ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বিপাকে আলু ব্যবসায়ীরা

জয়পুরহাট প্রতিনিধি
🕐 ১০:০৬ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ১০, ২০২১

বিপাকে আলু ব্যবসায়ীরা

বাজার দর কমে যাওয়ায় হিমাগারে সংরক্ষণ করা লাখ লাখ বস্তা আলু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন জয়পুরহাটের কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। প্রতিবস্তা আলুতে তাদের সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে জাত ভেদে ১ হাজার থেকে ১৩০০ টাকা পর্যন্ত। আর এখন বস্তাপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। তাই লাভ তো দূরের কথা ধারদেনা শোধ করতে সর্বস্ব হারাতে বসেছেন তারা।

সরেজমিনে জানা গেছে, আলু চাষের বিখ্যাত জেলা জয়পুরহাটে গেল মৌসুমে ৪০ হাজার ৩১৫ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছিল। যা থেকে উৎপাদন হয়েছে ৮ লাখ ৪৫ হাজার ২৭৯ মেট্রিক টন আলু। গত বছরে আলুতে ব্যাপক লাভবান হওয়ায় এবারও জেলার ১৮টি হিমাগারে ৬০ কেজি হিসেবে প্রায় ২৬ লাখ বস্তা আলু মজুদ করেছে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। যার পরিমাণ ১ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন।

বিক্রি মৌসুম শেষ হতে আর এক থেকে দেড় মাসের মতো থাকলেও বাজারে দাম না থাকায় এখন অবধি আলু বিক্রি হয়েছে মাত্র ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। একদিকে বিভিন্ন ব্যাংক, এনজিও, হিমাগার থেকে লোন, অন্যদিকে হিমাগারের ভাড়া পরিশোধ করতে না পাড়ায় আলু উত্তোলন করছেন না ব্যবসায়ীরা। প্রকারভেদে বিভিন্ন জাতের বস্তাপ্রতি আলুতে খরচ হয়েছে ১ হাজার থেকে ১৩০০ টাকা পর্যন্ত। আর এখন বিক্রি করতে গেলে দাম ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা বস্তা। তাই মহাবিপাকে পড়েছেন তারা।

কালাই উপজেলার পাঁচশিরা বাজারের আলু ব্যবসায়ী আফসার আলী বলেন, এবার ৫০ হাজার বস্তা আলু কয়েকটি হিমাগারে রেখেছি। বস্তাপ্রতি খরচ হয়েছে ১২৩০ টাকা করে। এখন সেই আলু বিক্রি করতে চাইছি, কিন্তু বাজার ৫৬০ টাকা। এ অবস্থায় আমার লোকশন হবে সাড়ে তিন কোটি টাকার মতো। হিমাগারের মালিকের কাছ থেকে লোন নিয়েছি, সেই টাকাও পরিশোধ করতে পারছি না। এখন আমার জমিজমা বিক্রি করেও সেই ঋণ শোধ হবে না। তিনি বলেন, সরকারের কাছে আমার অনুরোধ আলুগুলো বিক্রির ব্যবস্থা করুক। এতে লাভ না হোক অন্তত পুঁজিটা যেন ফিরে পাই।

মোহাইল গ্রামের ব্যবসায়ী আমিরুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে দেড় হাজার বস্তা আলু হিমাগারে সংরক্ষণ করেছি। এসব আলু কৃষকদের কাছ থেকে ৪০০ থেকে ৪২০ টাকা দরে কিনেছি। হিমাগারে রাখায় বস্তাপ্রতি খরচ হয়েছে ১ হাজার ৫০ টাকা পর্যন্ত। এখন আলু বিক্রি করতে গেলে বস্তাপ্রতি ৫শ’ টাকা লোকশান হচ্ছে। এভাবে যদি আলুর বাজার কমতে থাকে তাহলে ঋণ তো শোধ হবেই না, উল্টোপথে নামা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।

