বনিগত ও অর্থগত সাজুয্যপূর্ণ প্রায় একই রকম শব্দটি চয়নে কবির মুন্সিয়ানাকেই প্রমাণিত করে। কবিতাটির শেষদিকে তিনি আশা প্রকাশ করেন- ...চোখের বিভবে হারাবে সকল বিরূপ উপরোধ/ উদ্ভাবিবে দঙ্গল হতে, শুধু মানুষের মুখ’। মানুষের মানসিক অন্ধত্বকে তিরস্কার করে ‘কানাবক’ কবিতায় লেখেন- ...পায়ের তলার সব মাটি যদি যায় সরে দিনে দিনে/ আমরা কি শুধু ভাবব মিছে চ-াল খেয়ালে? কাব্যগ্রন্থটির বিভিন্ন কবিতায় দ্যুতি ছড়ানো অনেক বাক্যবন্ধ আছে যা পাঠককে বিমুগ্ধ করবে। যেমন, ‘ঘুমিয়ে পড়ো ঝিঁঝিঁরা/ আমি জেগে আছি কোতোয়াল...।’
তারপর, ‘পাপগুলো কি আঁধার হলে বোধের গায়ে আঁচড় কাটে? কিংবা ‘বোবা পরিচ্ছদ’ কবিতায়- ‘...জানালার ফাঁক গলে ভেসে যায় পরান/ ভাড়াটে গ্যারেজে জমা পড়ে বিমূঢ় দেহেরা/ কখনো ছোঁয় আদিমতা, কখনো জটিলতা।’ স্বল্প পরিসরে সব কবিতা ধরে ধরে আলোচনা সম্ভব নয়। তাই বিরত থাকতে হলো। তবে কিছু কবিতায় একেবারে ভিন্নধারার কাহিনি কবিতা লিখেছেন। যেমন- ‘মনার নানা’। যা বইটিতে কোনো কোনো পাঠকের কাছে ছন্দপতন হিসেবে দেখা দিতে পারে। তারপরেও প্রকৃত কবিতাপ্রেমী পাঠক নাজমুল হুদার ‘অতলান্তিকে’ অবগাহন করে মণিমুক্তো তুলে আনতে সক্ষম হবেন। কাব্যগ্রন্থটির বহুল প্রচার কামনা করি।