ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ফজলি আমে দুশ্চিন্তা

মাসুদ রানা রাব্বানী, রাজশাহী
🕐 ১২:০৯ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৪, ২০২১

ফজলি আমে দুশ্চিন্তা

টানা লকডাউনে ক্ষতির মুখে পড়েছেন রাজশাহীর ফজলি আম চাষিরা। বাজারে ঠিক সময়ে আম এলেও নেই পরিবহন ও ক্রেতা। এতে ২৫ টাকা কেজিতে আম বিক্রি করছেন চাষিরা। তবে খুচরা বাজারে এসব আম ৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

জানা গেছে, বাজারে নিরাপদ ও পরিপক্ব আম নিশ্চিত করতে এবারও গাছ থেকে নামানোর সময় বেঁধে দিয়েছিল প্রশাসন। সেই অনুযায়ী ১৫ জুন থেকে ফজলি ও আম্রপালি আম গাছ থেকে নামানো শুরু হয়। এরই মধ্যে রাজশাহীতে করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকায় গত ১১ জুন রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকায় এক সপ্তাহের লকডাউন ঘোষণা করে প্রশাসন। পরে সেটি দুই দফা বাড়িয়ে ৩০ জুন পর্যন্ত করা হয়। এরপর ১ জুলাই থেকে নতুন করে সরকার ঘোষিত দুই সপ্তাহের কঠোর লকডাউন শুরু হয়। কৃষিপণ্য হিসেবে আম বাজারজাতকরণে লকডাউনে আওতামুক্ত থাকলেও ক্রেতার অভাবে ফজলি ও আ¤্রপালি আম নিয়ে বিপাকে পড়েন চাষি ও ব্যবসায়ীরা।

নগরীর শালবাগান এলাকার ফল ব্যবসায়ী মোশাররফ হোসেন বলেন, স্থানীয়পর্যায়ে যখন লকডাউন দেওয়া হয়েছিল তখন অন্য জাতের আম বিক্রি করতে পেরেছি। কিন্তু সারা দেশে যখন লকডাউন শুরু হলো তখন রাজশাহীতে ফজলি আম বাজারে উঠলো। এই সময়ে ধরা খেয়েছেন ব্যবসায়ী ও চাষিরা। ঢাকা থেকে যারা আমের অর্ডার দিতেন, তারা অর্ডার বাতিল করলেন। আম ব্যবসায়ীরা জানান, লকডাউনে রাজশাহী থেকে বিভিন্ন জেলায় আম পাঠাতে গেলে অনেক ঝামেলায় পড়তে হয়। পথে পথে ভোগান্তি আছে। এজন্য কেউ আমের অর্ডার দেন না। শালবাগান বাজারের ২০টি ফলের দোকানে অনেক আম। কিন্তু ক্রেতা নেই। গতকাল মঙ্গলবার নগরীর বিভিন্ন বাজার ও আমের দোকান ঘুরে দেখা যায়, বাছাইকৃত কাঁচা ফজলি আমের মণ ১২০০ টাকা হিসাবে কেজি পড়ে ৩০ টাকা। একটু দাগযুক্ত পাকা আমের মণ ৮০০-৯০০ টাকা হিসাবে কেজি পড়ে ২০-২১ টাকা। তবে আ¤্রপালি আমের মণ ২০০০-২২০০ টাকা।

নগরীর সাহেব বাজারের খুচরা আম ব্যবসায়ী মো. হাবিব বলেন, কাঁচা ফজলির কেজি ৩০ আর পাকাটা ২০-২৫ টাকা বিক্রি করছি। মোল্লাপাড়া এলাকার আম বাগানের মালিক মিজানুর রহমান বলেন, এখনও গাছে অর্ধেক ফজলি আম রয়েছে। কিন্তু ঘন ঘন বৃষ্টির কারণে আমের গায়ে কালো দাগ পড়ে যাচ্ছে। তাই বেশি দিন গাছে রাখা যাবে না। বাজারে ক্রেতার সংকটের কারণে গাছের আম নামানোও যাচ্ছে না।

শিরোইল বাস টার্মিনাল এলাকায় বেশ কয়েকটি আমের দোকান রয়েছে। এখানের ব্যবসায়ীরা জানান, দূরপাল্লার বাস ও ট্রেন চলাচল করলে যাত্রীরা সঙ্গে করে কিছু আম নিয়ে যেতেন। কিন্তু এবার তাও বন্ধ। আম নিয়ে দোকানে বসে থাকতে হচ্ছে, ক্রেতা নেই। কাঁচা পণ্য, তাই ধরে রাখাও যায় না। বাধ্য হয়ে কম দামে আম বিক্রি করে দিচ্ছি।

বহরমপুর এলাকার ফল ব্যবসায়ী রুবেল হোসেন বলেন, লকডাউনের কারণে ক্রেতা না থাকায় আম পচে নষ্ট হচ্ছে। যে দামে কিনেছি, তার চেয়ে কম দামে বিক্রি করছি। দুদিনে এক মণ আমও বিক্রি করতে পারিনি। নগরীর কাজলা এলাকার আম ব্যবসায়ী মিন্টু বলেন, লকডাউনের কারণে এমনিতে ক্রেতা কম আবার ঠিকমত দোকান খুলতে পারছি না। তাই আম বিক্রি হচ্ছে না। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, রাজশাহীর বাগানগুলোর ৮৫ শতাংশ গাছ থেকে আম পাড়া হয়ে গেছে। বাকি আছে ১৫ শতাংশ। ফজলি, আশ্বিনা, আ¤্রপালি ও বারি-৪ জাতের আম এখন গাছে আছে। শেষ হয়েছে ল্যাংড়া, ক্ষীরসাপাতসহ অন্য জাতের আম। ফজলি ও আ¤্রপালির ৫০ শতাংশ আম গাছে আছে। বারি-৪ এবং আশ্বিনা আম পাড়ার এখনও সময় হয়নি।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক জে কে এম আব্দুল আওয়াল বলেন, রাজশাহীতে এবার আমের যে উৎপাদন ও বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল তা প্রায় পূরণ হয়ে গেছে। এখনও কিছু আম আছে। কৃষি বিভাগ সবসময় লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা কম করে নির্ধারণ করে। এতে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়ে বাড়তি থাকে। এবারও তাই হয়েছে।

আব্দুল আওয়াল আরও বলেন, রাজশাহীতে আমের মোট লক্ষ্যমাত্রা ১৭ হাজার ৯৪৩ হেক্টর। এর প্রায় ৩৪ শতাংশ অর্থাৎ ৬ হাজার ৪৭০ হেক্টর লক্ষণভোগ। এই আমের দাম কম। এ কারণে বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ৬০০-৮০০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। এবারও তাই অর্জন হয়েছে। তিনি বলেন, এখন গাছে আশ্বিনা আম আছে। চাষিরা এই আমের যতœ নেন না। আশ্বিনা আমের প্রধান শত্রু মাছি পোকা। এটা রোধ করতে আমের ব্যাগিং করতে হয়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রতিটি গাছে এখন ব্যাগিং করা হচ্ছে। কিন্তু রাজশাহীর চাষিরা উদাসীন। আব্দুল আওয়াল আরও বলেন, সারা দেশে কঠোর লকডাউনে কৃষিপণ্য পরিবহনে কোনো সমস্যা হয় না। সরকার এ বিষয়ে আন্তরিক। এখন পর্যন্ত কৃষিপণ্য কিংবা আম পরিবহনে সমস্যা হয়েছে বলে অভিযোগ পাইনি। কাজেই এটি বলার সুযোগ নেই, লকডাউনের কারণে আম পরিবহনে সমস্যা হয়েছে। তবে ভোক্তাপর্যায়ে লকডাউনের কারণে ক্রেতা কমেছে- এটা সত্য।

 
Electronic Paper