ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বিশ্বখ্যাত পরিব্রাজক ইবনে বতুতা

বিশ্ব সভ্যতায় মুসলিম মনীষীদের অবদান -৪ (পর্ব-১)

মুহাম্মাদ নাঈমুর রহমান সা’দ
🕐 ৮:৪৪ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২১

বিশ্বখ্যাত পরিব্রাজক ইবনে বতুতা

নতুনকে জানার আগ্রহ মানুষের দীর্ঘদিনের। এই আগ্রহ নিয়েই সুদূর মরক্কোর তাঞ্জিয়ার থেকে পৃথিবী দেখার নেশায় ঘর ছেড়েছিলেন ২১ বছর বয়সের এক মুসলিম যুবক। তিনি ইবনে বতুতা। মধ্যপ্রাচ্যের ইরাক, ইরান, বসরা, সিরিয়া, ফিলিস্তিন, পাকিস্তান, ভারত, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ঘুরে এসেছিলেন আমাদের বাংলায়ও। 

সংক্ষিপ্ত জীবনকাল

ইবনে বতুতা জন্মগ্রহণ করেন মরক্কোর তাঞ্জিয়ারে। ২৪ ফেব্রুয়ারি ১৩০৪ সালে এক সম্ভ্রান্ত সুন্নি মুসলিম পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ছিলেন পেশায় একজন কাজী। ধারণা করা হয়, তার পরিবার পশ্চিম আফ্রিকার ‘লাওয়াতা’ যাযাবর শ্রেণির উত্তরসূরী। ছোটবেলা থেকেই তিনি ইসলাম ধর্মের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে ব্যাপক পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। এছাড়া তাঞ্জিয়ার আইনশাস্ত্র এবং সাহিত্যের ওপর জ্ঞান অর্জন করেন।

তার প্রথম উদ্দেশ্য ছিল ধর্মীয় পরিব্রাজক হওয়া। মিশর, সিরিয়া ও হিজাজ অঞ্চলের খ্যাতনামা আলেমদের অধীনে ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করা। তিনি ইসলামী আইন শাস্ত্রের ওপর বিপুল জ্ঞান অর্জন করেন, পরবর্তীতে যা বিভিন্ন ইসলামিক রাজ্য তাকে কাজীর আসনে সম্মানিত করে। রিহলার বর্ণনা শেষ হওয়ার পর ইবনে বতুতার সম্পর্কে খুব কমই জানা যায়। উল্লেখ্য, তার বর্ণনা শেষ হয় ১৩৫৫ সালে। এরপর তিনি মরক্কোতে একজন কাজী হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৩৬৮ সালে মরক্কোর মারকেশে ইন্তেকাল করেন এই বিখ্যাত পরিব্রাজক।

