ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ছুটছে রোগী বাড়ছে মৃত্যু

প্রীতম সাহা সুদীপ
🕐 ৯:০৭ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ০৮, ২০২১

ছুটছে রোগী বাড়ছে মৃত্যু

করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ চিকিৎসা ব্যবস্থায় নাজুক পরিস্থিতি তৈরি করেছে। সংকটাপন্ন রোগীদের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে যাওয়ায় রাজধানী ঢাকায় সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে সৃষ্টি হয়েছে শয্যা সংকট। আইসিইউতে অনেক আগেই ফুরিয়ে গেছে স্থান। ফলে হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরে ঘুরে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন অনেকেই। এমন পরিস্থিতিতে ঢাকায় রোগীর চাপ কমাতে নিজ জেলায় চিকিৎসা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মার্চের শেষ ও এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে ক্রিটিক্যাল অবস্থায় থাকা অনেক রোগীই কোনো হাসপাতালে সিট পাননি। আইসিইউর জন্য অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন অনেকে। তবে সেই অপেক্ষার মধ্যেও যেন রয়েছে এক ধরনের অমানবিকতা। মৃত্যুর সঙ্গে লড়তে লড়তে এক সময় হার মানলেই নাকি ফাঁকা হচ্ছে শয্যা। আর তখন আরেকজন মুমূর্ষু রোগীকে সেখানে স্থানান্তর করা হচ্ছে।

হাসপাতালগুলোতে হাহাকার: 
গতকাল বুধবার সরেজমিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের করোনা ইউনিটের সামনে প্রচ- ভিড়। তাদের মধ্যে অনেকেই অভিযোগ করেন তারা ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে এসেছেন কিন্তু কোথাও সিট খালি নেই। একই চিত্র দেখা গেছে রাজধানীর মুগদা জেনারেল হাসপাতালেও। সকাল থেকেই এখানে বেডের জন্য অসংখ্য রোগীকে হাহাকার করতে দেখা গেছে। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে একটি সিটও খালি নেই।

পুরান ঢাকার সূত্রাপুর এলাকার এক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক খোলাকাগজকে জানান, কোভিড আক্রান্ত বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে গত শুক্রবার রাত থেকে রোববার পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরেছেন তিনি। মারাত্মক শ^াসকষ্টে ভুগছিলেন তার বাবা, কিন্তু কোনো হাসপাতালেই ভর্তি নেওয়া হচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত যখন একটা হাসপাতালে কোনো রকম রাখার ব্যবস্থা হলো, ততক্ষণে তিনি আর নেই। কাঁদতে কাঁদতে ওই যুবক বলেন, এভাবে আমার বাবাকে বিনা চিকিৎসায় মারা যেতে হলো, সন্তান হিসেবে শেষ সময়ে আমি তার জন্য কিছুই করতে পারলাম না।

ভয়াবহ বিপদের শঙ্কা :
চিকিৎসকরা জানান, আগের তুলনায় ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ বেশি সংকটাপন্ন রোগী এখন চিকিৎসার জন্য আসছে। তাদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন কমে যাওয়ায় বাসা থেকে তারা হাসপাতালমুখী হচ্ছেন। তাদের প্রায় সবারই আইসিইউ সাপোর্ট দরকার। এভাবে চলতে থাকলে সামনে ভয়াবহ বিপদ অপেক্ষা করছে।

মুগদা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ডা. অসীম কুমার নাথ দৈনিক খোলাকাগজকে বলেন, আমাদের সব শয্যা পরিপূর্ণ থাকায় এখন রোগীদের ফেরত পাঠাতে হচ্ছে, তাদের মধ্যে অনেকেই ক্রিটিক্যাল কন্ডিশনে। কিন্তু আমরা কিছুই করতে পারছি না। এখন যে সংক্রমণটা হচ্ছে, তার তীব্রতা অনেকটাই বেশি।

কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ শিহাব উদ্দিন বলেন, দিন দিন হাসপাতালগুলোতে রোগীদের ঢল বাড়ছেই। পুরান রোগীরা ডিসচার্জ নিচ্ছে, সঙ্গে সঙ্গেই নতুন রোগী এডমিট করা হচ্ছে। এখন সবাই ভর্তি হচ্ছে অক্সিজেনের জন্য। আইসিইউ তো একেবারেই পূর্ণ।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. রিদওয়ানুর রহমান বলেন, অদূরদর্শী পরিকল্পনা ও প্রয়োজনীয় উদ্যোগের অভাবে এক বছর পর এসেও জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালগুলো সক্ষমতা বাড়াতে পারছে না। এখনো নিশ্চিত হয়নি সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা। এখন মানুষের চিকিৎসার জন্য হাহাকার চলছে।

নিজ জেলায় চিকিৎসা নেওয়ার আহ্বান :
দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভায় পাঁচ দফা সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। সেখানে বলা হয়েছেÑ হাসপাতালগুলোতে যথাসম্ভব কোভিড-১৯ রোগীর শয্যা সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন। আইসিইউতে শয্যা বাড়ানো দরকার। ঢাকার বাইরে মেডিকেল কলেজগুলোর সক্ষমতা বাড়িয়ে সেখানে এলাকার রোগীদের চিকিৎসা করা দরকার। কোভিড-১৯ এর জন্য পরীক্ষা করতে আসা মানুষ যাতে সহজে সেবা পায় তার ব্যবস্থা করা দরকার।

এসব বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ও করোনাসংক্রান্ত মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, ইতোমধ্যে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে আড়াই হাজার শয্যা বাড়ানো হয়েছে। শিগগির ডিএনসিসিতে এক হাজার শয্যার করোনা আইসোলেশন সেন্টার চালু করা হচ্ছে। যেখানে দুইশত আইসিইউ/এইচডিইউ শয্যা থাকছে। এছাড়া বেশির ভাগ হাসপাতালে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন ট্যাংক স্থাপন করা হয়েছে। বাকিগুলোর স্থাপন চলমান।

তিনি আরও বলেন, ঢাকার বাইরের সব জেলাতেই হাসপাতালে কোভিড শয্যা খালি রয়েছে। সেখানে গুরুত্বপূর্ণ সব যন্ত্রপাতি অব্যবহৃত পড়ে আছে। কিন্তু উন্নত চিকিৎসার আশায় ঢাকার বাইরের সব রোগীই ঢাকামুখী হচ্ছে। এতে ঢাকার হাসপাতালগুলোতে সংকট দেখা দিচ্ছে। তাই আমরা অনুরোধ করবো ঢাকায় না এসে আপনারা নিজ জেলায় চিকিৎসা করান।

 
Electronic Paper