ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বিশেষ রচনা

প্রতিবন্ধী শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিষয়

ফরিদুল ইসলাম নির্জন
🕐 ১২:৩৯ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৯, ২০২১

প্রতিবন্ধী শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিষয়

দীপনপুর -এর আয়োজনে ইউনেসকোর তত্ত্বাবধানে প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য শারীরিক-মানসিক ও উৎসাহ প্রদানবিষয়ক প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল ও গাইডলাইন প্রণয়ন কর্মশালা। কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হয় স্মাইলিং চিলড্রেন স্পেশাল স্কুল। অংশগ্রহণে প্রতিবন্ধী শিশুদের সুরক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত অভিভাবক, শিক্ষক ও সেবা প্রদানকারী ব্যক্তি।

২০১৭ সালে দীপনপুর প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে দেশীয় সৃজনশীল সাহিত্যের বই পঠন, বিপণন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটিতে শিশুদের জন্য সঙ্গীত, চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি, বিতর্ক, মেডিটেশন ও যোগব্যায়ামের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ পরিচালিত হয়েছে। সমাজের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের কথা বিবেচনা করে দীপনপুর প্রশিক্ষণগুলো তাদের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেওয়ার কথা চিন্তা করে। ইউনেসকোর আওতাধীন হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করতে পেরে দীপনপুর গর্বিত। তবে করোনার প্রতিকূল সময়ে এসব কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া বিলম্বিত হয়। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে একবছর মেয়াদি প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়। প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে দুই দিনব্যাপী কর্মশালার আয়োজন হয় ১১ ও ১২ অক্টোবর।

প্রথমদিন আয়োজনে ছিল সেমিনার। সেমিনারের বিষয়- প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য শারীরিক-মানসিক ও উৎসাহ প্রদানবিষয়ক প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল ও গাইডলাইন প্রণয়ন। সেমিনার শুরুর পূর্বে ৫০ জন অংশগ্রহণকারী এই কর্মশালায় নিবন্ধন করেন। তাদের প্রত্যেককে মুদ্রিত ট্রেনিং ম্যানুয়াল ও গাইডলাইন বিতরণ করা হয়। সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন দীপনপুরের নির্বাহী পরিচালক ডা. রাজিয়া রহমান জলি। তিনি দীপনপুর প্রতিষ্ঠার ইতিহাস তুলে ধরে ইউনেসকোর সঙ্গে এই প্রকল্পের সম্পৃক্ততা বিশ্লেষণ করেন এবং অংশগ্রহণকারীদের উদ্দীপিত করেন তার উৎসাহব্যঞ্জক বক্তৃতায়।

এরপর এই প্রকল্পের কনসালটেন্ট জনাব আশরাফ আলী মজুমদার প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল ও গাইডলাইন প্রণয়নের উদ্দেশ্য বিশদভাবে উপস্থাপন করেন। তার বক্তব্যের সমান্তরালেই অংশগ্রহণকারীরা ম্যানুয়ালে উল্লেখিত তত্ত্ব ও তথ্যগুলো যাচাই করে তাদের মতামত পেশ করেছেন এবং তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন তিনি।

এই পর্ব শেষ হলে বক্তব্য প্রদান করেন সেমিনারের মূল আলোচক ডা. সানজিদা শাহরিয়া (কাউন্সিলর ও সাইকোথেরাপি প্র্যাকটিশনার, ফিনিক্স ওয়েলফেয়ার সেন্টার বাংলাদেশ)। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের সেবা প্রদানকারী ব্যক্তিদের দিকনির্দেশনায় তিনি কিছু মূল্যবান বিষয়ে আলোকপাত করেন। অটিজমের ব্যবস্থাপনায় জনসচেতনতা বাড়াতে প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো নির্মাণের ওপর তিনি জোর দেন।

