ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

আত্মার ব্যাধি ও পতনের মূল

মুফতি আতিকুল্লাহ বিন আসাদ
🕐 ৮:৩৯ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২১

আত্মার ব্যাধি ও পতনের মূল

অহংকার একটি মারাত্মক ব্যাধি যা মানুষের দুনিয়া ও আখিরাত ধ্বংস করে দেয়। একজন মানুষকে হেদায়াত ও সত্যের পথ থেকে দূরে সরিয়ে গোমরাহীর দিকে নিয়ে যায়। অহংকারের কারণেই আজাজিল বিতাড়িত শয়তানে পরিণত হয়েছে। অতীতে বহু সম্প্রদায় অহংকারের কারণে ধ্বংস হয়েছে। মানুষ সাধারণত ধন-সম্পদ, ইলম বা জ্ঞান, ইবাদত, প্রভাব-প্রতিপত্তি ও বংশ মর্যাদা ইত্যাদি নিয়ে অহংকার করে। অথচ এগুলো সবই আল্লাহর নেয়ামত বা অনুগ্রহ। আল্লাহর দেওয়া নেয়ামত বা অনুগ্রহ দ্বারা অহংকার করার প্রশ্নই আসে না। বরং বান্দার শুকরিয়া আদায় করা উচিত। অহংকারীকে আল্লাহ তা’আলা পছন্দ করেন না।

আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ অহংকারী দাম্ভিক লোককে পছন্দ করেন না।’ (সূরা লোকমান : ১৮)। অহংকার হলো অন্যের চাইতে নিজেকে বড় মনে করা, সত্যকে দম্ভভরে প্রত্যাখ্যান করা এবং মানুষকে তুচ্ছ জ্ঞান করা। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মসউদ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যার অন্তরে বিন্দু পরিমাণ অহংকার থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। রাসূলুল্লাহ (সা.) এ কথা বললে, এক লোক দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করল, কোনো কোনো লোক এমন আছে, সে সুন্দর কাপড় পরিধান করতে পছন্দ করে, সুন্দর জুতা পরিধান করতে পছন্দ করে, এসবকে কি অহংকার বলা হবে? উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, আল্লাহ তা’আলা নিজেই সুন্দর, তিনি সুন্দরকে পছন্দ করেন। অহংকার হলো সত্যকে গোপন করা এবং মানুষকে নিকৃষ্ট বলে জানা। (মুসলিম : ২৭৫)।

দুনিয়াতে অহংকারের পরিণতি লাঞ্ছনা। যার অন্তরে যতটুকু অহংকার সৃষ্টি হবে, তার জ্ঞান ও বোধশক্তি ততটুকু হ্রাস পাবে। অহংকারী সকলের ঘৃণার পাত্র। মানুষ যখন অহংকারী হয়, তখন তার মধ্যে অসংখ্য গুনাহ ও দোষের সমাবেশ ঘটে। অহংকারীকে আল্লাহ তা’আলা তার শাস্তি দুনিয়াতেও দেবেন এবং পরকালেও দেবেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘একজন মানুষ সর্বদা অহংকার করতে থাকে। অতঃপর একটি সময় আসে তখন তার নাম অহংকারীদের খাতায় লিপিবদ্ধ করা হয়, তখন তাকে এমন আজাব গ্রাস করে, যা অহংকারীদের গ্রাস করছিল।’ (জামে তিরমিজি : ২০০০)। অহংকার জান্নাতে প্রবেশের প্রতিবন্ধক। তাকে অপমান অপদস্ত করে জাহান্নামে প্রবেশ করানো হবে।

রাসূলুল্লাহ (সা.) এক হাদিসে বলেছেন, ‘আমি কি তোমাদেরকে কারা জাহান্নামে যাবে তাদের বিষয়ে খবর দেব? তারা হলো, অহংকারী, দাম্ভিক ও হঠকারী লোকেরা।’ (সহিহ মুসলিম : ৭৩৬৬)। অহংকার এমন একটি গুণ, যা শুধু আল্লাহর জন্যই প্রযোজ্য। হাদিসে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘অহংকার হলো আমার চাদর আর বড়ত্ব হলো আমার পরিধেয়। যে ব্যক্তি আমার এ দুটির যে কোনো একটি নিয়ে টানাটানি করবে আমি তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব।’ (সুনানে আবু দাউদ : ৪০৯২)।

বর্তমান সমাজে এই রোগটি মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ছে। সমাজে শান্তি, সম্প্রীতি ও সমৃদ্ধির বড় অন্তরায় হলো অহংকার; যা মানুষের মনুষ্যত্বকে ধ্বংস করে, জাগিয়ে তোলে হিংস্রতা। অহংকার থেকে বাঁচার জন্য সবচেয়ে উপকারী ও কার্যকর ওষুধ হলো আল্লাহর নিকট দোয়া ও সাহায্য চাওয়া। এ কারণে রাসূলুল্লাহ (সা.) উম্মতকে দোয়া শিখিয়েছেন এবং তিনি নিজেও সালাতে বেশি বেশি করে আল্লাহর নিকট দোয়া করতেন।

এ প্রসঙ্গে হাদিসের এক বর্ণনায় এসেছে, হজরত যুবাইর ইবনে মুতইম (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে একবার সালাত আদায় করতে দেখেন, তখন তিনি রাসূল (সা.)-কে সালাতে এ কথাগুলো বলতে শোনেন, ‘আল্লাহ তা’আলা সব কিছু হতে বড়, আল্লাহ তা’আলা সব কিছু হতে বড়, আল্লাহ তা’আলা সব কিছু হতে বড়। আর সর্বাধিক প্রশংসা কেবল আল্লাহরই, আর সর্বাধিক প্রশংসা কেবল আল্লাহরই, আর সর্বাধিক প্রশংসা কেবল আল্লাহরই। আমি বিতাড়িত শয়তান হতে তোমার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি, আমি আরও আশ্রয় চাচ্ছি তার অহংকার থেকে তার প্ররোচনা ও ষড়যন্ত্র থেকে।’ (সুনানে আবু দাউদ : ৪৯০৫)।

লেখক
মুফতি আতিকুল্লাহ বিন আসাদ
খতিব, রোশাদিয়া শাহী জামে মসজিদ, উত্তরা, ঢাকা।

 
Electronic Paper