ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত যারা

বাতিঘর ডেস্ক
🕐 ৩:০৮ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৫, ২০২১

স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত যারা

স্বাধীনতা পুরস্কার সরকার কর্তৃক সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদক। জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ দেশের নাগরিক এমন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর পাশাপাশি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে অনন্য অবদানের জন্য প্রতিষ্ঠানকেও এই পুরস্কার দেওয়া হয়। স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২১ এ মনোনীত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান নিয়ে আজকের প্রতিবেদন। 

এ কে এম বজলুর রহমান
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনের একজন পুরোধা ব্যক্তিত্ব এ কে এম বজলুর রহমান। তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর। একজন নিষ্ঠাবান কর্মী ও সংগঠক হিসেবে তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের দুর্দিনের যোদ্ধা। বারবার জেল খেটেছেন, মাথায় হুলিয়া নিয়ে ফেরারী ছিলেন, অসংখ্যবার নির্যাতিত হয়েছেন। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে অসাধারণ অবদানের জন্য (মরণোত্তর) স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২১ এ ভূষিত করা হয়।

১৯৪৮ সালে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন এ কে এম বজলুর রহমান। তিনি ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠার দিনে ঐতিহাসিক রোজ গার্ডেনে উপস্থিত ছিলেন।

একজন রাজনৈতিক যোদ্ধা হিসেবে এ কে বজলুর রহমান অবহেলিত শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৫০ সালে বিশিষ্ট শ্রমিক নেতা আইএলএর গভর্নর বোর্ডের সদস্য ফয়েজ আহমেদের সঙ্গে তিনি শ্রমিক আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। সুতাকল, পাটকল ও জাহাজী শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠনে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।

এ কে এম বজলুর রহমান ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যূত্থানে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭০ এর পাকিস্তান জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে তাকে মনোনয়ন দেওয়া হলেও পরে দলীয় সিদ্ধান্তে আরেকজন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। তবুও নিষ্ঠাবান কর্মী হিসেবে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীকে বিজয়ী করতে নিরলস পরিশ্রম করেন এ কে এম বজলুর রহমান।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতার নির্মম হত্যাযজ্ঞের পর এ কে এম বজলুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে নির্যাতন করা হয়। কিছুদিন পরেই পক্ষাঘাতগ্রস্থ হয়ে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন আওয়ামী লীগের বিশ্বস্ত কর্মী এ কে এম বজলুর রহমান। এক দশকের বেশি শয্যাশায়ী থেকে ১৯৮৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ইন্তেকাল করেন বাঙালির একজন নিষ্ঠাবান কর্মী এ কে এম বজলুর রহমান। পরবর্তীতে নারায়ণগঞ্জের মাসদাইর কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।

আহসানউল্লাহ মাস্টার
আহসানউল্লাহ মাস্টার একজন বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সদস্য হিসেবে তিনি ১৯৯৬ ও ২০০১-এর জাতীয় সংসদে গাজীপুর-২ আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে অসাধারণ অবদানের জন্য (মরণোত্তর) স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২১ এ ভূষিত করা হয়। আহসানউল্লাহ মাস্টার ১৯৫০ সালের ৯ নভেম্বর, তৎকালীন ঢাকা জেলার (বর্তমান গাজীপুর) পুবাইল ইউনিয়নের হায়দরাবাদ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। আহসানউল্লাহর শিক্ষাজীবন শুরু হয় নিজ গ্রামের হায়দরাবাদ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষাজীবন শেষ করে টঙ্গী উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন তিনি। আহসানউল্লাহ ১৯৬৫ সালে এসএসসি পাস করে তৎকালীন কায়েদে আযম কলেজে (বর্তমান শহীদ সোহরাওয়ার্দী সরকারি কলেজ) একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হন। ১৯৭০ সালে ডিগ্রি পাস করার পর আহসানউল্লাহ টঙ্গীর নোয়াগাঁও এম এ মজিদ মিয়া হাইস্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি ওই বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক (১৯৭৭-১৯৮৪) ও প্রধান শিক্ষকের (১৯৮৪-২০০৪) দায়িত্ব আমৃত্যু পর্যন্ত পালন করেন। আহসানউল্লাহ মাস্টার টঙ্গী শিক্ষক সমিতির সভাপতি হিসেবে সক্রিয় ছিলেন।

