বিনিয়োগে ঘুরে দাঁড়ানোর আভাস
জাফর আহমদ
🕐 ১১:৫১ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২১
গত বছর দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে ভাটা পড়ায় কমে যায় বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান। ২০২০ সালের মার্চ থেকে করোনায় মৃত্যু ও আক্রান্ত মহামারী আকার ধারণ করায় দেশের সার্বিক অর্থনীতি গতি হারায়। থমকে যায় মানুষের জীবন ও জীবিকা। এতে ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ পড়ে দেশি উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের দিকে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু কমতে শুরু করায় উদ্যোক্তারা আবার ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন। নানা উদ্যোগ নিয়ে কাজ শুরু করেছেন তারা। সচল হচ্ছে শিল্প-কারখানা, বাড়ছে রপ্তানি আদেশ; কাজে ফিরেছে শ্রমিকরা। এতে দেশের অর্থনীতিতে গতি প্রবাহ সৃষ্টি হয়েছে।
করোনা-পরবর্তী ‘রিকোভারি’ পর্ব শুরু হয়েছে বলে মনে করছেন বিআইবিএম-এর সাবেক মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী। তিনি দৈনিক খোলা কাগজকে বলেন, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ হচ্ছে, নতুন করে স্পন্দন তৈরি হচ্ছে, রপ্তানি আদেশ বেড়েছে। আর টিকা দেওয়া শুরু হওয়ার কারণে মানুষ অনেকটাই আস্বস্ত হয়েছে। মহামারী পরবর্তী রিকোভারির যে পর্বটা শুরু হওয়ার কথা আমরা সেখানে এসে গেছি। তবে করোনা পূর্ব স্বাভাবিক বিনিয়োগ ধারাতে ফিরতে আরও খানিক সময় লাগবে।
গত বছর দেশি-বিদেশি ৯১৮টি প্রকল্প বিনিয়োগের জন্য নিবন্ধন করে। সম্ভাব্য বিনিয়োগ ধরা হয় ৭১২৬ দশমিক ৩৬৩ মিলিয়ন ডলার। আর কর্মসংস্থান প্রাক্কলন করা হয় এক লাখ ২৩৯ হাজার ৫৩২ জন। এর মধ্যে স্থানীয় ৮০৬টি প্রকল্প ও বিদেশি-যৌথ মালিকানাধীন ১১২টি প্রকল্প নিবন্ধন করে। ২০২১ সালের জানুয়ারি-আগস্ট আট মাসে এ পরিমাণ আরও কমে ২০২০ সালের এক-চতুর্থাংশে নামে। ২০১৮ সালের স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ২০২০ সালের দ্বিগুণ নিবন্ধন ছিল।
বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে ১,৫৫২টি প্রকল্প বিনিয়োগের জন্য নিবন্ধন করে। এর মধ্যে দেশি ১,৩৭৪টি এবং বিদেশি-যৌথ মালিকানাধীন প্রকল্প ছিল ১৭৮টি। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের জন্য ১৬,২৭০ দশমিক ১৮৭ মিলিয়ন ডলারের প্রস্তাব করা হয়। করোনা মহামারীর কারণে পরবর্তী প্রায় দুই বছর দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে ধস নামে।
করোনা পরিস্থিতিতে মানুষের জীবন বাঁচানোই প্রথম ও প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়ায়। মানুষের আয়-রোজগার, ভোগ, সঞ্চয় সব কিছু কমে যায়। ফলে মানুষকে বাঁচিয়ে রাখতে যে সব ব্যবসা বাণিজ্য হওয়ার কথা সেগুলো চলেছে মাত্র। করোনার আঘাত সহ্য করতে না পেরে অনেক ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে গেছে। যেসব ব্যবসা বাণিজ্য, উদ্যোগ চালু ছিল সেগুলো কোনোমতে টিকে আছে। এসব ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে কর্মী ছাঁটাই হয়েছে বা বেতন কমানো হয়েছে।
কর্ম হারিয়ে বা আয়-রোজগার হারিয়ে এসব মানুষ শহর বা শিল্প-কারখানা থেকে গ্রামে ফিরে গেছে। এক বছর আগেও যেখানে দারিদ্র্যের হার ২৫ শতাংশের নিচে নেমে আসে, করোনার আঘাতে এক বছরের মধ্যে দারিদ্র্যের হার নতুন করে প্রায় ১৫ শতাংশ যোগ হয়। এর প্রভাব পড়েছে বিনিয়োগে। বলা যায় বিনিয়োগ বন্ধই হয়ে যায়। বিনিয়োগ বোর্ড সূত্র জানায়, করোনার আগে থেকে যেসব বিনিয়োগ আলোচনায় ছিল করোনার মধ্যে সেগুলো বিনিয়োগের জন্য নিবন্ধন হয়েছে মাত্র।
করোনা এখনো পুরোপুরি যায়নি। এখনো আক্রান্ত ও মৃত্যু দুই-ই হচ্ছে। কিন্তু পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে, গতি বেড়েছে টিকাদানে। ফলে করোনার ভয়কে মানুষ কিছুটা জয় করেছে। মানুষ নতুন করে কাজ-কর্ম শুরু করেছে। দেশে দেশে টিকা দেওয়া শুরু হওয়ার ফলে মানুষ নতুন করে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। এ সময় দেশের অভ্যন্তরীণ বিশাল বাজারের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়া ও নতুন রপ্তানি আদেশ আসার প্রেক্ষাপটে নতুন করে করে বিনিয়োগও শুরু হয়েছে। সরকারও রোডশো শুরু করেছে বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করার জন্য। বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষও এমনটা মনে করছে। যারা ভার্চুয়াল আলোচনা করছিল, কথাবার্তা বলছিল বা করোনা কারণে বিনিয়োগ কার্যক্রম আটকে রেখেছিল, তারা আবার যোগাযোগ শুরু করেছে।
এ বিষয়ে নীট তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সিনিয়র সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, করোনা মহামারী বিশ্বজুড়ে যে মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছিল, এখনো আক্রান্ত ও মৃত্যু হচ্ছে। কিন্তু মানুষের হাতের নাগালের মধ্যে এসে গেছে করোনাকে বধ করার অস্ত্র (টিকা)। ফলে মানুষ আর ঘরের মধ্যে আটকে নেই, বের হয়ে পড়ছে। সরকারগুলোও মানুষকে কাজে বের করে আনছে। এর ফলে মানুষের চাহিদা বেড়েছে। সেই চাহিদা মেটানোর জন্য আমাদের রপ্তানি আদেশ বাড়ছে। আমরা আগেই বলেছিলাম, এখনো বলছি, সেটা শুরু হয়েছে। এর ফলে আমাদের বিনিয়োগ বাড়বে। এখনই সেই সময়, মানুষ বিনিয়োগের দিকে যাচ্ছে। বছর শেষে বিনিয়োগ চিত্রে তা ফুটে উঠবে। এজন্য উদ্যোক্তারা কাজ শুরু করেছে।