এরপর ইউনেসকোর পক্ষ থেকে আগত, সেমিনারের বিশেষ ফারহানা ইয়াসমিন জাহান (বিসিএস- জেনারেল এডুকেশন, সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার, বাংলাদেশ ন্যাশনাল কমিশন ফর ইউনেসকো) শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের শিক্ষা জীবনে ইউনেসকোর পদক্ষেপ ও আগ্রহ তুলে ধরেন তিনি। প্রধান অতিথি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক জাকিয়া রহমান এরপর ভাষণ দেন। স্কুল সাইকোলজিতে তিনি বিশেষজ্ঞ বিধায় উপস্থিত শিক্ষক ও অভিভাবকদের তিনি শিশুর মনো-দৈহিক গঠনে কার্যকর ভূমিকা রাখার জন্য সুপরামর্শ প্রদান করেন এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য বিশেষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

তিনি মনে করেন সম্মিলিত প্রয়াসের মাধ্যমেই শুধু এই শিশুদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো সম্ভব। উন্নত বিশ্ব এই ক্ষেত্রে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে, বাংলাদেশকেও পিছিয়ে পড়লে চলবে না। কারণ এ ধরনের শিশুর সংখ্যা দিনকে দিন বাড়ছে। ইউনেসকোর প্রোগ্রাম অফিসার (এডমিন ও ফিন্যান্স) শেখ মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম শুভ উপস্থিত অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে কিছু তথ্য ও অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। এ ধরনের সেমিনার আয়োজনের জন্য তিনি দীপনপুর এবং স্টাইলিং চিলড্রেন স্পেশাল স্কুল কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। সবশেষে সেমিনারের সভাপতি, স্মাইলিং চিলড্রেন স্পেশাল স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল মাহমুদা আকতার শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। সেমিনার শেষে অতিথিরা স্কুলটির বিভিন্ন কক্ষ ঘুরে দেখেন এবং স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে মতবিনিময় করেন।

কর্মশালার দ্বিতীয় দিন একই ভেন্যুতে অংশগ্রহণকারী অভিভাবক, শিক্ষক ও সেবাপ্রদানকারীদের মাঝে প্রকল্পের জন্য ডিজাইনকৃত লিফলেট ও পোস্টারের খসড়া বিতরণ করা হয় এবং এগুলোর নানা দিক নিয়ে গঠনমূলক একটি মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন স্মাইলিং চিলড্রেন স্পেশাল স্কুলের প্রিন্সিপাল মাহমুদা আকতার। দীপনপুরের পক্ষ থেকে পোস্টার ও লিফলেট সংক্রান্ত ফিডব্যাক গ্রহণ করার জন্য উপস্থিত ছিলেন নির্বাহী পরিচালক ডা. রাজিয়া রহমান জলি এবং প্রকল্প কনসালটেন্ট জনাব আশরাফ আলী মজুমদার। সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন স্কুলের চেয়ারম্যান আর. কে. ফারুকী নজরুল। তিনি তার শুভেচ্ছা বক্তব্যে এই স্কুলের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা লাভের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। সবশেষে সভাপতি মাহমুদা আকতার তার প্রতিষ্ঠিত স্কুলটি দীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরে সবাইকে সহযোগিতার হাত বাড়ানোর আবেদন জানান।

প্রতিবন্ধী শিশুদের আশ্রয় হিসেবে স্মাইলিং চিলড্রেন স্পেশাল স্কুলের মতো আরও প্রতিষ্ঠান সারাদেশে তৈরি হওয়া জরুরি। দীপনপুরের মতো আরও অনেককে সহযোগিতামূলক মনোভাব নিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানের পাশে দাঁড়ানো উচিত। বিশেষ শিশুদের জন্য সুন্দর হোক আগামী দিনের পৃথিবী। ইউনেসকোর এই প্রোগ্রামের আরও কয়েকটি ধাপ রয়েছে। যেগুলো সফলভাবে সম্পন্ন করতে বদ্ধপরিকর দীপনপুর। দীপনপুরের শ্লোগান ‘আলোকের এই ঝরনাধারায় ধুইয়ে দাও’। আলোর শক্তি থেকে প্রতিবন্ধী শিশুরাও যেন বাদ না পড়ে সেই লক্ষ্যে পরিচালিত হোক আমাদের সমাজ।

ফরিদুল ইসলাম নির্জন: লেখক

 
Electronic Paper