আহসানউল্লাহ মাস্টার ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার আগে তিনি পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে আটক ও নির্যাতিত হয়েছিলেন। ভারতের দেরাদুনের তান্দুয়া থেকে গেরিলা ট্রেনিং নিয়ে পুবাইল, টঙ্গী, ছয়দানাসহ বিভিন্ন জায়গায় গেরিলা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ১৯৬২ সালে হামুদুর রহমান শিক্ষা কমিশন-এর বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে রাজনীতিতে তার হাতেখড়ি। তখন তিনি ছাত্রলীগ করতেন। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু ঘোষিত বাঙালির মুক্তির সনদ ছয় দফা দাবি নিয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা যখন রাজপথে, তখনো আহসানউল্লাহ সক্রিয়ভাবে আন্দোলনে অংশ নেন। ১৯৬৯ সালে ১১ দফার আন্দোলনেও সক্রিয় ছিলেন তিনি। ১৯৮৩ সালের পুবাইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন। স্থানীয় সরকার নির্বাচন থেকে শুরু করে জাতীয় সংসদ প্রতিটি নির্বাচনে তিনি জয়ী হয়েছেন বিপুল ভোটে। ১৯৮৮ সালে পুবাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালে গাজীপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০০৪ সালের ৭ মে গাজীপুর-২ আসনের আওয়ামী লীগের সাংসদ ও জাতীয় শ্রমিক লীগের কার্যকরী সভাপতি পদে আসীন থাকাকালীন সন্ত্রাসীদের ব্রাশফায়ারে নিহত হয়েছিলেন আহসানউল্লাহ মাস্টার। এ ঘটনার পরদিন তার ভাই মতিউর রহমান টঙ্গী থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

এ মামলায় ২০০৪ সালের ১০ জুলাই পুলিশ অভিযোগপত্র দায়ের করে। ঢাকার একটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ২০০৫ সালের ১৬ এপ্রিল ২২ আসামিকে মৃত্যুদ- ও ছয় আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেন। খালাস দেওয়া হয় দুই আসামিকে। ২০১৩ সালে টঙ্গীতে শহীদ আহসানউল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়াম নির্মিত হয়েছে। এ ছাড়াও টঙ্গীতে তার স্মৃৃৃৃতিতে শহীদ আহসানউল্লাহ মাস্টার উড়াল সেতু ও আহসানউল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতাল রয়েছে।

খুরশিদ উদ্দিন আহমেদ
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) খুরশিদ উদ্দিন আহমেদ, একাধারে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, চিকিৎসক, সেনা কর্মকর্তা ও ঐতিহাসিক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম আসামি। কর্মজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি তার কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। দেশের কল্যাণে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ মরণোত্তর স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ ক্যাটাগরিতে তিনি ‘স্বাধীনতা পুরস্কার- ২০২১’এর জন্য মনোনীত হয়েছেন।

বর্ণাঢ্য সামরিক ক্যারিয়ারের অধিকারী এই অফিসার ১৯৫৮ সালে আর্মি মেডিকেল কোরে কমিশনপ্রাপ্ত হন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি কুমিল্লা সিএমএইচ এর অধিনায়ক এবং ব্রিগেড কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এএমসি অফিসার হিসেবে তার বিশেষ পারদর্শিতার ইতিহাসে অনন্য দৃষ্টান্ত। ১৯৭২ সালের অক্টোবরে তিনি প্রথম ডিরেক্টর জেনারেল অব হেলথ সার্ভিসেস (ডিএমএস) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ৭৩-এ আরব-ইসরাইল যুদ্ধে তিনি সিরিয়ান ফ্রন্টে মেডিকেল টিমের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন।

