ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ভেটিং প্রক্রিয়ায় ট্রান্সফ্যাট নিয়ন্ত্রণ প্রবিধানমালা

চূড়ান্ত হবে শিগগিরই, বাস্তবায়নে কমবে হৃদরোগে মৃত্যু, ঝুঁকিপূর্ণ ১৫ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম, ৪.৪১% মৃত্যুর জন্য দায়ী ট্রান্সফ্যাট

আরিফুল ইসলাম
🕐 ১০:৫২ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১২, ২০২১

ভেটিং প্রক্রিয়ায় ট্রান্সফ্যাট নিয়ন্ত্রণ প্রবিধানমালা

হৃদরোগে মৃত্যুর সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ ১৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। দেশে প্রতিবছর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারীর ৪.৪১ শতাংশ জন্য দায়ী ট্রান্সফ্যাট। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী, খাদ্যে দুই শতাংশের উপরে ট্রান্সফ্যাাট থাকলে তা মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর। দেশে পরিচালিত এক গবেষণায় শীর্ষস্থানীয় পিএইচও বা ডালডা ব্র্যান্ডসমূহের মোট ২৪টি নমুনা বিশ্লেষণ করে ৯২ শতাংশের ওপর নমুনায় মাত্রাতিরিক্ত ট্রান্সফ্যাটের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হৃদরোগজনিত মৃত্যু কমাতে খাদ্যে ট্রান্সফ্যাট নিয়ন্ত্রণের বিকল্প নেই। সে কারণে জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী ট্রান্সফ্যাট নিয়ন্ত্রণ প্রবিধানমালা খসড়া করেছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ।

সব তেল, চর্বি এবং খাদ্যে সর্বোচ্চ দুই শতাংশ ট্রান্সফ্যাটের সীমা বেঁধে দিয়ে তা সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে কার্যকর করার কাজ সমাপ্তির দিকে এগিয়ে নিয়েছে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ।

‘খাদ্যদ্রব্যে ট্রান্সফ্যাটি এসিড নিয়ন্ত্রণ প্রবিধানমালা, ২০২১’ খসড়াটি চূড়ান্ত করে প্রকাশ করা সম্পর্কে ট্রান্সফ্যাট বিষয়ক টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান ও বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য মঞ্জুর মোর্শেদ আহমেদ বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০২৩ সালের মধ্যে বিশ্বের খাদ্য সরবরাহ থেকে শিল্প উৎপাদিত ট্রান্সফ্যাট সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করার আহ্বান করেছে। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই আমরা ট্রান্সফ্যাট নিয়ন্ত্রণ প্রবিধানমালাটি তৈরি করেছি। সেটি ইতোমধ্যে ফাইল করে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে ভেটিং প্রক্রিয়ার জন্য।’

ট্রান্সফ্যাটঘটিত হৃদরোগে মৃত্যুর সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ ১৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা। সংস্থাটির ২০২০ সালে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি বছর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারীর ৪.৪১ শতাংশ মৃত্যুর জন্য দায়ী ট্রান্সফ্যাট। অর্থাৎ দেশে ৫৭৭৬ জন মানুষ হৃদরোগে অকাল মৃত্যুবরণ করছেন শুধু অতিরিক্ত ট্রান্সফ্যাট যুক্ত খাবার গ্রহণের কারণে। প্রতিরোধযোগ্য এই অকাল মৃত্যুসহ হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করতে ২০২৩ সালের মধ্যে শিল্প উৎপাদিত ট্রান্সফ্যাট সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করার আহ্বান করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা।

