ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার নেশা!

ফরিদ উদ্দিন রনি
🕐 ১১:৪৯ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২১

সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার নেশা!

বর্তমান গ্লোবাল ভিলেজের যুগ। আমরা সবাই অনলাইননির্ভর হয়ে গেছি। কোনো একটি ঘটনা ঘটলেই আমরা মুহূর্তে তা ছড়িয়ে দিই সোশ্যাল মিডিয়ায়। যার বেশিরভাগই থাকে মিথ্যা বা আংশিক সত্য। অথচ, আমরা যাচাই-বাছাই না করেই লাইক, কমেন্ট, শেয়ার করতে থাকি ফলে মুহূর্তের মধ্যেই ছড়িয়ে যায় ঘটনাটি। কিন্তু একটা ভুল ঘটনা যে কতটা ভয়ঙ্কর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে সমাজে তা আমরা কল্পনাও করতে পারি না। শুধু ভুক্তভোগীরাই জানে তার কষ্ট।

আমাদের আশপাশে হাজারো নারী আছে যারা প্রতিনিয়ত পাবলিক বাস থেকে কর্মক্ষেত্রে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে অফিস আদালতে এমনকি সোশ্যাল মিডিয়ায় হ্যারেসমেন্টের শিকার হচ্ছে। কেউ কেউ সে হ্যারেসমেন্টের মাত্রাতিরিক্ত যন্ত্রণা সহ্য করতে না পারে বেঁচে নিচ্ছেন মৃত্যুর পথ। প্রতিনিয়ত পত্রিকায় আসছে এমন হাজারো ঘটনা। এই তো গত তিন-চার মাস আগে এমন একটি ঘটনা ঘটছে। একটি কলেজে পড়ুয়া মেয়ের অন্তরঙ্গ ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়। পরবর্তী সময়ে পরিবার, আত্মীয়স্বজন, সমাজের মানসিক যন্ত্রণা সে সহ্য করতে না পেরে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে। সে খবর গণমাধ্যমে এসেছে। অথচ এ আত্মহনের পিছনে মূল দায়ী আমি, আপনি, আমরা, পুরো সমাজ। কারণ আমরাই তার ভিডিও ভাইরাল করে দিয়েছি, তাকে বিষিয়ে তুলেছি, ফলে সে মৃত্যুর পথ বেছে নিয়েছে।

ইদানীং ভাইরাল হতে হবে, ভাইরাল করতে হবে এমন চরম নেশায় মেতেছে এক শ্রেণির অসুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ। যেকোনো কিছুতে ধুমধাম ভিডিও করে ফেলছে, ছবি তুলে ইন্টারনেটে নিজেদের মতো করে ক্যাপশন দিয়ে ছেড়ে দিচ্ছে। এতে ভিক্টিমের অনুমতি নিয়ে ছবি বা ভিডিও করা তো দূরে বরং ভাইকে বয়ফ্রেন্ড, স্বামীকে প্রেমিক বানিয়ে নিজেদের মতো করে ক্যাপশন লিখে ফেসবুকে ছড়িয়ে দিচ্ছে।

এতে ভুক্তভোগীর পরিবার মানসিক বিপর্যয়ে পড়ে যায়। অনেক সময় ঘটনা এমন পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়ায় সমাজে তাদের মুখ দেখানোও লজ্জাজনক হয়ে পড়ে। তাহলে কেন একটু আনন্দ বিনোদনের জন্য এসব করি? অন্যের পরিবারের মানসম্মান ধূলিসাৎ করে কেন নিজেরা মজা লুটি! অনেক সময় অতি-আবেগের বশবর্তী হয়ে ভাইরাল হওয়ার জন্য অনেক ভুল, মিথ্যা সংবাদ ছড়িয়ে দিই। যা একজন নিরপরাধ মানুষকে কতটা কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি করে সেটা চিন্তাও করা যায় না!

কিছুদিন পূর্বে দেশের একজন তরুণ পরিচালক ভাইরাল গার্ল নামক চমৎকার একটি নাটক নির্মাণ করে সমাজকে ইতিবাচক পরিবর্তনের মেসেজ দিতে চেয়েছেন। শুরুতে অনেকটা এমন ছিল, ‘মানুষ আদতে সুইসাইড করে না, তাকে হত্যা করা হয়। একটি মানুষের বেঁচে থাকার সব কারণ যখন তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়, তখন সে মরে যায়। একজন মানুষের পাশে যখন কেউ থাকে না কেউ পাশে এসে দাঁড়ায় না তখন সে মরে যায়। হয়তবা সে জীবিত, কিন্তু তার ভিতরেরটা মরে যায়।’

আত্মহত্যা করতে যাওয়ার আগে ফেসবুক লাইভে এসে কথাগুলো বলেছিলো নাজিয়া নামের একটি মেয়ে। একটি হ্যারেসমেন্টকে কেন্দ্র করে মানুষজন না জেনে না বুঝে ফেসবুকে একজন ধোঁকাবাজ, প্রতারক হিসেবে ভাইরাল করে দিয়েছে তাকে। এ ঘটনায় পরবর্তীকালে আত্মীয়স্বজন, পরিবার, সমাজ সবকিছু যখন তাকে বিষিয়ে তোলে তখন সে আর বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখে না। এমন দৃশ্য দিয়ে নাটকটি শুরু হয়েছে। সমাজ বাস্তবতার করুণ চিত্র ফুটে উঠেছে নাটকটিকে। সমাজকে পরিবর্তন করতে চেয়েছেন পরিচালক সাহেব ও অভিনয়শিল্পীবৃন্দ। সমাজ পরিবর্তনের জন্য এমন ইতিবাচক নাটকের জন্য তারা অবশ্যই ধন্যবাদ পাওয়ার দাবিদার।

ফরিদ উদ্দিন রনি : কলাম লেখক

 
Electronic Paper