জিউল সুখ
ইমরুল কায়েস
🕐 ২:৫৫ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২১
কিন্তু কেন, কোন সুখ আবার জিইয়ে থাকে? তবে কি সুখও মরে যায়! প্রশ্ন উদয় হতে পারে মনের কোণে বা প্রশ্ন করতেই পারেন বিজ্ঞ পাঠক। অথবা পাঠকের মনে চিন্তার বুদবুদ উঁকি দিতে পারে- কেমন করে কেউ প্রিয় কিছু হারিয়ে সুখী হয়? হয়; সুখীই হয়। এই সুখের নেই কোনো দৃশ্যমান সীমা ও পরিসীমা। সুখ যে প্রাপ্তিতেই বা অধিকার করাতেই হয়ে থাকে এমন তো নয়। জীবনে কখনো কখনো না পাওয়াতেও সুখ যোগ ঘটতে পারে; বিষয়টা এমন, বিপুলা কামনার জিনিস কাছে পেলে আর তা কামনার থাকে না। অবধারিত কাছের ও কাজের হয়ে যায়। কাঙ্ক্ষিত জিনিসের প্রতি চির কামনা থাকলে তার প্রতি আকাক্সক্ষা জিইয়েই থাকে। যা পেলে শেষ হয়ে যায়; তার স্বাদ কমই জীবনজুড়ে জীবিত থাকে। আর যা হারিয়ে যায় বা না পাওয়া হয়; সেটির প্রতি অনুভূতি সজীব ও সঞ্চরণশীল। হারিয়ে সুখী হওয়া হলো- না পেয়ে কারও প্রতি ‘নিগূঢ় অনুভব’কে জিইয়ে রাখা। এই অধরা অনুভব হলো জিইয়ে সুখ।
সুখ যে শুধু বিনে সুতোর সম্পর্কের মধুরেণ সমাপয়েতে হয় এমন নয়। মধুর মিলন ঘটনার বাইরেও তো জীবনে ঘটে যাওয়া কত ঘটনাই রয়ে যায় আলোর নিচের অন্ধকারে। সামান্য চোটের ক্ষতে দাগ সামান্যই হয়। কিন্তু ক্ষত গভীরে হলে দাগটা ভিতর থেকে যেমন গভীর হয়ে আসে ঠিক ওই পরিমাণ বাইরেও থাকে। মিশে যায় না কখনো। শুধু চোখের আড়াল হয়ে যায় এই আর কী।
সব ক্ষতই যে পীড়া দেয়; তার তো কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। কিছু ক্ষত সারা জীবনের জন্য কোনো স্মৃতি বা ঘটনাকেও ধরে মনে গেঁথে রাখে। যা ক্ষণেক রোমন্থনে সুখ দিয়ে থাকে। প্রিয় চাওয়া-পাওয়াগুলো যখন না পাওয়ার কাতারে জমা হয় তখন আমরা ধরেই নেই সব হারিয়েই ফেললাম। সাময়িক হারিয়ে ফেললেও এর ফলাফল থাকে জীবনভর।
আত্ম উদ্ধার ও মনের শান্তির জন্যে আমরা মহাসমারোহ নিয়ে নানা রঙের কাজে নিয়োজিত থাকি। কেউ সচেতনভাবে আবার কেউ বা অবচেতন মনে। তা না হলে হাল আমলের ফেসবুক বা সামাজিক মাধ্যমগুলো এত সুপ্রতিষ্ঠিত হতে পারত না। এর পেছনে এমন একটা বিষয়ই কাজ করে। দিন শেষে আমরা সারাদিনের সূর্যের ফেলে যাওয়া বর্ণিল রশ্মির আভায় নিজের ছায়াটাকে আনমনে খুঁজে ফিরি। দেখি যে, কোথাওবা পৃথিবীর কারও মাঝে আমার স্মৃতি বা আমার নিজের আত্ম প্রতিকৃতি ও প্রতিচ্ছবি আছে কি না। বা কিছু একটা রয়ে গেল কি? এমন ভাবনা সবাই ভাবি। পৃথিবীর কারও চোখে যখন আপনাকে মেলে ধরতে দেখেন তখন তা দেখে নিজে সুখবোধ করেন। আত্মতৃপ্তি আসে যে কোনো কিছুতে বা কারও মাঝে আপনি আছেন। তেমনি কারও হৃদসমুদ্রে আপনার অস্তিত্ব দামি জীবাশ্ম, মণিমুক্তা বা মহামূল্যবান আকরিক হয়ে জিইয়ে থাকা সম্ভব হয় তার কাছ থেকে আপনার কায়া অপসৃয় হলে। এটাতে আপনি কায়িক না হয়ে মন্ময় হবেন। আপনি জীবিত হয়ে উঠবেন অনুভবে আর চিন্তার প্রতিদিনের নিভৃত অবগাহনে।
নিউরণের অস্তিত্বে দৃশ্যমান হতে পারলে তা জীবনভর স্থায়ী। শরীরের উপস্থিতি বা চোখের সামনে থাকলে কোনোভাবেই আপনি নিউরণের অনুভূতিতে স্থান পাবেন না। কেননা অস্তিত্বে যে জাগরিত হয় চিন্তায় তা ম্রিয়মাণ। চিরতরে যা বা যাকে হারিয়েছেন তা আসলে আপনার মাঝ থেকে অবস্থানগতভাবে বিলীন হয়েছে। কিন্তু যে বিষয়টি বড় হয়েছে সে আপনার চিন্তায় লীন হয়ে আপনার মধ্যে জাগরুক। তখন নীরবে ক্ষণে ক্ষণে আপনার মধ্যে যে সুখানুভূতি ফিরে আসবে সেটিই জিউল সুখ। তখন আপনি হারিয়ে সুখী! কিন্তু কেউই এই সত্যের পথে হাঁটতে চায় না। কারণ, গানের ভাষায়- ‘প্রেমের বাজারে সবাই নগদ খরিদ্দার।’