খুরশিদ উদ্দিন আহমেদ ঐতিহাসিক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি হিসেবে জানুয়ারি ১৯৬৮ এ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে গ্রেফতার হন এবং পরবর্তী সময়ে তীব্র গণআন্দোলনের মুখে জেল থেকে মুক্তি পান।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ইস্টার্ন সেক্টরের অ্যাসিসিটেন্টে ডিরেক্টর জেনারেল অব হেলথ সার্ভিসেস হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। নভেম্বর’৭১ এ তিনি বেলুনিয়ার যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। একজন সামরিক কর্মকর্তা ও চিকিৎসা পেশার পাশাপাশি ব্রিগেডিয়ার খুরশিদ আহমেদ একজন ভালো ফুটবল খেলোয়াড়ও ছিলেন। তিনি মোহামেডান স্পোর্টিং কাবে ১৯৫৬-৫৭ সালে সেন্টার ফরওয়ার্ড পজিশনে খেলেছেন।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) খুরশিদ উদ্দিন আহমেদ ২০১৩ সালের ২২ এপ্রিল ইন্তেকাল করেন। তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ঢাকা সেনানিবাস কবরস্থানে দাফন করা হয়।

মহাদেব সাহা
মহাদেব সাহা বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তীকালের একজন অন্যতম প্রধান কবি। তিনি তার সাহিত্যিক অবদান দিয়ে সব ধরনের পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন। তিনি রোমান্টিক গীতিকবিতার জন্য জনপ্রিয়। তার কবিতা অপরিশ্রুত আবেগের ঘনীভূত প্রকাশে তীব্র। তিনি জীবিকাসূত্রে একজন সাংবাদিক ছিলেন এবং দীর্ঘকাল দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ২০১৬ থেকে তিনি কানাডা প্রবাসী। মহাদেব সাহা ১৯৪৪ সালের ৫ আগস্ট সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ উপজেলার ধানগড়া গ্রামে পৈতৃক বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম গদাধর সাহা এবং মাতা বিরাজমোহিনী সাহা। সাহিত্যনুরাগী পিতা গদাধর সাহার বাড়িতে আসত মাসিক বসুমতী সংবাদ, দৈনিক লোকসেবক, বাই উইকলি অমৃতবাজার পত্রিকা। কলকাতা থেকে আনা হতো পিএম. বাগচী ও গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা।

মহাদেব সাহা বগুড়ার ধুনট হাইস্কুল থেকে ১৯৬০ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। উচ্চমাধ্যমিকে তিনি ঢাকা কলেজে ভর্তি হয়েও অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং পরে তিনি বগুড়ার আজিজুল হক কলেজ থেকে ১৯৬৪ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। তিনি আজিজুল হক কলেজে বাংলা সাহিত্য বিষয়ে অনার্স শ্রেণিতে ভর্তি হন এবং ১৯৬৭ সালে অনার্স পাস করে রাজশাহীতে আসেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বাংলা বিষয়ে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। এমএ পাসের পর তিনি কিছুদিন ইংরেজি বিষয়ে গবেষণায় নিযুক্ত হন কিন্তু কবিতা লেখার অদম্য আগ্রহ তাকে গবেষণা শেষ করার আগেই ঢাকায় নিয়ে যায়। তিনি জ্যোতিপ্রকাশ দত্তের সহায়তায় ১৯৬৯ সালে তৎকালীন সাপ্তাহিক পূর্বদেশ পত্রিকায় যোগদান করেন। সাপ্তাহিক পূর্বদেশ পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে যোগদানের মধ্য দিয়ে ১৯৬৯ সালে মহাদেব সাহার কর্মজীবন শুরু হয়। জীবনব্যাপী তিনি বিভিন্ন পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে কর্মরত থেকেছেন। সর্বশেষ তিনি দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকা থেকে অবসর গ্রহণ করেন।

তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৯৩টি। মহাদেব সাহা তার কাব্য প্রতিভার জন্য অসংখ্য পুরস্কার লাভ করেছেন। তিনি ১৯৮৩ সালে কবিতায় বাংলা একাডেমি পুরস্কার এবং ২০০১ সালে একুশে পদক লাভ করেন। এ ছাড়াও অন্যান্য পুরস্কার ও সম্মাননার মধ্যে ১৯৯৫ সালে আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৯৭ সালে বগুড়া লেখকচক্র পুরস্কার, ২০০২ সালে খালেকদাদ চৌধূরী স্মৃতি পুরস্কার এবং ২০০৮ সালে জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার অন্যতম। ২০২১ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন।

আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু
আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ছিলেন একজন বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ ও চার বারের নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ছিলেন। নবম জাতীয় সংসদে তিনি পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ছিলেন। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ২০২১ সালে মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন।

আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ১৯৪৫ সালের ৩ মে আনোয়ারা উপজেলার হাইলধর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম নুরুজ্জামান চৌধুরী ও মায়ের নাম খোরশেদা বেগম। ১৯৫৮ সালে তিনি পটিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ওই বছর ঢাকার নটর ডেম কলেজে ভর্তি হন। উচ্চ মাধ্যমিকে পড়াশোনার সময়ে শিক্ষা বৃত্তি নিয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইলিয়ন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে যান। পরে তিনি নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবসা প্রশাসনে পড়াশোনা করেন। সেখান থেকে অ্যাসোসিয়েট ডিগ্রি নিয়ে ১৯৬৪ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ আসেন। এরপর ১৯৬৫ সালে বড় ভাইয়ের সঙ্গে ব্যবসা শুরু করেন।

তিনি ১৯৬৭ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। ১৯৬৮ সালে দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি সত্তরের সাধারণ নির্বাচনে আনোয়ারা ও পশ্চিম পটিয়া থেকে প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। স্বাধীনতার পর তিনি দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এ পদে বহাল ছিলেন। তিনি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন। পঁচাত্তর সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হলে তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে দল পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। আশির দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ভূমিকা রাখায় কারাভোগসহ নির্যাতনের শিকার হন তিনি। তিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি ভারতে গিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন। তিনি মুজিবনগর সরকারের ত্রাণ ও পুনর্বাসন কমিটির সদস্য ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন তিনি বিশ্বজনমত গড়তে ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চলে যান। ১৯৭০ সালের প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য হিসেবে তিনি ১৯৭২ সালে গঠিত বাংলাদেশ গণপরিষদের সদস্য হন এবং বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ণে ভূমিকা রাখেন।

আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু ২০১২ সালে ৪ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে তিনি প্রায় এক মাস ধরে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।

ডা. এম আমজাদ
দিনাজপুরের কৃতি সন্তান, মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ডা. এম আমজাদ হোসেন সমাজসেবা/জনসেবা ক্যাটাগরিতে স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২১-এর জন্য মনোনীত হয়েছেন। তিনি রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালের অর্থোপেডিক ও আর্থোপ্লাস্টি সেন্টারের চিফ কনসালট্যান্ট ও বিভাগীয় প্রধান।

ডা. এম আমজাদ হোসেন সার্কভুক্ত আটটি দেশের অর্থোপেডিক সার্জনদের সংগঠন অর্থোপেডিক অ্যাসোসিয়েশন অব সার্ক কান্ট্রিজের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ডা. আমজাদ হোসেন মুক্তিযুদ্ধের সময় উরুতে গুলিবিদ্ধ হন। ভারতের সামরিক হাসপাতালে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর আমন্ত্রণে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা দিতে দেশে আসা আন্তর্জাতিক বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জন ডা. আর জে গাস্টের অধীনে অর্থোপেডিক চিকিৎসা শুরু করেন।

তার নেতৃত্বে দেশে কোমর ও হাঁটু প্রতিস্থাপন (হিপ অ্যান্ড নি রিপ্লেসমেন্ট) সার্জারিতে এসেছে বৈপ্লবিক সাফল্য। আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে এ পর্যন্ত সাড়ে ৩ হাজারেরও বেশি এ ধরনের সার্জারি সম্পন্ন করেছেন এ চিকিৎসক।
দিনাজপুরের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও সমাজসেবামূলক কাজ করার জন্য তিনি এবি ফাউন্ডেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান করেছেন। উত্তরের জেলা দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে গড়ে তুলেছেন বেশকিছু স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া উত্তরবঙ্গের তথা দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের অধীন অন্যতম প্রতিষ্ঠান আমেনা-বাকী রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ডা. এম আমজাদ হোসেন।

