ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ডাচ বাংলা ব্যাংকের স্বেচ্চাচারীতা: ৫০০০ টাকার নীচে একাউন্ট খোলা নয়

জাফর আহমদ
🕐 ৫:৫৫ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ০৬, ২০২১

ডাচ বাংলা ব্যাংকের স্বেচ্চাচারীতা: ৫০০০ টাকার নীচে একাউন্ট খোলা নয়

আমানত সংগ্রহের এক অভিনব কার্যক্রম শুরু করেছে ডাচ-বাংলা ব্যাংক। সঞ্চয়ী হিসাব খোলার ক্ষেত্রে আগে কমপক্ষে ৫০০ টাকা রাখার নির্দেশনা থাকলেও এখন তা বাড়িয়ে পাঁচ হাজার টাকা করেছে। এর ফলে সঞ্চয়ী হিসাব খোলার ইচ্ছা থাকলেও এখন আর ব্যাংকটিতে একাউন্ট খোলা যাচ্ছে না।

ব্যাংকটির নতুন গ্রাহকরা মনে করছেন, করোনা মহামারীর কারণে দেশের মানুষের যখন আয় কমেছে, সঞ্চয় কমেছে-সে সময় বাণিজ্যিক এই ব্যাংকটি অপকৌশল গ্রহণ করলো। মানুষের ছোট্ট ছোট্ট সঞ্চয় নিয়ে যখন ব্যাংক মুখি হচ্ছিলো তখন বাণিজ্যিক ব্যাংকটি এই বাধার সৃষ্টি করলো। ক্ষুদ্র ঋণ বিতরনী সংস্থা থেকে যখন মানুষ ব্যাংক মুখি হওয়ার কথা ভাবছে। ক্ষুদ্র সঞ্চয়কারীদের জন্য একটি ট্রানজেকশনের সময় চলছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে যখন ‘ব্যাংকিং লিটারেসি’ বৃদ্ধির নানা রকম কার্যক্রম গ্রহণ করছে, মনোযোগ দিতে বলছে, মানুষ যখন ব্যাংকমুখি হবে তখন ডাচ বাংলা ব্যাংক এ ধরণের স্বেচ্চাচারী কাজ করছে।

গত বছরের ডিসেম্বর মাসে সঞ্চয়ী হিসাব খোলা ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ন্যুনতম ব্যালেন্স পাঁচ হাজার টাকা বাধ্যতামূলক করা সম্পর্কিত একটি ঘোষনা দেয় ডাচ বাংলা ব্যাংক। পুরাতন গ্রাহকদের যাদের একাউন্টে পাঁচ হাজার টাকার কম আছে তাদেরও প্রয়োজনীয় টাকা জমা দিতে চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে ন্যুনতম ব্যালেন্স পাঁচ হাজার টাকা পূরণ করতে বলা হয়। বিষয়টি নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে ঘোষণাটি প্রত্যাহার করে নেয় ডাচ বাংলা ব্যাংক। কিন্তু নতুন একাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে ঘোষনার কার্যকারিতা অব্যাহত রাখে। এর ফলে গ্রাহকরা পাঁচ হাজার টাকার নীচে টাকা দিয়ে একাউন্ট খুলতে এসে ফিরে যাচ্ছে।

গত রোববার ডাচ বাংলা ব্যাংকের বনানী শাখাতে একাউন্ট খুলতে এসে ফিরে জনৈক রহিম লস্কর। তিনি মনে করেন একাউন্ট খুলতে আগের মতই ন্যুনতম পাঁচশ শত টাকা লাগে বা তার দ্বিগুন হতে পারে। কিন্তু পাঁচশ টাকা থেকে পাঁচ হাজার টাকা হবে তিনি চিন্তাও করেননি। বনানী বাজারেই তার ছোট্ট একটি ব্যবসা আছে। তিনি ব্যাংকে কিছুটা সঞ্চয় করতে চান। এ মূহূর্তে এক হাজার টাকার অধিক টাকা দিয়ে তার একাউন্ট খোলা কোন ভাবেই সম্ভব নয়। একাউন্ট খুলে সুবিধা মত সময়ে টাকা জমা করতে চান। কিন্তু ৫ পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে তার পক্ষে এই ব্যাংকে একাউন্ট খোলা সম্ভব নয়।

বেসরকারী বাণিজ্যিক ব্যাংকটির এটিএম বুথ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সুবিধা রয়েছে। বেসরকারী বাণিজ্যিক ব্যাংকটির সারা দেশে ৮ বিভাগে ৪২৯ উপজেলাতে এটিএম বুথ রয়েছে। এ সব বুথের মাধ্যমে ৬ লাখ ১৫ হাজার ৪৫৯ মিলিয়ন টাকা রেনদেন হয়েছে। এ কারণে একাউন্ট খোলার জন্য গ্রাহকরা বেশি হারে ব্যাংকটিতে ঝুকে থাকেন। কিন্তু ন্যূনতম ব্যালেন্স পাঁচ শ টাকা থেকে পাঁচ হাজার টাকা করাতে গ্রাহকরা ততটাই হতাশ হয়েছে। নতুন এ নিয়ম করার ফলে ব্যাংকটিতে একাউন্ট খোলার হার কমেছে। এ জন্য একাউন্ট খোলার জন্য ব্যাংকের সেবা কর্মকর্তাদের লক্ষ্য পূরণ নিয়ে দুর্ভোগ বেড়েছ। এ বিষয়ে মিরপুর শাখার সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, গ্রাহক কমলেও এটা ব্যার্ংকের নির্দেশনা। চাকরি করলে মানতেই হবে। এ বিষয়ে ব্যাংকির উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের মন্তব্য চাইলে কোন কথা বলতে রাজি হননি।

ঋণ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকটি ভাল করেছে। বানিজ্যিক ব্যাংকটি খেলাপি ঋণ কমানোর ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। যদি করোনা মহামারীর কারণে খেলাপি হলেও তাকে খেলাপি হওয়া থেকে বিরত রয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। করোনার অভিঘাত মোকাবলো করার জন্য সরকারের সে ধরণের নির্দেশনাই রয়েছে। বর্তমানে ব্যাংকটির মোট বিতরণ করা ২৭ হাজার ২৮০ কোটি টাকার ঋণের বিপরীতে ৫৯২ কোটির টাকা খেলাপি ঋণ। যা মোট বিতরণ করা ঋণের ২ দশমিক ১৭ শতাংশ। দুই বছর আগে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের হার ছিল ৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ। টাকার অংকে এক হাজার ১০২ কোটি টাকা। ওই সময়ে ব্যাংকটির মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমান ছিল ২০ হাজার ৩০২ কোটি টাকা।

 
Electronic Paper