‘খাদ্যদ্রব্যে ট্রান্সফ্যাটি এসিড নিয়ন্ত্রণ প্রবিধানমালা, ২০২১’-এ বলা হয়েছে, রুমিন্যান্ট বা প্রাণিজ উৎসজাত টিএফএ বাদে চর্বির ইমালসনসহ যে কোনো তেল ও চর্বি, যা এককভাবে বা প্রক্রিয়াজাত খাদ্য বা যে কোনো খাদ্যের উদ্দেশ্যে অথবা খুচরা ব্যবসা, ক্যাটারিং ব্যবসা, রেস্তোরাঁ, প্রতিষ্ঠান, বেকারি বা যে কোনো খাদ্য স্থাপনার খাদ্য প্রস্তুতের জন্য কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং প্রক্রিয়াজাত, মোড়কবদ্ধ, সরাসরি আহার্য খাদ্য (রেডি-টু-ইট) অথবা যে কোনো খাদ্যে দুই শতাংশের বেশি অর্থাৎ প্রতি ১০০ গ্রামে ২ গ্রামের অধিক টিএফএ থাকলে তা বিক্রয়, বিতরণ, সংরক্ষণ, উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, বিপণন এবং আমদানি করা যাবে না। এছাড়া মোড়কজাত খাদ্যের লেবেলে অবশ্যই ট্রান্সফ্যাটি এসিড ও পিএইচও সম্পর্কিত তথ্য ঘোষণা করতে হবে।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রবিধানমালাটি চূড়ান্তকরণের কাজ এগিয়ে যাচ্ছে এবং খাদ্য মন্ত্রণালয় তা ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। আইন মন্ত্রণালয় অতি শিগগির প্রবিধানমালাটির ভেটিং প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ফেলবে। খাদ্যে ট্রান্সফ্যাটের প্রধান উৎস পারশিয়ালি হাইড্রোজেনেটেড অয়েল বা পিএইচও, যা বাংলাদেশে ডালডা বা বনস্পতি ঘি নামেই সুপরিচিত। সাধারণত বেকারি পণ্য, প্রক্রিয়াজাত ও প্যাকেটজাত খাবার, ভাজাপোড়া স্ন্যাক্স এবং হোটেল-রেস্তোরাঁ ও সড়ক সংলগ্ন দোকানে খাবার তৈরিতে পিএইচও বা ডালডা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ঢাকার শীর্ষস্থানীয় পিএইচও বা ডালডা ব্র্যান্ডসমূহের মোট ২৪টি নমুনা বিশ্লেষণ করে সম্প্রতি পরিচালিত এক গবেষণার ফলাফলে ৯২ শতাংশ নমুনায় ডব্লিউএইচও সুপারিশকৃত সর্বোচ্চ ২ শতাংশ মাত্রার চেয়ে বেশি ট্রান্সফ্যাট (ট্রান্সফ্যাটি এসিড) পাওয়া গেছে এবং ডব্লিউএইচও’র সুপারিশকৃত মাত্রার তুলনায় সর্বোচ্চ ১০ গুণেরও বেশি পর্যন্ত ট্রান্সফ্যাট পাওয়া গেছে।

ট্রান্সফ্যাটি এসিড (টিএফএ) বা ট্রান্সফ্যাট মানব স্বাস্থ্যের জন্য একটি বিষাক্ত এবং অযাচিত খাদ্য উপাদান। ট্রান্সফ্যাট এক ধরনের ফ্যাট বা স্নেহ জাতীয় খাদ্য উপাদান যা রক্তের এলডিএল বা ‘খারাপ কোলেস্টেরল’ বৃদ্ধি করে, অপরদিকে এইচডিএল বা ‘ভালো কোলেস্টেরল’-এর মাত্রা কমিয়ে দেয়। অতিরিক্ত ট্রান্সফ্যাট গ্রহণের ফলস্বরূপ রক্তবাহী ধমনীতে খারাপ কোলেস্টেরল জমা হয়ে রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়, যা অকাল মৃত্যুর অন্যতম কারণ। এছাড়াও মাত্রাতিরিক্ত ট্রান্সফ্যাট গ্রহণ উচ্চহারে হৃদরোগ, হৃদরোগজনিত মৃত্যু, স্মৃতিভ্রংশ (ডিমেনশিয়া) এবং স্বল্প স্মৃতিহানি (কগনিটিভ ইমপেয়ারমেন্ট) জাতীয় রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।

 
Electronic Paper