গাজী মাজহারুল আনোয়ার
গাজী মাজহারুল আনোয়ার বাংলাদেশের জনপ্রিয় সুরকার-গীতিকারদের একজন। স্বাধীনতা ও দেশপ্রেম নিয়ে অসংখ্য কালজয়ী গানের স্রষ্টা মাজহারুল আনোয়ার একাধারে একজন চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, রচয়িতা, গীতিকার ও সুরকার। তিনি ২০০২ সালে বাংলাদেশের একুশে পদক এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন। ২০ হাজারের বেশি গান রচনা করেছেন তিনি। বিবিসি বাংলা তৈরিকৃত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বিশটি বাংলা গানের তালিকায় রয়েছে তার লেখা তিনটি গান।

গাজী মাজহারুল আনোয়ার ১৯৪৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লার দাউদকান্দি থানার তালেশ্বর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ২০ হাজার গানের রচয়িতা গাজী মাজহারুল আনোয়ার ১৯৬৪ সাল থেকে রেডিও পাকিস্তানে গান লেখা শুরু করেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ টেলিভিশনের জন্মলগ্ন থেকেই নিয়মিত গান ও নাটক রচনা করেন। প্রথম চলচ্চিত্রের জন্য গান লেখেন ১৯৬৭ সালে আয়না ও অবশিষ্ট চলচ্চিত্রের জন্য। ১৯৬৭ সালে চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর থেকে কাহিনি, চিত্রনাট্য, সংলাপ ও গান লেখাতেও দক্ষতা দেখান তিনি। তার পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র নান্টু ঘটক ১৯৮২ সালে মুক্তি পায়। তার পরিচালিত চলচ্চিত্রের সংখ্যা ৪১ টি।

গাজী মাজহারুল আনোয়ার ২০০২ সালে একুশে পদক এবং ২০২১ সালে সংস্কৃতিতে স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি স্বাধীন দেশের সর্বপ্রথম পুরস্কার বাংলাদেশ প্রেসিডেন্ট গোল্ড মেডেল অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, একাধিকবার বাচসাস পুরস্কার, বিজেএমই অ্যাওয়ার্ড, ডেইলি স্টার কর্তৃক লাইফ টাইম অ্যাওয়ার্ডসহ তার অর্জিত পুরস্কারের সংখ্যা ১১০।

আতাউর রহমান
আতাউর রহমান হলেন একজন বাংলাদেশি মঞ্চ ও টেলিভিশন অভিনেতা, মঞ্চ নির্দেশক এবং লেখক। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধপরবর্তী মঞ্চনাটক আন্দোলনের অগ্রদূত। মঞ্চনাটকে তার অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ২০০১ সালে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান একুশে পদক এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন।

আতাউর রহমান ১৯৪১ সালের ১৮ জুন তদানীন্তন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির (বর্তমান বাংলাদেশ) নোয়াখালী জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজের স্নাতক। তার মাতাও সংস্কৃতিমনা ছিলেন। তার মায়ের কাছেই তিনি বাইরের বই পড়ার শিক্ষা লাভ করেন। তার শৈশব কাটে নোয়াখালীতে তার মামার বাড়িতে। সেখানেই তিনি প্রথম জুল ভার্ন রচিত টুয়েন্টি থাউজেন্ড লিগস আন্ডার দ্য সি পড়েন। পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাব্য, উপন্যাস, ছোটগল্প, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচনাবলি, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচনাবলির সঙ্গে পরিচিত হন।

আতাউর রহমান চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং চট্টগ্রাম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। পরে ১৯৬৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিষয়ে এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন।

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়ার পর তার বন্ধু জিয়া হায়দার আমেরিকার ইস্ট ওয়েস্ট সেন্টার থেকে পাস করে দেশে এসে তাকে মঞ্চনাটক করার প্রস্তাব দেন। ১৯৬৮ সালে ফজলে লোহানীর বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়’। তিনি হন এর প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক। পছন্দমতো মৌলিক নাটক না পাওয়ায় প্রথম নাটক মনস্থ করতে কয়েক বছর সময় লেগে যায়। ১৯৭২ সালে রহমান তার প্রথম নাটকের নির্দেশনা প্রদান করেন। তার নির্দেশিত প্রথম মঞ্চনাটক মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত প্রহসন বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রো-এ অভিনয় করেন লাকি ইনাম, আবুল হায়াত, ইনামুল হক, আলী যাকের ও ফখরুল ইসলাম। পরের বছর ১৯৭৩ সালে তিনি বাদল সরকার রচিত এবং আলী যাকের পরিচালিত বাকি ইতিহাস মঞ্চনাটকে অভিনয় করেন। এটি ছিল নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের হয়ে তার প্রথম অভিনয়। এটি ছিল বাংলাদেশে প্রথম দর্শনীর বিনিময়ে নাট্য প্রদর্শনী।

