মুমিনের প্রত্যাশা ইমানি মৃত্যু
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১:৩৪ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ০৩, ২০২১
মুমিন মুসলমানের জীবনে সবচেয়ে বড় প্রত্যাশা ইমানের সঙ্গে মৃত্যু। তাই তারা ফরজ ইবাদতের পাশাপাশি কোরআন-সুন্নাহ মোতাবেক জীবন পরিচালনায় সর্বো” যখন ফেতনায় দিশেহারা হয়ে যাবে; কোন পথ গ্রহণ করবেতা সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না তখন কোরআন-সুন্নাহই যুক্তির একমাত্র হাতিয়ার হয়ে দাঁড়াবে। সে সময় যদি কেউ কোরআন-সুন্নাহ্ আঁকড়ে ধরতে পারে তবে সে সঠিক পথে থেকে ইমানি জীবন-যাপন করতে পারবে এবং ইমানি মৃত্যু লাভ করতে পারবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা পথভ্রষ্ট হবেনা, যখন তোমরা দুটো জিনিসকে আঁকড়ে ধরবে। আর তার একটি হলো আল্লাহর কিতাব আর অন্যটি হলো তার রাসুলের সুন্নাহ। তিনি আরও ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয় বান্দার আমলসমূহ, এটা নির্ভর করে জীবনের শেষ অবস্থায় সে কোন আমল নিয়ে যেতে পেরেছে।’
হাদিসের আলোকে জীবনের শেষ অবস্থায় বান্দার পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে? এটার ওপর নির্ভর করবে মুমিন বান্দার আখেরাতে নাজাত ও মুক্তি। আর এ কারণেই মুমিন বান্দা তার জীবনের শেষ অবস্থায় ইমানের সঙ্গে মৃত্যুবরণ করতে পারবেন কিনা সে চিন্তায় অস্থির থাকেন। তবে ধর্মীয় মতে, যে ব্যক্তি দুনিয়াতে যে কাজে নিয়োজিত থাকবে, সে ওই কাজের ওপরই মৃত্যুবরণ করবে। যদি কেউ কোরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী আমল করার চেষ্টা করে তবে তার জীবনের শেষ পরিণতিও কোরআন-সুন্নাহর আলোকে হবে। সুতরাং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নেক আমল, ভালো কথা ও সুন্দর আচরণে নিজেকে নিয়োজিত রাখা জরুরি। এমনটি করতে পারলে জীবনের শেষ কাজটিও নেক কথা ও কাজেই শেষ হবে। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, হে মানুষ, তোমরা যারা ইমান এনেছো, আল্লাহকে ভয় কর, ঠিক যতটুকু ভয় তাকে করা উচিত, (তার কাছে সম্পূর্ণ) আত্মসমর্পণকারী না হয়ে তোমরা মৃত্যুবরণ কর না। (সূরা ইমরান, আয়াত-১০২)
সূরা নিসার ৭৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তোমরা যেখানেই থাক না কেন, মৃত্যু তোমাদেরকে পাকড়াও করবেই।’ সূরা জুমুআ’র ৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তোমরা যে মৃত্যু থেকে পালাতে চাও, সেই মৃত্যুর সঙ্গে অবশ্যই তোমাদের সাক্ষাৎ হবে। তারপর তোমাদের সেই মহান আল্লাহর কাছে ফেরত পাঠানো হবে, যিনি প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সব বিষয় জানেন এবং তিনি তোমাদেরকে তোমাদের আমল ও কাজকর্ম সম্পর্কে অবহিত করবেন।’ সূরা আল মুলকে ইরশাদ হয়েছে, ‘যিনি জন্ম ও মৃত্যু সৃষ্টি করেছেন, যাতে করে তিনি তোমাদের যাচাই করে নিতে পারেন যে, কর্মক্ষেত্রে কে তোমাদের মধ্যে উত্তম।’ সূরা আয যুমার-এর ৪২ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ তায়ালা (মানুষের) মৃত্যু সময় তার প্রাণায়ু বের করে নেন, আর যারা ঘুমের সময় মরেনি তিনি তাদেরও রুহ বের করেন অতঃপর যার ওপর তিনি মৃত্যু অবধারিত করেন তার প্রাণবায়ু তিনি (ছেড়ে না দিয়ে রেখে দেন) এবং বাকি (রুহ্)-দের একটি সুনির্দিষ্ট সময়ের জন্যে ছেড়ে দেন; এর (ব্যবস্থাপনার) মধ্যে এমন সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন রয়েছে। যারা (বিষয়টি নিয়ে) চিন্তা-ভাবনা করে।’
মৃত্যু সম্পর্কে হাদিসে বলা হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা) বলছেন, মৃতের সঙ্গে তিনটি জিনিস কবর পর্যন্ত যায়। এর মধ্যে দুটি ফিরে আসে এবং একটি থেকে যায়। যে তিনটি কবর পর্যন্ত যায় তা হচ্ছে, মৃতের পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়-স্বজন, মাল-সম্পদ ও আমল। কিন্তু পরিবার পরিজন ও মাল-সম্পদ ফিরে আসে এবং আমল কবরে থেকে যায়। (বুখারী) এদিকে কীভাবে ইমানের সঙ্গে মৃত্যু লাভ করা যায় সে সম্পর্কে কোরআন-হাদিসে সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, যারাই মহান আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা গবেষণা করে, সঙ্গে তাদের নিগূঢ় আল্লাহর সম্পর্ক তৈরি হয় এবং আল্লাহর একান্ত সান্নিধ্য লাভ করে। ফলে তাদের জন্য ইমানি মৃত্যু লাভে সহায়ক হয়।
মুমিন বান্দাকে যাতে জাহান্নামে যেতে না হয়, জাহান্নামের কঠিন আজাব থেকে মুক্তি পায়, হাশরের ময়দানে লাঞ্ছিত হতে না হয় এবং ইমানি মৃত্যু লাভ করে সে জন্য আল্লাহতায়ালা কোরআনে একাধিক দোয়া নাজিল করেছেন। এর মধ্যে পবিত্র কোরআনের সূরা আল ইমরানের ১৯১ থেকে ১৯৩ পর্যন্ত আয়াতে বলা হয়েছে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! এসব তুমি (সৃষ্টিজগত) অনর্থক সৃষ্টি করনি। পবিত্রতা তোমারই জন্য। আমাদেরকে তুমি জাহান্নামের শাস্তি থেকে বাঁচাও। হে প্রতিপালক! নিশ্চয়ই তুমি যাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ কর তাকে অপমানিত কর। আর যালিমদের জন্য কোনো সাহায্যকারী নেই। হে আমাদের প্রভু! আমরা ইমান আনার জন্য একজন আহ্বানকারীকে আহ্বান করতে শুনে ইমান গ্রহণ করেছি। হে আমাদের পালনকর্তা! তুমি আমাদের সব গোনাহ মাফ করে দাও। আমাদের সব দোষ-ত্রুটি দূর করে দাও। আর নেককার লোকদের সাথে আমাদের মৃত্যু দাও।’
বলা হয়েছে, মুমিন বান্দাদের মধ্যে যারা বসে, দাঁড়িয়ে ও শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা করে আর আল্লাহর কাছে উপরোল্লেখিত দোয়া করে। তাদের জন্য মৃত্যুকালীন সময়ে ইমান লাভ করা সহজ হয়ে যাবে। এ কারণেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার সময় এ আয়াতগুলো সহ সূরা আল ইমরানের শেষ আয়াত পর্যন্ত তেলাওয়াত করতেন।