হরিলুটের পক্ষেও গণস্বাক্ষর
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১:১০ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২০, ২০২১
ই-কমার্স ঘিরে চলেছে হরিলুট। বিভিন্ন হিসাব তালিকা সেটাই বলছে। সদুত্তর দিতে পারেননি দেশের বড় কয়েকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. রাসেল ও তার স্ত্রী শামীমা নাসরিন। অভিযানের পর গ্রেফতারও হয়েছেন তারা।
গ্রেফতার-পরবর্তী রাজধানীর কুর্মিটোলায় র্যাব সদর দফতরে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, ইভ্যালিকে বিদেশি কোম্পানির কাছে বিক্রি করে লভ্যাংশ নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল মোহাম্মদ রাসেলের। তুলে ধরেন রোমাঞ্চকর আরও কিছু তথ্য। এরপর আগেই চাকরি ছেড়েছেন বলে দাবি করেন ইভ্যালির সঙ্গে ছিলেন যে সব তারকা। এর আগে গত আগস্টে আরেকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের দুই মালিককে কারাগারে পাঠান আদালত। ই-কমার্সের এ দুটি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও আরও কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠানের হরিলুট ও ফাঁদকা- একের পর এক যখন সামনে আসছে তখন ই-ভ্যালির চেয়ারম্যান ও সিইওকে মুক্ত করতে চলছে গণস্বাক্ষর। প্রতিরোধে দেখা যায়নি প্রশাসনিক তৎপরতা। এদিকে ‘ফাঁদ থেকে বাঁচতে লোভ কমানো’র পরামর্শ দিয়েছেন খোদ হাইকোর্ট। অন্যদিকে রাসেলসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে নতুন একটি মামলা করেছেন এক ব্যবসায়ী।
গণস্বাক্ষর কর্মসূচি
গতকাল রোববার বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে ধানমন্ডির ১৪ নম্বর সড়কের ইভ্যালির প্রধান কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে দেখা যায় তাদের। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে বিকাল ৪টা থেকে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি শুরুর কথা রয়েছে।
এ বিষয়ে কর্মসূচির আহ্বায়ক মীর আমজাদ হোসেন আকাশ বলেন, আমরা চাই প্রধান নির্বাহী আমাদের মাঝে ফিরে আসুক এবং গ্রাহকদের পাওনা মিটিয়ে দিক। তাকে গ্রেফতার করে আটকে রাখা কোনো সমাধান নয়। আমরা চাই গ্রাহক ও সেলাররা তাদের প্রাপ্য ফিরে পাক। আজকের পর পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
১৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মোহাম্মদপুরের নিজ বাসা থেকে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. রাসেল ও তার স্ত্রী শামীমা নাসরিনকে (প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান) গ্রেফতার করে র?্যাব। মূলত গুলশান থানায় আরিফ বাকের নামের ইভ্যালির এক গ্রাহকের মামলার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
‘ফাঁদ থেকে বাঁচতে লোভ কমানোর পরামর্শ’
ই-কমার্সের ফাঁদ থেকে বাঁচতে গ্রাহকদের লোভ কমানোর পরামর্শ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এসব বিষয়ে জনস্বার্থে প্রচারণা চালানোর পরামর্শও দিয়েছেন আদালত। গতকাল ফোনালাপে আড়ি পাতা বন্ধে রিট শুনানিকালে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মুস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ পরামর্শ দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
শুনানির এক পর্যায়ে আদালত আইনজীবী শিশির মনিরকে ই-কমার্স ব্যবসার বিষয়ে কিছু বলতে বলেন। এ সম্পর্কে একটা ধারণা দিতে বলেন। তখন আইনজীবী শিশির মনির ই-কমার্স নিয়ে বক্তব্য দেন।
শিশির মনির আদালতকে বলেন, ‘আমাদের দেশে ই-কমার্স ব্যবসার নামে অনেক বেশি ফ্রি অফার থাকে। যা বিদেশি প্রতিষ্ঠান আলিবাবা বা অ্যামাজনে থাকে না। আমাদের দেশের গ্রাহকরা অতি লোভে পড়ে প্রতারণার শিকার হন।’ তখন আদালত বলেন, ‘হ্যাঁ আমরা তো দেখি, একটা কিনলে আরেকটা ফ্রি। বিমানের টিকিট কিনলে হোটেল ফ্রি। এজন্যই গ্রাহকদের লোভ কমাতে জনস্বার্থে প্রচারণা চালান।’ পরে ফোনালাপে আড়ি পাতা বন্ধ চেয়ে দায়ের করা রিটের শুনানির জন্য ২৯ সেপ্টেম্বর দিন ঠিক করে আদেশ দেন আদালত।
ইভ্যালির রাসেলসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীর মামলা
ই-কমার্সভিত্তিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির বিরুদ্ধে রাজধানীর ধানমন্ডি থানায় আরেকটি মামলা করা হয়েছে। মামলায় ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ রাসেল ও চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনসহ ১২ জনকে আসামি করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে কামরুল ইসলাম নামে এক ব্যবসায়ী এ মামলা দায়ের করেন। ধানমন্ডি থানার ওসি ইকরাম আলী মিয়া বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার অপর আসামিরা হলেন- ইভ্যালির ভাইস প্রেসিডেন্ট আকাশ, ম্যানেজার জাহেদুল ইসলাম, সিনিয়র একাউন্টস ম্যানেজার তানভীর আলম, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ (কমার্শিয়াল) জাওয়াদুল হক চৌধুরী, হেড অব একাউন্ট সেলিম রেজা, একাউন্টস ম্যানেজার জুবায়ের আল মাহমুদ, একাউন্ট শাখার কর্মী সোহেল, আকিবুর রহমান তুর্য, সিইও’র পিএস রেজওয়ান ও বাইক ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তা সাকিব রহমান। এছাড়া মামলার এজাহারে আরও ১৫-২০ জন অজ্ঞাতনামা আসামির কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে কামরুল ইসলাম বলেছেন, তিনি মেট্রো কভারেজ, স্মার্ট ফুড অ্যান্ড বেভারেজ, ফ্রিডম এক্সপোর্ট ইম্পোর্ট বিডি ও ফিউচার আইটি নামে প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি ইভ্যালির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে গ্রাহকদের মোট ৩৫ লাখ ৮৫ হাজার টাকার পণ্য সরবরাহ করেছেন। পণ্য সরবরাহের বিপরীতে ইভ্যালি তাদের একটি চেক দিলেও সেই একাউন্টে কোনো টাকা ছিল না। এ ঘটনায় চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি তারা ইভ্যালির বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় একটি জিডিও (নং ৭০৬) দায়ের করেন। তবু ইভ্যালি তাদের কোনো অর্থ পরিশোধ করেনি।
এর আগে ইভ্যালির বিরুদ্ধে গত ১৬ সেপ্টেম্বর গুলশান থানায় এক গ্রাহকের মামলা দায়েরের পর বিকেলে মোহাম্মদপুরের বাসায় অভিযান চালিয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাসেল ও তার স্ত্রী, প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে গ্রেফতার করে র্যাব।