ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ভাঙনে ছোট হচ্ছে ইউনিয়ন, কমছে ভোটার

এহসানুল আলম খসরু, কোম্পানীগঞ্জ (নোয়াখালী)
🕐 ৬:২০ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২১

ভাঙনে ছোট হচ্ছে ইউনিয়ন, কমছে ভোটার

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ৮নং চরএলাহী ইউনিয়নের বিস্তির্ণ এলাকা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এতে উপজেলা সদর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে ওই ইউনিয়নটি। ছোট ফেনী নদীর করাল গ্রাসে ভাঙণের কারণে জনসাধারণ অন্যত্র চলে যাওয়ায়, ওয়ার্ড বিভক্তি না করার কারনে আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এর বিরুপ প্রভাব পড়বে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

ভাঙণ কবলিত এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ইতোমধ্যেই ছোট ফেনী নদী গিলে খেয়েছে ওই ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের বৃহদাংশসহ ১, ৩ ও ৪ ওয়ার্ডের অংশ বিশেষ। ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড পূর্ব চরলেংটা, চরলেংটা, চরএলাহী এবং দক্ষিণ চরএলাহী এ ৪টি গ্রামের অধিকাংশ ঘর-বাড়ি, ফসলী জমি, মৎস্য-গবাদী পশু খামার, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বিলিন হয়ে গেছে নদী গর্ভে। ইতিমধ্যে দুইবার ভাঙনের কবলে পড়ে চরলেংটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি কোনরকম কাঠটিনের ভবন করে পাঠদান করছে। ভাঙ্গনের কবলে পড়ে ইতিমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে হাতিয়া কলেনী, এরশাদ কলোনী, চরলেংটা আশ্রয়ন কেল্লা এবং হাসনা মওদুদ বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কয়েকটি মসজিদ।

নদী ভাঙন কবলিত হয়ে নিঃস্ব মানুষেরা ঠাই নিয়েছে ইউনিয়নের অন্য ওয়ার্ড কিংবা উপজেলার অন্য কোন ইউনিয়নে। এতে ইউনিয়নের কোন কোন ওয়ার্ডে জনসংখ্যার আনুপাতিক হারেও ব্যাপক তারতম্য দেখা দিয়েছে। ৫নং ওয়ার্ডে ৪টি গ্রামে ভোটার সংখ্যা ছিল ১৭শ জন। ভাঙণের কবলে পড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ায়, এখন এখানে মাত্র ২শ জন ভোটার এই ওয়ার্ডে বসবাস করছে। ইউনিয়নটির ৬নং ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা ৩৬১জন অপরদিকে ৯নং ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা ৩হাজার ৩শ ৪৪ জন।

ওয়ার্ড বিভক্তি করণ না করায় চরএলাহী ইউনিয়নে জনসংখ্যা অনুপাতে উন্নয়ন কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। সরকারি ভাবে প্রাপ্ত দান-অনুদান বিতরণে জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়দের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি এবং দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে জনগণকে। এসব অসামঞ্জস্যপূর্ণ অবস্থায় জনপ্রতিনিধিরাও সমস্যায় পড়ছেন, প্রশ্নের সম্মূখীন হচ্ছেন সরকারী দান-অনুদান বিতরণে।

চরএলাহী ইউনিয়নের জনসাধারণ এতই দূর্ভাগা যে, চরএলাহী “স্টিল ব্রিজ” ভেঙ্গে যাওয়ায় কার্যত উপজেলা সদর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে তারা। ইউনিয়নের বিস্তির্ণ চরাঞ্চলে উৎপাদিত সকল কৃষিপন্য সরবরাহ, ক্রয়-বিক্রি, পরিবহণ এবং এখানে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি আনা-নেয়ায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ইউনিয়নবাসীকে। নতুন ভাবে নির্মিয়মান ব্রীজের কাজ করতে গিয়ে আবারও নদীর জোয়ারের পানিতে ভাঙ্গণের কবলে পড়ে নতুন সেতু নির্মাণ কাজ বর্তমানে বন্ধ হয়ে আছে।

চরএলাহী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক বলেন, আশংকাজনক হারে নদী ভাঙ্গণ কবলীত ৮নং চরএলাহী ইউনিয়নের ওয়ার্ড বিভক্তি করনের জন্য ২০১৫ সালের ২৬ এপ্রিল তারিখে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে রেজুলেশন সহকারে আবেদন করা হয়েছিল নোয়াখালী জেলা প্রশাসক বরাবরে। এরপর ২০১৬ সালে সর্বশেষ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ যাবত কয়েক বার সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরে লিখিতভাবে আবেদন-নিবেদন করার পরও ওয়ার্ড বিভক্তি করণ করা হয়নি। ওয়ার্ড বিভক্তিকরণ কাজ সম্পন্ন না করায় আসন্ন ইউপি নির্বাচনে এর বিরুপ প্রভাব পড়বে বলে চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক ছাড়াও আরও অনেকে মতামত প্রকাশ করেছেন।

ভাঙনের কবলে পড়া স্থানীয় অধিবাসী ও এনজিওকর্মী আবদুর রহিম জানান, ইউনিয়নের এই অংশটি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে নদী ভাঙ্গন কবলিত তিন কিলোমিটার এলাকায় ব্লক ফেলে কিংবা জিও ব্যাগ দিয়ে বাঁধ নির্মানের কোন বিকল্প নাই। তিনি এই এলাকাটিকে নদী ভাঙনের হাত থেকে রক্ষায় স্থানীয় সাংসদ সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিন জানান, ২০১২ সালে কোম্পানীগঞ্জ সূবর্ণ চরের ভাঙন কবলিত এলাকাকে রক্ষা করতে চর ক্লার্ক-চর বালুয়া ক্রস ডেম নির্মানের প্রস্তাব করা হয়েছিল।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জিয়াউল হক মীর জানান, ভাঙণ রোধে পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে অবহিত করা হয়েছে।

 

 

 
Electronic Paper