ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

লকডাউন ভেঙে কারখানা খুলতে চান মালিকরা

জাফর আহমদ
🕐 ১০:৫৭ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ২৮, ২০২১

লকডাউন ভেঙে কারখানা খুলতে চান মালিকরা

চলমান লকডাউন ভেঙে কারখানা চালুর উদ্যোগ নিয়েছেন তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা। কিন্তু শ্রমিক সংগঠনগুলো এতে বাধা দিচ্ছে। আর আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন এসে কারখানা বন্ধ করে দিচ্ছে। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী আশুলিয়া, গাজীপুরের সদর, কাশিমপুর ও টঙ্গী এবং নারায়ণগঞ্জের বিসিকে কমপক্ষে ছয়টি কারখানায় অভিযান ও অর্থদ-ের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে গাজীপুরের আম্বার গ্রুপের টেক্সটাইল ও নারায়ণগঞ্জের ফকির গ্রুপের একটি কারখানায় প্রশাসনের লোকজন অভিযান চালালে টেক্সটাইলটি শ্রমিকদের পেছন দরজা দিয়ে বের করে দেয়।

একই ঘটনা ঘটে ফকির গ্রুটের কারখানাতে। শ্রমিকরা চালু কারখানার ভেতরের ছবি তুলে শ্রমিক নেতাদের পাঠান। তারা তা ফেসবুকে আপলোড করেন। অন্যদিকে টঙ্গীর এ-ওয়ান পলিমার নামক একটি পাইপ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান, কাশিমপুরের নরম্যান কমটেক্স লিমিটেড ও কটনক্লাব বিডি লিমিটেড নামক দুটি বস্ত্র ও তৈরি পোশাক কারখানাকে জরিমানা করা হয়। আশুলিয়া ও সাভারের কমপক্ষে পাঁচটি কারখানা চালু করলে বাইরে শ্রমিক সংগঠনের নেতারা প্রতিবাদ শুরু করেন। শেষ পর্যন্ত কারখানা বন্ধ হয়।

শ্রমিক সংগঠনগুলোর সূত্র জানায়, করোনায় বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে বিভিন্ন কৌশলে কারখানা চালু করেন মালিকরা। কখনো কখনো সরকারের ওপর প্রভাব বিস্তার করে কারখানা খোলা রাখা হয়। করোনার মধ্যে শ্রমিকরা ঝুঁকি নিয়ে কারখানায় গেলেও ছাঁটাইয়ের ভয়ে কথা বলে না। অতীতে যে শ্রমিকরা কারখানায় গিয়ে আক্রান্ত হয়েছে, তাদেরই আবার করোনা থেকে মুক্ত হয়ে আসার কথা বলে চাকরিচ্যুত করা হয়। এটা অন্যায়। এজন্য এবার সরকার লকডাউন ঘোষণা করার সঙ্গে সঙ্গে কারখানার গেট পাহারা দেওয়া শুরু করেছি। যারাই নির্দেশ অমান্য করে কারখানা খোলার চেষ্টা করেছেন আমরা প্রতিবাদ করেছি। কথা না শুনলে ফেসবুকে ছবি দিয়ে ও পত্রিকায় খবর প্রকাশ করে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছি। সরকারও সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়েছে, কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে। কোনো কোনো কারখানার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে অর্থদ- করেছে।

সরকার ঈদের ছুটির পর ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত কঠোর লকডাউন ঘোষণা করে। এরপর তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের তিন সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বিটিএমএ এবং শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠন এফবিসিসিআইসহ অন্যান্য ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা কারখানা চালু রাখার জন্য ক্যাবিনেট সচিবের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেন। এ সময় জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন কারখানা বন্ধ থাকার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। এরপরও প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে কারখানা খোলা রাখার বিশেষ নির্দেশনার অপেক্ষায় থাকেন নেতারা। কিন্তু মহামারী রোধ করতে শেষ অবধি সরকার সব ধরনের কারখানা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে অটল থাকে। এ সময় উদ্যোক্তারা কোনো কারখানা ২৭ জুলাই পর্যন্ত, কোনো কারখানা ৩০ জুলাই পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করেন। কোনো কোনো কারখানা ফোনে শ্রমিকদের জানিয়ে দেওয়ার কথা বলে। এর মধ্যে অনেক কারখানা ঈদের পর থেকেই গোপনে চালু করে। বিষয়টি শ্রমিক নেতারা আঁচ করতে পেরে কারখানার গেটে গেটে ধরনা দেন। অবশ্য সরকারের নির্দেশনা মতে খাদ্য, ওষুধ ও সরঞ্জাম তৈরির প্রায় ৩০০ কারখানা খোলা।

কারখানা খোলা রাখার ব্যাপারে ভিন্ন ভিন্ন ঘোষণা দিয়ে কঠোর লকডাউনের মধ্যেই শ্রমিকদের ভোগান্তির আশঙ্কা তৈরি হয়। এ বিষয়ে গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি মন্টু ঘোষ খোলা কাগজকে বলেন, সরকার লকডাউন ঘোষণা করেছে। এটা বাস্তবায়নে কঠোর হতে হবে। লকডাউনের মধ্যে কারখানা খুলে ২০২০ সালে শ্রমিকরা গ্রাম থেকে হেঁটে আসার মতো অবস্থা তৈরি যেন না হয়। এটা হলে করোনার বিস্তার যেমন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠবে, তেমনি শ্রমিকদের করোনা আক্রমণ থেকে বাঁচানো কঠিন হবে।

কারখানা খোলা রাখার ব্যাপারে বিজিএমইএও চেয়েছিল সরকার হয়তো মধ্যবর্তী একটি ঘোষণা দেবে। খোলা কাগজের কাছে এমন ইঙ্গিত করেন বিজিএমইএ-এর সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান ও বিকেএমইএ-এর সিনিয়র সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। কিন্তু শ্রমিক সংগঠনগুলোর কঠোর অবস্থানের ফলে সরকার আর মধ্যবর্তী ঘোষণা থেকে বিরত থাকে। গত সোমবার জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সে কথাই স্পষ্ট করেন। ফলে কারখানা খোলা রাখার কথা বললেও সেটি আপাতত সম্ভব হচ্ছে না।

 
Electronic Paper