রহমান ৩৫টির বেশি মৌলিক এবং অন্য ভাষা থেকে অনুবাদ করা মঞ্চনাটকের নির্দেশনা দিয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো গ্যালিলিও, পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়, রক্তকরবী, বাংলার মাটি বাংলার জল, নারীগণ, ঈর্ষা, অপেক্ষমাণ এবং ওয়েটিং ফর গোডো।

রহমান বাংলাদেশ সেন্টার অব দ্য ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউটের সাধারণ সম্পাদক এবং পরে সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সভাপতি থাকাকালীন ২০১১ সালের মে মাসে ১০ দিন ব্যাপী ১ম ঢাকা আন্তর্জাতিক থিয়েটার উৎসবের আয়োজন করেন। তিনি বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনে প্রাক্তন সভাপতি ছিলেন।

মঞ্চের পাশাপাশি রহমান কবিতা লিখেন। তার লেখা কয়েকটি কবিতা হলো ‘স্বপ্নের পাহাড়’, ‘রাতদিন’, ‘ভালো আছি’।
তার কাছে ১৯০৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত যত রবীন্দ্র সংগীত রেকর্ড হয়েছে তার একটি বড় সংগ্রহ আছে।

মৃন্ময় গুহ নিয়োগী
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্যাটাগরিতে স্বাধীনতা পুরস্কারে মনোনীত হয়েছেন কৃষিবিদ ড: মৃন্ময় গুহ নিয়োগী।
বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে মঙ্গাপীড়িত এলাকায় তিনি যুগান্তকারী কাজ করেছেন। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আর ডি আর এস (জউজঝ) এ কাজ করার সময় উত্তরাঞ্চলের মঙ্গা নিরসনের জন্য তিনি কিছু নছুন ক্রপিং প্যাটার্ন উদ্ভাবন করেছিলেন। আগাম জাতের ধান চাষ ছিল তার মধ্যে একটি।

তিনি মাঠ পর্যায়ে বহুবছর নীরবে কাজ করেছেন। ফলে কৃষকের কাছে পৌঁছে গেছে তাঁর উদ্ভাবন। যার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে ধীরে ধীরে মঙ্গা পরিস্থিতির অবসান হয়েছে। দেশের ক্ষুধা মুক্তির আন্দোলনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রয়োগের ক্ষেত্রে যীশু এক অনন্য ভূমিকা পালন করেছেন। এরই ফলশ্রুতিতে তার হাতে এসেছে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার, স্বাধীনতা পুরস্কার।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা পরিষদ
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা পরিষদ বাংলাদেশে কৃষিক্ষেত্রে গবেষণা পরিচালনা এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় সাধনের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত। জাতীয় কৃষি গবেষণা পদ্ধতি ঘধঃরড়হধষ অমৎরপঁষঃঁৎব জবংবধৎপয ঝুংঃবস (ঘঅজঝ) সর্বোচ্চ অঙ্গসংস্থা হিসেবে এই পরিষদ তার কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। রাষ্ট্রপতির আদেশ নং ৩২- বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা পরিষদ আদেশ ১৯৭৩ বলে ১৯৭৩ সালের ৫ এপ্রিল এই প্রতিষ্ঠানের জন্ম হয়। এই পরিষদ সংক্ষেপে বিএআরসি (ইধহমষধফবংয অমৎরপঁষঃঁৎব জবংবধৎপয ঈড়ঁহপরষ) নামেও পরিচিত। ঢাকার ফার্মগেটে এই পরিষদের দফতর অবস্থিত। গবেষণা ও প্রশিক্ষণে বিশেষ অবদানের জন্য এই প্রতিষ্ঠানটি ২০২১ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

Electronic Paper