সফরের ব্যাপ্তি

ইবনে বতুতা বহু দেশ ও অঞ্চল সফর করেন। মরক্কো, আলজেরিয়া ও তিউনিসিয়ার যেসব অঞ্চল তিনি সফর করেছেন সেগুলোর মধ্যে ছিল তাঞ্জিয়ার, ফেজ, মারাকাশ, তালিসমিন, মিলিয়ানা, আলজিয়ার্স, জুরজুরা পর্বত, বেজায়া, আনবা, তিউনিস, সুসা, সাফেক্স ও গাবিস। সোমালিয়ার মোগাদিসু এবং যেলাও তিনি সফর করেন। আফ্রিকার সোয়াহিলি উপকূলে তিনি সফর করেন কিলওয়া, মোম্বাসা, মালির তিম্বকতু, গাঁও, তেকাদা ও মৌরিতানিয়ার ওয়ালাতা। লিবিয়ায় তিনি সফর করেন সে দেশের বুর্মান রাজধানী ত্রিপোলি। মামলুক সাম্রাজ্যে ইবনে বতুতা সফর করেন কায়রো, আলেক্সান্ড্রিয়া, জেরুজালেম, বেথলেহাম, হেবরন, দামেস্ক, লাটাকিয়া, মিসর ও সিরিয়া। আরব উপদ্বীপের যেসব অঞ্চল তিনি সফর করেন সেগুলোর মধ্যে ছিল মক্কা, মদিনা, জেদ্দা, রবিগ, ওমান, যোহর, বাহরাইন, আল-হাসা, হরমুজ প্রণালী, ইয়েমেন ও কাতিফ। মুসলিম স্পেনে তিনি সফর করেন গ্রানাডা ও ভেলেসিয়া। বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যে ইবনে বতুতা সফর করেন কুনিয়া, আনাতোলিয়া, বুলগেরিয়া, আজব, কাজান, ভলগা নদী ও কন্সটান্টিনোপল। মধ্য এশিয়ায় তিনি সফর করেন খাওয়ারিজম, খোরাসান, বুখারা, সমরকন্দ এবং আফগানিস্তানের পশতুভাষী অঞ্চল। ভারতীয় উপমহাদেশে তিনি সফর করেন পাঞ্জাব, সিন্ধু, মুলতান, দিল্লি উত্তর প্রদেশ, গুজরাট, দাক্ষিণাত্য, কঙ্কা, কোঝিকোডে, মালাবার, বুর্মান বাংলাদেশ, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা নদী এবং সিলেট। মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, চীনের গুয়াংঝু, হাংঝু, বেইজিং, বার্মা, সুমাত্রা, মালয় উপদ্বীপ এবং ফিলিপাইনও তিনি সফর করেছিলেন। নিম্নে উল্লেখযোগ্য কিছু ভ্রমনকাহিনি বর্ণনা করা হলো-

প্রথম হজ্জ

১৩২৫ সালে হজ্জ পালনের জন্য তিনি তার জন্মভূমি তাঞ্জিয়ার ছাড়েন। যখন তিনি মক্কার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন তখন তার বয়স মাত্র ২১ বছর। সে সময় সাধারণত মরক্কো থেকে হজ্জ করে আবার মরক্কোতে ফিরতে প্রায় ১৫ মাস সময় লেগে যেত। কিন্তু ইবনে বতুতা প্রায় অর্ধেক পৃথিবী ঘুরে তিনবার হজ্জ করে ২৪ বছর পর তার জন্মভূমি তাঞ্জিয়ারে ফেরেন। যাত্রাপথে তিনি আব্দ আল ওয়াদিদ এবং হাফসিদ সাম্রাজ্য তিমসান, বিজাইরা এবং তিউনিস হয়ে মক্কায় এসে পৌঁছান। ১৩২৬ সালের সম্পূর্ণ রমজান মাস তিনি সিরিয়ার দামেস্কে কাটান।

এরপর সেখান থেকে মদিনাগামী একটি কাফেলার সঙ্গে যোগ দেন। মদিনায় মুহাম্মাদ (সা.) এর রওজা মোবারক জিয়ারত করার পর তিনি মক্কার উদ্দেশ্যে রওনা হন। মক্কায় হজ্জ পালন সমাপ্ত করে তিনি তার জন্মভূমি তাঞ্জিয়ারে না ফিরে মধ্য এশিয়ায় যাত্রা করার সিদ্ধান্ত নেন। ইবনে বতুতার মক্কা ভ্রমণ নিয়ে ২০০৯ সালে একটি ডকুমেন্টারি মুভি নির্মিত হয়। ৪৫ মিনিটের এই ডকুমেন্টারি মুভিটি পরিচালনা করেন ব্রুস নীবাউর। এই মুভিতে ইবনে বতুতা ভূমিকায় অভিনয় করেন কেমস-এডাইন জিনউন।

লেখক
মুহাম্মাদ নাঈমুর রহমান সা’দ
শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া। বনের ৩০ বছরে তিনি ভ্রমণ করেছেন ৭৫ হাজার মাইল বা এক লাখ ২০ হাজার কিলোমিটার পথ

 
Electronic Paper