ইন্টারভিউ
নওশীন তাসনুভা অর্পা
🕐 ২:৩৫ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২১
আজমল সাহেব খাবার টেবিলে খেতে খেতে রাগে গড়গড় করছেন।
‘সারাদিন খালি বাপের হোটেলে বসে বসে খাওয়া হচ্ছে। বেকার ছেলে। এভাবে বসে বসে অন্ন ধ্বংস করতে লজ্জা করে না?’ এ কথা শুনে শাকিব চুপচাপ খাবারের প্লেটটা হাতে বিছানায় শুয়ে পড়ল। শাকিবের এমন অভদ্রতা দেখে আজমল সাহেব এবার চিৎকার করে উঠলেন, ‘এই হতচ্ছাড়া বাঁদর, শুয়ে শুয়ে কেউ খায় শুনেছিস এ জন্মে?’
শাকিব এবার মুখ খুলল, ‘তুমিই তো বললে আমি বসে বসে খেয়ে অন্ন ধ্বংস করছি। তাই এখন থেকে চিন্তা করলাম শুয়ে শুয়ে খাব। কিন্তু তাও তোমার সহ্য হলো না। বসে খেলেও সমস্যা শুয়ে খেলেও সমস্যা!’ নিজের গালে নিজেকেই একটা কষিয়ে চড় মারতে ইচ্ছে হচ্ছে আজমল সাহেবের। এদিকে শাকিব চুপচাপ খেয়ে শার্ট প্যান্ট পরে বেরিয়ে গেছে। আজ একটা চাকরির ইন্টারভিউ আছে তার। চৌরাস্তায় এসে একটা দোকানে ঢুকল সে। দোকানদার এগিয়ে এসে জিজ্ঞাসা করল, ‘কিছু লাগবে দাদা?’
শাকিব থমথমে গলায় উত্তর দেয়, ‘জানেন আমি কে?’
‘জে না। আফনে কিডা?’
‘জানেন আমার বাবা কে?’
দোকানদারের গলা শুকিয়ে আসে। ‘জে না। আফনের বাপ কিডা?’
‘আমার বাসার ভাড়াটিয়ারে চিনেন?’
‘দেহেন ভাই আমি আফনেরে, আফনের বাফেরে, ভারাটিয়ারে কাউরে চিনি না।’
শাকিব এবার হাফ ছেড়ে বাঁচে। হাসি হাসি কণ্ঠে বলে, ‘যাক, এবার তাইলে এক প্যাকেট সিগারেট দাও। আগেরবারের দোকানদার আমার বাবারে চিনত। পরে নালিশ দিয়েছিল বাসায়। তুমি যেহেতু আমাকে চেনো না সেজন্যে তোমার কাছ থেকেই সিগারেট নিব।’ শাকিব সিগারেট ধরায়। তারপর রিকশা নেয়। রিকশা এসে দাঁড়ায় অফিসের সামনে। অফিসের ভিতর ঢুকে ধীরে ধীরে। ঘাম ঝরছে শরীর থেকে।
‘মে আই কাম ইন স্যার?’
‘ইয়েস, সিট প্লিজ।’ এক অফিসার শাকিবকে প্রশ্ন করে, ‘আকবর কে জানো?’
‘জি না।’
‘কী, তুমি সম্রাট আকবরকে চেনো না?’
শাকিব এবার পাল্টা প্রশ্ন করে, ‘আপনার অফিসের সামনে একটা দোকানে বাকের নামক একটা লোক আছে। তাকে কি আপনি চেনেন?’
অফিসার অবাক হয়ে উত্তর দেয়, ‘কোন বাকের?’
‘যে বাকেরের ঘরে দুইটা বউ আছে তাও রাস্তায় মাতলামি করে সেই বাকের।’
‘না। আমি কোনো বাকেরকে চিনি না।’
‘আপনার অফিসের এত কাছাকাছি থাকা মানুষকে আপনি চেনেন না। আর আমি কোনো না কোনো যুগের সম্রাটকে কী করে চিনব?’
রাগে অফিসার গজগজ করতে থাকেনÑ ‘অপদার্থ কোথাকার।’ ‘দেখেন স্যার, আমার ওজন আছে, আয়তন আছে। জায়গাও দখল করি। সুতরাং আমি একটি পদার্থ। আপনার ব্যাকগ্রাউন্ড মে বি আর্টস? না স্যার? ব্যাকগ্রাউন্ড সাইন্স হলে এটলিস্ট পদার্থ কী তা আপনার জানা থাকার কথা ছিল। ইটস ওকে। এতে আপনার কোনো দোষ নেই।’ অফিসার এবার চিৎকার করে বলেন, ‘গরু কোথাকার।’ শাকিব আশপাশে তাকাতে থাকেÑ ‘স্যার, আশপাশে তো গরু নাই।’
‘গরু তো তুই। বের হ আমার অফিস থেকে।’
‘স্যার প্রথমে ভেবেছিলাম আপনার পদার্থবিজ্ঞানে জ্ঞান কম। এখন দেখছি আপনি গরু কি তাও জানেন না। এই যে দেখুন স্যার...।’
এই বলে শাকিব উল্টো ঘুরে তার পশ্চাদ্দেশ অফিসারকে দেখিয়ে বলল, ‘ভালো করে দেখুন স্যার কোনো লেজ দেখতে পান কি না? আমার কোনো লেজ নেই!’
অফিসার এবার ছিটকে দূরে সরে যায়Ñ ‘সিকিউরিটি, সিকিউরিটি এখনই এই অশ্লীল ছেলেকে বিদায় করো।’
শাকিবকে অফিস থেকে বের করে দেওয়া হয়। শাকিব রাস্তা ধরে হাঁটতে থাকে। একটা সিগারেট ধরায়।
মনে মনে ভাবে এ কোথায় এলো সে? এত বড় কোম্পানির মালিক অথচ গরু আর মানুষের মাঝে তফাৎও বোঝে না। থাকুক, এসব ভেবে হতাশ হয়ে কাজ নেই। আগামীকাল আরেকটা ইন্টারভিউ আছে!
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228