একইভাবে হতাশার কথা জানালেন পুনট এলাকার বদির ফকির নামে এক ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, বিভিন্ন ব্যাংক ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ৬ হাজার বস্তা আলু হিমাগারে রেখেছি। প্রতি বস্তায় ১ হাজার ৫০ টাকা খরচ হয়েছে। এখন বিক্রি করতে গেলে বস্তা প্রতি ৫০০ টাকা নাই হয়ে যাচ্ছে। এখন কি করব ভেবে পাচ্ছি না। তাই সরকারের কাছে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ কামনা করছি।

এদিকে কোনো কোনো হিমাগার থেকে ব্যবসায়ী ও কৃষকদের ঋণ দেওয়া হয়েছে। তাই বেশিরভাগ আলু অবিক্রীত থাকায় হিমাগারের ভাড়া ও ঋণের টাকা না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন হিমাগার মালিকরাও। বিক্রি মৌসুম শেষেও ২০ ভাগ আলু অবিক্রীতই থেকে যাওয়ার আশঙ্কা তাদের। তাই তারাও চান সরকারের কার্যকরী হস্তক্ষেপ।

পুনট কোল্ড স্টোরেজের ম্যানেজার এনামুল হক বলেন, গেল মৌসুমে আলুর উৎপাদন বেশি হওয়ায় হিমাগারে মজুদও হয়েছে বেশি। বর্তমান দাম না থাকায় ব্যবসায়ী ও কৃষকদের পাশাপাশি আমরাও বিপাকে পড়েছি। আলুর ওপর আমরা ঋণ দিয়েছি। আলুর দাম কম থাকায় ব্যবসায়ীরা হিমাগার থেকে আলু উত্তোলন করছে না। বর্তমানে ৩০ থেকে ৪০ ভাগ আলু উত্তোলন হয়েছে। এতে আমারা ঋণের টাকা তো পাচ্ছিই না, অন্যদিকে হিমাগার শ্রমিকদের বাড়তি মজুরি দিতে হচ্ছে। বাজার এমন থাকলে শেষ দিকে ২০ ভাগ আলু অবিক্রীতই থাকতে পারে। এতে আমাদেরও ব্যাপক লোকশান হবে।

নিশ্চিন্তা পল্লী হিমাগারের ম্যানেজার রাহুল ইমাম সাব্বির বলেন, আমাদের হিমাগারে ১ লাখ ১৬ হাজার ২৫০ বস্তা আলু রাখা হয়েছিল। দাম কম হওয়ায় যার মধ্যে ৫০ হাজার বস্তাও এখন বের হয়নি। লোকশান হওয়ায় ব্যবসায়ীরা আলু বিক্রি করতে চাচ্ছে না। যার কারণে অবশিষ্ট কিছু আলু হিমাগারে থেকে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। আলুর দাম বৃদ্ধি যদি না হয় তাহলে তাদের পাশাপাশি আমাদের লোকশান গুনতে হবে। তাই এই মন্দা অবস্থা কাটাতে সরকারি উদ্যোগে বিদেশে আলু পাঠানোসহ টিসিবি, টিআর, কাবিখা প্রকল্পসহ অন্যান্য মাধ্যমে আলু বিক্রির দাবি জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে জয়পুরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) বাবুল কুমার সূত্রধর জানান, গেল মৌসুমে ৪০ হাজার ৩১৫ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছিল। এ থেকে উৎপাদন হয়েছে ৮ লাখ ৪৫ হাজার ২৭৯ মেট্রিক টন আলু। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের সব ধরনের পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও জানান, বর্তমান আলুর বাজার কম থাকায় ব্যবসায়ীরা হিমাগার থেকে আলু কম উত্তোলন করছেন। আর এক মাসের মধ্যেই চলতি রোপা আমন ধান কাটা শুরু হবে। ধান কেটে কৃষকরা যখন আলুর চাষ শুরু করবেন, তখন আলুর ব্যাপক প্রয়োজন হবে। সেই সময় কৃষকরা আলু কিনতে শুরু করলে হিমাগারের অবিক্রীত আলু বিক্রি হবে এবং আশানুরূপ দাম বাড়বে বলেও আশা করেন তিনি।

 
Electronic Paper