ই-কমার্সে বাড়ছে প্রতারণা কঠোর ব্যবস্থার আশ্বাস
ধামাকার কাছে ২০০ কোটি টাকা ফেরত দাবি, উদ্বেগে ভুক্তভোগীরা, কঠোর ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ৯:৩৩ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২১
গত কয়েক বছর ধরে বিশেষ করে করোনাকালে দ্রুত প্রসারিত হচ্ছে ই-কমার্স খাত। কিন্তু কিছু অসাধু ব্যক্তির কারণে সম্ভাবনাময় এ খাতে প্রতারণা বাড়ছে। ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জসহ বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ করে চরম উদ্বেগে রয়েছেন অসংখ্য গ্রাহক। এসব প্রতিষ্ঠানে আটকে থাকা কোটি কোটি টাকা তারা ফেরত পাবেন কি-না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়ছে। এরমধ্যে ২০০ কোটি টাকা ফেরত দিতে আরেক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ধামাকা শপিং ডটকম কর্তৃপক্ষকে সময় বেঁধে দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
তারা বলছেন, এসব প্রতারকদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত না করলে ই-কমার্স খাতের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হবে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জের মতো প্রতারণা করছে এমন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে ফের বন্ধ হয়েছে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির অফিস। প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা এখন বাসায় থেকে অফিসের কাজ করবেন বলে গতকাল শনিবার ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানটির ফেসবুক পাতায় ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। তবে গ্রাহকদের আশ্বস্ত করতে ইভ্যালি বলেছে, ‘হোম অফিস’র মধ্যেও তাদের সব কার্যক্রম ‘স্বাভাবিক’ সময়ের মতো চলবে। যদিও এ আশ্বাসে ভরসা রাখতে পারছে না ভুক্তভোগীরা।
রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় ভুক্তভোগীরা তাদের অর্থ ফেরতের দাবিতে সরব হচ্ছেন, মামলাও করছেন অনেকে। এর ধারাবাহিকতায় যশোরে ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. রাসেল ও চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন এক গ্রাহক। গত শুক্রবার রাতে কোতোয়ালি মডেল থানায় জাহাঙ্গীর আলম চঞ্চল নামে ওই গ্রাহক প্রতারণার অভিযোগ দেন। থানা পুলিশ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
২০০ কোটি টাকা ফেরত দিতে ধামাকাকে আল্টিমেটাম
এদিকে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে আরেক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ধামাকা শপিং ডটকমের বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠানটির মালিকপক্ষকে পণ্য সরবরাহ বাবদ প্রায় ২০০ কোটি টাকা ফেরত দিতে পাঁচ দিন সময় বেঁধে দিয়েছেন বিক্রেতারা। এর মধ্যে কোনো পদক্ষেপ না নিলে ধামাকার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন তারা। পাশাপাশি ধামাকা শপিং ডটকমের সঙ্গে লেনদেন বিষয়ে সৃষ্ট জটিলতার সুষ্ঠু সমাধানের দাবি জানিয়েছেন তারা।
গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানায় বিক্রেতাদের সংগঠন ধামাকা শপিং ডটকম সেলার অ্যাসোসিয়েশন। এ সময় বলা হয়, ধামাকা শপিং ডটকমে প্রায় ৬৫০ জন সেলার বা মার্চেন্ট হিসেবে পণ্য বিনিয়োগ করেছেন। প্রায় ছয় মাস অতিবাহিত হলেও প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে প্রায় ২০০ কোটি টাকা সেলাররা পাননি। পাওনা টাকা উদ্ধারে প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করা হলেও কেউই সেলারদের সঙ্গে বসেননি। মালিকপক্ষ কোনো প্রতিশ্রুতিই রক্ষা করেনি।
সংগঠনের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম ইমন বলেন, আমাদের শেষ সম্বল, আত্মীয়স্বজন ও ব্যাংক ঋণ নিয়ে এ প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করে নিঃস্ব হয়েছি। মালিকপক্ষ টাকা ফেরত না দিলে আমাদের আইনের আশ্রয় নিতে হবে। গ্রাহক-বিক্রেতাদের টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আবেদন জানান তিনি।
এর আগে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ধামাকার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে শত কোটি টাকার বেশি মানি লন্ডারিংয়ের প্রমাণ পায় সিআইডি পুলিশ। এ অভিযোগে ৯ সেপ্টেম্বর ধামাকার মালিক জসিম উদ্দিনসহ পাঁচজন এবং তাদের তিন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বনানী থানায় মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করে সিআইডি।
ধৈর্য ধরতে বলল ই-ক্যাব
এদিকে ই-ভ্যালির বিষয়ে ই-ক্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘গ্রাহকদের ধৈর্য ধরতে হবে। আইনি মাধ্যমে অবশ্যই ভালো কোনো সংবাদ পাওয়া যাবে। এখনো ইভ্যালির ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ হয়তো রয়েছে। ই-ক্যাবের পক্ষ থেকে ইভ্যালিকে আগামী ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে।’
প্রতারকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি
ইভ্যালি-ইঅরেঞ্জের মতো প্রতারণা করছে এমন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার।
শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
হাফিজ আক্তার বলেন, ই-ভ্যালি ও ই-অরেঞ্জসহ এমন আরও প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা প্রতারণা করেছে। বাজার মূল্যের চেয়ে অনেক কম মূল্যে পণ্য বিক্রির অফার দিয়ে যারা গ্রাহকদের পণ্য দেয় না। তারা মূলত প্রতারণা করছে। এসব বিষয়ে তদন্ত চলছে, তদন্ত শেষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও কাজ করছে।
ই-কমার্স খাতে বিশৃঙ্খলার বিষয়ে বিশিষ্ট উদ্যোক্তারা বলছেন, ই-কমার্স বাংলাদেশে নতুন। এ খাতে সুশাসন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা জরুরি। খাতটি যেভাবে বাড়ছে এর মনিটরিং সেই হারে বাড়ছে না। আগামীতে এর আরও প্রবৃদ্ধি হবে। সে অনুযায়ী প্রস্তুতিও নিতে হবে।
এ বিষয়ে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, ই-কমার্সের প্রয়োজনীয়তা ও জনপ্রিয়তা যেভাবে বাড়ছে তাতে এ খাতের জন্য একটি আলাদা কর্তৃপক্ষ থাকা দরকার। এই ব্যবসা তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে হচ্ছে। ফলে নিয়ন্ত্রণ, পর্যবেক্ষণও সহজ হবে। নতুবা ই-কমার্স খাত এগোতে পারবে না।