ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

আঙুল ফুলে গাবগাছ

জুয়েল আশরাফ
🕐 ২:৫০ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৬, ২০২১

আঙুল ফুলে গাবগাছ

হাবলু জীবনে অনেক কিছুই হতে চেয়েছিল। তেমন কিছুই হতে পারেনি। শুধু চাইত মানুষ যেন তাকে সম্মান করে। প্রতিবেশীরা যেন ভালো ব্যবহার করে। দুই চারটা সালাম কেউ দিলেও ভালো লাগত। কিন্তু কেন যেন মানুষ তাকে পাত্তাই দেয় না।

হাবলু দেখতে চালকুমড়ার মতন সেটা একটা কারণ হতে পারে। জামা কাপড়ে মানায় না তাকে। জিন্সের প্যান্ট আর জ্যাকেট পরলে রংবাজদের মতো লাগে। চামড়ার জ্যাকেট আর বুট পড়লে পেশাদার খুনিদের মতো লাগে। রংচঙ্গা হাওয়াই জামা পড়লে ঝালমুড়িওয়ালাদের মতো লাগে। একবার দামি এক কোট পরে রেস্টুরেন্টে গেছে। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে মেনু পড়ছিল। এক ভদ্রলোক ভরপেট খেয়ে তার হাতে দশ টাকার একটা নোট দিয়ে বলল, এই ওয়েটার, ল তোর বখশিশ।

এমনকি সানগ্লাস পরলেও অনেকে জিজ্ঞেস করে, চোখের সমস্যা আছে নাকি ভাই? বাবলা ঘাস খান রোজ একমুঠ করে। ঘাসে অনেক ভিটামিন আছে। ইতিহাস সাক্ষী গরু কোনোদিন চশমা পরেনি।

মানুষের এহেন মন্তব্যে কষ্ট নিয়ে বেঁচে আছে হাবলু। দিনগুলো এমনিতেই চলে যেত। কিন্তু সেদিন মনে জোর পেল ফেসবুকে একটি পোস্ট পড়ে- ‘এক বোতল পানির মূল্য সাধারণ দোকানে পনের টাকা। ফাইভ স্টার হোটেলে দুইশ’ টাকা এবং এয়ারপোর্টের ভিতরে তিনশ’ টাকা। একই বোতল এবং একই ব্র্যান্ড। পরিবর্তন শুধু স্থানের। ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় সেই একই জিনিসের দাম পরিবর্তন করে দিয়েছে। নিজেকে যদি কখনো মূল্যহীন মনে হয় তবে একই স্থানে না থেকে জায়গা পরিবর্তন করে দেখুন। সাহস জোগাড় করে নিজের গণ্ডি পরিবর্তন করে এমন স্থানে যান যেখানে মানুষ আপনাকে গুরুত্ব প্রদান করে। নিজেকে এমন কিছু মানুষের মাঝে নিয়ে যান যারা আপনার মূল্য বুঝে আপনার কাজে উৎসাহ প্রদান করে।’

এ জাতীয় পোস্টে হাবলুর শরীর চাঙ্গা হলো। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে গেল। হাবলু অভিজাত এক মহল্লায় চলে গেল। এরা ভদ্রলোক। মনে পাপ নেই। নিশ্চয়ই তাকে সম্মান করবে।

প্রথম এক সপ্তাহ কিছু হলো না। পরের সপ্তাহ হাবলু টের পেল তার মধ্যে দারুণ ব্যক্তিত্ব আছে। মানুষ প্রভাবিত হয় তার চলাফেরায়, সানগ্লাস আর টুপি পরে যখন হেঁটে যায় লোকজন আড়ষ্ট হয়ে যায়। সালাম দেয়। ফিসফিস করে কথা বলে, তাকে নিয়েই।

বাড়িওয়ালা জোরে গান বাজাত। সমস্যা হতো। কয়েকবার অভিযোগ করার পরও কাজ হয়নি। আজকাল বাজায় না। মহল্লার দোকানদার টাটকা জিনিস দেয়। একটা হাঁসের ডিম পচা হওয়াতে ফেরত নিয়ে গেছে হাবলু। দোকানদার হড়বড় করে বলল, একটা না আপনি লাগলে আমার সব ডিম লয়া যান।

কী কাণ্ড? হাবলু উনার ডিম নিতে যাবে কেন?

মহল্লার চায়ের দোকানদার পর্যন্ত হাবলুকে দেখলে পেয়ালা ভরে চা দেয়। জিজ্ঞেস করে, বিস্কুট দিমু হাবলু ভাই? এমনকি চায়ের কাপে বিস্কুট ভেঙে পরে গেলেও উনি ব্যস্ত হয়ে যান। হায় হায় কী হইল! ওই ভাইরে বিস্কুট দে আরেকটা।

একদিন পুরনো খবরের কাগজে হাবলু পড়ল- কোনো এক সিরিয়াল কিলার নাকি গত এক মাসে চারটি খুন করেছে। ভিকটিমদের টুকরো টুকরো করে পলিথিন ব্যাগে করে রাতের বেলায় শহরের বিভিন্ন ময়লার বিনে ফেলে দিয়ে আসে শয়তানটা।

বুকটা হাহাকার করে উঠল হাবলুর। হায় রে মানুষ। হায়রে পাপাত্মা। কেন এমন হয়? মনে পড়লে রাতের বেলা ঘুম আসে না তার। তাই প্রায়ই হাঁটতে বের হয়। তখন বাড়ির কিচেনের ময়লার ব্যাগগুলো হাতে করে নিয়ে যায়। ফেলে দিয়ে আসে।

সেই দৃশ্য প্রতিবেশীরা দেখেছে আড়াল থেকে। আর কীসের সঙ্গে কী মিলিয়ে নিয়েছে। আঙুল ফুলে গাবগাছ হলে হঠাৎ মানুষ সম্মানজনক হয়, রাতারাতির মধ্যে অর্জন করা সম্মানের কারণ বুঝতে পেরে মনটা বিবাগী হয়ে গেল হাবলুর।

বাহ্রা চরকান্দা, নবাবগঞ্জ, ঢাকা

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper