বাজেট নিয়ে শুরু প্রস্তাব-পরামর্শ
তুষার আহসান
🕐 ১০:২৪ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ৩০, ২০২১
ঘনিয়ে আসছে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট উত্থাপনের দিন। ইতোমধ্যেই সরকারি নীতিনির্ধারকগণ বসে গিয়েছেন বাজেট সাজাতে। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে জল্পনা-কল্পনা। বিভিন্ন সংস্থা দিচ্ছেন প্রস্তাব ও পরামর্শ। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় মিলে শিক্ষা খাতে বাজেটের ২০ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে গণসাক্ষরতা অভিযান। ‘করোনা বিপর্যস্ত শিক্ষা: কেমন বাজেট চাই’ শীর্ষক ভার্চুয়াল শিক্ষা সংলাপে উত্থাপিত এ প্রস্তাবে সমর্থন জানিয়েছেন শিক্ষাবিদসহ সংশ্লিষ্টরা। এদিকে বাজেটে ঘাটতি বাড়িয়ে হলেও সরকারের ব্যয় বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার পলিসি ফর ডায়লগ (সিপিডি)।
অন্যদিকে স্বাস্থ্য ঝুঁকি মোকাবিলা, অর্থনীতির বিরূপ পরিস্থিতিতে প্রান্তিক ও নিম্ন আয়ের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, ছোট ব্যবসায়ীদের টিকে থাকা এবং কৃষি খাতকে গতিশীল করতে বরাদ্দ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে সংস্থাটি। গতকাল বৃহষ্পতিবার ‘করোনা বিপর্যস্ত শিক্ষা: কেমন বাজেট চাই’ শীর্ষক ভার্চুয়াল শিক্ষা সংলাপের আয়োজন করে গণসাক্ষরতা অভিযান। সেখানে শিক্ষা বিষয়ক নানা যুক্তি উপস্থাপন করেন শিক্ষাবিদরা। একই সঙ্গে আগামী বাজেটে শিক্ষাখাতকে কী দৃষ্টিতে দেখা উচিত তা তুলে ধরেন। সেখানেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় মিলে শিক্ষা খাতে জাতীয় বাজেটের ২০ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়ার আহ্বান জানায় সংস্থাটি। সংলাপে উপস্থাপিত মূল প্রতিবেদন ও অনুষ্ঠানের বিভিন্ন সুপারিশসহ আগামী সপ্তাহে গণসাক্ষরতা অভিযান এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে স্মাকলিপি দেবে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।
সংলাপ সঞ্চালনাকালে গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘মহাসংকটে সারা পৃথিবীতেই পরিকল্পনা, কর্মসূচি এবং বাজেটে শিক্ষা গুরুত্ব পাচ্ছে না। অবশ্যই অর্থনীতি চালু রাখতে হবে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করতে হবে। কৃষি ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন করতে হবে। তার মধ্যে যেন শিক্ষা হারিয়ে না যায়। শিক্ষাকে অগ্রাধিকারের জায়গা থেকে আমরা নীতি নির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই।’
সংলাপে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন গণসাক্ষরতা অভিযানের উপপরিচালক কে এম এনামুল হক। শিক্ষা খাতে বাজেট বৃদ্ধির পাশাপাশি বাজেট ব্যয়ের সক্ষমতা এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার প্রস্তাব করা হয়।
প্রস্তাবে বলা হয়, শিক্ষা ডিজিটালাইজেশনের জন্য বিশেষ বরাদ্দ দিয়ে সেলফ লার্নিং উপকরণ তৈরি করতে হবে। শিক্ষার্থীদের হাতে সেলফ লার্নিং উপকরণ পৌঁছে দিতে হবে। যাতে তারা নিজে নিজে শিখতে পারে। এ ছাড়া টিচিং ও লার্নিংয়ে যেমন উন্নয়ন করতে হবে, তেমনই শিক্ষকদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
প্রস্তাবনায় শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়। রাস্তায়, বিদ্যালয় জীবাণুমুক্ত রাখা, উপবৃত্তি দেওয়া, স্কুল মিল সম্প্রসারণ করা, বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের ওপর যেন কোনো ধরনের নির্যাতন না হয়, সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ওয়ার্কিং টিম তৈরি করতে হবে। এতে স্থানীয় পর্যায়ে কমিউনিটিকে যুক্ত করতে হবে, যারা শিক্ষার বিভিন্ন বিষয় তদারকি করতে পারবেন। চরাঞ্চল ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষা উন্নয়নে বেসরকারি সংস্থা যে বিদেশি ফান্ড পেত, তা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের কারণে কমে গেছে। তাই বেসরকারি সংস্থাগুলোর উন্নয়নে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে এনজিওদের সহায়তা করা। এ ছাড়া করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের সহায়তা দিতে শিক্ষা ফান্ড গঠন করার প্রস্তাব দেওয়া হয়।
রাশেদা কে চৌধুরীর সঞ্চলনায় গণসাক্ষরতা অভিযান আয়োজিত শিক্ষা সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান ও বিশেষ অতিথিরি বক্তব্য রাখেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন। পিকেএসএফ এর চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদের সভাপতিত্বে সংলাপে শিক্ষাবিদসহ সংশ্লিষ্টরা অংশ নেন।
সিপিডির পরামর্শ :
আগামী অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি বাড়িয়ে হলেও সরকারের ব্যয় বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার পলিসি ফর ডায়লগ (সিপিডি)। গতকাল সংস্থাটি একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। ভার্চুয়াল ওই সংবাদ সম্মেলন থেকে এ পরামর্শ তারা সরকারকে দেয়। সংস্থাটি মনে করে আগামী অর্থবছরে স্বাস্থ্য ঝুঁকি মোকাবিলা, অর্থনীতির বিরূপ পরিস্থিতিতে প্রান্তিক ও নিম্ন আয়ের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, ছোট ব্যবসায়ীদের টিকে থাকা এবং কৃষি খাতকে গতিশীল করতে বরাদ্দ বাড়ানো দরকার। এজন্য তারা এ সুপারিশ করেছে। একইসঙ্গে সংস্কার কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া, রাজস্ব আহরণ ঠিক রাখতে ধনীদের থেকে কর সংগ্রহ বাড়ানো, ব্যবসায় যেসব প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে সেগুলো অব্যাহত রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে ওই সংবাদ সম্মেলনে আগামী বাজেটে সরকারি ব্যয়ে কোথায় গুরুত্ব দেওয়া দরকার, সম্পদ আহরণ কেমন হবে, বাজেট ঘাটতি কিভাবে মেটাবে ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরেন সিপিডির গবেষকরা।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, চলতি অর্থবছরের বাস্তবায়ন প্রেক্ষিত, আর্থসামাজিক খাতের করোনার প্রভাব এবং করোনা আরও কয়েক বছর থাকবে এমন ধরে নিয়ে আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রণয়ন করতে হবে। চলতি অর্থবছরে কৃষি খাত কার্যকর ও গতিশীল ছিল। রেমিট্যান্স ছাড়া বহিঃখাত ভালো যায়নি। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে স্লাথ গতি দেখা গেছে। এ অবস্থায় আগামী অর্থবছরের বাজেট হতে হবে সম্প্রসারণমূলক। তিনি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে জিডিপির ৪ থেকে ৬ শতাংশ পর্যন্ত বরাদ্দ রাখার সুপারিশ করেন।
সংস্থাটির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, চলতি অর্থবছরে বিনিয়োগ হয়নি। বাজেটের বাস্তবায়নও কম হচ্ছে। এদিকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। ফলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি সরকার যে ৫ দশমিক ২ শতাংশ আশা করছে তা নাও হতে পারে। এজন্য আগামী অর্থবছরের বাজেটে সরকারের ব্যয় বাড়াতে হবে। সম্প্রসারণমূলক ব্যয়ের নীতি নিতে হবে। অর্থাৎ যেখানে ব্যয় করা দরকার সেখানে করতে হবে।
বাজেটে ঘাটতি মেটাতে বিদেশি অর্থায়নে জোর দেওয়ার প্রস্তাব করেছে সংগঠনটি। বিদেশি অর্থ ব্যবহারের প্রস্তুতি ও যে দুর্বলতা রয়েছে তা দূর করারও পরামর্শ দিয়েছে। এছাড়া অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক ঋণ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে। সিপিডি বলছে, ব্যাংকগুলোতে অলস তারল্য পড়ে আছে। সরকার এ অর্থ ব্যবহার করতে পারে।
অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বড় প্রকল্পের চেয়ে আগামী অর্থবছরে যেখানে বেশি কর্মসৃজনের সুযোগ আছে এমন ছোট প্রকল্পে গুরুত্ব দিতে হবে। কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া ঠিক হবে না। কারণ এতে অনেকে কর পরিশোধ না করে সুযোগ নেওয়ার জন্য বসে আছেন। দরিদ্র্য সরাসরি নগদ টাকা দেওয়া এবং পারলে বছরে একাধিকবার দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এতে দরিদ্র শ্রেণির পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ বাজারের চাহিদা ঠিক থাকবে।